পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
এশিয়ার দেশগুলোকে আরও শান্তিপূর্ণ, উন্নত ও স্থিতিশীল করতে পারস্পরিক সেতুবন্ধন তৈরি ও যোগাযোগ বাড়ানোর ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দেশগুলোর জনগণের মধ্যে মতবিনিময় ও বোঝাপড়া বাড়ানোর উদ্যোগ নিতে এ অঞ্চলের নেতাদের প্রতি আহŸান জানিয়েছেন তিনি। গবেষণা, উদ্ভাবন ও প্রযুক্তির মাধ্যমে ভবিষ্যতের এশিয়াকে চালনা করতে দক্ষ জনবল বাড়ানোর প্রয়োজনীয়তার কথা বলেন শেখ হাসিনা। কমনওয়েলথভুক্ত দেশগুলোতে ৩০ বছরের কম ৬০ শতাংশ জনশক্তিকে বিশাল সম্পদ হিসেবে উল্লেখ করে নেতাদের প্রতি এ বিশাল সম্পদকে কাজে লাগানো, শ্রম বাজার সৃষ্টি করা, বাণিজ্য বাজার উন্মুক্ত রাখা এবং স্বচ্ছতার ওপর গুরুত্ব দেয়ার আহŸান জানান শেখ হাসিনা। গতকাল বুধবার দুপুরে লন্ডনের গিল্ড হলে কমনওয়েলথ বিজনেস ফোরাম আয়োজিত ‘এশিয়ান লিডারস রাউন্ড টেবিল: ক্যান এশিয়া কিপ গ্রোয়িং?’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে দেয়া বক্তব্যে এ আহŸান জানান শেখ হাসিনা। অনুষ্ঠানে ‘বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধি এবং উদ্ভাবনী সহযোগিতা বিষয়ে কমনওয়েলথের ভুমিকা’ শীর্ষক অন্য একটি সেশনে বক্তব্য দেন তিনি। স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ভারতের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জারিন দারুয়ালার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে ভারত, শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান, মালয়েশিয়াসহ এশিয়ার কমনওয়েলথভুক্ত দেশগুলোর প্রতিনিধিরা অংশ নেন।
প্রবৃদ্ধির ক্ষেত্রে এশিয়ার দেশগুলোর আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক হওয়া প্রয়োজন মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, শুধু একটা দেশের মধ্যে নয়, এটা প্রয়োজন গোটা এশিয়া অঞ্চলে। তিনি বলেন, দেশগুলোতে সমৃদ্ধি ও সমতা প্রবৃদ্ধি আনবে এবং একসঙ্গে এগিয়ে যাওয়ার মধ্য দিয়ে আমরা আরও শান্তিপূর্ণ ও স্থিতিশীল অঞ্চল তৈরি করতে পারব। এশিয়ায় সবচেয়ে বেশি শ্রমশক্তি ও সর্ববৃহৎ বাজার, প্রচুর প্রাকৃতিক সম্পদের মজুদ থাকার কথা উলেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অতীতে বিশ্ব ছিল এশিয়ার নেতৃত্বে, ভবিষ্যতেও নেতৃত্ব দেবে এশিয়া। কারণ এশিয়ার আশাবাদী মানুষগুলো কঠোর পরিশ্রমী, সহিষ্ণু ও মেধাবী। গত ৭০ বছরে এশিয়ার অনেক অর্জন মন্তব্য করে তিনি বলেন, অনেক অর্থনীতিবিদ ও পÐিতের কাছে এশিয়ার দেশগুলোর অর্থনৈতিক সফলতা ‘মিরাকল’ হিসেবে বিবেচিত হয়েছে।
এরপরেও এশিয়ার দেশগুলোর সতর্ক আশাবাদী হওয়া উচিত মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, বিশ্ব দ্রæত পরিবর্তিত হচ্ছে। ডিজিটাল ও সোস্যাল মিডিয়া নেটওয়ার্ক মানুষকে কাছে আনার পাশাপাশি আলাদাও করে দিচ্ছে। অর্থনৈতিক উন্নতি সমৃদ্ধি আনার পাশাপাশি বৈষম্যও সৃষ্টি করছে বলে সতর্ক করেন তিনি।
সন্ত্রাস, সংঘাত ও আর্থিক অভিঘাতসহ স্থিতিশীলতার জন্য চ্যালেঞ্জের কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী এসব চ্যালেঞ্জ অতিক্রম করতে তরুণ ও নারীসহ নাগরিকদের জন্য বিনিয়োগ বাড়ানোর ওপর গুরুত্বারোপ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের চেতনা ও সমন্বিত মেধা দিয়ে এশিয়ার চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলা করতে হবে।
খাতভিত্তিক শিল্পায়নের সম্ভাবনা ও উৎপাদনশীলতা, বিনিয়োগ নীতি, কৌশল ও সুবিধার ওপর সমীক্ষা ও পুর্নমূল্যায়নের প্রস্তাবের পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী বাণিজ্য উপকরণ ও সুবিধা উন্নত করা, অশুল্ক বাধা হ্রাস, অবকাঠামো সুবিধা বৃদ্ধি, মুক্তবাজার সেবা এবং যোগাযোগ বৃদ্ধিরও আহŸান জানান।
অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম এবং এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক আবুল কালাম আজাদ উপস্থিত ছিলেন।
গত মঙ্গলবার থেকে শুরু হয়েছে কমনওয়েলথের সরকার প্রধানদের ২৫তম সভা। ‘টুয়ার্ডস এ কমন ফিউচার’ প্রতিপাদ্য নিয়ে এ সম্মেলনে যোগ দিতে সোমবার লন্ডন যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল বুধবার বিকালে লন্ডনের ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে ‘জ্যেষ্ঠ ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গে সরকার প্রধানদের’ এক গোলটেবিল বৈঠকে বক্তব্য রাখার কথা রয়েছে প্রধানমন্ত্রীর। গোলটেবিলটি পরিচালনা করবেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টেরিসা মে। এরপর রাতে মের দেয়া নৈশভোজে অংশ নেবেন শেখ হাসিনা।
তারেক রহমানকে বিচারের জন্য অবশ্যই একদিন দেশে ফিরিয়ে নিব
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, পলাতক আসামী তারেক রহমানকে তার অপরাধের জন্য অবশ্যই বিচারের মুখোমুখি হতে হবে। তিনি বলেন, তার সরকার তারেককে দেশে ফিরিয়ে নিতে যুক্তরাজ্য সরকারের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, তারেককে আদালতে বিচারের মুখোমুখি হতে হবে। আমরা অবশ্যই একদিন তাকে দেশে ফিরিয়ে নিব। তিনি তারেকের মতো সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামীকে আশ্রয় দেয়ায় যুক্তরাজ্যের সমালোচনা করে বলেন, আমরা তাকে দেশে ফিরিয়ে নিতে যুক্তরাজ্য সরকারের সঙ্গে কথা বলছি।
কমনওয়েলথ সম্মেলনে যোগদিতে বর্তমানে লন্ডন সফরে গতকাল মঙ্গলবার ওভারসিজ ডেভেলপমেন্টে (ওডিআই) প্রধান বক্তা হিসেবে ‘বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট স্টোরি : পলিসি প্রগ্রেস এন্ড প্রসপেক্টস্’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ব্রিটেন একটি মুক্ত দেশ। যে কেউ এ দেশে আশ্রয় প্রার্থনা করতে পারে। তবে তারেক রহমান তো একজন সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামী। তার অপরাধের জন্য আদালত তাকে সাজা দিয়েছে। আমি বুঝতে পারছি না, যুক্তরাজ্য কেন একজন সাজাপ্রাপ্ত আসামীকে আশ্রয় দিয়েছে। হাইকোর্ট একটি দুর্নীতি মামলায় তিন বছর আগে তাকে ৭ বছরের সাজা দিয়েছে। এ ছাড়া কয়েকটি মামলায় তারেকের বিরুদ্ধে আদালতের গ্রেফতারি পরোয়ানা রয়েছে। কয়েকটি ফৌজদারি ও দুর্নীতি মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানাভুক্ত আসামী হওয়ায় তাকে পলাতক ঘোষণা করা হয়েছে। এই পলাতক আসামীকে কি করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ঘোষণা করা হলো।
আলোচনায় বাংলাদেশ ও মিয়ানমার উভয় দেশের মধ্যে মন্ত্রীপর্যায়ের সফর বিনিময়ের প্রেক্ষাপটে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের ব্যাপারে ঢাকার সঙ্গে চুক্তি সম্পাদন সত্যেও সাড়া না দেয়ার জন্য শেখ হাসিনা মিয়ানমারকে অভিযুক্ত করেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশ সরকারের প্রতি বন্ধুসুলভ মনোভাব দেখালেও দুর্ভাগ্যজনকভাবে মিয়ানমার তাদের প্রত্যাবাসনে কোন উদ্যোগ গ্রহণ করছে না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশটি এতে আগ্রহ দেখালেও প্রত্যাবাসনে কিছুই করেনি এবং এ কারণেই আমরা চাই আন্তর্জাতিক স¤প্রদায় মিয়ানমারের ওপর আরো চাপ সৃষ্টি করুক। তিনি বলেন, অনেক শরণার্থী শুন্য রেখার ওপর অবস্থান করলেও মিয়ানমার মাত্র একটি পরিবারের অর্ধেক সদস্যকে গ্রহণ করেছে, কারণ সম্ভবত তারা বিশ্বকে দেখাতে চায় তারা তাদের ফিরিয়ে নিচ্ছে। তিনি বলেন, এটা একটা ভালো লক্ষণ কিন্তু একটি পরিবারের কেবল অর্ধেক লোককে কেনো?
শেখ হাসিনা বলেন, এদিকে বর্ষাকালও এগিয়ে আসছে। রোহিঙ্গারা যাতে ভালোভাবে বসবাস করতে পারে তার জন্য সরকার রোহিঙ্গাদের একটি জায়গায় সরিয়ে নেয়ার ব্যবস্থা করছে। কারণ, এখন যেসব অস্থায়ী তাঁবুতে তারা গাদাগাদি করে বসবাস করছে সেখানে কোন দুর্যোগ ঘটতে পারে। তিনি বলেন, আমরা খাদ্যসহ সকল প্রকার সহযোগিতা প্রদান করছি। তিনি আরও বলেন, সরকার সেখানে কিছু ঘর-বাড়ি ও ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্র নির্মাণের কাজ শুরু করেছে যাতে তারা সেখানে যেতে পারে। ইচ্ছা করলে জীবন ধারণের জন্য তারা সেখানে কিছু করতেও পারবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।