দেশে দেশে রোজার উৎসব
মাহে রমজান আরবী নবম মাসের নাম। চাঁদের আবর্তন দ্বারা যে এক বৎসর গণনা করা হয়,
মহান আল্লাহ তা’বারক তায়ালা এই বিশ^কে সাজিয়েছেন। আসমান-জমিন, গ্রহ-নক্ষত্র, জান্নাত-জাহান্নাম, মানব-দানব এক কথায় ১৮ হাজার সৃষ্টির স্রষ্টা তিনি। সকল সৃষ্টির পূর্বে তিনি বিশ্ব সভার সভাপতি নবী মুজতবা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সৃষ্টি করেছেন।
পবিত্র কুরআনের সূরা মায়েদার ১৫ নং আয়াতে আল্লাহ ঘোষণা করেছেন,
“নিশ্চয়ই আল্লাহর পক্ষ থেকে তোমাদের মাঝে রাসূল আগমন করেছেন নূর ও সু-স্পষ্ট কিতাব নিয়ে।”
অত্র আয়াতে কারিমার তাফসীরে রূহুল বায়ানের ২য় খন্ডের ২৭০ পৃষ্ঠায় লেখা আছে,
বর্ণিত আয়াতে কারিমার ব্যাখ্যা হল হযরত রাসূলে মাকবুল সাল্লাল্লহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। কেননা, প্রথম বস্তু যা আল্লাহ তায়ালা কুদরতি নূর দ্বারা প্রকাশ করেছেন, সেটা হলো মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নূর মোবারক। যেমন, হযরত রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলইহি ওয়া সাল্লামের এর বাণী, নিশ্চয়ই সর্ব প্রথম মহান আল্লাহ তায়ালা আমার নূরকে সৃষ্টি করেছেন। অতঃপর আল্লাহ তায়ালা বিশ্বজগৎকে আমার উক্ত নূরের আংশিক নূর দ্বারা সৃষ্টি করেছেন। এজন্যেই হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, “আমি আল্লাহ হতে আর সমস্ত মুমিনগণ আমার হতে”।
তাফসীরে রূহুল বায়ানের ৩য় খন্ড ৫৪৩ পৃষ্ঠায় এবং আল্লামা বুরহান উদ্দীন হালাবী কৃত সীরাতে হালাবীয়ার ১ম খন্ড ৩০ পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছে হযরত আবু হোরায়রা রা. হতে বর্ণিত, একদিন নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কথা প্রসঙ্গে জীব্রাইল আ. কে তার বয়স সম্পর্কে জিজ্ঞাস করলেন- হে ভাই জিব্রাইল! তোমার বয়স কত? তদুত্তরে হযরত জিব্রাইল আ. বললেন, আমার বয়স সম্পর্কে আমি জানিনা। তবে এতটুকু জানি যে, নূরের ৪র্থ হিজাবে একটি উজ্জ্বল তারকা ৭০ হাজার বছর পর পর একবার উদিত হত, [অর্থাৎ ৭০ হাজার বছর উদিত অবস্থায় এবং ৭০ হাজার বছর অস্তমিত অবস্থায় ঐ তারকাটি বিরাজমান ছিল।] আমি ঐ তারকাটি জীবনে ৭২ হাজার বার দেখেছি। তা শুনে হযরত রাসূলে মাকবুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, হে জিবরাইল শুনুন, আমার প্রভুর শপথ করে বলছি আমিই ছিলাম ঐ তারকা। [হাদিসটি ইমাম বুখারী রহ. বর্ণনা করেছেন।]
নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের এই অবস্থানের সময় সীমা ছিল ঐ জগতের হিসাবের ১ হাজার ৮ কোটি বছর। দুনিয়ার হিসাবে কত হাজার কোটি বছর হবে তা আল্লাহ পাকই ভালো জানেন। এ জন্যেই মাদারেজুন নবুওয়াত এর ২ পৃষ্ঠায় হযরত আবু হুরায়রা রা. হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, হযরত নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, আল্লাহ পাক সর্বপ্রথম আমার নূরকে সৃষ্টি করেছেন। তাছাড়াও মাওয়াহিবুল লাদুন্নিয়ার ১ম খন্ড ৯ পৃষ্ঠায় জাবের বিন আব্দুল্লাহ রা. হতে বর্ণিত তিনি বলেছেন, আমি নবী পাক সাল্লাল্লহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর খিদমাতে আরজ করলাম আমার পিতা মাতা আপনার পায়ে কোরবান হোক, বলুন! সর্ব প্রথম মহান আল্লাহ পাক কোন বস্তু সৃষ্টি করেছেন? তদুত্তরে তিনি বলেছেন, ওহে জাবির! মহান আল্লাহ পাক সমস্ত সৃষ্টির পূর্বে তোমার নবীর নূরকে সৃষ্টি করেছেন।
পেয়ারা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শুধু সৃষ্টির প্রথম সৃষ্টিই নয় বরং তিনি প্রথম নবী হিসেবেও স্বীকৃতিপ্রাপ্ত। কেননা, আদম আ. কে যখন সৃষ্টি করা হয় নাই তখনো আমাদের নবী নবী হিসেবেই ছিলেন। তিরমিযি শরীফের ২য় খন্ডে ২০২ পৃষ্ঠায় বর্ণিত আছে, হযরত আবু হুরায়রা রা. বলেন, আমি প্রশ্ন করলাম ইয়া রাসূলাল্লাহ সা. আপনার নবুওয়াতের দায়িত্ব কখন থেকে শুরু হয়েছে? তদুত্তরে পেয়ারা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, আদম আ. কে যখন সৃষ্টিই করা হয়নি তখনও আমি নবী। এছাড়াও দালায়েলুন নবুওয়াত ৫ম খন্ড ৪৮৭ পৃষ্ঠায়, ইকামাতুল হুজ্জাত আলাল আলামীন ২য় খন্ড ৩১৫ পৃষ্ঠায়, মুস্তাদরাক লিল হাকিম ৪২২৮ নং হাদিসে এসেছে, হযরত ওমর ইবনে খাত্তাব রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, হযরত আদম আ. যখন সামান্য একটু ভুল করলেন তখন এভাবে প্রার্থনা করলেন, হে আল্লাহ! মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সম্মানের উসিলায় আমাকে ক্ষমা করে দিন। তখন আল্লাহ জিজ্ঞেস করলেন হে আদম! তুমি মুহাম্মদ স. এর নাম জানিলে কি করে? আদম আ. জবাব দিলেন, হে প্রভু! আমাকে সৃষ্টি করার পর যখন আমার ভিতরে রূহ দান করলেন, তখন আমি মাথা উত্তোলন করে আরশের পায়ায় “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ” লেখা দেখলাম। তখনই আমি বুঝতে পেরেছি যে, আপনার নামের সাথে আপনার প্রিয় ব্যক্তির নাম ছাড়াতো অন্য কারো নাম লিখবেন না। অতঃপর আল্লাহ বললেন হে আদম! তুমি সত্য বলেছ। নিশ্চয়ই সে আমার প্রিয় সৃষ্টি তুমি তার উসিলা দিয়ে দোয়া করো। আমি তোমাকে ক্ষমা করে দেব। আরো জেনে রাখো, আমি যদি মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সৃষ্টি না করতাম তাহলে তোমাকেও সৃষ্টি করতাম না।” এই হাদিসের দ্বারা সহজেই অনুমেয় হয় যে, আল্লাহর হাবিব-ই প্রথম সৃষ্টি।
রাসূলে মাকবুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যে নবীদের মধ্যেও প্রথম নবী তা আরো স্পষ্ট হয় কানজুল উম্মাল ৩২১২৩ নং হাদিস দ্বারা। হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, আমি সৃষ্টির দিক থেকে নবীদের মধ্যে প্রথম এবং প্রেরণের দিক থেকে তাদের সর্বশেষ। মেশকাত শরীফের ৫১৩ পৃষ্ঠায় এবং শরহে সুন্নাহ ১৩ তম খন্ড ২০৭ পৃষ্ঠায় উদৃত হয়েছে, এরবাদ ইবনে সারিয়া রা. হতে বর্ণিত, তিনি হযরত নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেছেন আমি আল্লাহ তায়ালার নিকট খাতামুন নাবিয়্যিন হিসেবে লিখিত ঐ সময় থেকে, যখন হযরত আদম আ. মাটির সাথে সম্পৃক্ত।
আলোচনার শেষ প্রান্তে এসে আমরা এ কথাই বুঝতে পারি যে, মহান আল্লাহ তায়ালা তার হাবিবের প্রেম ও ভালোবাসায় এ বিশ^ সৃজন করেছেন। তিনিই হলেন সৃষ্টির প্রথম ও প্রধান আকর্ষণ। প্রথম সৃষ্টি ও প্রথম নবী। যদিও প্রেরণের দিক থেকে সর্ব শেষ। যেভাবে সভার সভাপতি সবার শেষে অনুষ্ঠান মুলতবী ঘোষণা করেন। ঠিক অনুরূপ নবী মুজতবা সাল্লল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর মাধ্যমে নবুওয়াতের ধারাবাহিকতা বন্ধ করে দিয়েছেন। অর্থাৎ তিনি সর্বশেষ, তার পরে আর কোন নবী আসবেন না। কিয়ামত পর্যন্ত তাঁর আদর্শই মানবতার মুক্তির পথ দেখাবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।