পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
দক্ষিণ এশিয়ায় মিঠাপানির মাছের একমাত্র প্রাকৃতিক প্রজননক্ষেত্র হালদা নদীতে এবার মৌসুমের শুরুতেই মা-মাছেরা রেকর্ড পরিমাণে ডিম ছেড়েছে। রুই, কাতলা, মৃগেল, কালবাউশ (কার্প শ্রেণিভূক্ত) মা-মাছ দলে দলে মুক্তার মতো ডিম ছেড়েছে নদীর বুকে। বৃহস্পতিবার মধ্যরাত থেকে গতকাল (শুক্রবার) সকাল পর্যন্ত জেলেরা নৌকার বহর ছুটিয়ে বিশেষ পদ্ধতিতে হালদা নদী থেকে কমপক্ষে ২২ হাজার ৬৮০ কেজি ডিম সংগ্রহ করেছেন। সেই ডিমপুঞ্জ থেকে রেণু ও পোনা বিকশিত হয়ে সারাদেশে পরিপূর্ণ বিপুল পরিমাণে মাছ উৎপাদিত হবে। যার আর্থিক মূল্য কয়েক হাজার কোটি টাকা। গতকাল এ বিষয়ে আলাপকালে হালদা ও কর্ণফুলী নদী বিশেষজ্ঞ, হালদা নদী রক্ষা কমিটির সভাপতি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মনজুরুল কিবরীয়া দৈনিক ইনকিলাবকে জানান, এবার মা-মাছেরা যে হারে ডিম ছেড়েছে, তা অতীতের ১০ বছরের রেকর্ড অতিক্রম করেছে। ২০১৭ সালে হালদায় মাত্র ১৬ শ’ ৮০ কেজি ডিম সংগ্রহ করা হয়েছিল। ২০১৬ সালে কোনো মাছ ডিমই ছাড়েনি। এর আগেও ডিম ছাড়ার হার ছিল অনেক কম। সরকারের কিছু কঠোর পদক্ষেপ, নদী ও মা-মাছের সুরক্ষায় জেলে-পল্লীসহ হালদা পাড়ে ১৮ বছর ধরে চলমান সামাজিক আন্দোলন ও জনসচেতনতা বৃদ্ধি, দূষণ রোধ, সর্বোপরি আবহাওয়াও এবার অনুক‚লে থাকার ফলে মা-মাছেরা রেকর্ড পরিমাণে ডিম ছেড়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
একটি গবেষক টিম নিয়ে সরেজমিন জেলেদের মাছের ডিম সংগ্রহ ও সংরক্ষণ কার্যক্রম পর্যবেক্ষণের বিবরণ দিয়ে বিশেষজ্ঞ ড. মনজুরুল কিবরীয়া হালদা নদীর পাড় থেকে জানান, এই প্রক্রিয়ায় ২২ হাজার ৬৮০ কেজি ডিম সংগ্রহের হিসাব বেরিয়ে এসেছে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীবৃন্দ, ডিম সংগ্রহকারী ও জেলে, চট্টগ্রাম জেলা ও সংশ্লিষ্ট উপজেলা প্রশাসন ও মৎস্য বিভাগ, পল্লী কর্ম সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ), আইডিএফ এবং সংশ্লিষ্টরা এ বিষয়ে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ ও বিনিময় করেন। সংগৃহীত ডিম থেকে সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে ৩৭৮ কেজি রেণু তৈরি হবে। যথানিয়মে এর জন্য সময় লাগবে ৯৬ ঘণ্টা। আর প্রতি এক কেজি রেণু থেকে অন্তত সাড়ে চার লাখ পোনা হবে। পোনার মূল্য হবে প্রায় চার কোটি টাকা। পোনাগুলো যতই বড় হতে থাকবে, ততই শত কিংবা প্রতিটির দরে বেচাকেনা হবে। অবশেষে সেই পোনা সমগ্র দেশের পুকুর, দীঘি, জলাশয়ে চাষের জন্য ছড়িয়ে পড়বে। সেই পোনা থেকেই রুই, কাতলা, মৃগেল, কালবাউশ মাছ উৎপাদিত হবে। পুরো এই প্রক্রিয়ায় জাতীয় অর্থনীতিতে কয়েক হাজার কোটি টাকার জোগান আসে। তাছাড়া এর সঙ্গে লাখ লাখ মানুষের কর্মসংস্থানের প্রশ্নটি জড়িত।
‘মুক্তার খনি’ এবং দেশের ‘অথনৈতিক নদী’ হিসেবে পরিচিত পাহাড়ি খরস্রোতা হালদা নদীতে দলে দলে মিঠাপানির মা-মাছেরা উপযুক্ত মৌসুমে যে ডিম ছাড়ে সেই রেণু ও পোনা থেকে উৎপাদিত মাছের বর্ধনশীলতা অন্য যে কোনো পোনার উৎসের চেয়ে অনেক বেশি তা বিশেষজ্ঞরা গবেষণা করে প্রমাণ করেছেন। হালদা প্রকৃতির অপার দান। সাধারণত মৗসুমের প্রথম বজ্রসহ ভারী বর্ষণ হলে তখন মা-মাছেরা নদীর উপরতলে ভেসে উঠে প্রথমে কিছু কিছু ‘নমুনা’ ডিম ছাড়ে। এরপর সবকিছু অনুক‚ল বা স্বাভাবিক থাকলে দলে দলে ভেসে ওঠে ডিম ছাড়তে থাকে। চৌকস জেলেরা এহেন মাহেন্দ্রক্ষণের জন্য নদীর উভয় পাড়ে অপেক্ষায় থাকেন। গত বৃহস্পতিবার রাতের ভারী বৃষ্টির ফলে এমনটি হয়েছিল। যা সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক নিয়মেই ঘটে থাকে। এদিকে বিশেষজ্ঞ ও মাঠের মৎস্যকর্মীরা জানান, বিভিন্নমুখী সহায়ক উদ্যোগের ফলেই এবারের মৌসুমে ১০ বছরের রেকর্ড অতিক্রম করে মা-মাছেরা ডিম ছেড়েছে। এ ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য দিক ছিল- গত এক বছর ধরে মা-মাছ ও নদী সুরক্ষায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে নিয়মিত নজরদারি, হালদায় বালু মহাল বন্ধ, যান্ত্রিক বোট চলাচলে নিষেধাজ্ঞা, রাবার ড্যামে পরিবর্তন, দূষণ নিয়ন্ত্রণসহ বেশ কিছু যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন, হালদা রক্ষা কমিটির ১৮ বছরের সামাজিক আন্দোলন, হালদা পাড়ের বাসিন্দা প্রধানমন্ত্রীর সাবেক মুখ্য সচিব ড. এম আবদুল করিমের বিশেষ উদ্যোগে পিকেএসএফ কর্তৃক জনসচেতনতা কার্যক্রম, প্রণোদনা প্রদান, হালদায় অভিযান পরিচালনার তিনটি স্পিড বোট প্রদান ও অভিযানে বেশকিছু বোট ও অবৈধ জাল জব্দ করা, বালু তোলার ড্রেজার আটক ও উচ্ছেদ, পর পর কয়েকটি ডলফিনের নজিরবিহীন মৃত্যুতে সবার টনক নড়া ইত্যাদি। বিশেষজ্ঞ ড. মনজুরুল কিবরীয়া জানান, এবার মৌসুমের শুরুতেই যেহেতু মা-মাছেরা ব্যাপক আকারে ডিম ছেড়ে দিয়েছে খুব শিগগির (এ মৌসুমে) আর তেমন ডিম নাও ছাড়তে পারে। আবার ছাড়তেও পারে। কেন না, পুরো বিষয়টিই প্রকৃতির ওপর নির্ভর করছে। আসলাম পারভেজ, হাটহাজারী থেকে জানান, গতকাল শুক্রবার সকাল পর্যন্ত মাতৃ মাছগুলো ডিম দিয়েছে। তবে বেশি পরিমাণ ডিম পাওয়ার ফলে ডিম রাখার হ্যাচারির সঙ্কটে পড়েছে ডিম সংগ্রহকারীরা। হ্যাচারি সঙ্কটের কারণে ডিম নিয়ে বিপাকে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
এই মৌসুমে প্রথম দপা মা-মাছ ডিম দিয়েছে। প্রতি নৌকায় ৫/৬ (ডিম-পানি) বালতি করে ডিম সংগ্রহ করে। প্রায় এক হাজার নৌকা নিয়ে ডিম সংগ্রহকারীরা হালদায় নামে আনুমানিক দেড়হাজার/দুইহাজার কেজি ডিম সংগ্রহ করেছে বলে জানা যায়। আগামী পূর্মিমা তিতিতে আবারও মা-মাছ ডিম ছাড়তে পারে বলে জানিয়েছেন ডিম সংগ্রহকারীরা। হাটহাজারী, মদুনাঘাট হতে সত্তারঘাট পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার এলাকার বিভিন্ন স্পোটে ডিম ছেড়েছে মা মাছ। হালদা নদীর আজিমার ঘাট, সিপাহীর ঘাট, মগদই, কাগতিয়ার টেক ও নাফিতের ঘাট, এলাকায় কার্প জাতীয় মা-মাছ ডিম ছাড়ার নমুনা পাওয়া যায় বলে স্থানীয় জেলেরা জানায়।
এম বেলাল উদ্দিন, রাউজান (চট্টগ্রাম) জানান, প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজননক্ষেত্র হালদায় ডিম ছেড়েছে রুই জাতীয় মাছ। বৃহস্পতিবার রাত ১.৩০ মিনিট হতে গতকাল শুক্রবার সকাল ৯টা পর্যন্ত মা মাছ ডিম দিয়েছে। বৃহস্পতিবার রাতে ও শুক্রবার সকালে ভারি বর্ষণ মেঘের গর্জন নদীতে পাহাড়ী ঢল নামায় হালদায় ডিম ছাড়ে রুই জাতীয় মাছ (রুই,কাতলা,মৃগেল ও কালিভাউস) । গত বুধবার ভোর রাত থেকে ভারি বৃষ্টি হওয়ার পর হতে নৌকা জাল বড় পাতলিসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম নিয়ে ডিম সংগ্রহকারীরা বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে নদীর পাড়ে অবস্থান করেন। দুপুরের পর থেকে তাদের জালে ‘‘নমুনা ডিম’’ (ডিম ছাড়ার উপযুক্ত পরিবেশ আছে কিনা সামন্য ডিম ছেড়ে পরীক্ষা করে মা মাছ) আস্তে থাকে। স্থানীয় ডিম সংগ্রহকারী কামাল উদ্দিন সওদাগর জানান হালদা নদীর রাউজানের অঙ্কুরিঘোনা এলাকা থেকে নাপিতের ঘাট পর্যন্ত প্রায় ১২ কিলোমিটার এলাকায় নমুনা ডিম মিলেছে। হালদা গবেষক অধ্যাপক ড. মনজুরুল কিবরিয়া জানান, বৃহস্পতিবার রাতে বৃষ্টিপাত শুরু হলে অন্যান্য নদী থেকে এসে কার্প জাতীয় মা মাছেরা হালদার কয়েকটি স্থানে মা জাতীয় মাছেরা ডিম ছেড়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।