বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
সেলিম আহমেদ : রাজধানীর উপকন্ঠ সাভার দিন দিন পরিণত হচ্ছে মাদকের স্বর্গরাজ্যে। আইনশৃংখলা বাহিনী এ ব্যাপারে মাঝে মাঝে তৎপর থাকলেও কতিপয় পুলিশের সাথে মাদক ব্যবসায়ীদের সখ্যতার কারণে মূল গডফাদাররা রয়ে যাচ্ছে ধরা-ছোঁয়ার বাইরে। ফলে মাদকের করাল গ্রাসে আজ ধ্বংসের পথে যুবসমাজ। স্কুল কলেজগামী ছাত্ররা আসক্ত হয়ে পড়ছে মাদকের এ মরণ নেশায়। বিপথগামী হচ্ছে শিক্ষার্থীরা। মাদকের নেশায় আসক্ত হয়ে অনেক সময় তারা চুরি, ছিনতাই, খুনসহ বিভিন্ন অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে অভিভাবকরা। মাদকের এ করাল গ্রাস থেকে যুবসমাজকে রক্ষায় সাভারবাসী প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নিকট জোর দাবী জানালেও পুলিশের একার পক্ষে মাদক নির্মূল করা সম্ভব নয়, সকলকে এগিয়ে আসতে হবে এমনটাই জানালেন সাভার মডেল থানার ওসি মহসিনুল কাদির। তিনি বলেন, গত ছয় মাসে ২৩৫টি মাদকের মামলা শুধু সাভার থানায় নথিভুক্ত হয়েছে। অনেকেই বলছে, প্রকাশ্যে কতিপয় পুলিশের ছত্র-ছায়ায় বিক্রি হচ্ছে বিভিন্ন মাদকদ্রব্য। মাদক ব্যবসায়ীদের দাবী থানা পুলিশের কিছু কর্মকর্তা তাদের কাছ থেকে মাসোহারা নেন। আর এ সকল মাদক ব্যবসা এখন সাভারে ওপেন সিক্রেট। আবার উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের চাপের মুখে পুলিশ ২-১ জন মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করলেও রাতের আধারে মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে ছেড়ে দেয়ারও একাধিক অভিযোগ রয়েছে।
শিমুলিয়ায় মাটির নীচে রেখে বিক্রি হচ্ছে মাদক : এদিকে শিমুলিয়া ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় মাদক ব্যবসায়ীদের অত্যাচারে অতিষ্ঠি হয়ে পরেছে এলাকাবাসী। গত কয়েকদিন ধরে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সহায়তায় পুলিশ মাদক বিরোধী অভিযান চালাচ্ছে। শিমুলিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এবিএম আজহারুল ইসলাম সুরুজ জানান, ভিকিমপুর ও গোহাইলবাড়ির ভুমিহীনের টেক এলাকা মাদকের আখড়ায় পরিণত হয়েছে। মাদক বন্ধে আমরা নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করলেও নিয়ন্ত্রণে আনতে পারছিনা। এ বিষয়ে তিনি গণমাধ্যমের সহযোগীতা দাবী করেন। শিমুলিয়া ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ড সদস্য শাহ আলম শালু জানান, বুধবার রাতে ভুমিহীনের টেকে এলাকাবাসীর সহায়তায় কামালের দুই ছেলে মাদক ব্যবসায়ী শফিক ও জুয়েলকে আটক করে পুলিশে দেয়া হয়েছে। তারা মাটির নীচে চোলাই মদ, ইয়াবা, ফেন্সিডিল রেখে বিক্রি করতো। এর আগে গত মঙ্গলবার রাতে গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ অভিযান চালিয়ে মাটির নীচে রাখা তিন ড্রাম চোলাই মদ উদ্ধার করে। তখন মাদক ব্যবসায়ীরা পুলিশের উপর হামলা করারও চেষ্টা কেেরছিল। ভূমিহীন দক্ষিণ পাড়ার অমূল্যের ছেলে নিখিল ইয়াবা স¤্রাট। সে রয়েছে ধরাছোঁয়ার বাহিরে। এ প্রসঙ্গে আশুলিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আবদুল আউয়াল বলেন, শিমুলিয়ায় মাদক ব্যবসায়ীদের ধরতে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। অনুসন্ধানে জানা গেছে, সাভারের প্রায় শতাধিক মাদকের স্পট রয়েছে। এর মধ্যে ইমান্দিপুর, মজিদপুর, ব্যাংক কলোনী, রাজাশন, বিরুলিয়া, আমিনবাজার, শিমুলিয়া ইউনিয়নের ভূমিহীনের টেক, ভিকমপুর, সাধাপুর, বক্তারপুর, নিরিবিলি, জোরপুল, ভাগলপুর, আনন্দপুর, কর্ণপাড়া, নামাগেন্ডা, ব্যাংক টাউন, নামাবাজার, আকরাইন, চাঁপাইান, কলমা, রাজফুলবাড়িয়া, শ্যামপুর, সামাইর, বেদেপল্লী, বেগুনবাড়ি, ধরেন্ডা, বলিয়ারপুর, কাউন্দিয়া, সাভার কাঁচাবাজারসহ বেশ কয়েকটি মাদকের স্পর্ট উল্লেখযোগ্য। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ইয়াবা ট্যাবলেট বিভিন্ন কোড নম্বর ভেদে বিক্রি হচ্ছে। আবার কিছু কিছু এলাকায় মাদক ব্যবসায়ীরা অভিনব কায়দায় শার্টের কলার ও হাতলের ভাঁজে, মানিব্যাগে, জুতার তলায় বিশেষ কায়দায় রাখা, দিয়াশলাই ও সিগারেটেরে প্যাকেটের ভিতরে রেখে খুচরা ইয়াবা ট্যাবলেট ঘুরে ঘুরে বিক্রি করছে।
আবার মাদকের ছত্রছায়ায় গড়ে ওঠেছে অপরাধীর অভয়ারন্য হিসেবে। ছিনতাই, চুরি, দেহব্যবসা, ভূমি দখলসহ নানারকম অপরাধের ঘটনা এ এলাকায় এখন নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার। এলাকার লোকজন এদের যন্ত্রনায় অতিষ্ঠ হলেও প্রতিবাদ করতে সাহস পায় না। পুলিশের সাথে মাদক ব্যবসায়ীদের সখ্যতার কারণে ভুক্তভোগীদের আরও ভোগান্তিতে পরতে হচ্ছে। এদের সিন্ডিকেট এতই শক্তিশালী যে আইনশৃংখলা বাহিনী এ সকল স্পটে হানা দেয়ার আগেই তারা পুলিশের উপস্থিতি টেরে পেয়ে যাচ্ছে। আবার সাভারে আবাসিক হোটেল ও মাদক নিরাময় কেন্দ্রগুলোতেও মাদকের ব্যবসা চলছে বলে খোঁজ পাওয়া গেছে। কাউন্দিয়ায় প্রকাশ্যে মাদক কেনাবেচা চলছে : সাভারের কাউন্দিয়া ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে প্রকাশ্যে মাদক কেনাবেচা চলছে। পুলিশ একাধিকবার এলাকায় ‘বøক রেইড’ দিয়েও নিমূল করতে পারছে না মাদক ব্যবসায়ীেেদর। রাজধানীর মিরপুর ও গাাবতলী লাগোয়া কাউন্দিয়া ইউনিয়নে গ্রামের সংখ্যা ২২টি। তুরাগ নদিবেষ্ঠিত এসব গ্রামের লোকজনের যাতায়াতের একমাত্র ভরসা নৌকা। একারনে মাদক ব্যবসায়ী ও সেবীরা এ এলাকাকে নিরাপদ জায়গা হিসেবে বেছে নিয়েছে। কাউন্দিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আতিকুর রহমান খান শান্ত বলেন, আমার ইউনিয়নকে মাদকমুক্ত করতে মাদক ব্যবসায়ীদের তালিকা তৈরী করে পুলিশকে দেয়া হয়েছে। তবে সাভারবাসী দ্রæত মাদকের এ বিস্তার রোধে প্রশাসনের উর্ধ্বতন মহলের নিকট জোর দাবী জানান। তারা বলেন, মাদকের এ করাল গ্রাসে আমাদের যুব সমাজ দিন দিন ধ্বংসের পথে।
তবে সাভার মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মহসিনুল কাদির জানান, পুলিশের একার পক্ষে মাদক নির্মুল করা সম্ভব নয়। সকলকে ঐক্যবদ্ধ ভাবে এগিয়ে আসতে হবে। কাউন্দিয়ায় মাদক ব্যবসা প্রসঙ্গে ওসি বলেন, কাউন্দিয়ায় মাদকের আখড়া। আমরা চেষ্টা করছি মাদক নির্মূলের।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।