Inqilab Logo

রোববার ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ০২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

‘সেনাবাহিনী ছাড়া সুষ্ঠু নির্বাচন অসম্ভব’

সুজনের গোলটেবিল বৈঠকে নির্বাচন বিশেষজ্ঞদের অভিমত

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৪ এপ্রিল, ২০১৮, ১২:০০ এএম

দেশে আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন এমনকি আসন্ন গাজীপুর ও খুলনা সিটির ভোটেও সেনা মোতায়েন ছাড়া নির্বাচন সুষ্ঠু করা সম্ভব নয়। এই মন্তব্য করেছেন দেশের নির্বাচন বিশেষজ্ঞ, স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ও গবেষকরা। গতকাল জাতীয় প্রেসক্লাবে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) আয়োজিত গোলটেবিল বৈঠকে তারা এসব কথা বলেন। আলোচকরা বলেন, সেনাবাহিনী ছাড়া এখন যেকোন নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে করা অসম্ভব। জনগণ মনে করে আমি ভোট দিলে কি হবে, প্রার্থীতো আগেই ঠিক করা। ভোট যাকেই দেই রেজাল্ট সরকার ইচ্ছা মতো করবে।
‘আসন্ন সিটি করপোরেশন নির্বাচন ঃ নাগরিক ভাবনা’ শীর্ষক এই আলোচনায় সভাপতিত্ব করেন সুজন সভাপতি এম হাফিজ উদ্দিন খান। ড. বদিউল আলম মজুমদারের সঞ্চালনায় অন্যাদের মধ্যে বক্তৃতা করেন সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব) সাখাওয়াত হোসেন, বাসদ কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান, ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা, ব্যারিস্টার জোর্তিময় বড়ুয়া, আগামী প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী ওসমান গনী, সুজনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী দিলীপ কুমার সরকার প্রমুখ।
সাবেক নির্বাচন কমিশনার এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, সেনাবাহিনী ছাড়া সিটি নির্বাচন সুষ্ঠু হবে কি না জানি না। তবে জাতীয় সংসদ নির্বাচন সেনবাহিনী ছাড়া হবে না। নির্বাচনে সেনা মোতায়েন নিয়ে সরকার ও বিরোধী দল মুখোমুখি অবস্থান নেয়। বিরোধী দলে থাকলে তারা সেনাবাহিনী চায়। অথচ ২০০৩ সালে বিএনপি ক্ষমতায় থাকতে তৎকালীন প্রধান নির্বাচন কমিশনার এম এ সাঈদ স্থানীয় সরকার নির্বাচনে সেনা মোতায়েন করতে চেয়েছিলেন, কিন্তু বিএনপি দেয়নি। তিনি আরো বলেন, আসন্ন সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েন করা দরকার। কারণ একটি নির্বাচনে নির্বাচন কমিশনকে নিরাপত্তা নিয়েই সবচেয়ে বেশি চিন্তিত থাকতে হয়। নির্বাচনে জনগণ ভোট দিতে না পারায় বর্তমানে মানুষ নির্বাচন থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। অথচ দেশ গণতান্ত্রিক। মানুষ মনে করে, ভোট দিলে যা না দিলেও তা। তাছাড়া মানুষ নিশ্চিত নয় যে সে তার ভোট দিতে পারবে কিনা। সাবেক এই নির্বাচন কমিশনার বলেন, নির্বাচনে প্রার্থীদের হলফনামা যাচাই-বাছাই করে দেখা দরকার। এক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনের সক্ষমতা না থাকলে কমিশন দুদক বা এনবিআর’র সহায়তা নিতে পারে। একই সঙ্গে প্রার্থীদের হলফনামার বর্তমান ছকে পরিবর্তন আনা দরকার। আবার ভোট নির্বিঘœ এবং স্বচ্ছ করতে ব্যালট বক্স ভোটের দিন সকালে ভোটকেন্দ্রে পাঠানো উচিত। এজন্য ভোট হওয়া উচিত গ্রীষ্মকালে, সকাল ৯টা থেকে ৫টা পর্যন্ত। পাশাপাশি প্রতি এক ঘণ্টা পর পর কত ভোট পড়লো তার হিসাব প্রকাশ করা উচিত।
স্থানীয় সরকার ও নির্বাচন বিশেষজ্ঞ ড. তোফায়েল আহমেদ মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে বলেন, আগামী ১৫ মে ২০১৮ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে গাজীপুর ও খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচন। এ নির্বাচনকে ঘিরে জনমনে প্রশ্নের কোনো শেষ নেই, থাকাটা স্বাভাবিক। তবে সকল প্রশ্নের বিষয় মূলত একটি বিন্দুতে এসে শেষ হয়। তা হচ্ছে- সরকারি প্রভাবমুক্ত একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন, যেখানে প্রার্থীরা নির্ভয়ে নির্বাচনী আচরণবিধি মেনে প্রচার-প্রচারণা চালাবে। নির্বাচনের দিন স্বাধীনভাবে কোনো রকমের ভয়-ভীতি ছাড়া মানুষ পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারবে। এটি কোনো বাড়তি বা অতিরিক্ত চাওয়া নয়। এই স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ বলেন, আমাদের দেশে নির্বাচনে ‘ক্ষমতা ভীতি’ একটি ‘হিস্টিরিয়া’ বা ‘ফোবিয়া’ যাই বলা হোক, সেভাবে সর্বগ্রাসীরূপে দেখা দিয়েছে। জাতীয় কিংবা স্থানীয় নির্বাচন আসলেই জনমনে প্রথম যে ভীতি বা আশঙ্কা দেখা দেয় তা হচ্ছে সরকার বা সরকারি দলের অনুকূলে নির্বাচনী ফলাফলকে নেয়ার সর্বাত্মক চেষ্টা করা হতে পারে। ২০১৪ সালের জাতীয় নির্বাচনের পর ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা পরিষদ, পৌরসভা ও জেলা পরিষদ নির্বাচনগুলোতে ব্যাপক কারচুপি, অনিয়ম ও সহিংসতা চলে যার কোনো একটিরও কোনো প্রতিকার হয়নি। সবচেয়ে দুঃখজনক হচ্ছে প্রতিকার চাওয়ার সাহসও হয়নি। অনিয়ম এবং জীবনহানির অসংখ্য ঘটনা প্রতিকারবিহীনভাবে মিলিয়ে যায়।
ড. তোফায়েল আহমেদ নাগরিক মনের কতগুলো প্রশ্ন তুলে ধরেন। সেগুলো হলো- ১. ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণের স্থগিত নির্বাচনের ভাগ্যে কী ঘটেছে বা ঘটতে যাচ্ছে? এ নির্বাচন কি জাতীয় নির্বাচনের পূর্বে অনুষ্ঠানের সম্ভাবনা আছে? ২. পাঁচটি সিটি করপোরেশনের নির্বাচনী তফসিল একসঙ্গে না হয়ে প্রথমে দু’টিতে করার কারণ কী? এ পাঁচটি নির্বাচন কি একই তফসিলে করা যেত না? ৩. রমজানের পর বাকি তিনটি ও ঢাকার দুটি করপোরেশনের স্থগিত নির্বাচন অনুষ্ঠানের সম্ভাবনা কি নিশ্চিত? ৪. বর্তমান দুই সিটি ও অন্য তিন বা সর্বমোট বাকি পাঁচটি করপোরেশনের নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠানে সরকার ও নির্বাচন কমিশন কেমন ভূমিকা পালন করতে পারে? ৫. এ নির্বাচনসমূহে অংশগ্রহণকারী সকল দল ও ব্যক্তির জন্য সমান সুযোগ কি নিশ্চিত করা হবে?
তত্ত¡াবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা এম হাফিজ উদ্দিন খান বলেন, বর্তমান পরিপ্রেক্ষিতে সেনাবাহিনী ছাড়া অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করা সম্ভব নয়। তাই নির্বাচন কমিশনকে সজাগ ও সতর্ক হতে হবে। কারণ তারা ঘুমিয়ে আছে। সেনাবাহিনী মোতায়েন করার ব্যাপারে নির্বাচন কমিশন চিন্তা ভাবনার কথা বলেছিল। তখন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছিলেন নির্বাচনে সেনা মোতায়েনের সিদ্ধান্ত কমিশনের এখতিয়ার বহির্ভূত। নির্বাচন কমিশন এ বক্তব্যের কোনো প্রতিবাদ করেনি, এটা দুঃখের বিষয়। কারণ নির্বাচন সুষ্ঠু করা কমিশনের দায়িত্ব। নির্বাচন সুষ্ঠু করতে যা যা করা দরকার কমিশন তাই করবে এটা আমরা আশা করি। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার প্রথম ধাপ হলো নির্বাচন। যে নির্বাচন হবে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ। কিন্তু বর্তমানের নির্বাচনগুলো এ মানদÐগুলো পূরণ করতে পারছে না। এজন্য সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন আয়োজনে নির্বাচন কমিশনের পাশাপাশি সরকারকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। একইসঙ্গে নাগরিকদেরও সোচ্চার হতে হবে। জনগণের ভোটে নির্বাচিত উপজেলা চেয়ারম্যান, সিটি কর্পোরেশন ও পৌরসভার মেয়রদের মন্ত্রণালয়ের ক্ষমতাবলে বরখাস্তের কঠোর সমারোচনা করে তিনি বলেন, স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলো সরকারি কর্মকর্তাদের দিয়ে পরিচালনা করা কোনোমতেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।
বাসদের আহবায়ক খালেকুজ্জামান বলেন, সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনগুলোকে এখন স্থানীয় সরকার বলা যাবে না। কেন্দ্রীয় সরকারের স¤প্রসারিত কাঠামো। আজ নির্বাচিত মেয়র, কাউন্সিলর মিলে তিন শতাধিক জনপ্রতিনিধি বরখাস্ত হয়ে আছে। আইনি কোনো শাস্তিপ্রাপ্ত নয় তারা। কিন্তু মন্ত্রণালয়ের সচিবের একটি চিঠিতে তাদেরকে বরখাস্ত করা হয়েছে। ফলে এটাকে স্থানীয় সরকার বলা যায় না। তাই উচিত হবে এখানে আমলাদের নিয়োগ দেয়া। সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, জাতীয় নির্বাচনের আগে হওয়ায় গাজীপুর ও খুলনা সিটি নির্বাচন অনেক বার্তা বহন করবে। কারণ এই দুটি নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠিত হবে কি না এবং নির্বাচনে কারা জয়লাভ করবে সেদিকে দেশবাসীর নজর থাকবে। ##



 

Show all comments
  • শরীফ ২৪ এপ্রিল, ২০১৮, ৪:৩২ এএম says : 0
    বর্তমান পরিপ্রেক্ষিতে সেনাবাহিনী ছাড়া অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করা সম্ভব নয়।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: সেনাবাহিনী


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ