পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বিশেষ সংবাদদাতা : রাজধানীর সঙ্গে নদী পথে যোগাযোগ ও ব্যবসার অন্যতম মাধ্যম বুড়িগঙ্গা-তুরাগ নদী। অপরিকল্পিত ড্রেজিং, দখলদারদের ছোবল ও অবৈধ স্থাপনায় মৃতপ্রায় এই নদীটি নাব্য সংকটে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। দীর্ঘদিন থেকে এই চালু, এই বন্ধ এভাবেই চলছে ওয়াটার বাস ও বাল্ক হেড/নৌযান চলাচল।
সরেজমিনে দেখা যায়, নদীতে দু’একটি ছোট নৌ-যান চলাচল করলেও তা খুবই সীমিত। একই সঙ্গে জোয়ার-ভাটার উপর নির্ভর করতে হচ্ছে। এক ব্যবসায়ী জানান, মিরপুর ব্রীজ থেকে তামান্না পার্ক পর্যন্ত নদীর গভীরতা একেবারেই কম। কিন্তু বারবার অবহিত করা সত্তে¡ও কোন ধরণের ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। এতে বিপাকে পড়েছে সিন্নিরটেক, আশুলিয়া, গাবতলী ল্যান্ডিং স্টেশনসহ পার্শ্ববর্তী এলাকার ব্যবসায়ীরা। এই এলাকার ব্যবসায়ীদের মতে, নদী পথে রাজধানীর সঙ্গে ব্যবসার অন্যতম মাধ্যম এই নদী। অথচ অপরিকল্পিত ড্রেজিং, নদী ভরাট করে দখল ও অবৈধ স্থাপনায় মৃত্যুপায় নদীটি। বর্তমানে ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। তাদের মতে, সম্ভাবনাময় এ খাত থেকে সরকার রাজস্ব পেলেও তা খুবই কম। সঠিক পরিকল্পনা অনুযায়ী আগালে এখান থেকে সরকার বিপুল পরিমান রাজস্ব পেতে পারে।
সূত্র মতে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অগ্রাধিকারমূলক প্রকল্প হিসেবে রয়েছে ঢাকা মহানগরীর চারপাশের নদীগুলো পূনরুদ্ধার, সার্কুলার নৌ-রুট এবং সড়ক নির্মাণ (ইস্টার্ণ বাইপাসসহ)। তারপরও এ কাজ গতি পাচ্ছে না। জানা যায়, বিভিন্ন সরকারের সময়ে বুড়িগঙ্গা-তুরাগ নদীর নাব্য ধরে রাখা, ড্রেজিং কার্যক্রম এবং নদীর দু’পাশের দখলদার উচ্ছেদে বিভিন্ন কার্যক্রম হাতে নেয়। কিন্তু সঠিক তদারকি ও পরিকল্পনার অভাবে তা কাজে আসেনি।
এলাকাবাসীর সূত্রে জানা যায়, বিএনপি সরকারের সময়ে ২০০২ সালে ঢাকার চারদিকের নদী পথকে গুরুত্ব দিয়ে নৌ-পথকে সচল করার উদ্যোগ নেয়া হয়। ওই সময় যাত্রী চলাচলের জন্য করে ওয়াটার বাস প্রকল্প হাতে নেয়া হয়। কিন্তু তা আর আলোর মুখ দেখেনি। পরবর্তীতে বর্তমান সরকারের সময়ে সড়ক পথে চাপ কমাতে যাত্রী চলাচলের জন্য ওয়াটার বাস চালু করা হয়। অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানের মাধ্যমে নৌ-পরিবহনমন্ত্রী শাহজাহান খান কয়েক দফায় ওয়াটার বাস চালু করে।
বিআইডবিøউটিএ’র পরিচালনায় ২০১০ সালের ২৮ আগস্ট ‘তুরাগ’ ও ‘বুড়িগঙ্গা’ নামে দুটি ওয়াটার বাস চালু হয়। দ্বিতীয় ধাপে চারটি এবং তৃতীয় ধাপে আরও ৬টি ওয়াটার বাস চালু করা হয়। কিন্তু নদীর নাব্যতা না থাকা এবং যাত্রী না পাওয়ায় বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডবিøউটিএ) প্রতিদিন প্রায় ৫০ হাজার টাকা লোকসানে পড়ে। তাই একাধিকবার বন্ধ করে দিতে হয় এই প্রকল্প। এতে এলাকার ব্যবসা বাণিজ্যে পড়েছে ভাটা। গত ১৯ মার্চ বিআইডবিøউটিএ বাল্কহেড চলাচলে নিষেধাজ্ঞা, উচ্ছেদ অভিযান ও নদীর নাব্যতা না থাকার কারণে আর্থিক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় ইজারা মূল্য মওকুফ করার আবেদন করেছে সূচনা সমবায় সমিতি লিমিটেড।
সরেজমিনে গাবতলী থেকে আশুলিয়া পর্যন্ত পরিদর্শন করে দেখা যায়, নাব্য সঙ্কটে ওয়াটার বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। আসছে না বড় কোন বলগেট বা নৌ-যান। বলতে গেলে ছোট ছোট নৌকা ও নৌ-যান ছাড়া অন্যন্য নৌ-যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। বর্তমানে ছোট কয়েকটি বাল্কহেড চলাচল করলেও জোয়ার-ভাটার উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে। নাব্য সঙ্কটের কারণে বালুবাহী বড় বাল্কহেডগুলো চলাচল একেবারেই বন্ধ রয়েছে। ব্যবসায়ীরা জানান, অতি শীঘ্রই পরিকল্পিতভাবে ড্রেজিং না করানো হলে নৌ-যান চলাচল একেবারেই বন্ধ হয়ে যাবে।
ইজারাদার প্রতিষ্ঠান সূচনা সমবায় সমিতি লি. সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের ঈদুল ফেতর এবং ঈদুল আযহাতে কর্তৃপক্ষের নিষেধাজ্ঞার ফলে ৩৯ দিন, শ্রমিক ধর্মঘটে ৫দিন, নৌ দুর্ঘটনায় চ্যানেল বন্ধ থাকায় ১৫দিন, মোবাইল কোর্ট এবং উচ্ছেদ অভিযানের কারনে ৩৩দিন, ঘনকুয়াশার কারনে ৮দিন এবং নদীর নাব্যতা না থাকায় ২০দিনসহ মোট ১৭৪ দিন বন্ধ ছিল বাল্কহেড চলাচল। এ সময়ে ইজারা এবং বেতন বাবদ বিশাল অঙ্কের অর্থের ক্ষতির মুখে পড়তে হয়েছে সমিতিকে।
এলাকার ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গাবতলী থেকে আশুলিয়া এলাকার নৌ-পথে সকল ধরনের ব্যবসা প্রায় বন্ধের পথে। নৌ-পথে এই এলাকার অন্যতম ব্যবসা ‘বালু ব্যবসা’। নাব্য সঙ্কটে নৌ-যান ঢুকতে না পারায় এই ব্যবসাও এখন বন্ধের পথে। ব্যবসায়ীদের মতে, নাব্য সঙ্কটে তাদের ব্যবসা বন্ধ করে দেওয়া ছাড়া উপায় নেই। ওই এলাকার বাসিন্দা আব্দুস সাত্তার (৪৫) জানান, দীর্ঘদিন ধরে এই এলাকায় আছি। ৭/৮ বছর পূর্বে এই নদীর অবস্থা কিছুটা ভালো ছিলো। দিন যত গরাচ্ছে আস্তে আস্তে বিলীন হয়ে যাচ্ছে নদী। তিনি জানান, নাব্য না থাকায় ৬ ফুটের উপরের বড় বলগেট ঢুকতে পারে না। এছাড়াও অন্যান্য বড় নৌ-যানও আসছে না। তাই কিছুটা হলেও বিপাকে এই এলাকার ব্যবসায়ীরা।
নাব্য ও দখলদারদের উচ্ছেদ এবং সার্বিক বিষয়ে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডবিøউটিএ) চেয়ারম্যান কমডোর এস মোজাম্মেল হক ইনকিলাবকে বলেন, রাজধানীর চারপাশের নদীর নাব্য ও উচ্ছেদ কার্যক্রম চলমান রয়েছে। প্রতি সপ্তাহেই পরিদর্শনে যাচ্ছি। যেখানে যেখানে চর দেখা দিয়েছে তার প্রত্যেকটা স্থান চিহ্নিত করে খনন করা হবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।