পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
জ্ঞান বিজ্ঞান চর্চা করে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার হচ্ছেন
ফারুক হোসাইন : বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যুদ্ধ বিধ্বস্ত নতুন দেশ গড়ার সময়ই বাংলা-ইংরেজি মাধ্যম শিক্ষার পাশাপাশি ইসলামী শিক্ষার প্রয়োজনীয়তার প্রতি গুরুত্ব দিয়ে মাদরাসা শিক্ষাকে যুগোপযোগী করার উদ্যাগ গ্রহণ করেছিলেন। তাঁরই সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনার শাসনামলে এখন মাদরাসা শিক্ষা মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত হয়েছে। মাদরাসায় পড়েই শিক্ষার্থীরা এখন জ্ঞান বিজ্ঞান চর্চা করছেন; গবেষক, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার হচ্ছেন। মাদরাসা পড়–য়া শিক্ষার্থীরা শুধু জ্ঞানচর্চাই নয়; সুনাগরিক হিসেবে নিজেদের দেশ-বিদেশে যেভাবে তুলে ধরছেন; অন্য মাধ্যমের শিক্ষার্থীদের অনেকের পক্ষ্যে সেটা দেখা যায় না। মাদরাসা শিক্ষার এই যে উন্মেষ তার নেপথ্যে রয়েছে মাসরাসা শিক্ষকদের সংগঠন বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের নাম। সংগঠটির সভাপতি এ এম এম বাহাউদ্দীনের কমিটমেন্ট, সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত এবং দক্ষ নেতৃত্বে সারাদেশের মাদরাসা শিক্ষকদের ঐক্যবদ্ধ রাখার জন্যই এটা সম্ভব হয়েছে। আর সংগঠনের মহাসচিব মমতাজীও এর পিছনে করেছেন অক্লান্ত পরিশ্রম।
১৯৭১ সালে স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশের অভ্যূদয়ের পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশনায় মাদরাসা শিক্ষাকে যুগোপযোগী ও কর্মমুখী করার উদ্যোগ নেয়া হয়। এজন্য সরকারি মাদরাসা-ই-আলিয়া ক্যাম্পাসে ছোট একটি রুমে শুরু হয় এর কার্যক্রম। তবে দেশের আলেম-ওলামা ও পীর-মাশায়েখদের দাবি ছিল একটি স্বতন্ত্র ও সায়ত্বশাসিত মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড। স্বতন্ত্র মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের প্রথম দাবি তোলা হয় ১৯৭৬ সালে রাজধানীর মানিক মিয়া এভিনিউতে জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের এক সম্মেলনে। দাবি তোলেন অরাজনৈতিক সংগঠন বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি উপমহাদেশের প্রখ্যাত আলেম, সাবেক মন্ত্রী, দৈনিক ইনকিলাবের প্রতিষ্ঠাতা আলহাজ্ব মাওলানা এম এ মান্নান (রহঃ)। আলেম-ওলামা বিশেষ করে জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের দাবির প্রেক্ষিতে মাদরাসা শিক্ষাকে যুগোপযোগী করার জন্য ১৯৭৮ সালে মাদরাসা শিক্ষা অর্ডিনেন্স জারির মাধ্যমে মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড পুনঃগঠন করা হয়। ১৯৭৯ সালের ৪ জুন মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড একটি স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠান হিসেবে কার্যক্রম শুরু করে।
বর্তমান সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর মাদরাসা শিক্ষা আধুনিকায়নের ঘোষণা দেয়। শিক্ষানীতি ২০১০-এ প্রণয়নের পর সরকারের অবস্থান আরও স্পষ্ট হয়ে ওঠে। এরপর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করে মাদরাসা শিক্ষার মানোন্নয়নে নানামুখী দাবি জানান জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের সভাপতি আলহাজ্ব এ এম এম বাহাউদ্দীনের নেতৃত্বে সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। প্রধানমন্ত্রী তাঁদের দাবির প্রতি ইতিবাচক সাড়া দেন। গত ২০১১ সালের ২০ এপ্রিল বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের নেতৃবৃন্দ এক সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে সাক্ষাত করে দাবির যৌক্তিকতা এবং আলেম-ওলামাদের প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরেন। এরপর থেকেই বদলে যেতে থাকে মাদরাসা শিক্ষার চিত্র। এক সময় মাদরাসার শিক্ষার্থীরা ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার চিন্তা ছিল আকাশ-কুসুম কল্পনা। কিন্তু বর্তমান সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড আবশ্যিক কিছু বিষয়ে নম্বর ব্যবস্থাপনায় সামঞ্জস্য আনায় এখন মাদরাসার শিক্ষার্থীরা ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে শুরু করে বুয়েটের মতো উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে ভর্তির সুযোগ পাচ্ছে। পাঠ্যপুস্তকেও আনা হয়েছে ব্যাপক পরিবর্তন। মাদরাসা শিক্ষার জন্য সুনির্ধারিত, সুবিন্যস্ত ও যুগোপযোগী কারিকুলাম ছিল না। বর্তমান সরকার যুগ চাহিদার আলোকে তৈরি কারিকুলাম অনুযায়ী পাঠ্যবই প্রণয়নের উদ্যোগ গ্রহণ করে। মাদরাসাগুলোকে তথ্য-প্রযুক্তিতে সমৃদ্ধ করার জন্য মাদরাসায় ল্যাপটপ, কম্পিউটার, প্রজেক্টরসহ প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম সরবরাহ এবং শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দিয়েছে। শিক্ষকদের বেতন বৈষম্য দূরীকরণ, শিক্ষার্থীদের বৃত্তি প্রদান, বিষয়ভিত্তিক শিক্ষক প্রশিক্ষণসহ সবকিছুই এসেছে জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের দাবির প্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আন্তরিকতা ও শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায়। আর সামনে থেকে মাদরাসা শিক্ষাকে এগিয়ে নিতে ভূমিকা রাখেন মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর এ কে এম ছায়েফ উল্যা।
মাদরাসায় তথ্য-প্রযুক্তির বিপ্লব: বর্তমানে দেশে ৬ হাজার ৮৫৮টি স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদরাসা, ৬ হাজার ৫৫০টি দাখিল, এক হাজার ৫২৬টি আলিম, এক হাজার ৯৫টি ফাজিল ও ২৩৮টি কামিল মাদরাসাসহ মোট ১৬ হাজার ২৬৭টি মাদরাসা রয়েছে।মাদরাসা শিক্ষাকে প্রযুক্তিগত উন্নয়ন সাধনে সরকার যুগোপযোগী পদক্ষেপ নিয়েছে। তথ্য-প্রযুক্তিতে সমৃদ্ধ করার জন্য মাদরাসায় ল্যাপটপ, কম্পিউটার, প্রজেক্টরসহ প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম সরবরাহ এবং শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দিয়েছে। বর্তমানে ফলাফল গ্রহণ, পরীক্ষা সংক্রান্ত সব কাগজপত্র অনলাইনে গ্রহণ করার সুযোগ হয়েছে। ৯ হাজার ৪০০টি মাদরাসায় ওয়েবসাইট খোলা হয়েছে। প্রজেক্টরের মাধ্যমে পাঠদান কার্যক্রম চলছে। সাধারণ শিক্ষার মতো তথ্য-প্রযুক্তিকে সিলেবাসের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে সাধারণ শিক্ষার সঙ্গে প্রতিযোগিতায় মাদরাসা শিক্ষা পিছিয়ে নেই। অনলাইন পদ্ধতিতে মাদরাসা ব্যবস্থাপনা কমিটি অনুমোদন, মাদরাসার স্বীকৃতি নবায়ন করা হচ্ছে। অনলাইনে বিষয় কোড পরিবর্তন, গ্রæপ/বিভাগ পরিবর্তন, টিসি প্রদান পাইলটিং চলমান রয়েছে। মাদরাসার পরিচালনা কমিটি অনুমোদন ও একাডেমিক স্বীকৃতির মেয়াদ বৃদ্ধির আবেদন অনলাইনে গ্রহণের জন্য ই-অফিস ম্যানেজম্যান্ট সিস্টেম চালু করা হয়েছে এবং প্রাথমিকভাবে ৮০০ জন অধ্যক্ষ/সুপার ও কম্পিউটার শিক্ষককে মাস্টার ট্রেইনার হিসেবে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে। ডিজিটাল পদ্ধতিতে শিক্ষাদানের জন্য ৫ হাজার ৫০০টি মাদরাসায় মাল্টিমিডিয়া প্রযুক্তি স্থাপন করা হয়েছে। ৬ হাজার ৬০০টি মাদরাসায় ফ্রি ইন্টারনেট সংযোগ প্রদান করা হয়েছে।
মাদরাসা শিক্ষা ধারার ষষ্ঠ শ্রেণির কুরআন মজিদ, আকাইদ ও ফিকহ, আরবি ১ম পত্র এবং দ্বিতীয় পত্রসহ ৪টি বিষয়ে প্রচলিত পাঠ্যপুস্তকে ইলেক্ট্রনিক ভার্সনে উন্নয়ন করে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের ব্যবহারের জন্য অনলাইনে উন্মুক্ত করে দেয়া হয়েছে। সাধারণ শিক্ষা ধারার ন্যায় মাদরাসা শিক্ষা ধারায় কৃষি, আইসিটি, কর্ম ও জীবনমুখী শিক্ষা বিষয়কে অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে। ২০১৬ সাল থেকে আলিম শ্রেণিতে অনলাইনে ভর্তি কার্যক্রম চালু করা হয়েছে। প্রায় দেড় লাখ শিক্ষার্থীকে অনলাইনে ভর্তি করা হয়েছে। অনলাইনের মাধ্যমে ডেডিসি, দাখিল ও আলিম শিক্ষার্থীদের নিবন্ধন, পরীক্ষঅর ফরম পূরণ করা হচ্ছে। পরীক্ষা গ্রহণের যাবর্তী কার্যক্রম, ফলাফল প্রক্রিয়াকরণ ও স্বল্প সময়ে প্রকাশ, ফলাফল পুনঃনিরীক্ষণ, নম্বরপত্র, সনদপত্র প্রদান, ও পরীক্ষক নিয়োগসহ যাবতীয় কার্যক্রম তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে অনলাইনে সম্পন্ন করা হচ্ছে। প্রতিটি মাদরাসায় অনলাইন সেবা পৌছানো, মাদরাসা শিক্ষাকে যুগোপযোগী এবং বিশ্বমানে উন্নীতকরণ, বোর্ডের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের কর্ম দক্ষতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে কার্যক্রম গ্রহণ, বোর্ডের যাবতীয় কার্যক্রম/ সেবা অনলাইনে মাধ্যমে সম্পন্ন করা।
যুগোপযোগী পাঠ্যবই: মাদরাসা শিক্ষার জন্য সুনির্ধারিত, সুবিন্যস্ত ও যুগোপযোগী কারিকুলাম ছিল না। বর্তমান সরকার যুগ চাহিদার আলোকে তৈরি কারিকুলাম অনুযায়ী পাঠ্যবই প্রণয়নের উদ্যোগ গ্রহণ করে। জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের মহাসচিব অধ্যক্ষ মাওলানা শাব্বীর আহমদ মোমতাজী ও জমিয়ত নেতৃবৃন্দের সর্বাত্মক সহযোগিতায় বাংলাদেশ মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড ইসলামী ও আরবি বিষয়সমূহের পান্ডুলিপি তৈরি করে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা ও সরাসরি তত্তাবধানে প্রকাশ ও বিতরণের ব্যবস্থা করেছে। ইবতেদায়ী প্রথম শ্রেণি থেকে দাখিল পর্যন্ত মোট ৫৩টি পাঠ্যপুস্তক মাদরাসা শিক্ষার বৈশিষ্ট্য উপযোগী পরিমার্জন করে তা এনসিটিবিতে অনুমোদনের পর শ্রেণিতে প্রচলন করা হয়েছে।
জাতীয় শিক্ষানীতি-২০১০’র নির্দেশনা, পরিবর্তিত জাতীয় ও বৈশ্যিক পরিস্থিতি এবং সমকালীন জীবনের চাহিদা বিবেচনা করে মাদরাসা শিক্ষার ইবতেদায়ী, জুনিয়র, দাখিল এবং আলিম স্তরের সকল শ্রেণির ইসলাম ও আরবি বিষয়সমূহের শিক্ষাক্রম পরিমার্জন/উন্নয়ন করা হয়েছে। সাধারণ শিক্ষা ধারার শিক্ষার্থীদের ন্যায় মাদরাসা শিক্ষা ধারার শিক্ষার্থীদের মধ্যে মৌলিক বিষয়ে সমগুণাবলি অর্জন এবং অভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে তোলার লক্ষ্যে অভিন্ন শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যসূচির প্রচলণ করা হয়েছে। দেশের আলিয়া পদ্ধতির মাদরাসাসমূহে পাঠদান পদ্ধতির আধুনিকায়নে পাঠ-পরিকল্পনা প্রণয়ন এবং সেই অনুযায়ি পাঠদানের নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণমূলক পাঠদান পদ্ধতি এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ব্যবহারের ওপর গুরুত্ব দিয়ে শিক্ষাক্রম উন্নয়ন করা হয়েছে। মাদরাসা শিক্ষার্থীদের আরবি ভাষার দক্ষতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। বিশেষ করে বাচনিক দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য মাদরাসার অভ্যন্তরীণ পরীক্ষার ১০ নম্বর বরাদ্দ করা হয়েছে।
শিক্ষকদের বিষয়ভিত্তিক প্রশিক্ষণ প্রদান : দেশে সাধারণ শিক্ষার জন্য শতাধিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ও ইনস্টিটিউট থাকলেও মাদরাসার জন্য বিএমটিটিআই নামে একটি মাত্র শিক্ষক প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট রয়েছে। এ কারণে মাদরাসা শিক্ষকগণ প্রশাসনিক ও বিষয়ভিত্তিক প্রশিক্ষণ থেকে বঞ্চিত ছিল। বর্তমান সরকার প্রতিটি জেলায় জেলা শিক্ষা অফিসারের নেতৃত্বে ও প্রশাসনের সহযোগিতায় প্রশাসনিক ও বিষয়ভিত্তিক প্রশিক্ষণের জন্য ব্যাপক কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছে, যা শিক্ষার মান উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা পালন করছে। এছাড়া মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের তত্ত¡াবধানে আরবি বিষয়ের শিক্ষকদের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য বোর্ডের অধিভুক্ত প্রায় ৯ হাজার ৫০০টি মাদরাসা থেকে একজন করে আরবি শিক্ষককে প্রশিক্ষণ প্রদানের কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। এ কার্যক্রম পরিচালনার জন্য প্রশিক্ষণ ম্যানুয়াল তৈরির কাজ সম্পন্ন হয়েছে।
শিক্ষকদের বেতন বৈষম্য দূরীকরণ : মাদরাসার অধ্যক্ষ, সুপার ও শিক্ষকগণের বেতন স্কেল অতীত সরকার সমূহের আমলে ধাপে ধাপে উন্নীত হয়েছে। কিন্তু বর্তমান সরকার সাধারণ শিক্ষার অধ্যক্ষ, প্রধান শিক্ষকদের চেয়ে মাদরাসা শিক্ষার অধ্যক্ষ-সুপারগণের স্কেল একধাপ এগিয়ে দিয়ে সমান স্কেলে স্থাপন করে এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ নিয়েছে। এর ফলে মাদরাসার অধ্যক্ষ, সুপারগণ তাদের ন্যায় মর্যাদার অধিকারী হয়েছে, সঙ্গে সঙ্গে সামাজিকভাবে সম্মান পেয়েছেন। অর্থনৈতিকভাবেও হয়েছে সমৃদ্ধ। স্কুল ও কলেজের প্রধান শিক্ষক/অধ্যক্ষদের বেতন-ভাতাদির ন্যায় দাখিল থেকে কামিল স্তরের মাদরাসা সমূহের সুপারিনটেনডেন্ট/অধ্যক্ষের বেতন-ভাতাদির সমতা আনা হয়েছে। এছাড়া অন্যান্যদের ন্যায় সকল এমপিওভুক্ত মাদরাসা শিক্ষকদের জাতীয় বেতন স্কেল প্রদান করা হয়েছে। ইবতেদায়ী শিক্ষকদের বেতন প্রতিমাসে দুই হাজার ৩০০ এবং প্রধানদের দুই হাজার ৫০০ টাকা করে প্রদান করা হয়েছে।
মাদরাসা শিক্ষায় বিএমএড কোর্স চালু: সাধারণ শিক্ষায় বিএড, এমএড কোর্স চালু থাকলেও যুগ যুগ ধরে মাদরাসা শিক্ষা এ সুযোগ থেকে বঞ্চিত ছিল। বর্তমান সরকার মাদরাসা শিক্ষার গুণগত মান উন্নয়নে বিএমটিটিআইতে বিএমএড কোর্স চালু করেছে, যা বহু পরে হলেও এক উল্লেখযোগ্য সংযোজন। মাদরাসা শিক্ষকদের জন্য সাধারণ শিক্ষার বিএড ও এমএড এর ন্যায় বিএমটিটিআই এর মাধ্যমে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে বিএমএড কোর্স চালু করা হয়েছে। মাদরাসা প্রধানদের জন্য নায়েম, ব্যানবেইজ ও বিএমটিটটিআই এর মাধ্যমে তথ্যপ্রযুক্তি, শিক্ষা উন্নয়ন, পরিকল্পনা ও ব্যবস্থাপনা বিষয়ে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হচ্ছে। এডিবির অর্থায়নে ক্যাপাসিটি ডেভেলপমেন্ট ফর মাদরাসা এডুকেশন প্রকল্পের অধীনে মাদরাসা শিক্ষার উন্নয়নে সমীক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়েছে। এছাড়া এডিবির আর্থিক সহায়তায় নির্বাচিত মাদরাসাসমূহে উন্নতমানের সরঞ্জামাদি সরবরাহ ও কারিগরি ল্যাব স্থাপন করা হয়েছে। মাদরাসা শিক্ষার আধুনিকায়নে এর শিক্ষাক্রম, শিক্ষা উপকরণ, মূল্যায়ন পদ্ধতির পরিমার্জন ও উন্নয়ন কার্যক্রম প্রকল্পভুক্ত করার প্রয়াস গ্রহণ করা হয়েছে।
বুয়েট-মেডিকেলে মাদরাসার শিক্ষার্থীরা: মাদরাসা শিক্ষার্থীদের উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তির বাধাসমূহ দূরীকরণের লক্ষ্যে জাতীয় শিক্ষানীতি-২০১০ এর নির্দেশনার আলোকে মাদরাসা ও সাধারণ শিক্ষা আবশ্যিক বিষয় সমূহে বাংলা, ইংরেজি, গণিত, বিজ্ঞান, বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয়, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিতে সমান নম্বর বরাদ্দ রাখা হয়েছে। ফলে মাদরাসা থেকে পাস করে শিক্ষার্থীরা বিজ্ঞান বিষয়ক অন্যান্য যেমন ইঞ্জিনিয়ারিং, চিকিৎসা শাস্ত্র ইত্যাদি বিষয়ে অধ্যয়নের সুযোগ পাচ্ছে।
উপবৃত্তি প্রদান : সরকার গরিব মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীদের উচ্চ শিক্ষার উন্নয়নে ষষ্ঠ থেকে ফাজিল ¯œাতক শ্রেণী পর্যন্ত উপবৃত্তি প্রদান করায় উচ্চ শিক্ষার হার বিশেষ করে ছাত্রীদের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। এ বৃত্তির সংখ্যা আরও বৃদ্ধি পেলে তা হবে এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ। স্কুলের ৫ম ও ৮ম শ্রেণীতে বৃত্তি পেলেও মাদরাসা তা থেকে বঞ্চিত ছিল। বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের দাবির মুখে প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রীসহ শিক্ষা পরিবারের আন্তরিকতায় সরকার সাধারণ শিক্ষার ন্যায় ইবতেদায়ী ৫ম ও দাখিল ৮ম শ্রেণীতে সরকারি বৃত্তি চালু করেছে। মাদরাসা শিক্ষার ইতিহাসে এটি একটি সাড়া জাগানো পদক্ষেপ। এর ফলে মেধার বিকাশ সাধনের সুযোগ পেয়ে অধিকহারে শিক্ষার্থীরা শিক্ষার প্রতি মনোযোগী হয়েছে।
৩৫টি মাদরাসাকে মডেল মাদরাসায় উন্নীত করা : মাদরাসা শিক্ষার মানোন্নয়নে সরকার অবকাঠামোর উন্নয়নে সাইন্সল্যাব, কম্পিউটারল্যাবসমৃদ্ধ ৩৫টি মাদরাসাকে মডেল মাদরাসায় রূপান্তরিত করেছে, যা মাদরাসা শিক্ষাকে একধাপ এগিয়ে নিয়েছে। সেকেন্ডারি এডুকেশন সেক্টর ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট এর সহায়তায় ৩৫টি মাদরাসাকে মডেল মাদরাসা ঘোষণা করে এসব মাদরাসায় অত্যাধুনিক ভবন নির্মান, উন্নতমানের আসবাবপত্র সরবরাহ, কম্পিউটার ল্যাব স্থাপন, প্রয়োজনীয় উপকরণসহ কম্পিউটার প্রদান এবং উন্নত শিক্ষার পরিবেশ নিশ্চিত করা হয়েছে। মাদরাসা শিক্ষাকে যুগোপযোগী করার লক্ষ্যে ক্যাপাসিটি বিল্ডিং ফর মাদরাসা এডুকেশন প্রকল্পের আওতায় ৩৮১টি মাদরাসায় কারিগরি শিক্ষা কোর্স চালু করা হয়েছে।
৫ বিষয়ে অনার্স চালু: ৬৭টি মাদরাসায় ফাজিল শ্রেণিতে আল হাদিস এন্ড ইসলামিক স্টাডিজ, আল কোরআন এন্ড ইসলামিক স্টাডিজ, আদ দাওয়া এন্ড ইসলামিক স্টাডিজ, আল আদাবাল আরবি (আরবি সাহিত্য) ও ইসলামের ইতিহাস এই ৫টি বিষয়ে অনার্স কোর্স খোলা হয়েছে।
এ বিষয়ে মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর এ কে এম ছায়েফ উল্যা বলেন, বর্তমান সরকার নির্বাচনী ইশতিহারে দুর্নীতির বিরুদ্ধে বহুমুখী ব্যবস্থা গ্রহণ, সুশাসন প্রতিষ্ঠা, শিক্ষার মান উন্নয়ন, ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে ক্ষমতায় আসে। সরকারের সেই ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মান এবং স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার জন্য মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড সব সময় সচেষ্ট রয়েছে। ইতোমধ্যে মাদরাসা বোর্ড সকল কার্যক্রমে শতভাগ স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করেছে। সকল কার্যক্রম সম্পন্ন করা হচ্ছে তথ্য-প্রযুক্তির মাধ্যমে। এর ফলে একদিকে যেমন শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের দুর্ভোগ লাঘব হয়েছে। অন্যদিকে আর্থিক ও সময় সাশ্রয়ের স্বচ্ছতাও নিশ্চিত হচ্ছে। তিনি বলেন, কেবল অনলাইন পদ্ধতি ব্যবহারই নয়, পরিবর্তিত জাতীয় ও বৈশ্যিক পরিস্থিতি এবং সমকালীন জীবনের চাহিদা বিবেচনা করে মাদরাসা শিক্ষার শিক্ষাক্রম পরিমার্জন/উন্নয়ন করা হয়েছে। মাদরাসা শিক্ষার্থীদের উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তির বাধা দুর করতে সাধারণ শিক্ষার সাথে সামঞ্জস্য রেখে নম্বর বরাদ্দ রাখায় এখন মাদরাসা থেকে পাস করে শিক্ষার্থীরা ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার সুযোগ পেয়েছে। ইতোমধ্যে মাদরাসার অনেক শিক্ষার্থী বুয়েট ও ঢাকা মেডিকেলেও পড়াশুনা করছে বলে ছায়েফ উল্যা জানান।
বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের মহাসচিব অধ্যক্ষ শাব্বীর আহমদ মোমতাজী বলেন, বর্তমান সরকারের সময়ে মাদরাসা শিক্ষার অভূতপূর্ব উন্নয়ন হয়েছে। সিলেবাস, কারিকুলাম, ডিজিটাল পদ্ধতি সবই বাস্তবায়ন করেছে মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড। সর্বক্ষেত্রে তথ্য-প্রযুক্তির ব্যবহারে মাদরাসা বোর্ড একটি আধুনিক ও স্বয়ংসম্পন্ন বোর্ডে পরিণত হয়েছে। শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের আন্তরিকতায় এবং সকল ক্ষেত্রে জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের সহযোগিতায় এটি সম্ভব হয়েছে। তবে আঞ্চলিক কেন্দ্রগুলোকে শক্তিশালী করলে মাদরাসা শিক্ষা আরও উন্নতির দিকে যাবে বলে তিনি মনে করেন। ####
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।