মটর সাইকেল: নিউ নরমাল পরিস্থিতিতে (নতুন বাস্তবতায়)
মটরসাইকেল নিরাপদ, অধিক সুবিধাজনক, খরচ এবং সময় বাঁচায়। গণপরিবহনে একে অন্যের গা ঘেঁষে চলাচলে প্রতিদিন
হেলেনা জাহাঙ্গীর
ঢাকা সিটি করপোরেশনের খেলার মাঠগুলো ক্রমাগত বেদখল হয়ে হারিয়ে যাচ্ছে। খোলা জায়গায় বস্তি গড়ে ওঠায় শিশু-কিশোরদের খেলার সুযোগ ক্রমান্বয়ে হ্রাস পাচ্ছে। রোবটের মতো যান্ত্রিকভাবে বড় হয়ে উঠছে তারা। সুষ্ঠু বিনোদনের ব্যবস্থা না থাকায় বিপথগামী হওয়ার আশঙ্কা সৃষ্টি হচ্ছে। নগর সভ্যতার দাপটে রাজধানী থেকে হারিয়ে যাচ্ছে খেলার মাঠ। মাঠ হারিয়ে যাওয়ায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজš§।
ঢাকায় চিত্ত বিনোদনের জন্য খেলার মাঠ, পার্ক সঙ্কুচিত হয়ে পড়ায় শিশু-কিশোররা বন্দি হয়ে পড়ছে চার দেয়ালের মধ্যে। বাইরে খেলার সুযোগ না থাকায় তাদের ঘরোয়া পরিবেশেই সময় কাটাতে হচ্ছে। শিশু-কিশোররা হয়ে পড়ছে টিভি-কম্পিউটার, ভিডিও গেমসনির্ভর।
দেড় কোটি মানুষের এই মহানগরীতে খেলার মাঠ একেবারেই নগণ্য। ঢাকা সিটি করপোরেশনের সিটিজেন চার্টার অনুযায়ী শিশু-কিশোরদের বিনোদনের জন্য প্রতিটি ওয়ার্ডে একটি করে খেলার মাঠ থাকার কথা। আর রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নীতিমালা অনুযায়ী আবাসিক এলাকার প্রতিটি সেক্টরে একটি খেলার মাঠ রাখার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু কোনো ক্ষেত্রেই এ নিয়ম মানা হচ্ছে না। রাজধানীতে এক সময় প্রতিটি ওয়ার্ডে একাধিক খেলার মাঠ থাকলেও এখন অবস্থা একেবারেই নাজুক।
ডিসিসির খেলার মাঠ ছাড়া পাড়া-মহল্লার মাঠগুলোয় ঘাসের অভাব ও বাউন্ডারি না থাকা, তদারকির অভাব, মেলার জন্য স্টল বরাদ্দের কারণে শিশু-কিশোররা এসব মাঠে খেলার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়। মাঠে খেলা ছাড়াই বড় হতে হচ্ছে ঢাকার শিশু-কিশোরদের। খেলার জন্য মাঠ না পেয়ে ঢাকার শিশুদের বাড়ির ছাদ, গ্যারেজ কিংবা বারান্দাতেই খেলতে হচ্ছে।
শিশুর দৈহিক, মানসিক ও সামাজিক বিকাশের জন্য খেলাধুলার চর্চা অত্যন্ত জরুরি। এ লক্ষ্যে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ও ঢাকা সিটি করপোরেশন রাজধানীতে ১০টি খেলার মাঠ তৈরি করে দেয়। মাঠগুলো হচ্ছে- বাংলাদেশ মাঠ (পূর্বতন পাকিস্তান মাঠ), গোলাপবাগ মাঠ, বাসাবো মাঠ, লালবাগ মাঠ, কিল্লারমোড় মাঠ, ধূপখোলা মাঠ, ধানমন্ডি মাঠ, কলাবাগান মাঠ, বনানী মাঠ ও গুলশান সেন্ট্রাল পার্ক মাঠ।
মনোরোগ বিশেষজ্ঞদের মতে শিশুদের বেড়ে ওঠার জন্য খেলাধুলার প্রয়োজন। খেলার মাধ্যমে তাদের মগজে রক্তসঞ্চালন ভালো হয়। শৈশবে খেলার চর্চা না থাকলে শিশুদের আত্মবিশ্বাসের অভাব থেকে যায়। এ থেকে সহজেই তাদের পরাজয়বরণের মানসিকতা তৈরি হয়।
পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী রাজধানীর ৯৩টি ওয়ার্ডে এখন খেলার মাঠ সর্বসাকুল্যে ২২টি। রাজধানীর খেলার মাঠ শুধু নয়, শিশুদের খেলার জায়গাগুলো ক্রমান্বয়ে অপদখল হয়ে যাচ্ছে। মাঠ দখল করে প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতারা গড়ে তুলছেন দোকানপাট। রাজধানীতে খোলা জায়গা বা খেলার মাঠের অভাব থাকলেও ডিসিসি ১১টি খালি জায়গা নামমাত্র মূল্যে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে লিখে দিয়েছে। এ লিখে দেওয়ার অন্তরালে কর্তাব্যক্তিদের পকেট স্ফীতের ঘটনা ঘটেছে এমন গুঞ্জনও কম নয়।
আশার কথা হচ্ছে সম্প্রতি ঢাকা সিটি করপোরেশন মহানগরের ১১টি খেলার মাঠ অবৈধ দখলদারদের কাছ থেকে মুক্ত করা হয়েছে। এই ১১টি মাঠের মোট আয়তন ২৭.৭ একর। বহুদিন থেকে রাজধানীর খেলার মাঠগুলো ছেলেমেয়েদের খেলাধুলা ও বিনোদনের জন্য উš§ুক্তের দাবি করা হচ্ছিল। এসব মাঠে ছিন্নমূল মানুষ থাকত ও নানা ধরনের যানবাহন পার্ক করে রাখা হতো। কোন কোন মাঠে দোকানপাটও ছিল। মহনগরীর প্রভাবশালী ব্যক্তিরা বিভিন্নভাবে এগুলো দখল করে রেখেছিল।
রাজধানীর খোলা জায়গা রক্ষায় এখনই পদক্ষেপ নেওয়া দরকার। খেলার মাঠ ও পার্ক অপদখলের বিরুদ্ধেও নেয়া দরকার কড়া পদক্ষেপ। কোনো সরকারি খোলা জায়গায় যেন বস্তি গড়ে না ওঠে সে দিকেও নজর দেয়া দরকার।
শিশু-কিশোরদের অধিকার রক্ষাই শুধু নয়, রাজধানীতে স্বস্তিকর পরিবেশ বজায় রাখতেই পর্যাপ্ত উš§ুক্ত স্থান থাকা দরকার। সিটি করপোরেশনের প্রাথমিক দায়িত্বের মধ্যেই পড়ে পার্ক ও খেলার মাঠ রক্ষণাবেক্ষণ। আর সবগুলো মাঠকে দখলদারমুক্ত করে বিনোদনের ব্যবস্থা করার দায়িত্ব সরকারেরই। আশা করি সরকার ভবিষ্যৎ প্রজš§কে ক্ষতির হাত থেকে বাঁচাতে জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।
ষ লেখক : চেয়ারম্যান, জয়যাত্রা ফাউন্ডেশন
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।