পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
সকল বিভ্রান্তি, অপপ্রচার ও প্রতিবন্ধকতা প্রত্যাখ্যান করে দেশের ধর্মপ্রাণ মুসলমানগণ রাতভর জেগে এবাদত বন্দেগীর মাধ্যমে পরিপূর্ণ ধর্মীয় গুরুত্ব ও মর্যাদার সাথে গত মঙ্গলবার রাতে পবিত্র শবে বরাত পালন করেছে।
পবিত্র শবে বরাত নিয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টিকারী অপশক্তি মসজিদে মসজিদে ও কিছু মিডিয়ায় অপপ্রচার করেও সুন্নাহ অনুসৃত সহীহ ধারার এবাদত-বন্দেগী থেকে দূরে রাখতে পারেনি এদেশের ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের।
বরং গত বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে বরাতের রজনীতে মুসল্লীগণের ঠাঁই হয়নি মসজিদ, কবরস্থান মাজার, দরবার এবং রাজপথ ও সড়কে। এমনকি ফজরের নামাজের সময়েও মসজিদে মসজিদে এবং দরবার ও খানকায় নামাজের জামাতে ঠাঁই হয়নি মুসল্লীদের। মহাখালীস্থ মসজিদে গাউসুল আজমে ফজর নামাযের জামাতে অংশ নেয়া মুসল্লীদের ঠাঁই হয়নি মসজিদের ভেতরে। বিপুল মুসল্লী ও মহিলা মুসল্লী নির্ধারিত পৃথক পৃথক স্থানের বাইরের অঙ্গণে এবং পথের উপর অবস্থান নিয়ে জামাতে অংশ নিয়েছে। রাজধানীর বাইরে প্রায় সারাদেশেই ছিল রাত জেগে এবাদত বন্দেগী।
শুধু তাই নয়, মুসল্লীদের অধিক আগ্রহের কারণে অনেক মসজিদ শবে বরাতের বিরোধী মত পোষণ করা সত্তে¡ও শবে বরাতের রাতে মসজিদ খোলা রাখতে বাধ্য হয়েছে। পরিস্থিতি এমন হচ্ছে ভবিষ্যতে শবে বরাতে নিয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টিকারী এবং অপপ্রচারকারীরা তাদের অপপ্রচার বন্ধ করে দিতে বাধ্য হবে। গুনাহ মাফ, রিজিক বৃদ্ধি, কবরের আযাব মাফ ও দীর্ঘায়ু লাভের তীব্র আকাক্সক্ষায় রাতভর জেগে নফল নামাজ, তেলাওয়াত, কবর-মাজার জিয়ারত, যিক্্র-আয্্কার, তসবীহ-তাহলীল, ওয়াজ-নসিহত এবং মিলাদ মাহফিল ও আখেরী মোনাজাতের মাধ্যমে বরকতময় রজনী অতিবাহিত হয়েছে। মিলাদ মাহফিল শেষে সর্বত্র দোয়া ও মোনাজাতে ইসলাম বিশ্বমুসলিম ঐক্য দেশের হেফাজত বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠা, সকল মুমিন মুসলমান তওবাকারী মুসলমানদের মুক্তি, বালা-মছিবত দূর রোগমুক্তি প্রত্যাশা পূরণ, পরিবার-পরিজনের গুনাহ মাফের জন্য আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের দরবারে করুণ আকুতি জানানো হয়। ধর্মপ্রণ মুসলমানেরা বরকতময় এ রাতে ঘর থেকে বের হয়ে নফল এবাদত বন্দেগীর জন্য মসজিদে, মাজারে, দরবারে এবং কবর জিয়ারতে বের হওয়ার কারণে শহর বন্দর ও গ্রামের রাতের চিত্র ছিলো ভিন্ন। জনস্রোতের কারণে রাজধানীর রাস্তা-সড়ক, অলিতে গলিতে ছিলো যানজট। রাজধানীর প্রায় সর্বত্রই মসজিদ, মাজার, দরবার, খানকা এবং কবর স্থানসমূহে ছিলো মুসল্লীদের উপচে পড়া ভীড়। কোথাও কোথাও বৃষ্টি উপেক্ষা করে প্রায় সারারাতই রাজধানীর রাজপথ সড়ক অলিগলি ছিলো মুসল্লীদের পদভারে প্রকম্পিত। শবে বরাত উপলক্ষে সকল অফিস-আদালত, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গতকাল ছিলো সরকারী ছুটি। প্রিন্ট মিডিয়ায় মঙ্গলবার ছিলো ছুটির দিন। সুন্নাতে রাসূল (সাঃ) হিসেবে প্রচলিত পবিত্র শবে বরাতের এবাদত সম্পর্কে অপপ্রচার সত্তে¡ও মুসল্লীগণ এদের অপপ্রচার আমলে না নিয়ে তা প্রত্যাখ্যান করে চলেছেন। ফলে যতই দিন গড়াচ্ছে, ততই এ মহিমাময় রজনীতে সারারাত জাগ্রত থেকে এবাদত বন্দেগীরত মুসল্লীদের সংখ্যা ক্রমেই বেড়ে চলেছে। ফলে রাজধানীর মসজিদগুলো এবাদত-বন্দেগীর জন্য আজ মুসল্লীদের ঠাঁই দিতে পারছে না।
পবিত্র শবে বরাত উপলক্ষে গত মঙ্গলবার আছরের নামাজের পর থেকেই গরীব এবং আত্মীয় স্বজনদের মধ্যে হালুয়ারুটিসহ বিভিন্ন খাদ্য সমগ্রী বিতরণ শুরু হয়। এ বিশেষ দিন উপলক্ষে বিভিন্ন কনফেকশনারী প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন আকারের এবং আকৃতির বনরুটি তৈরী করে বিক্রী করে। পবিত্র শবে বরাত উপলক্ষে পটকাবাজির জ্বালাতন ছিল না। পবিত্র শবে বরাত উপলক্ষে প্রিন্ট মিডিয়া বন্ধ থাকায় গতকাল বুধবার পত্রিকা প্রকাশ হয়নি। মঙ্গলবার প্রকাশিত পত্রিকাসমূহে পবিত্র শবে বরাতের সংবাদ গুরুত্ব দিয়ে ছাপা হয়। এছাড়া এ বিষয়ে বিশেষ নিবন্ধনও ছাপা হয়। বিভিন্ন ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া শবে বরাত উপলক্ষে প্রামাণ্য অনুষ্ঠান প্রচার করা হয়। শবে বরাত উপলক্ষে গতকাল সরকারী ছুটির দিন ছিলো। ফলে বিভিন্ন সরকারী ও বেসরকারী প্রতিষ্ঠান এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহ গতকাল বন্ধ ছিলো। বিভিন্ন রাজনৈতিক কার্যালয়ে রাজনৈতিক কর্মকাÐ ছিলো অনেকটা শিথিল। দিবসটি উপলক্ষে প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেত্রী পৃথক পৃথক বাণী দিয়েছিলেন।
মহাখালীস্থ মসজিদে গাউছুল আজম
পবিত্র শবে বরাত উপলক্ষে মহাখালীস্থ মসজিদে গাউছুল আযম ছিল ধর্মপ্রাণ মুসল্লীদের দ্বারা কানায় কানায় পূর্ণ। ঠাঁই ছিল না মসজিদ চত্বরেও। ঠাঁই নিতে হয়েছিলো রাজপথে। একই পরিস্থিতি ছিলো সংলগ্ন মহিলাদের পৃথক মসজিদেও। এ পরিস্থিতি ছিলো এশার নামাজের পর থেকে ফজর পর্যন্ত। বিপুল সংখ্যক মুসল্লী-মসজিদে অবস্থান করে রাতব্যাপী এবাদত বন্দেগী ওয়াজ মিলাদ ও দোয়ার মাহফিলে ছিলো মশগুল ফজর নামাজের জামাতেও মসজিদের অভ্যন্তরে মুসল্লীদের ঠাঁই হয়নি। মুসল্লীরা মসজিদের বাইরে, মসজিদ চত্বওে ও রাস্তায় অবস্থান নিয়ে জামাতে শরীক হয়েছেন। মহিলাদের জন্য পৃথক মসজিদে আগত মহিলা মুসল্লীগণের ঠাঁই ছিলো না। বাইরের পৃথক চত্বরে অবস্থান নিয়ে তারা এবাদত বন্দেগী করেছেন।
পবিত্র শবে বরাত উপলক্ষে মসজিদে গাউসুল আজমে এবারকার গণউপস্থিতি ও তরুণ মুসল্লীদের উৎসাহ উদ্দীপনা ছিলো চোখে পড়ার মতো। মহাখালী গুলশান, বনানী, বসুন্ধরা, বারিধারা ও পার্শ্ববর্তী এলাকাসমূহের লাখো মুসল্লী, বিশেষ করে নারী শিশু এবং তরুণদের উপস্থিতিতে মসজিদ কমপ্লেক্সে ছিলো উপচেপড়া ভীড়। নামাজে আসা একজন বুজুর্গ আলেম ও বিশিষ্ট আধ্যাত্মিক ব্যক্তি ইনকিলাবকে বলেন, সুযোগ পেলেই আমি এ মসজিদে চলে আসি। বিশেষ করে বরকতময় রাতগুলোতে এখানেই ইবাদত বন্দেগী করতে আসি। কারণ, এ মসজিদটির নির্মাণ হয়েছে বাগদাদের বড়পীর হযরত আব্দুল কাদের জিলানী (রহ:) এর ওয়াকফ তহবিল থেকে। মসজিদে গাউছুল আজমে বাদ এশা থেকে রাত ১টা পর্যন্ত দেশবরেণ্য বিশিষ্ট ওলামায়ে কেরামগণ পবিত্র শব-ই-বরাতের তাৎপর্য সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ বয়ান রাখেন ভান্ডারিয়া ছিদ্দিকিয়া মাদরাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা আবুল এরশাদ মোহাম্মদ সিরাজুম মুনীরা। উপস্থিত ছিলেন মাদরাসা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর মো, ছায়েফ উল্লা। সমন্বয় ও পরিচালনায় ছিলেন জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের মহাসচিব মাওলানা সাব্বির আহমদ মোমতাজী। উপস্থিত ছিলেন ইমাম হাফেজ মাওলানা মো, নুরুল ইসলাম ও হাফেজ মো. মিজানুর রহমান।
মাহফিলে ওয়ায়েজীনগণ বলেন, পবিত্র শবে বরাত, পবিত্র কুরআন হাদিসের অসংখ্য বর্ণনা অনুযায়ী মর্যাদাময় রাত। পবিত্র শবে বরাত যে মুসলিম উম্মাহর জন্য একটি বরকতময় ও ফজিলতপূর্ণ রাত এতে সন্দেহের কোন অবকাশ নেই। সকল অতীত ও বর্তমান মুফাসসিরীন ও মুহাদ্দিসীনে কেরাম এ রাতকে এক বাক্যে স্বীকার করে নিয়েছেন। শবে বরাতের রাতে মানুষের বার্ষিক ভাগ্যলিপি লিখা হয় এবং বিগত বছরের আমলনামা আল্লাহর দরবারে পেশ করা হয়। এক বছরের হায়াত মউত রিজিক দৌলত-, তথা ভাগ্য নির্ধারণ হয়। এই রাতে আল্লাহ পাক বান্দার দিকে বিশেষ রহমতের নজরে তাকান। এই রাতে ৭০ হাজার ফিরিস্তা নিয়ে জিব্রাঈল দুনিয়াতে আসেন এবং রহমত বণ্টন করেন। আরবের বণী কালব গোত্রের ৩০ হাজার বকরির পশমের সংখ্যারও অধিক গুনাহগারকে ক্ষমা করা হয় এ রাতে। এ রাতে কবিরা গুনাহ ব্যাতীত অন্যান্য গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হয় এবং তওবা করলে কবিরা গুনাহগারকেও ক্ষমা করা হয়।
রাজশাহী ব্যুরো জানায়, ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য পরিবেশের মধ্য দিয়ে রাজশাহীতে পবিত্র লাইুলাতুল বরাত উদযাপিত হয়েছে। নফল রোজা, জিকির আজকার, মিলাদ মাহফিল ও কবর স্থান জেয়ারত করে ধর্মপ্রাণ মানুষ। হযরত শাহ্ মখদুম (র) এর মাজারে ছিলো প্রচন্ড ভীড়। মসজিদে মসজিদে রাতভর চলে নামাজ আদায়। নগরীর সবকটি কবরস্থানে মানুষ তাদের স্বজনদের কবরের পাশে দাঁড়িয়ে তাদের জান্নাতুল ফেরদোসের জন্য মোনাজাত করে।
পাবনা জেলা সংবাদদাতা জানান, যথাযোগ্য মর্যাদায় এবং ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যেও মধ্য দিয়ে পাবনা পবিত্র লাইলাতুল বরাত বা শবে বরাত পালিত হয়েছে। বিভিন্ন মসজিদে ধর্ম প্রাণ মুসল্লীরা রাতভর ইবাদত বন্দেগী করেন। এর বাদ মাগরিব পবিত্র শবে বরাতের তাৎপর্য তুলে ধরে ইমামগণ বয়ান করেন। তারা বলেন, শাবান মাসের মধ্য রজনী পবিত্র শবে বরাত অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। এই রাতে মহান আল্লাহ রাব্বুল আল আমিন নিজে ‘তাঁর বান্দাদের আহŸান করেন এবং ক্ষমা করে দেন। সৌভাগ্য এবং নিষ্কৃতি পাওয়ার রাত নিয়ে যারা বিরোধিতা করেন, তারা অজ্ঞ এবং আল্লাহ রাব্বুল আল আমিনের পেয়ারা হাবিব রাছুল(সা:)-এর শরিয়ার পথে নেই। এরা পথভ্রষ্ট । পওে দেশ ও জাতির কল্যাণে এবং বিশ্বে নির্যাতিত মুসলমান ও অন্য ধর্ম গোষ্ঠীর মানুষদেও জুলুসবাজদের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য মহান আল্লাহ পাকের কাছে বিশেষ মোনাজাত করা হয়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।