বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
শেখ দীন মাহমুদ,পাইকগাছা(খুলনা) থেকে : সুন্দরবনে ২ মাসের মধু আহরণ মৌসুমের ১ মাস অতিবাহিত হলেও কাঙ্খিত মধু সংগ্রহ করতে পারেনি মৌয়ালরা। শুরুতে বন বিভাগের পক্ষে মৌয়ালদের সব ধরনের নিরাপত্তার বার্তা জানান দিলেও মূলত সুন্দরবনে নিত্য নতুন বনদস্যু বাহিনীর পদচারনায় অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন তারা। ইতোমধ্যে সুন্দরবন থেকে ফিরে আসা মৌয়ালরা জানাচ্ছেন এমন কথা।
সুন্দরবন বন বিভাগ সূত্র জানায়, গত ১ এপ্রিল থেকে সুন্দরবনে মধু আহরন মৌসুম শুরু হয়েছে, চলবে ৩০ মে পর্যন্ত। প্রতি বছর মধু আহরণ মৌসুমকে ঘিরে স্থানীয়দের পাশাপাশি দেশের প্রত্যন্ত এলাকা থেকে মধু সংগ্রহকারীদের পদচারনায় মুখরিত থাকে উপকূলীয় বেড়ী বাঁধগুলো। এবারো তার ব্যতিক্রম হয়নি। বন বিভাগের পাশাপাশি সরকারের আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোও দস্যুদের দমনে বছর জুড়ে ব্যাপক অভিযান পরিচালনা করে। এতে দস্যুদের অনেকে ক্রস ফায়ারে নিহত ও গ্রেফতার হলেও মধু আহরণ মৌসুমকে ঘিরে নিত্য-নতুন বনদস্যু বাহিনীর আবির্ভাব ও তাদের অপতৎপরতায় রীতিমত কোন ঠাঁসা হয়ে পড়েছেন মৌয়ালরা।
বন বিভাগ জানায়,চলতি বছর তারা সুন্দরবনে মধু আহরনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছেন ১ হাজার ৫০ কুইন্টাল এবং মোম ৫৬৫ কুইন্টাল। প্রতি কুইন্টাল আহরিত মধুর জন্য তারা মৌয়ালদের কাছ থেকে ৭৫০ টাকা ও মোম কুইন্টাল প্রতি ১ হাজার টাকা হারে রাজস্ব আদায় করছেন। সেক্ষেত্রে একজন মৌয়াল প্রতি ১৪ দিনে সর্বোচ্চ ৫০ কেজি মধু আহরণ করতে পারবেন।
তবে ইতোমধ্যে বন ফেরৎ মৌয়ালরা জানায়,এবছর সুন্দরবনে বনদস্যুদের অতি মাত্রায় উৎপাত বৃদ্ধি পেয়েছে। তারা প্রায়ই হানা দিচ্ছে তাদের নৌকায়। চাঁদার দাবিতে লুটপাট,নির্মম অত্যাচারের পাশাপাশি মুক্তি পণের দাবিতে অপহরণ করছে মৌয়ালদের। তারা আরো জানায়,বনদস্যুরা এবছর এতই বেপরোয়া হয়ে উঠেছে জে,এক গ্রæপের কাছ থেকে ছাড়া পেতে না পেতেই অন্য গ্রæপ এসে হানা দিচ্ছে একই পট্টিতে। এর আগে বনদস্যুদের এক গ্রæপের আক্রমণ হলে অন্য গ্রæপ হানা দিতনা একই নিশানায়। তাদের মধ্যেও ছিল অঞ্চল ভিত্তিক সিন্ডিকেট। আর এখন তারা নিজেরাই নিয়ন্ত্রণহীন অবস্থায় দাপিয়ে বেড়াচ্ছে সুন্দরবনের বিভিন্ন প্রান্তে। আবহাওয়ার অনুকুল পরিবেশে এবার সর্বত্র মধু ভাল পাওয়া গেলেও বনদস্যুদের বেপরোয়া অত্যাচারে এবার তাই মধু আহরণের নির্দিষ্ট লক্ষমাত্রা অর্জিত না হওয়ার আশংকা দেখা দিয়েছে মৌয়ালসহ সংশ্লিষ্টদের মধ্যে।
এদিকে দস্যুদের অত্যাচার থেকে শুরু করে নানা সংকটে লক্ষমাত্রা অর্জিত না হওয়ার আশংকায় রীতিমত দিশেহারা হয়ে পড়েছেন কেউ কেউ। কেননা,মৌয়ালদের অধিকাংশদেরই নিজস্ব পুঁজি নেই প্রতি বছর আহরন মওসুমকে সামনে রেখে মহাজনদের কাছ থেকে তারা চড়া সুদে ঋণ নিয়ে যান মধু আহরণে। ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হলে অনেককেই পরিবার-পরিজন নিয়ে এলাকা ছাড়তে হবে বলেও আশংকা প্রকাশ করছেন কেউ কেউ।
অন্যদিকে মধু আহরণ মওসুমকে কেন্দ্র করে উপকূলীয় অঞ্চলে সক্রিয় হয়ে উঠেছেন ভেজাল মধু তৈরি চক্র। তারা কম মূল্যে চিনি কিনে তা মধুতে মিশিয়ে বিক্রি করছেন। এতে সরকার রাজস্ব বঞ্চিতের পাশাপাশি মারাতœকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন,প্রকৃত মৌয়ালরা।
এব্যাপারে সুন্দরবনের সাতক্ষীরার বুড়িগোয়ালিনী স্টেশন কর্মকর্তা কে,এম কবির হোসেন জানান, বরাবরের মত বন বিভাগের পক্ষে মৌয়ালীদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হলেও বিস্তীর্ণ সুন্দরবনের ব্যাপক সংখ্যক মৌয়ালদের নিরাপত্তায় সীমিত জনবল নিয়ে পাহারা দেওয়া কষ্টসাধ্য।
সব মিলিয়ে সুন্দরবনে বিভিন্ন বনদস্যু গ্রæপের অত্যাচার থেকে শুরু করে নানা সঙ্কটে এবার মধু আহরণ লক্ষমাত্রা অর্জিত না হওয়ার আশংকা দেখা দিয়েছে। এব্যাপারে মৌয়ালরা সরকারের সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষের জরুরী হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।