দেশে দেশে রোজার উৎসব
মাহে রমজান আরবী নবম মাসের নাম। চাঁদের আবর্তন দ্বারা যে এক বৎসর গণনা করা হয়,
রাসূল (স:) এর মক্কা থেকে বায়তুল মোকাদ্দাছ গমন সেখান থেকে মহাশূন্য পাড়ি দিয়ে একে একে আকাশ সমূহ পরিভ্রমন, সিদরাতুল মুনতাহা গমন, জান্নাত জাহান্নাম পরিদর্শনসহ আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের নিদর্শন সমূহ দর্শন করে পুনরায় মক্কায় ফেরৎ আসাকে মেরাজ বলা হয়। আল্লাহপাক বলেন- মহামান্বিত (প্রভু) যিনি তার (এক) বান্দাকে রাতের বেলায় মসজিদে হারাম থেকে মসজিদে আকসায় নিয়ে গেলেন, যার পারিপার্র্র্শি^কতাকে আমি বরকত পুর্ণ করে রেখেছিলাম। আমি যেন তাকে আমার নিদর্শন সমূহ দেখাতে পারি। অবশ্যই তিনি সর্বশ্রোতা ও সর্বদ্রষ্টা (সুরা বনী ইসরাইল, আয়াত-১)। মেরাজের ঘটনা মোটামুটি মুসলমানগণ কম বেশী অবগত আছে। তাই মেরাজের মুল ঘটনা বিস্তারিত আলোচনা না করে মেরাজের ঘটনা শল্য চিকিৎসা, মহাকাশ গবেষণা সহ জ্ঞান বিজ্ঞানের গবেষণার দ্বার উন্মুক্ত করার পথিকৃত। মেরাজকে গবেষণা করেই আজকের জ্ঞান বিজ্ঞান উন্নতির স্তরে এসে পৌঁছেছে, এ বিষয়ে কিছু আলোকপাত করছি।
রাসুল (স:) বলেন- আমি কাবার হাতিমে শায়িত ছিলাম। আমার নিকট (ফিরিস্তা) আগমন করল। অতঃপর আমার বক্ষ থেকে পেটের নিচ পর্যন্ত বিদীর্ণ করল, জমজম পানি দিয়ে ধৌত করা হল এবং স্বর্ণের পাত্রে ঈমান ও হেকমত আনা হল তা আমাতে স্থাপন করা হল (মুসলিম)। চিকিৎসা বিজ্ঞানে অপারেশন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, মেরাজের ঘটনার পুর্বে অপারেশন বিষয়ে মানব জাতি ছিল অজ্ঞ, নবী (স:) এর বক্ষ বিদীর্ণ করা, অপারেশনের মাধ্যমে চিকিৎসার গবেষণার দ্বার উন্মুক্ত করে দেয়। স্বর্ণের পাত্র ব্যবহারের হেকমত হল অপারেশনের যন্ত্রপাতি ও পাত্র হতে হয় জীবানুমুক্ত। অন্যান্য পাত্র থেকে স্বর্ণের পাত্র জীবাণু মুক্ত করা সহজ। মূল্যবান স্বর্নের পাত্র ব্যবহার সম্ভব না হলেও জীবাণু মুক্ত পাত্র হিসেবে স্টেনলেস ষ্টিলের পাত্র অপারেশনের সময় ব্যবহৃত হচ্ছে। জমজমের পানি মোটামুটি জীবাণু মুক্ত, তা ব্যবহৃত হয়েছে অপারেশনের পর নবী (স:) এর বক্ষদেশে বা দেহে কোন চিহ্ন বিদ্যমান ছিলনা। এ গবেষণার ফলে বর্তমানে কসমেটিক সার্জারির উন্নয়ন ঘটানো হয়েছে। যাতে অপারেশনের পর কোন প্রকার চিহ্ন দেখা যায় না। এ ভ্রমণের পূর্বে অপারেশন করা ও হেকমত প্রবেশ করানো, এক স্থান থেকে অপর স্থানে ভ্রমণ ও সেখানকার আবহাওয়ার উপযোগী করা, তা থেকে আজকের মহাকাশচারীদের বিশেষ পোষাক, উপযোগী টিকা গ্রহণ, এমনকি হজে¦ গমনের সময় ম্যানেনজাইটিস টিকা দান আবিষ্কার হয়েছে। আরবের লোকের বাহন ছিল উট, ঘোড়া, গাধা ইত্যাদি। বোরাক নামক কোন বাহনের কথা তাদের ছিল সম্পূর্ণ অজানা। তৎসময়ে যে সাহিত্য চর্চা হত, সাহিত্যে বোরাকের কোথাও উল্লেখ ছিলনা। তৎসময়ে তাদের অভিধানে বোরাক নামক কোন বাহনের অস্তিত্ব ছিলনা। বোরাক শব্দের শাব্দিক অর্থ বিদ্যুৎ। বিদ্যুৎ চালিত বা বিদ্যুৎ গতির বাহনের মাধ্যমে তিনি বায়তুল্লাহ থেকে বায়তুল মোকাদ্দাছ পর্যন্ত ভ্রমন করেন। এ বাহন ও ভ্রমন মানব সভ্যতায় বিদ্যুৎ আবিষ্কার, বৈদ্যুতিক যানবাহন ও দ্রæতগতির যানবাহন আবিষ্কারের গবেষণার পথ উন্মুক্ত করে দেয়। ফলশ্রæতিতে বিদ্যুৎ আবিষ্কার ও আজকের পরিবহন সেবায় দ্রæত গতির যান বাহন আবিষ্কার সম্ভব হয়েছে।
বায়তুল মোকাদ্দাছ থেকে আকাশে আরোহনের জন্য চলন্ত সিড়ির ব্যবহার, সেখান থেকে আরো উর্ধ্বে আরোহনের জন্য ক্যাপসুল লিফ্ট (রফরফ) ব্যবহারের উল্লেখ করা হয়েছে। এ কথা সর্বজন বিদিত যে চলন্ত সিড়ি বা লিফট ব্যবহার দুরে থাক জাহেলী আরবে এ গুলো মানুষের কল্পনা শক্তির মধ্যে ও ছিলনা। এ যন্ত্র গুলোর ব্যবহারের উল্লেখ লিফট আবিষ্কার, বহুতল ভবন নির্মান ও তাতে আরোহনের জন্য ব্যবহৃত উপকরণ আবিষ্কারের পথকে উন্মুক্ত করেছে। জাহেলী আরবের লোক মহাশূন্যের দিকে যাওয়ার কল্পনাও করেনি কিন্তু মেরাজের ঘটনা মহাকাশ গবেষণা, মহাকাশে অভিযান ও আবিষ্কারের পথকে উন্মুক্ত করেছে। বিজ্ঞানী আইজাক নিউটনের সুত্রানুসারে মধ্যাকর্ষন শক্তি ডিঙ্গানো সম্ভব নয়। বিংশ শতাব্দী পর্যন্ত বিজ্ঞানীরা অনেকটা এ ধারণা পোষণ করত। তাহলে নবী (স:) এর মেরাজ গমন কেমন করে সম্ভব হল? সত্তরের দশকে বিজ্ঞানীরা চাঁদে পৌছানোর মাধ্যমে প্রমাণ করে মধ্যাকর্ষন শক্তি ডিঙ্গানো সম্ভব। গতি বিজ্ঞানীরা বলে- ঘন্টায় ২৫ হাজার মাইল বেগে উর্ধ্বাকাশে ছুটলে পৃথিবীর আকর্ষণ ভেদ করে উঠা সম্ভব। বিজ্ঞানী আইনস্টাইনের রিলেটিভিটি অফ টাইম তথা সময়ের আপেক্ষিকতার বিষয়টি মেরাজের ঘটনা বুঝতে সহায়ক। দ্রæত গতির রকেট আরোহীর সময় জ্ঞান আর একজন স্থিতিশীল পৃথিবীবাসীর সময় জ্ঞান এক নয়। রকেট আরোহীর দুই বছর পৃথিবীর দুইশত বছরের সমান হতে পারে। অপর দিকে উপরের দিকে উঠতে থাকলে বস্তুর ওজন ও কমে যেতে থাকে। বার হাজার মাইল উর্ধ্বে বস্তুর ওজন এক পাউন্ডের স্থলে এক আউন্স হয়ে যায়। ইচ্ছে করলে মহান রাব্বুল আলামিন কোন বাহন ছাড়া নবী (স:) এর দেহ মোবারককে শূণ্যে উঠিয়ে দ্রæত স্থানান্তরের মাধ্যমে মেরাজ সংগঠন করতে পারতেন কিন্তু তা না করে যন্ত্র বা বাহনের মাধ্যমে করিয় যেন একথা বুঝিয়ে দিলেন হে আমার বান্দারা তোমরা গবেষণা কর, গবেষণা করে এমন যন্ত্র আবিষ্কার কর যা দিয়ে মহাশূন্যে ভ্রমন করে গ্রহ, নক্ষত্র আবিষ্কারের মাধ্যমে আমার অসংখ্য কুদরত অবলোকন করতে পার।
বহু বছর আগের ইন্তেকাল হয়ে যাওয়া নবীদের সাথে সাক্ষাৎ, জান্নাত জাহান্নামের চিত্র দেখানো পূর্ববর্তী বিষয় নিয়ে গবেষণা, রেকর্ড যন্ত্র, ভিডিও যন্ত্রের আবিষ্কারের পথকে উম্মুক্ত করেছে। মেরাজ থেকে যখন ফিরে এলেন, এ ধরণের ঘটনা মক্কার কাফিররা বিশ^াস করল না, তারা নবী (স) কে মিথ্যাবাদী মনে করল। নবী (স) তাদেরকে এ অলৌকিক ঘটনা কিভাবে বিশ^াস করাবেন চিন্তিত হলেন, নবী (স) বলেন- আমাকে কুরাইশরা মিথ্যাবাদী মনে করল, আমাকে পরীক্ষা করার জন্য তারা একত্রিত হলে আমি কাবার হিজর নামক অংশে দাড়ালাম। আল্লাহপাক আমার সামনে সম্পূর্ণ বায়তুল মোকদ্দাছের চিত্র তুলে ধরলেন। তারা বায়তুল মোকাদ্দাছ এর বিভিন্ন বিষয় (দরজার সংখ্যা, জানালার সংখ্যা, রং, আশেপাশের জিনিস, নির্মাণ শৈলী) নিয়ে প্রশ্ন করল আর আমি দেখে দেখে তা বলে দিলাম (বোখারী)। দুরের জিনিস হুবহু চোখের সামনে দেখা থেকেই আজকের টেলিভিশন, ইম্যু,ই-মেইল, ইন্টারনেট, টেলিস্কোপ, মোবাইল ইত্যাদী আবিষ্কারের পথকে উম্মুক্ত করেছে। জাহেলী যুগের মানুষের যেখানে অক্ষর জ্ঞান ছিল সীমিত। জ্ঞান বিজ্ঞান বলতে কিছুই ছিলনা, মহাকাশ সম্পর্কে তারা ছিল সম্পূর্ণ অজ্ঞ। রাসুল (স) কখনো বায়তুল মোকাদ্দাছ গমন করেন নি। সে ক্ষেত্রে উল্লেখিত ঘটনা গুলোর বিষয়ে লেখার কলেবর বৃদ্ধি না করে সংক্ষেপে এতটুকু বলাই যথেষ্ট যে, মেরাজ জ্ঞান বিজ্ঞান গবেষণার পথিকৃত।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।