Inqilab Logo

মঙ্গলবার, ০২ জুলাই ২০২৪, ১৮ আষাঢ় ১৪৩১, ২৫ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

বেপরোয়া চালক : সড়কে ঝরছে প্রাণ

সাখাওয়াত হোসেন | প্রকাশের সময় : ২২ এপ্রিল, ২০১৮, ১২:০০ এএম

রাজধানীতে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে গণপরিবহনের চালকরা। দুর্ঘটনার সহজেই ছাড় পেয়ে যাওয়ায় সড়কে নির্মমভাবে প্রান হারাচ্ছেন সাধারন মানুষ। আর একের পর হাত-পা বিচ্ছিন্নসহ মারাত্মক আহতের ঘটনা এখন নিত্যদিনেই ঘটছে। দুই বাসের পাল্লাপাল্লিতে হাত হারিয়ে মারা যাওয়া রাজীবের মৃত্যুশোক কাটতে না কাটতেই এবার রাজধানীতে বাসের চাপায় পা বিচ্ছিন্ন হলো রোজিনা নামে এক তরুণীর। আর এবারও আলোচনায় সেই বিআরটিসির বাস। গত শুক্রবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে রাজধানীর বনানীর চেয়ারম্যান বাড়ির সামনে এ দুর্ঘটনা ঘটে। আহত রোজিনাকে রাজধানীর পঙ্গু হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। অন্যদিকে ধানমন্ডি এলাকায় ট্টাকের ধাক্কায় মাসুদা আক্তার (৩৫) নামে এক সেবিকা নিহত হয়েছেন। গত শুক্রবার রাত সাড়ে ৯টায় ধানমন্ডির শেখ জামাল মাঠের সামনে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চালকেরা অদক্ষ, মাদকাসক্ত ও বেপরোয়া। আর বাস-মিনিবাসের বেশির ভাগই চলাচলের উপযোগিতাহীন (ফিটনেসবিহীন)। এর ফলে রাজধানীতে গণপরিবহনব্যবস্থায় চলছে চরম অসুস্থ প্রতিযোগিতা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আইন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. বোরহান উদ্দীন খান দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, প্রতি নিয়ত সড়ক দুর্ঘটনার পরও চালকরা সুবিধা পাচ্ছে। চালকদের প্রশিক্ষিত হতে হবে। বিআরটিএ চালকদের লাইসেন্স দেয়ার আগে পরীক্ষা করে দেখা প্রয়োজন যাকে লাইসেন্স দেয়া হচ্ছে তিনি লাইসেন্স পাওয়ার উপযুক্ত কিনা। চালকদের আইনের আওতায় আনতে হবে। এতে করে সড়ক দুর্ঘটনা কমে আসবে।
তিনি আরো বলেন, সড়কে চালকের মধ্যে অসুস্থ প্রতিযোগিতা চলে। এজন্য ট্টাফিক পুলিশকে বিষয়টি মনিটরিং করে আইনগত কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে বলে অধ্যাপক ড. বোরহান উদ্দীন খান উল্লেখ করেন।
ঢাকা মহানগর পুলিশ ট্টাফিক বিভাগের (পূর্ব) ডিসি কামরুজ্জামান দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, পুলিশ সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধে সক্রিয় রয়েছে। এ জন্য চালক, যানবাহনের মালিক ও পথচারীকে সর্তক হতে হবে। সকলের সহযোগিতায় সড়ক দুর্ঘটনা কমিয়ে আনা সম্ভব বলে তিনি মন্তব্য করেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গত শুক্রবার রাতে বনানীর চেয়ারম্যান বাড়ি ফুটওভার ব্রিজের নিচ থেকে কিছু দূরে রাস্তা পার হওয়ার সময় রোজিনা রাস্তায় পড়ে যান। এ সময় মহাখালী থেকে উত্তরাগামী বিআরটিসির একটি দোতলা বাস তার ডান পায়ের ওপর দিয়ে চলে যায়। এতে হাঁটু থেকে পায়ের নিচের অংশ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় রোজিনার। আশপাশের লোকজন দ্রæত উদ্ধার করে তাকে রাজধানীর পঙ্গু হাসপাতালে ভর্তি করেন। আহত রোজিনা গৃহকর্মীর কাজ করতেন বলে জানা গেছে। মহাখালীর এক আত্মীয়ের বাসা থেকে গুলশানের নিকেতনে যাওয়ার পথে দুর্ঘটনায় পা বিচ্ছিন্ন হয় তার।
বনানী থানার ওসি বি এম ফরমান আলী জানান, বিআরটিসির একটি বাসের চাপায় মেয়েটির ডান পা বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। দুর্ঘটনার পর বাসচালককে আটক করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে রাতেই একটি মামলা করা হয়েছে। আহত ওই তরুণীতে পঙ্গু হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
নিহত মাসুদা আক্তারের স্বামী মো. জামাল হোসেন সাংবাদিকদের জানান, তাদের গ্রামের বাড়ি বরিশাল। ঢাকায় পরিবাগ এলাকায় পরিবার নিয়ে থাকেন। মগবাজার ইস্কাটনে একটি ক্লিনিকের সেবিকা হিসেবে কাজ করতেন তার স্ত্রী মাসুদা আক্তার।
ধানমন্ডি থানার এসআই শাহ্ মিরাজ উদ্দীন বলেন, মাসুদা এক আত্মীয়কে রিকশায় করে আনোয়ার খান মর্ডান হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছিলেন। সেসময় পেছন থেকে একটি ট্রাক রিকশাটিকে চাপা দেয়। স্থানীয়রা তাকে অচেতন অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। পরে রাত ১২টায় কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। ঘাতক ট্রাকটি আটক করা হয়েছে। মাসুদার আত্মীয় ও রিকশাচালক আশঙ্কামুক্ত রয়েছে বলেন জানান মিরাজ উদ্দীন।
অনাবিল পরিবহনের চালক শিপন বলেন, অন্য বাসের সঙ্গে পাল্লা দিতে গিয়ে গাড়ির বাম্পার খুলে গেছে অনেক জায়গায়। হেডলাইট ছাড়া সামনে পেছনে আর একটি বাতিও নেই। পিছনের গাড়ি আগে গেলে ওই গাড়ি লোকপাবে বেশি। টাকাও হবে বেশি। যাত্রীদের যেন কোনো সমস্যা না হয সেদিকে খেয়াল রেখেই অন্য বাসের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করেন তারা। মালিকের টার্গেট দিনে তিন হাজার ৮০০ টাকা। তেল লাগে চার হাজার টাকা। এরপর রাস্তার চান্দা, খাওয়া-দাওয়া মিলে আরও ১৫০০ টাকা। এরপর যা আহে তা দিয়া নিজেগো বেতন। প্রতিযোগিতা না করলে টাকা পাব কোথায়। শুধু চালকদের অপরাধ মালিকদের বিষয়টি কেউ বলে না বলে তিনি মন্তব্য করেন। গত ৩ এপ্রিল রাজধানীর কারওয়ান বাজারে স্বজন পরিবহনের একটি বাসের সঙ্গে বিআরটিসির একটি বাসের রেষারেষিতে চাপা পড়ে হাত হারান সরকারি তিতুমীর কলেজের স্নাতকের (বাণিজ্য) দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র রাজীব হোসেন। পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৬ এপ্রিল দিবাগত রাতে মারা যান তিনি। এছাড়া ১৭ এপ্রিল গোপালগঞ্জে ট্রাকের ধাক্কায় হাত বিচ্ছিন্ন হয় হৃদয় শেখ নামে বাস চালকের এক সহকারীর। পরে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: সড়ক দুর্ঘটনা


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ