রামগতিতে আ.লীগ নেতাকে বহিষ্কার
লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার চরআলগী ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ায় ইউনিয়ন আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক সাহেদ আলী মনুকে দলীয় পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। গত
অর্থনৈতিক রিপোর্টার : বাংলাদেশে বোরো মৌসুমে হাইব্রিড ধান চাষের যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে। উপযুক্ত জাত, সঠিক সময়ে বীজ বপন, চারা রোপণ এবং উন্নত আন্তঃপরিচর্যার মাধ্যমে এই মৌসুমে হাইব্রিড ধান চাষ করে দেশের খাদ্য উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব। এরই প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট গত ২০১৬ সালে বোরো মৌসুমের জন্য স্বল্প মেয়াদী ও অধিক ফলনশীল একটি হাইব্রিড ধানের জাত উদ্ভাবন করেছে। যা ব্রি হাইব্রিড ধান৫ নামে জাতীয় বীজ বোর্ড ২০১৬ সালে সারা বাংলাদেশে চাষাবাদের জন্য চূড়ান্ত অনুমোদন লাভ করে।
এই জাতটির উল্লেখযোগ্য বেশিষ্ট্যÑ ব্রি হাইব্রিড ধান৫ বোরো মৌসুমের জন্য চাষ উপযোগী ব্রি উদ্ভাবিত একটি নতুন জাত। জাতটির কৌলিক সারি বিআর১৫৮৫এইচ। দেশীয় ভাবে উদ্ভাবিত পিতৃ ও মাতৃ সারি ব্যবহার করে উদ্ভাবিত তৃতীয় জাত এটি। পিতৃ-মাতৃ সারি দেশীয়ভাবে উদ্ভাবিত বিধায় জাতটির রোগ প্রতিরোধ ও বৈরী পরিবেশে খাপ খাওয়ানোর ক্ষমতা বেশি।
জাতটি নিয়ে যেকোন কৃষক ও নিবন্ধিত বেসরকারী প্রতিষ্ঠান বীজ উৎপাদন করতে পারবে। সেক্ষেত্রে ব্রির বিজ্ঞানীরা বিনামূলে বীজ কারিগরি সহায়তা দিবে। এমনকি কোন কৃষক যদি উদ্ভাবিত বীজ বিপনন করতে চাই তাহলে বিপনন সুবিধাও দিবে ব্রি। বিশেষ বৈশিষ্ট্যের কারনে জাতটি জনপ্রিয়তা পাবে। দানায় অ্যামাইলোজের পরিমান শতকরা ২৩-২৪ ভাগ। দানার আকৃতি সরু ও লম্বা এজন্য ভাত ঝরঝরে। দানায় প্রোটিনের পরিমান বেশি। এছাড়া জাতটির গাছের উচ্চতা ১০৫-১১০ সেন্টিমিটার।
ব্রির হাইব্রীড রাইস ডিভিশনের প্রধান ড. মো. জামিল হাসান বলেন, জাতটির ১৪৩-১৪৫ দিন জীবনকাল হলে কিছুটা ঘাত সহিষ্ণু। অর্থাৎ বেশি মাত্রায় শীত ও খরা হলে জাতটি সহনশীল হতে পারে। কান্ড শক্ত বিধায় সামান্য ঝড়েও ঢলে পড়ার সম্ভাবনা থাকে না। তাছাড়া গাছের গোড়া খয়েরী রং এর এবং দানায় কাঁচা অবস্থায় লাল বর্ণের টিপ বিদ্যমান থাকে। স্বাভাবিক অবস্থায় গাছ প্রতি গুচ্ছির সংখ্যা ১২-১৫টি থাকে বিধায় উচ্চ ফলন দিতে পারে। যে কোন জাতের চেয়ে এখনও পর্যন্ত এটিই সর্বোচ্চ ফলন দিতে সক্ষম হয়েছে। সঠিক পরিচর্চা ও নিয়মনীতি পরিপালন করলে হেক্টর প্রতি ১০ টনের ল্যান্ডমার্ক দীর্ঘস্থায়ী করা সম্ভব হবে।
গবেষকরা বলছেন, ধানটি আবাদ, পরিচর্যায় বিশেষ পদক্ষেপ নিতে হবে। বীজ বপন কাল অক্টোবর থেকে জানুয়ারী মাস। তবে ১৫ নভেম্বর থেকে ১৫ ডিসেম্বর উৎকৃষ্ঠ সময়। প্রতি হেক্টর (৭ দশমিক ৫ বিঘা) জমিতে মাত্র ১৫ কেজি বীজ প্রয়োজন। সবসময় রোদ্র থাকে এমন জায়গাতে বীজতলা তৈরী করতে হবে। বীজতলার মাটির উর্বরতার উপর নির্ভর করে পচা গোবর ও রাসায়নিক সার দিতে হবে। চারা রোপনের পর জমিতে সেচের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। তবে চারা রোপনের তিন সপ্তাহ পর ৫-৬ দিনের জন্য সেচ বন্ধ রেখে জমি একটু হালকা শুকানো যেতে পারে। হাইব্রীডসহ ধানের বিভিন্ন রোগের জন্য অতিরিক্ত ইউরিয়া সার ব্যবহার দায়ি। এ জন্য শেষ মাত্রার ইউরিয়া প্রয়োগে সর্তকতা অবলম্বন করতে হবে। ফুল আসার ৩০-৩৫ দিনপর ধান হলুদ হলে অর্থাৎ শীষের অগ্রভাগের শতকরা ৮০ ভাগ ধানের চাল শক্ত হলেই দ্রæত ফসল কর্তন করে ফসল ঘরে উঠাতে হবে। ধান কাটার পর সাথে সাথে মাড়াই করে শুকিয়ে নেয়া উত্তম। তবে ব্রি হাইব্রিড ধান৫ বীজ থেকে উৎপাদিত ধান কোনমতেই বীজ হিসাবে রাখা যাবে না কিংবা পরবর্তীতে বীজ হিসাবে ব্যবহার করা যাবে না। বীজ ও ধান উৎপাদনে আলাদা আলাদাভাবে করতে হবে। ঘাত সহিষ্ণু বিধায় জাতটি আবাদে সার ও অনান্য উপকরের ব্যবহার কম করতে হয়।
জানা গেছে, প্রতিষ্ঠার পর থেকে ব্রি এ পর্যন্ত ৯১ টি ধানের জাত উদ্ভাবন করেছে। এর মধ্যে ইনব্রীড ৮৫ টি এবং হাইব্রিড ৬টি। এসব জাতগুলোর মধ্যে বিভিন্ন ঘাত সহিষ্ণু বা লবনাক্ততা, খরা, জলমগ্নতা সহিষ্ণু জাত রয়েছে। এছাড়া উচ্চ প্রোটির ও জিঙ্গ সমৃদ্ধ এবং চাল রফতানি উপযোগি জাত রয়েছে। পরিবর্তনশীল জলবায়ুর জন্য ব্রি উদ্ভাবিত জাতগুলো মাঠ পর্যায়ে আবাদ করা হচ্ছে। দেশের প্রায় ৮০ ভাগ জমিতে ব্রি উদ্ভাবিত উচ্চফলনশীল ধানের চাষাবাদ করা হয়। এছাড়া দেশের মোট ধান উৎপাদনের শতকরা প্রায় ৯১ ভাগই ব্রি উদ্ভাবিত উচ্চফলনশীল ধানের জাত থেকে আসছে বলে জানান ব্রি’র মহাপরিচালক ড. মো. শাহজাহান কবীর। তিনি বলেন, প্রতিষ্ঠার পর থেকেই দেশে ধানের বিভিন্ন জাত উদ্ভাবনের মাধ্যমে চালের চাহিদা পূরনে কাজ করছে ব্রি। এরই ধারাবাহিকতায় হাইব্রীড জাতের ধান উদ্ভাবন ও কৃষকের মাঝে বিতরন করছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।