পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
নির্মাণশিল্পের প্রধান কাঁচামাল রডের মূল্য লাগামহীনভাবে বেড়েছে। পাল্লা দিয়ে বেড়েছে সিমেন্ট, বালু, ইট ও পাথরের দাম। এতে করে আবাসনখাতসহ শিল্পখাতে দেখা দিয়েছে চরম অস্থিরতা। পাশাপাশি খরচ বেড়ে যাওয়ায় উন্নয়ন প্রকল্প থমকে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। রডের মূল্য বৃদ্ধির কারণে সরকারি উন্নয়ন কাজ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে, ঠিকাদাররা অনেক জায়গায় কাজ বন্ধ করে দিয়েছে-এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিকে চিঠি দিয়েছেন একজন সংসদ সদস্য। সম্প্রতি কমিটির সভায় এ বিষয়ে আলোচনাও হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রড ও সিমেন্টের মূল্য বৃদ্ধির কারনে ইতোমধ্যে সারাদেশে এলজিইডি, সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর (সওজ), গণপূর্ত বিভাগ, সিটি কর্পোরেশন এবং পৌরসভার উন্নয়ন কাজ অনেকটাই ঝিমিয়ে পড়েছে। এর আঁচ লেগেছে সরকারের মেগা প্রকল্পগুলোতেও। ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের নারায়ণগঞ্জের ভুলতায় ফ্লাইওভার নির্মাণ প্রকল্পটি দ্বিতীয় দফা সংশোধনের প্রস্তাব করা হয়েছে। ২০১৫ সালে এ প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও এখন ফ্লাইওভারটির দৈর্ঘ্য সামান্য কমানো হচ্ছে। এতে প্রকল্প ব্যয় না কমে উল্টো ৩৫ শতাংশ বাড়ছে। রড ও সিমেন্টের মূল্য বৃদ্ধির কারনে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের রাস্তা ও ড্রেনেজ নির্মাণ কাজের গতিও কমে গেছে। সংশ্লিষ্ট বেশ কয়েকজন ঠিকাদারের সাথে এ বিষয়ে কথা বললে তারা জানান, লাগামহীনভাবে রডের মূল্য বৃদ্ধিতে তারা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। কাজের গতি অনেকটাই কমে গেছে। ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মোঃ আসাদুজ্জামান ইনকিলাবকে বলেন, চুক্তি অনুযায়ী ঠিকাদাররা কাজ করতে বাধ্য। তবে এটা ঠিক যে হঠাৎ করে মূল্যবৃদ্ধিতে ঠিকাদাররা একটা ধাক্কা খেয়েছে। জুন মাস সামনে বলেই তারা ধাক্কা খেল। কারন জুনের মধ্যে নির্ধারিত কাজ শেষ করা ছাড়া তাদের কোনো উপায় নেই।
নির্মাণশিল্পের সাথে সংশ্লিষ্টরা লফিয়ে লাফিয়ে মূল্যবৃদ্ধিকে অযৌক্তিক ও অস্বাভাবিক বলে দাবি করছেন । অনেকেরই অভিযোগ, ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে কারসাজির মাধ্যমে দাম বাড়িয়েছেন। তবে ইস্পাত শিল্পসংশ্লিষ্টদের দাবি, আন্তর্জাতিক বাজারে লোহার মূল্যবৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে দেশে রডের দাম বাড়াতে বাধ্য হয়েছেন তারা। পাথর বালু, ইট ও সিমেন্টের ক্ষেত্রেও মূল্যসমন্বয় করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (রিহ্যাব) সভাপতি আলমগীর শামসুল আলামিন বলেন, নির্মাণ সামগ্রীর মূল্য বৃদ্ধিতে আবারও অস্থির অবস্থার মধ্যে পড়তে যাচ্ছে আবাসন খাত। অনেকেই ইতোমধ্যে নির্মাণকাজ সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। রিহ্যাবের সিনিয়র সহ-সভাপতি নুরুন্নবী চৌধুরী শাওন বলেন, রড-সিমেন্টের মূল্য বৃদ্ধি শুধু আবাসন খাতকেই ক্ষতিগ্রস্ত করছে না, এর সঙ্গে সরকারের উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডের ব্যয়ও বাড়াবে, বাধাগ্রস্ত করবে উন্নয়নকাজকেও।
বাংলাদেশ অটো রি-রোলিং অ্যান্ড স্টিল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ শহিদুল্লাহ বলেন, সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র রডের কাঁচামালের উপর ২৫শতাংশ কর বাড়িয়েছে। আগে রডের কাঁচামালের আমদানি খরচ ছিল ৩০০ ডলার। এখন ৪৩০ ডলার। এ ছাড়া আন্তর্জাতিক বাজারে কাঁচামালের দাম বেড়েছে। ডলারের দাম বেড়েছে। ব্যাংকে ডলার সঙ্কটে এলসি কমে গেছে। পাশাপাশি দেশে গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বেড়েছে। পরিবহন খরচ ডাবল হয়েছে। এসব কারণে রডের দাম বেড়েছে। এর সাথে মৌসুমের কারণেও দাম কিছুটা বেড়েছে। জানা গেছে, এক মাসের ব্যবধানে এম এস রডের দাম বেড়েছে প্রায় ১৮ হাজার টাকা। যদিও এর মধ্যে তিন হাজার টাকা কমেছে। গতকাল সোমবার ৭২ গ্রেডের রডের বাজারমূল্য ছিল টনপ্রতি ৬৮ হাজার টাকা। দেশি রডের মূল্য ছিল টনপ্রতি ৫২ হাজার টাকা। সালাহউদ্দিন মিঠু নামে কদমতলীর এক রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়ী জানান, রডের সাথে সিমেন্টের দামও বস্তাপ্রতি ৭০ টাকা বেড়েছে। আর সিলেটের বালুর দাম ট্রাকপ্রতি বেড়েছে ২/৩ হাজার টাকা। ওই ব্যবসায়ী বলেন, এই দাম বাড়ার কারনে আমার একটা প্রজেক্টের খরচ সোয়া এক কোটি টাকা বেড়ে গেছে। ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ড্রেনেজের কাজের এক ঠিকাদার বলেন, রড ও সিমেন্টের দাম বাড়ার কারনে আমার মতো অনেক ঠিকাদার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। আগে কিছু মালামাল কেনা ছিল সেগুলো দিয়ে কাজ চলছিল। এখন কয়েকটি সাইটে কাজ বন্ধ রাখতে হয়েছে। অপেক্ষায় আছি যদি কিছুটা দাম কমে। ওই ঠিকাদার বলেন, আমার পরিচিত কয়েকজন ঠিকাদারের একই অবস্থা। তারা কাজ বন্ধও করতে পারছেন না, আবার কাজ চালিয়ে যেতেও পারছেন না। উত্তর সিটি কর্পোরেশনের এক ঠিকাদার বলেন, রড সিমেন্টের কারনে এখন খোঁড়াখুঁড়ির কাজ করা হচ্ছে। বড় বড় পাইপ দিয়ে ড্রেনেজের কাজে রড সিমেন্ট লাগে না। আপাতত সেগুলো করা হচ্ছে। রড-সিমেন্টের কারনে সারাদেশে এলজিইডির কাজেও স্থবিরতা নেমে এসেছে। বরিশাল জেলার একজন ঠিকাদার জানান, হঠাৎ করে রডের দাম এভাবে বাড়বে তা তিনি ভাবতেই পারেন নি। এখন বাজারমূল্যে রড-সিমেন্ট কিনে কাজ করলে কোনো লাভ হবে না। বরং ভর্তুকি দেয়া লাগতে পারে। নওগাঁ জেলার এক পৌরসভা ইঞ্জিনিয়ার বলেন, রড-সিমেন্টের দাম বাড়ার সাথে সাথে ঠিকাদার কাজ বন্ধ করে দিয়েছে। অপরদিকে, রড উৎপাদনকারীরা বলছেন, রড তৈরি উপাদান স্ক্র্যাপ ও বিলেট বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। যার দাম আন্তর্জাতিক বাজারে বেড়েছে। কিন্তু বাংলাদেশ কন্সট্রাকশন এসোসিয়েশন ইন্ড্রাস্ট্রিজ (বিএসিআই) এর কর্মকর্তারা জানান, বিশ্ব বাজারে স্ক্র্যাপের দাম বেড়েছে ৬ শতাংশ এবং ফিনিশড গুডসের দাম বেড়েছে ১০ শতাংশ। অথচ দেশে রড উৎপাদনকারীরা এর দাম বাড়িয়েছেন প্রায় ৪০ শতাংশ। যা সম্পূর্ণ অযোক্তিক। এই উচ্চ মূল্যবৃদ্ধিতে সরকারের উন্নয়ন প্রকল্প ব্যহত হবে। নতুবা সরকারকে প্রতিটি প্রকল্পের ব্যয় রিভাইস করতে হবে। যদি সরকার রিভাইস করে তাও প্রায় ছয়মাস থেকে ১ বছর সময় লেগে যাবে। এছাড়া রডের এই মূল্যবৃদ্ধি অব্যহত থাকলে দেশের বড় বড় খাত বড় ধরণের হুমকির মুখে পড়বে। থমকে যাবে প্রকল্পগুলো। এতে বেকার হয়ে পড়বে প্রায় ৪০ লাখ মানুষ।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ কনস্ট্রাকশন এসোসিয়েশন ইন্ড্রাস্ট্রিজের সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার মুনীর উদ্দিন আহমেদ জানান, আন্তর্জাতিক বাজারে রড আমদানির উপাদান স্ক্র্যাচ ও বিলেটের দাম বাড়ানোর অজুহাতে অযৌক্তিকভাবে রডের দাম বাড়ানো হয়েছে। এতে সরকারের হাজার হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ উন্নয়ন প্রকল্প বাধাগ্রস্ত হবে। তিনি বলেন, আমরা সরকারের সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনা করেছি। এই দাম বৃদ্ধির জন্য মন্ত্রণালয়কে একটি পর্যবেক্ষণ কমিটি করার সুপারিশ করেছি। এফবিসিসিআই ইতিমধ্যে একটি পর্যবেক্ষণ কমিটি গঠন করেছে। আমরা সরকারের কাছে এই বিষয়ের দ্রæত সমাধান চাই।
ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, দেশে উন্নয়ন প্রকল্প দিন দিন বাড়ছে। সরকারের হাজার হাজার কোটি টাকার প্রকল্প চলমান রয়েছে। এই সময়ে রডের বাজারের অস্তিরতা উন্নয়ন প্রকল্পে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। ঢাকা গণপূর্ত বিভাগের একজন ঠিকাদার বলেন, সামনে জাতীয় নির্বাচন। সরকার চায় উন্নয়ন প্রকল্প দ্রæত সম্পন্ন করতে। এই অবস্থায় রডের মূল্য বৃদ্ধিতে সরকারের জন্য একটা বিব্রতকর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, রডের এই মূল্য অব্যহত থাকলে সরকারের উন্নয়ন প্রকল্প বাধাগ্রস্ত হওয়ার পাশাপাশি প্রকল্পের গতি কমবে। তাতে ব্যয়ও বেড়ে যাবে। এছাড়া সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখে পড়বে দেশের আবাসন খাত। তাই সরকারের উচিত এই বিষয়ে পদক্ষেপ নেয়া এবং কি কারণের এর দাম বেড়েছে তা খতিয়ে দেখা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।