Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

রাজধানীতে মশার উৎপাত

প্রকাশের সময় : ৬ এপ্রিল, ২০১৬, ১২:০০ এএম

ইফতেখার আহমেদ টিপু
মশার উৎপাতে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে রাজধানীবাসী। বাসাবাড়ি, অফিস-আদালত, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, কর্মস্থল সর্বত্রই দাপিয়ে বেড়াচ্ছে মশা। রাতে তো বটেই দিনের বেলায়ও চলছে তার সমানে আনাগোনা। মশারি টানিয়ে, কয়েল জ্বালিয়ে কিংবা মশানাশক ওষুধ স্প্রে করেও রক্ষা পাচ্ছে না সাধারণ মানুষ। মশা নিধনের দায়িত্ব সিটি করপোরেশনের। সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে মশা নিধনের ওষুধ ছিটানো হলেও তা পরিমাণে আরো বাড়াতে হবে। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার পুকুর-ডোবা, নালা-নর্দমার কচুরিপানা ও ময়লা পরিষ্কার না করায় সেগুলো মশা উৎপাদনের খামার হিসেবে বিরাজ করছে। মশা নিধনের জন্য যে ওষুধ ছিটানো হচ্ছে তার কার্যকারিতা নিয়েও প্রশ্ন কম নয়।
দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়রও এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, স্প্রেম্যানরা ওষুধ ছিটানোর পর মশা মাটিতে পড়ে গেলেও কিছুক্ষণ পর আবার ঠিকই উড়ে যায়। তার মতে, রাজধানীর মশা একেবারে নির্মূল করা সম্ভব নয়। কারণ আশপাশ এলাকা থেকেও মশা রাজধানীতে আসে। মশা নিধনে চলতি বছর বরাদ্দ করা হয়েছে ৩০ কোটি টাকা। টাকার এ পরিমাণ গত বছরের চেয়ে ১১ কোটি বেশি। কিন্তু বরাদ্দ বাড়লেও মশা নিধনে দৃশ্যমান সাফল্য অর্জিত হচ্ছে না।
দক্ষিণ সিটি করপোরেশন অধিক মশাপ্রবণ এলাকাকে ‘রেড’, মাঝারি এলাকাকে ‘ইয়লো’ এবং কম মশাপ্রবণ এলাকাকে ‘গ্রিন’ জোনে ভাগ করে মশা নিধন কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নের চেষ্টা করছে। পুকুর-ডোবার কচুরিপানা অপসারণ করে পোড়া মবিল ছিটানোর পরিকল্পনা নিয়েছে তারা। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন মশা নিধনে ক্রাশ প্রোগ্রাম গ্রহণ করেছে। উদ্যোগের অভাব না থাকলেও রাজধানীর দেড় কোটি মানুষকে মশার উপদ্রব থেকে রক্ষা করতে গিয়ে দুই সিটি করপোরেশনই হিমশিম খাচ্ছে। মশা নিধনে শুধু তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ নয়, স্থায়ী পরিকল্পনা নিতে হবে। রাজধানীর ডোবানালা ও নোংরা জলাশয়গুলো যাতে মশা উৎপাদনের খামার হয়ে না ওঠে সে দিকে নজর দিতে হবে। নগরীকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে নাগরিকদেরও উদ্বুদ্ধ করতে হবে। মশা নিধনে শুধু বরাদ্দ বৃদ্ধি নয়, প্রয়োজন সব পক্ষের সচেতনতা। রাজধানী এবং ধারেকাছের ডোবানালা পরিষ্কার রাখার উদ্যোগ নেয়া হলে মশার উৎপাত শতভাগ দূর না হলেও নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হবে।
মশক নিয়ন্ত্রণ করতে হলে মশার লার্ভার বিস্তার রোধে আগে থেকেই ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হয়। সুষ্ঠু তদারকি এবং সমন্বিত ব্যবস্থাপনা ছাড়া মশক নিধনে কার্যকর সুফল পাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। মশা নিধন ছাড়া এর হাত থেকে মুক্তি পাওয়ার কোনো উপায় নেই। সে কারণেই সচেতনতার কোনো বিকল্প নেই। এখন সিটি কর্পোরেশনগুলোর জনবল কম নয়। সেইসাথে জনসাধারণের সচেতনতাও অত্যন্ত জরুরি। বাড়ির আশপাশ পরিষ্কারসহ সার্বিক পরিচ্ছন্নতার দিকে নজর দেয়া অপরিহার্য। কোনো বিশেষ সময়ে বিশেষ ঘোষণা দিয়ে কর্মসূচি পালনের চেয়ে বছরব্যাপী সুনির্দিষ্ট কর্মসূচি চালিয়ে নেয়া মশক নিধনে কার্যকর সুফল দিতে পারে। একটি আধুনিক নগরী গড়ে তুলতে সার্বিক পরিচ্ছন্নতার দিকে নজর দেয়া গেলে তার প্রভাব মশক নিধনেও পড়তে বাধ্য। সরকারি-বেসরকারি সকল মহলের সমন্বিত ও আন্তরিক উদ্যোগের মাধ্যমে নগরবাসী তথা দেশবাসী মশার উপদ্রব থেকে রক্ষা পাবে, এটাই প্রত্যাশিত।
আরেকটি বিষয় হচ্ছে, মশার কামড়ের মাধ্যমে ছড়ায় জিকা ভাইরাস। এ নিয়ে বিশ্বব্যাপী আতঙ্ক কাজ করলেও বাংলাদেশে শঙ্কার কিছু নেই বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, জিকা ভাইরাস নিয়ে ভয়ের কিছু নেই। সতর্কতা অবলম্বন করলেই এ ভাইরাস থেকে মুক্ত থাকা সম্ভব। তবে আশঙ্কার বিষয়, কোনো গর্ভবতী মা যদি জিকা ভাইরাসে আক্রান্ত হন তাহলে তার পেটের সন্তানের ক্ষতি হয়। গর্ভের সন্তানের মাথা অস্বাভাবিক ছোট, বিকলাঙ্গ হওয়াসহ নানা জটিলতার সৃষ্টি হয়। জিকা ভাইরাস প্রথম শনাক্ত হয় বানরের শরীরে। কিন্তু কখনও সেটি মহামারি আকারে ছড়ায়নি। তবে গত বছরের মাঝামাঝি ব্রাজিলে শনাক্ত হওয়ার পর এরই মধ্যে ব্রাজিলসহ আশপাশের ২৩টি দেশে ছড়িয়েছে এই ভাইরাস। জিকার কোনো প্রতিষেধক এখনও আবিষ্কার হয়নি। জাতিসংঘের বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থাও ইতিমধ্যে এ ভাইরাস সম্পর্কে আন্তর্জাতিক সতর্কতা জারি করেছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পুরুষ কিংবা স্বাভাবিক নারীদের ক্ষেত্রে জিকা নিয়ে কোনো সমস্যা নেই। এটা এডিস মশাবাহিত এবং লক্ষণগুলো আমাদের দেশের ডেঙ্গুর মতো মারাত্মক নয়। বর্তমানে বাংলাদেশ একেবারেই মুক্ত জিকা থেকে। তবে কোনো নারী যদি আফ্রিকাসহ আক্রান্ত দেশসমূহ থেকে গর্ভবতী হয়ে আসেন, তাহলেই কেবল ভয় আছে। কারণ আমাদের দেশে মশক নিধন কর্মসূচি জোরালো নয়। এটি আরো বেগবান করতে হবে। মশা অনেক রোগেরই জন্ম দেয়। সাধারণত বদ্ধ পানিতে মশকরা জন্ম নেয়। এসব জায়গায় মশক নিধনের কর্মসূচি জোরে সোরে চালাতে হবে। যাতে মশাবাহিত কোনো রোগ-ব্যাধি বিস্তৃত হতে না পারে।
ষ লেখক : সম্পাদক ও প্রকাশক, দৈনিক নবরাজ



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: রাজধানীতে মশার উৎপাত
আরও পড়ুন