Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

আমরা শতভাগ নিরাপত্তার ঝুঁকিতে আছি

সংবাদ সম্মলনে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারীরা

ঢাবি সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ১৭ এপ্রিল, ২০১৮, ১২:০০ এএম

কোটা সংস্কার আন্দোলনের তিন যুগ্ম আহŸায়ককে তুলে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে পুলিশের গোয়েন্দা শাখা-ডিবির বিরুদ্ধে। গাড়িতে তুলে চোখ বেঁধে তাদেরকে বলা হয়, ‘চুপ থাক কথা বলবি না।’ ছাড়া পেয়ে গতকাল বিকেল সোয়া ৩টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে এক সংবাদ সম্মেলনে তারা এ সব কথা জানান। তারা জানান, গামছা দিয়ে তাদের তিনজনের চোখ বেঁধে ফেলা হয়। বলা হয়, চুপ থাক, কথা বলবি না।’
সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন কোটা সংস্কার আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম আহŸায়ক রাশেদ খান, ফারুক হোসেন ও নুরুল হক নুর। এছাড়া প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে বক্তব্য রাখেন যুগ্ম আহŸায়ক বিন ইয়ামিন মোল্লা। এসময় তারা সরকারের কাছে তাদের এবং পরিবার-পরিজনের নিরাপত্তা দাবি করে জানান তারা শতভাগ নিরাপত্তার ঝুঁকিতে রয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে নুরুল হক নুর ‘অধিকার আদায়ের পক্ষে কথা বলার জন্য শিক্ষার্থীদের গর্জে ওঠার আহŸান জানিয়ে বলেন, ‘ন্যায় প্রতিষ্ঠার জন্য আন্দোলন করতে এসে আজ একদিকে আমরা হত্যার হুমকি পাচ্ছি, অন্যদিকে পুলিশও আমাদের তুলে নিয়ে যাচ্ছে। জীবন নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করে তিনি বলেন, আমাদের কাউকে এখন মেরে ফেলাও অসম্ভব কিছু না। তাই বলছি, ন্যায়ের জন্য আন্দোলন করতে গিয়ে আমাদের মৃত্যু হলেও তোমরা ন্যায়ের পক্ষে আন্দোলন চালিয়ে যাবে।’
তিনি বলেন, সরকারের কাছে অনুরোধ কোটা সংস্কার আন্দোলনকারী কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্যদের এবং তাদের পরিবার-পরিজনদের নিরাপত্তা দেয়া হোক। আমরা ১০০ ভাগ নিরাপত্তার ঝুঁকিতে আছি। নুরুল হক নুর বলেন, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে আহত আন্দোলনকারীদের দেখতে গেলে অনেক মানুষের সামনে থেকে তুলে নেয়ায় হয়তো আমরা বেঁচে ফিরতে পেরেছি। তবে, এরপর অন্য কোনো জায়গা থেকে তুলে নিয়ে গেলে আমাদের কে বাঁচাবে?’
তিনি বলেন, ‘গুলিস্তানে নিয়ে আমার চোখ বেঁধে ফেলা হয়। আমরা সরকারের সাথে সমঝোতা করার চেষ্টা করেছি। প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্তও মেনে নিয়েছি। তারপরও নাটকীয়ভাবে আমাদের তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। চোখ খোলার পর দেখি আমরা ডিবি কার্যালয়ে।’
কোটা সংস্কার আন্দোলনের এই যুগ্ম আহŸায়ক বলেন, ‘আমাদেরকে বলা হয়েছে- তোমাদের ওপর হামলা হতে পারে তাই তোমাদের এখানে নিয়ে আসা হয়েছে। তোমাদের একটা ভিডিও দেখাব। তবে ভিডিও দেখানো হয়নি।’
তিনি বলেন, ‘আমি পানি চাইলে এক গøাস পানিও দেয়া হয়নি। পরে আমাদেরকে বলে তোমরা চলে যাও। পরে দরকার হলে তোমাদের আবার আসতে হবে।’
রাশেদ খান বলেন, ‘আমার আব্বাকে (নবাই বিশ্বাস) তুলে নেয়া হয়েছে এবং বিশ্রী ভাষায় গালাগাল দিচ্ছে পুলিশ। তাকে জোর করে এটা বলানোর চেষ্টা করা হচ্ছে যে, তার ছেলে (আমি) জামায়াত-শিবিরের লোক। আজ আমি রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নই বলেই কি আমাকে জামায়াত-শিবিরের ট্যাগ দেয়া হচ্ছে?’
তিনি বলেন, ‘আমাকে এবং আমার আত্মীয়-স্বজনকে হুমকি দেয়া হচ্ছে। আমি আশঙ্কা করছি তাদের ওপর আক্রমণ হতে পারে। সরকারের কাছে আমার আব্বার গ্রেফতারের বিচার চাই। বর্তমানে তিনি ঝিনাইদহ সদর থানায় আছেন। সাধারণ শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবি আদায়ের জন্য আন্দোলন করেছি বলেই কি আমাদেরকে হত্যার হুমকি দেয়া হচ্ছে?’
যুগ্ম আহŸায়ক ফারুক হোসেন বলেন, ‘আমাদের তুলে নিয়ে যাওয়ার সময় তাদের সবার হাতে রিভলবার ছিল। তাদের সাথে ছিল ৭/৮টি বাইক এবং দুটি কালো গøাসের হায়েস গাড়ি। আমাদের কাছে তথ্য চাইলে আমরা তাদের সঙ্গে গিয়ে তথ্য দিয়ে আসতাম। কিন্তু এভাবে চোখ বেঁধে তুলে নিয়ে যাওয়া হলো কেন?’
সংবাদ সম্মলনে ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী পরিষদের আরেক যুগ্ম আহŸায়ক বিন ইয়ামিন ঘটনা সম্পর্কে জানান, সংবাদ সম্মেলন শেষে বেলা পৌনে একটার দিকে তারা কয়েকজন দুপুরের খাবার খেতে রিকশায় করে চানখাঁরপুল যাচ্ছিলেন। রাশেদ, নুরুল্লাহ ও ফারুক এক রিকশায় ছিলেন। আর তিনি ছিলেন পেছনের রিকশায়। ওই তিনজনকে বহনকারী রিকশাটি ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে প্রবেশের ফটকের কাছে এলে পেছন থেকে তিনটি মোটরসাইকেল রিকশাটির সামনে গিয়ে গতিরোধ করে। পরে পেছন থেকে আরেকটি সাদা রঙের হাইএক্স মডেলের মাইক্রোবাস এসে সেখানে থামে। গাড়ি থেকে কয়েকজন নেমে রিকশা থেকে তিন নেতাকে নামিয়ে গাড়িতে তুলে নিয়ে চলে যায়।
একই তথ্য জানালেন, আরেক প্রত্যক্ষদর্শী হাসপাতালের ফটকের উল্টো দিকে খাবারের দোকানের কর্মচারী মো. সালাউদ্দিন। তিনি বলেন, মোটরসাইকেল ও গাড়ি থেকে নেমে সাত-আটজন ওই রিকশার সামনে দাঁড়ায়। তারা তিনজনকে রিকশা থেকে নামাতে গেলে কিছুটা ধস্তাধস্তি হয়। পরে তিনজনের প্রত্যেককে দুই পাশ থেকে দু’জন করে ধরে গাড়িতে তুলে নিয়ে দ্রæত চলে যায়।
সংবাদ সম্মেলন শেষে কেন্দ্রীয় কমিটির নেতৃবৃন্দকে আটকের প্রতিবাদে ঢাবির কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে থেকে এক প্রতিবাদ মিছিল বের করা হয়। এর আগে দুপুর পৌনে ২টার দিকে ক্যাম্পাস থেকে এই তিনজনকে মাইক্রোবাসে করে তুলে নিয়ে যাওয়া বলে জানান বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের আহŸায়ক হাসান আল মামুন। তিনি জানান, বেলা পৌনে একটার দিকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে প্রবেশ ফটকের সামনে রিকশা থেকে ওই তিন নেতাকে নামিয়ে মাইক্রোবাসে করে পুলিশ তুলে নিয়ে যায়।
এদিকে, ওই তিন নেতাকে তুলে নেওয়ার আগে গতকাল বেলা ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে পরিষদ আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে আগামী দুইদিনের মধ্যে আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে করা মামলা প্রত্যাহার করার দাবি জানানো হয়। সংবাদ সম্মেলনে ওই তিনজনই উপস্থিত ছিলেন।
মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার দেবদাস ভট্টাচার্য জানান, ‘কথা বলার জন্য কোটা সংস্কার আন্দোলনের তিন নেতাকে ডিবি কার্যালয়ে আনা হয়েছিল। পরে তারা চলে গেছেন।’



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: কোটা

২৩ ডিসেম্বর, ২০২১
১৭ নভেম্বর, ২০২০

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ