Inqilab Logo

রোববার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সাফল্যেও কৃষক পাচ্ছে না সুফল কোল্ড স্টোরেজ নির্মাণের দাবি

সংরক্ষণের অভাবে নষ্ট হচ্ছে মৌসুমি ফসল

| প্রকাশের সময় : ২৬ এপ্রিল, ২০১৮, ১২:০০ এএম

মাহফুজুল হক আনার, দিনাজপুর থেকে : দেশের কৃষি খাতে অভূতপূর্ব সাফল্য এসেছে। এখন শুধু ধান নয় গম, ভুট্টাসহ ব্যাপকহারে মৌসুমী ফসল উৎপাদিত হচ্ছে। এতসব সাফল্যের দাবিদার এদেশের সাধারণ কৃষক। সরকারীভাবে কৃষকদের ফসল উৎপাদনে সকল ধরনের সহযোগিতা প্রদান করা হচ্ছে। কিন্তু সাফল্যের শীর্ষে যেয়েও কৃষকেরা কাঁদছে। এর একমাত্র কারণ, বাজার অব্যবস্থাপনা। কেননা, উৎপাদনের পূর্ব শর্তই হচ্ছে সঠিক ব্যবহার ও সংরক্ষণ। সেটা জমিতে হোক বা মেশিনে হোক। এ কারণে উন্নত বিশ্বের শক্তিশালী দেশগুলি উৎপাদনের আগে সঠিক ব্যবহার ও সংরক্ষণ ব্যবস্থাকে গুরুত্ব দিয়ে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণ করে থাকে। সংরক্ষিত পণ্য দিয়ে বাই-প্রডাক্ট তৈরী করছে। তৈরীকৃত বাই প্রডাক্ট বিশ্বব্যাপী বাজারজাতের মাধ্যমে উৎপাদনকারীর ন্যায্য মুল্য নিশ্চিত করার পাশাপাশি জাতীয় অর্থনীতিকে মজবুত করে চলেছে। আধুনিক বিশ্বায়নে বাংলাদেশ কারিগরি দিক দিয়ে পিছিয়ে থাকলেও কোদাল-কাস্তে হাতে বাংলাদেশের কৃষকেরা প্রমাণ করে দিয়েছে বাংলাদেশের মাটি সোনার চেয়েও খাঁটি। আম, লিচু, টমেটোর মত পঁচনশীল মৌসুমী ফসলসমূহ সংরক্ষণের জন্য বিশেষায়িত কোল্ডস্টোরের অভাবে কৃষকের এই সাফল্য দুঃখে পরিণত হচ্ছে। গত এক দশকে কৃষি নির্ভর দিনাজপুর ও রংপুর অঞ্চলে সরকারি বা বেসরকারীভাবে নির্মিত হয়নি একটিও বিশেষায়িত কোল্ড ষ্টোর। আর সংরক্ষণের ব্যবস্থা না থাকায় দিনাজপুর অঞ্চলে উৎপাদিত হাইব্রিড জাতের টমেটো বিক্রি করতে না পেরে ফেলে দিতে বাধ্য হচ্ছে। গাছের টমেটো গাছেই পঁচছে। পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে যে, দিনাজপুরের পাইকারী বাজারে দুইটাকা কেজিতেও টমেটো কিনছে না ফড়েয়ারা। দুই মন টমেটো বিক্রি করে হাফ কেজি ছোট মাছ কেনা সম্ভব হচ্ছে না। অথচ সচের জন্য অন্যতম এই ফসলটি সংরক্ষণ করার মাধ্যমে কৃষকের ন্যায্য মুল্য প্রাপ্তি নিশ্চিত করার পাশাপাশি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র শিল্প প্রতিষ্ঠানও গড়ে উঠবে।
গত ৮-১০ বছর ধরে ধান, গম ভুট্টার পাশাপাশি দিনাজপুরে টমেটো আবাদ বেড়ে গেছে। সদর, বিরল, চিলিবন্দরসহ দিনাজপুরের প্রতিটি এলাকায় টমেটোর আবাদ হচ্ছে। কৃষাণ বাজার, পাঁচবাড়ী, রানীরবন্দরসহ কয়েকটি এলাকায় আড়ত গড়ে উঠেছে। দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে বেপারী এসব আড়তে টমেটো কিনে ¯ু‘প করছে। দিন শেষে বাছাই করে প্লাস্টিকের ঝুড়ি ভর্তি করে তা ট্রাকে তুলে নিয়ে যাচ্ছে। দিনের প্রথমভাগে সকালে ১৬০ থেকে ১৮০ টাকা মন অর্থাৎ ৪ থেকে সাড়ে ৪ টাকা কেজি দরে টমেটো বিক্রি হচ্ছে। দুপুর গড়াতেই ফড়েয়াদের চাহিদা শেষ হওয়ার পর ১’শ টাকা মন অর্থাৎ প্রতি কেজি আড়াই টাকায় বিক্রি হয় না। এত কম দামে টমেটো বিক্রি করে কৃষকের উৎপাদন খরচ পরের কথা ক্ষেত থেকে তোলা ও বাজারে আনার খরচও উঠে না। রাজবাড়ী থেকে আসা এক ব্যাপারী জানালেন যানজটের কারনে দিনাজপুর থেকে ট্রাক ভর্তি করে টমেটো নিয়ে যেতে যেতেই অর্ধেক পঁচে যাচ্ছে। বাংলাদেশ কৃষক সমিতি দিনাজপুর জেলা শাখার সভাপতি বদিউজ্জামান বাদল বললেন, কৃষক কষ্ট করে ফসল ফলাচ্ছে-দেশকে স্বাবলম্বী করছে। কিন্তু কেবলমাত্র সংরক্ষণের ব্যবস্থা না থাকায় টমেটো পানির দামে বিক্রি হচ্ছে। উচ্চ ফলনশীল ফসল টমেটো শুধু খাওয়ার জন্য নয়-টমেটো সস এর অন্যতম উপাদান। সস এর চাহিদা সারা বিশ্বে রয়েছে। ব্যাপক চাহিদার কারনে অনেক নামী দামী কোম্পানীর পাশাপাশি হোম মেড হিসাবে সস তৈরী হচ্ছে। সকল ধরনের ¯œ্যাক এর সাথে টমেটো সস থাকবেই। এত চাহিদা থাকার পরও টমেটো বিক্রি হচ্ছে না। এর একমাত্র কারণ দ্রæত পঁচনশীল টমেটো কিনে সংরক্ষণ করবে কিভাবে।
দিনাজপুর হর্টিকালচার সেন্টার এর উপ-পরিচালক কৃষিবিদ প্রদীপ কুমার গুহ জানান, তার মতে মুল্য না পাওয়ায় গত বছরের চেয়ে এবার ৮’শ হেক্টর জমিতে কম আবাদ হয়েছে। এবার দিনাজপুরে ১১৫০ হেক্টর জমিতে টমেটো আবাদ হয়েছে। যা থেকে ৬০ হাজার মেট্রিক টন টমেটো উৎপাদন হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
কয়েক সপ্তাহ পর বাজারে আসবে লাল টসটসে রসালো লিচু। দিনাজপুর থেকে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে এই লিচু বাজারজাত হয়। মাত্র ১৫ থেকে ২০ দিন স্থায়ী এই মৌসুমী ফসল উৎপাদনের তুলনায় তাৎক্ষণিক বাজারজাতের পার্থক্য অনেক। তাই এটা সংরক্ষণ ছাড়া লিচু ধরে রাখার কোন ব্যবস্থা না থাকায় কৃষককে পানির দামে বিক্রি অথবা দান করা ছাড়া কোন উপায় থাকে না। গত দু’বছর ধরে লিচু পাক ধরছে পবিত্র রমযান মাসে। সিয়াম সাধনার এই মাসে লিচু’র চাহিদাও কম হয়ে থাকে। চলতি বছর শুধু দিনাজপুরেই ৫ হাজার হেক্টর জমিতে লিচু আবাদ হয়েছে। যা থেকে ২৮ হাজার মেট্রিক টন লিচু উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে। আশপাশের জেলাগুলিতেই লিচু আবাদ হচ্ছে ব্যাপকভাবে। কিন্তু সংরক্ষণের ব্যবস্থা না থাকায় মৌসুমের দশ দিন পর বাজারে লিচু থাকে না।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: কৃষক


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ