পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বাংলাদেশি নাগরিকত্ব বর্জন বিষয়ে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমের দেখানো নথিতে ১৩টি বড় ধরনের ভুল রয়েছে। আর এজন্যই এই নথিকে রহস্যজনক বলে দাবি করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। নথিটি দেখিয়ে তিনি বলেন, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী যে নথিটি দেখিয়েছেন, সেখানে ১৩টি বড় ভুল রয়েছে। ব্রিটিশ সরকারের পক্ষে এমন ভুল করা অস্বাভাবিক। গতকাল (মঙ্গলবার) সকালে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব এসব কথা বলেন। মির্জা ফখরুল বলেন, ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্র বিভাগের বরাত দিয়ে অসংখ্য ভুলে ভরা এক লাইনের রহস্যজনক একটি চিঠির ফটোকপি দিয়ে প্রতিমন্ত্রী শাহারিয়ার আলম অপপ্রচার চালাচ্ছেন। এটি রাজনৈতিক মূর্খতা এবং উদ্দেশ্যমূলক অপপ্রচার ছাড়া আর কিছু হতে পারে না। কি বিচিত্র এই সরকার! কি দুর্বল তাদের অপকৌশল!
গত শনিবার লন্ডনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সম্মানে যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগ আয়োজিত সংবর্ধনা সভায় পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম বলেন, ২০১২ সালে লন্ডনে হাইকমিশনে নিজের পাসপোর্ট জমা দিয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বাংলাদেশের নাগরিকত্ব ছেড়েছেন। তার এই বক্তব্যকে কেন্দ্র করে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীকে গত সোমবার তারেক রহমানের পক্ষে বিএনপির আইনবিষয়ক সম্পাদক কায়সার কামাল লিগ্যাল নোটিশ পাঠিয়েছেন। ডাকযোগে পাঠানো নোটিশে শাহরিয়ার আলমকে ১০ দিন সময় দেয়া হয়। এর মধ্যে তারেক রহমান ‘নাগরিকত্ব বর্জন’ করেছেন প্রমাণ দেখাতে না পারলে প্রকাশে দুঃখ প্রকাশ করতে বলা হয়েছে। অন্যত্থায় আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের কথা জানিয়েছে তার আইনজীবী।
এরপর সোমবার রাতে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম তার বাসায় সংবাদ সম্মেলনে দাবি করেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান যুক্তরাজ্যের স্বরাষ্ট্র দফতরের কাছে তার পাসপোর্ট হস্তান্তর করেছেন। তিনি প্রশ্ন তোলেন, এর অর্থ কী দাড়ায়? আমি মনে করি, এটি হচ্ছে নাগরিকত্বকে অস্বীকার করা। তার এমন দাবির বিষয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর দেখানো নথি দেখিয়ে বলেন, এমন ভুলে ভরা নথি যুক্তরাজ্যের স্বরাষ্ট্র বিভাগের হতে পারে না।
নথিতে ১৩টি ভুল:
পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর দেখানো এক লাইনের নথিতে ১৩টি ভুল রয়েছে জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, নথির শুরুতেই ডিপার্টমেন্টের নাম ভুল লেখা হয়েছে। চিঠিতে লেখা আছে ইমিগ্রেশন এন্ড এনফোর্সমেন্ট। কিন্তু হবে ইমিগ্রেশন কমপ্লাইন্স এন্ড এনফোর্সমেন্ট। ব্রিটেন হেড অফিসের যে ঠিকানা ব্যবহার করা হয়েছে তার হোল্ডিং নাম্বারের পর কমা ব্যবহার করা হয়েছে। সাধারণত ব্রিটিশ ইংলিশে হোল্ডিং নাম্বারের পর কমা ব্যবহার করা হয় না। আবার স্থানের নামের পর কমা ব্যবহারের রীতি থাকলেও চিঠিতে সেটি ব্যবহার করা হয়নি। সবচেড়ে বড় ভুলগুলোর একটি হচ্ছে চিঠিতে লেখা আছে, ‘বাংলাদেশী অ্যাম্বাসি’। কিন্তু, কমনওয়েলথভুক্ত সকল দেশের দূতাবাসকে বলা হয় ‘হাইকমিশন অব বাংলাদেশ’। যেটা চিঠিতে ভুলভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। আবার বাংলাদেশি দূতাবাস লেখার পর এর নিচে যে ঠিকানা ব্যবহার করা হয়েছে (কুইন্স গেইট) সেখানেও রয়েছে কুইন্স বানান ভুল। বিএনপি মহাসচিব চিঠিটি ভালোভাবে দেখতে বলে জানান, ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্র বিভাগের চিঠিতে ফোন ও ফ্যাক্স নাম্বার কখনই বোল্ড করে ব্যবহার করা হয় না। কিন্তু পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর দেখানে নথিতে সেটা দেখা যাচ্ছে বোল্ড করা। তারিখ লেখার ক্ষেত্রেও ভুল করা হয়েছে চিঠিতে। ওই দেশে তারিখের পর মাসের নাম উল্লেখ করে পুরো সাল (যেমন ০২ জুন ২০১৪) লেখা হয়। কিন্তু চিঠিতে লেখা হয়েছে ০২.০৬.১৪।
বিএনপি মহাসচিব চিঠিতে সম্বোধনের বিষয়টি পড়তে গিয়ে হেসে হেসে বলেন, সব চিঠিতেই ডিয়ার স্যার সম্বোধন করা হয়। কিন্তু প্রতিমন্ত্রীর দেখানো চিঠিতে সম্বোধন দেখেন, লেখা হয়েছে ডিয়ার স্যারস। আবার চিঠিতে চারজনের নাম উল্লেখ করে পাসপোর্ট জমা নেয়ার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু নিচে আবার লেখা হয়েছে একটি পাসপোর্ট। মির্জা ফখরুল চিঠির শেষাংশে ‘ফেইথফুলি’র এফ বড় হাতের অক্ষর দিয়ে লেখা হয়েছে দাবি করে বলেন, ব্রিটিশরা এটা কখনোই লিখবে না। এখানে ছোট হাতের এফ হবে। আবার চিঠিতে যিনি স্বাক্ষর করেছেন, তার কোনো নাম নেই। আর এসব বিবেচনায় চিঠি নিয়ে যথেষ্ট রহস্য রয়েছে।
মির্জা ফখরুল আরও বলেন, জন্মসূত্রে বাংলাদেশী নাগরিক বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পাসপোর্ট যুক্তরাজ্যের স্বরাষ্ট্র দফতরের মাধ্যমে লন্ডনে বাংলাদেশ হাইকমিশনে জমা দেয়ার একটি নথি দেখিয়ে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী যে অদ্ভুত, যুক্তিহীন ও বেআইনী মন্তব্য করেছেন-আমরা তার তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানাচ্ছি। তিনি বলেন, কি কি কারণে একজন নাগরিক জন্মসুত্রে প্রাপ্ত নাগরিকত্ব হারাতে পারেন-এটাও যিনি জানেন না-তেমন একজন ব্যক্তির শুধু এধরণের অনির্বাচিত সরকারের মন্ত্রী পদে থাকা সম্ভব এবং তা জাতির জন্য লজ্জাজনক।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, অবৈধ ফখরুদ্দিন-মঈনউদ্দিন সরকারের নৃশংস রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হয়ে পঙ্গু অবস্থায় সুচিকিৎসার জন্য আদালতের অনুমতিক্রমে তারেক রহমান ২০০৮ সালে লন্ডনে যান এবং পুরোপুরি সুস্থ না হওয়ায় এখনও সেখানে তাঁর চিকিৎসা চলছে। ইতোমধ্যে তাঁর অনুপস্থিতিতে তাঁকে আত্মপক্ষ সমর্থনের কোন সুযোগ না দিয়ে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, মিথ্যা ও বানোয়াট মামলায় তাঁকে কারাদÐ দেয়া হয়েছে। সরকারের শীর্ষ ব্যক্তি থেকে শুরু করে মন্ত্রী, নেতা-পাতি নেতারা প্রতিনিয়ত তারেক রহমানের বিরুদ্ধে কুৎসা রটনা করলেও দেশের জনগণ যাতে তারেক রহমানের জবাব শুনতে না পারে সেজন্য দেশের সকল প্রচার মাধ্যমে তার বক্তব্য প্রকাশ ও প্রচার নিষিদ্ধ করে বাক স্বাধীনতার মতো মৌলিক মানবাধিকার থেকে তাঁকে বঞ্চিত করে বিশে^ এক নিকৃষ্ট দৃষ্টান্ত স্থাপন করা হয়েছে। সরকার ও সরকারি দলের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের বক্তৃতা-বিবৃতিতে এটা স্পষ্টত:ই প্রমানিত যে, দেশে তারেক রহমানের জীবন নিরাপদ নয়। এই অবস্থায় তারেক রহমান বিশ্বের অসংখ্য বরেণ্য রাজনীতিবিদ, সরকার বিরোধী বিশিষ্ট ব্যক্তিদের মতোই সাময়িকভাবে বিদেশে রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়েছেন এবং সঙ্গত কারনেই তা পেয়েছেন। এই প্রক্রিয়ার স্বাভাবিক অংশ হিসেবেই তিনি যুক্তরাজ্যের স্বরাষ্ট্র বিভাগে তাঁর পাসপোর্ট জমা দিয়েছেন। সে দেশে প্রচলিত আইন অনুযায়ী তাঁর পাসপোর্ট জমা রেখে তাঁকে ট্রাভেল পারমিট দেয়া হয়েছে। কাজেই এই মূহুর্তে বাংলাদেশের পাসপোর্ট তাঁর কোন কাজে লাগছে না। যখনই তিনি দেশে ফেরার মতো সুস্থ হবেন তখনই তিনি দেশের অন্যান্য নাগরিকের মতোই পাসপোর্টের জন্য আবেদন জানাতে এবং তা অর্জন করতে পারবেন। কাজেই ¯্রফে রিটেনশন অর্থাৎ জমা রাখার জন্য বৃটিশ স্বরাষ্ট্র বিভাগ থেকে তাঁর পাসপোর্ট লন্ডন হাইকমিশনে পাঠানোর যে তথ্য প্রচার করা হচ্ছে তার দ্বারাও কোন আইন কিংবা যুক্তিতে প্রমাণ হয় না যে, তিনি বাংলাদেশের নাগরিকত্ব পরিত্যাগ করেছেন। এ ধরণের উদ্ভট ধারনাকে তত্ত¡ কিংবা তথ্য হিসেবে সাংবাদিকদের সামনে উপস্থাপন কিংবা ফেইসবুকে প্রচার রাজনৈতিক মূর্খতা এবং উদ্দেশ্যমূলক অপপ্রচার ছাড়া আর কিছু হতে পারে না।
বিএনপির এই নেতা বলেন, জনগণের কষ্টার্জিত বিপুল পরিমান অর্থ ব্যয় করে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে লন্ডন সফরকারী বিশাল বহরের একমাত্র অর্জন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর সংগ্রহ করা তারেক রহমানের ২০০৮ সালে ইস্যু করা পাসপোর্টের ৩টি পাতা এবং বৃটিশ স্বরাষ্ট্র বিভাগের অসংখ্য ভুলে ভরা এক লাইনের রহস্যজনক একটি চিঠির ফটোকপি। তারেক রহমান জন্মসূত্রে বাংলাদেশের একজন গর্বিত নাগরিক। তিনি তাঁর এই প্রিয় দেশের নাগরিক ছিলেন, আছেন এবং থাকবেন।
এসময় সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, নজরুল ইসলাম খান, ভাইস-চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, আবদুল আউয়াল মিন্টু, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, আইনবিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম প্রমুখ।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।