Inqilab Logo

শুক্রবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১, ১২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

৫ বছরেও ক‚লকিনারা হয়নি খুনিদের ধরতে মাঠে নেমেছে সিআইডি

মাদারীপুরে চাঞ্চল্যকর শিশু সাম্য হত্যা মামলা

| প্রকাশের সময় : ৪ মে, ২০১৮, ১২:০০ এএম


মাদারীপুর জেলা সংবাদদাতা: মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার বাজিতপুর ইউনিয়নের নয়াকান্দি গ্রামের চাঞ্চল্যকর শিশু সাম্য হত্যার নেপথ্যে নায়করা আজো ধরা ছোঁয়ার বাইরে। যতোই দিন যাচ্ছে ততোই এলাকাবাসীর মনে নানা ধরণের প্রশ্ন দেখা দিচ্ছে। তাহলে কি সাম্য‘র খুনিরা ধরা পরবে না ? বিচার হবে না এ নৃশংস হত্যাকান্ডের। এদিকে সাম্যর হত্যার নেপথ্যে কুশিলবদের ধরার ব্যাপারের যতই কালক্ষেপন হচ্ছে, ততই সাম্যর পরিবারের সদস্যরা হতাশ হয়ে পড়ছে। তাদের প্রশ্ন শিশু সাম্যর হত্যাকারীরা আদৌ ধরা পড়বে ? অপরদিকে চাঞ্চল্যকর সাম্য হত্যা মামলার দীর্ঘ ৫ বছরেও হত্যার আসল রহস্য উদঘাটিত না হওয়া ভুক্তভোগি পরিবারটি আইন প্রয়োগকারী সংস্থার ওপর দিন দিন আস্থা হারিয়ে ফেলছে।
সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানা গেছে, গত ২০১৩ সালের ২২ ডিসেম্বর সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে সত্যেন বেপারীর স্ত্রী মল্লিকা রানী বেপারী শারীরিক অসুস্থতার কারণে তার শিশু পুত্র সাম্যকে নিয়ে নিজের ঘরে মশারী টাঙ্গিয়ে ঘুমিয়ে ছিলেন। এ সুযোগে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে মুখোশধারী কতিপয় সন্ত্রাসী ঘরে ঢুকে ঘুমন্ত মল্লিকার উপর অতর্কিতভাবে হামলা চালিয়ে কুপিয়ে জখম করে। এ সময় তার শিশু পুত্র সাম্য কান্না কাটি শুরু করলে সন্ত্রারীরা সাম্যকে তার মায়ের কোল থেকে ছিনিয়ে নিয়ে মায়ের সামনেই গলা টিপে ও বালিশ চাপা দিয়ে শ^াসরোধ করে হত্যা করে।
সন্ত্রাসীরা যাওয়ার সময় মল্লিকার নাকের মধ্যে তুলা ও মুখে কাপড় গুঁজে এবং গলায় গামছা দিয়ে ফাঁস লাগিয়ে মৃত নিশ্চিত ভেবে চলে যায়। রাত সাড়ে ৮টার দিকে সত্যেন বেপারী তার কর্মস্থল থেকে বাড়ীতে এসে ঘরের মধ্যে ঢুকে মশারীর মধ্যে গোঙ্গানীর শব্দ শুনে এগিয়ে আসলে মল্লিকা বেপারীর গলায় ফাঁস লাগানো অবস্থায় দেখতে পায়। মুখের কাপড় ও গলার ফাঁস খোলার পর মল্লিকা তার স্বামীকে জানায় সন্ত্রাসীরা সাম্যকে বালিশ চাপা দিয়ে মেরে ফেলেছে। এ সময় সত্যেন বেপারীর ডাক চিৎকারে বাড়ীর পাশের লোকজন এগিয়ে আসলে আহত মল্লিকা ও সাম্যকে রাজৈর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক সাম্যকে মৃত ঘোষণা করেন। ২৩ ডিসেম্বর ময়না তদন্ত শেষে ঐদিন সন্ধ্যায় শিশু সাম্য‘র লাশ নয়াকান্দি গ্রামের নিজ বাড়িতে সমাধীস্থ করা হয়।
এ ব্যাপারে ২৩ ডিসেম্বর রাতে সত্যেন বেপারী বাদী হয়ে রাজৈর থানায় অজ্ঞাত ৫জনকে আসামী করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। পুলিশ তদন্ত শেষে মামলাটির কোন আসামী সনাক্ত না করেই চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করে। বাদী আদালতে নারাজি দিলে আদালত মামলার তদন্ত ভার ডিবি পুলিশের উপর ন্যাস্ত করে। ডিবি পুলিশের তদন্ত প্রতিবেদনও পুলিশের একই আঙ্গিকে হওয়ায় পুনরায় আদালতে নারাজি দেন মামলার বাদী সত্যেন বেপারী। পরবর্তীতে মামলাটির তদন্তভার মাদারীপুর সিআইডি পুলিশের উপর ন্যস্ত করা হয়। সিআইডি মামলাটির তদন্ত কাজ শুরু করে। এরই মধ্যে এ মামলায় বাজিতপুর ইউনিয়নের নয়াকান্দি গ্রামের মোতালেব মালের ছেলে সেলিম মাল (৩৫) নামে এক আসামীকে গ্রেফতার করে ২ দিনের রিমান্ড শেষে জেল হাজতে প্রেরণ করে আদালত। এর কিছু দিন পর সেলিম জামিনে বের হয়। মামলার বাদী সত্যেন্দ্র নাথ বেপারী বলেন,, ‘দীর্ঘ ৫ বছরেও সাম্য হত্যার আসামীরা গ্রেফতার ও বিচারের আওতায় না আসায় আমার পরিবার ও আত্মীয় স্বজন হতাশ। মূল খুনিদের ধরতে সিআইডি মাঠে কাজ শুরু করায় গভীর রাতে বাড়ীর বিভিন্ন স্থানে অজ্ঞাত সন্দেহ ভাজনদের উপস্থিতিতে আমিসহ আমার আত্মীয় স্বজন খুবই আতঙ্কের মধ্যে আছি।’
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সিআইডি ইন্সপেক্টর মোঃ আবু সাইয়ীদ বলেন, ‘এ ঘটনার সাথে জড়িতদের খুঁজে বের করার জোর চেষ্টা অব্যাহত আছে। এরই মধ্যে সেলিম মাল নামে এক ব্যক্তিকে গ্রেফতারের পর জিজ্ঞাসাবাদ শেষে জেল হাজতে প্রেরণ করেছে আদালত। অন্য আসামীদেরও গ্রেফতারের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।’



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ