Inqilab Logo

সোমবার, ০৮ জুলাই ২০২৪, ২৪ আষাঢ় ১৪৩১, ০১ মুহাররম ১৪৪৬ হিজরী

উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা মানবাধিকারে

বাংলাদেশ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বার্ষিক প্রতিবেদন

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২২ এপ্রিল, ২০১৮, ১২:০০ এএম

বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে তীব্র সমালোচনা করেছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে প্রকাশিত বার্ষিক প্রতিবেদনে বাংলাদেশে যেসব খাতে মানবাধিকার লঙ্ঘন ঘটেছে তার বিস্তারিত তুলে ধরা হয়। গত শুক্রবার এ রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়। একই সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার নাগরিকদের বাংলাদেশ ভ্রমণে আবারো নতুন সতর্কতা জারি করেছে। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ভ্রমণ বিষয়ক নির্দেশিকায় বলা হয়, অপরাধ ও সন্ত্রাসবাদের কারণে মার্কিন নাগরিকদের ঢাকা ভ্রমণে অতিরিক্ত সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে প্রকাশিত বার্ষিক প্রতিবেদনে ২০১৭ সাল নিয়ে বাংলাদেশের ওপর প্রণীত ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশে সবচেয়ে গুরুত্বর মানবাধিকার লঙ্ঘন ঘটেছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাÐ, নির্যাতন, খেয়ালখুশিমতো ও বে-আইনিভাবে আটকে রাখা, নিরাপত্তা রক্ষাকারীদের হাতে জোর করে গুম করা, নাগরিক স্বাধীনতা সীমাবদ্ধতা। রয়েছে সংবাদ মাধ্যম, মত প্রকাশের স্বাধীনতায় সীমাবদ্ধতা। সীমাবদ্ধতা রয়েছে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে। বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণের স্বাধীনতা নেই।
ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশে রয়েছে দুর্নীতি, সহিংসতা, লিঙ্গগত বৈষম্য, রয়েছে যৌনতা বিষয়ক অপরাধ, ধর্মীয় বিষয়। আর রয়েছে প্রশাসনে জবাবদিহিতার অভাব। এখনো মানব পাচার একটি গুরুতর সমস্যা হয়ে আছে। রয়েছে শ্রমিকদের অধিকারের ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতা। শিশু শ্রমের অবস্থা একেবারে বাজে। এ ছাড়া রয়েছে নিরাপত্তা রক্ষাকারীদের হাতে নির্যাতনের অভিযোগ থেকে তাদেরকে দায়মুক্তি দেয়ার ব্যাপক প্রবণতা। নিরাপত্তা রক্ষাকারীরা যেসব নির্যাতন বা হত্যাকাÐ ঘটায় তা তদন্তে বা বিচার প্রক্রিয়ায় সরকার সীমিত পদক্ষেপ নিয়েছে। পুলিশ ও নিরাপত্তামূলক সেবাখাতগুলোতে জনগণের রয়েছে অনাস্থা। এ জন্য তারা ফৌজদারি কোনো ঘটনা রিপোর্ট করতে বা সরকারি বাহিনীর সহায়তা নেয়া থেকে বিরত থাকেন।
যুক্তরাষ্ট্রের ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন জে সুলিভানের প্রকাশিত ওই রিপোর্টে বলা হয়, বাংলাদেশের সংবিধান সংবাদ মাধ্যম সব ধরনের মত প্রকাশের স্বাধীনতা দিয়েছে। কিন্তু এই অধিকারের প্রতি মাঝে মাঝেই সম্মান দেখাতে ব্যর্থ হয়েছে আওয়ামী লীগ সরকার। সংবিধানে সংবিধানের সমালোচনাকে রাষ্ট্রদ্রোহের সমান করে দেখানো হয়েছে। এমন রাষ্ট্রদ্রোহের দায়ে কেউ অভিযুক্ত হলে তাকে তিন বছর থেকে যাবজ্জীবন সাজা পাওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। ২০১৬ সালে বিএনপির নেত্রী খালেদা জিয়া, লিভিশন ব্যক্তিত্ব মাহমুদুর রহমান মান্না (নাগরিক ঐক্যের আহŸায়ক) ও সাংবাদিক কনক সারোয়ারসহ উচ্চ পর্যায়ের অনেক ব্যক্তি বিশেষের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রেহের অভিযোগ আনা হয়েছে। তবে মাহমুদুর রহমান মান্না ও কনক সারোয়ারের বিচার প্রক্রিয়ায় অগ্রসর হয়নি সরকার। ঘৃণা ছড়িয়ে পড়ে এমন বক্তব্যকে সীমাবদ্ধ করেছে আইন। কিন্তু ঘৃণামূলক বক্তব্যের সংজ্ঞা কি তা পরিষ্কার করে বর্ণনা করা হয়নি।
এর ফলে মত প্রকাশের ওপর হস্তক্ষেপের ক্ষেত্রে সরকার বড় শক্তি ব্যবহার করার সুযোগ পায়। রাষ্ট্রের নিরাপত্তার বিরুদ্ধে যায়, বিদেশি বন্ধুপ্রতীম দেশের বিরুদ্ধে যায়, আইন-শৃঙ্খলার বিরুদ্ধে যায়, নৈতিকতার বিরুদ্ধে যায়, আদালত অবমাননার পর্যায়ে পড়ে, মানহানি হয় অথবা অপরাধকে উসকে দেয় এমন সব বক্তব্য সীমিত করতে পারে সরকার। বাংলাদেশে প্রিন্ট ও অনলাইন নিরপেক্ষ মিডিয়া সক্রিয় রয়েছে। তারা বিভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করে। যেসব মিডিয়া সরকারের সমালোচনা করেছে তারা সরকারের নেতিবাচক চাপের মুখে পড়েছে। মাঝে মাঝে গোয়েন্দা সংস্থাগুলোসহ কর্তৃপক্ষ সাংবাদিকদের ওপর শারীরিক হামলা, হয়রানি ও ভীতি প্রদর্শন করেন। এতে গত অক্টোবরে একটি অনলাইন নিউজ আউটলেটের একজন সাংবাদিক উৎপল দাসের প্রসঙ্গ তুলে ধরা হয়। বলা হয়, অক্টোবরে উৎপল নিখোঁজ হলেও ডিসেম্বরে তাকে ফিরে পাওয়া যায়। তার পর উৎপল দাস যে বক্তব্য দিয়েছেন তার ফিরে আসা নিয়ে তাতে দ্বিধাদ্ব›দ্ব রয়েছে। তবে পর্যবেক্ষকদের অভিযোগ ভীতি প্রদর্শনের পদ্ধতি অনুসরণ করে তাকে জোর করে গুম করা হয়েছিল। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন প্রফেসর ও সামাজিক মিডিয়া ব্যক্তিত্ব মুবাশ্বের হাসান গত বছর ৪৪ দিন নিখোঁজ ছিলেন। দ্য ওয়্যার নামে একটি সংবাদভিত্তিক ওয়েবসাইট অভিযোগ করে যে, একটি বাহিনীর গোয়েন্দা সংস্থা এই নিখোঁজের জন্য দায়ী। এর ফলে ওই ওয়েবসাইটটি বøক করে দেয় সরকার। কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টসের মতে, ১৭ মে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে বিদেশের দূতবাসগুলোতে চিঠি পাঠানো হয়। বাংলাদেশি কোনো সাংবাদিক বিদেশ সফরে গেলে তাদের ওপর নজরদারি করতে ওই চিঠিতে নির্দেশনা দেয়া হয়।
ঢাকা সফরে মার্কিন নাগরিকদের সর্তকতা : মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার নাগরিকদের বাংলাদেশ ভ্রমণে নতুন সতর্কতা জারি করেছে। এতে অপরাধ ও সন্ত্রাসবাদের কারণে মার্কিন নাগরিকদের ঢাকা ভ্রমণে অতিরিক্ত সতর্কতা অবলম্বন করতে বলা হয়েছে। গত শুক্রবার জারি করা বাংলাদেশ ভ্রমণে নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, অপরাধ ও সন্ত্রাসবাদের কারণে বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রামসহ উত্তর-পূর্ব এলাকা ভ্রমণে মার্কিন নাগরিকরা যেন দ্বিতীয়বার ভাবেন। সশস্ত্র ডাকাতি, হামলা ও ধর্ষণের মতো সহিংস অপরাধ ব্যাপক আকারে ঘটছে। সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলো বাংলাদেশে সম্ভাব্য হামলার পরিকল্পনা করে যাচ্ছে। তারা সামান্য বা কোনো হুমকি না দিয়েই হামলা চালাতে পারে।
বিবৃতিতে আরো বলা হয়, দেশটির (বাংলাদেশ) শহরাঞ্চলে ব্যাপক পুলিশ উপস্থিতি থাকা সত্তে¡ও সন্ত্রাসী হামলার আশঙ্কা রয়েছে। ঢাকায় অপরাধ প্রবণতা বেশি এবং রাতে তা অনেকটা বেড়ে যায়। সাধারণভাবে এসব অপরাধের মধ্যে রয়েছে জালিয়াতি, চুরি, ডাকাতি, গাড়ি চুরি, ধর্ষণ, হামলা ও ছিনতাই। এ ছাড়া ফুটপাথ ও বেশির ভাগ সরকারি প্রতিষ্ঠান এড়িয়ে চলতে বলা হয়েছে।
মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ভ্রমণ সতর্কতায় বাংলাদেশকে রাখা হয়েছে দ্বিতীয় পর্যায়ে (লেভেলে ২)। এ পর্যায়ে থাকার অর্থ হলোÑ সংশ্লিষ্ট দেশটিতে ভ্রমণের ক্ষেত্রে মার্কিন নাগরিকদের অতিরিক্ত সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।



 

Show all comments
  • বুলবুল আহমেদ ২২ এপ্রিল, ২০১৮, ৫:০৮ এএম says : 0
    দেশে মানবাধিকার বলে কিছু কী অবশিষ্ট আছে ?
    Total Reply(0) Reply
  • প্রিতম ২২ এপ্রিল, ২০১৮, ৫:০৯ এএম says : 0
    সরকার ও প্রশাসনের মন্তব্য শুনলে মনে হয় দেশে যেন স্বর্গের সুখ বিরাজ করছে
    Total Reply(0) Reply
  • আজগর ২২ এপ্রিল, ২০১৮, ৫:১২ এএম says : 0
    বাস্তব চিত্র আরও অনেক খারাপ
    Total Reply(0) Reply
  • AI ২২ এপ্রিল, ২০১৮, ৯:৫১ এএম says : 0
    .............................. formula. If you do not follow, you will be punished as traitor. No option now.
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মানবাধিকার


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ