পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
প্রেস বিজ্ঞপ্তি : গত শনিবার চট্টগ্রাম রাউজান কাগতিয়া দরবার শরীফে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল কাগতিয়া দরবারের প্রতিষ্ঠাতা স্মরণে ৬৫তম পবিত্র মিরাজুন্নবী (দঃ) মাহফিল ও সালানা ঈছালে ছাওয়াব মাহফিল। এদিন ফজরের নামাজের পর শুরু হয় ওরছের কর্মসূচি। গত বছরের ন্যায় এ বছরও কাগতিয়া দরবার থেকে পূর্বেই ঘোষণা হয়েছিল ওরছে কারোর কাছ থেকে গরু, মহিষ, ছাগল, টাকা, নজর-নেওয়াজ ইত্যাদি কোন কিছুই নেওয়া হবে না, চলবে না শরীয়ত পরিপন্থী কোন কার্যকলাপ, শুধুমাত্র কোরআন-সুন্নাহর পূর্ণ অনুসরণে পালিত হবে সালানা ওরছ। তাই কাগতিয়া দরবারের পক্ষ থেকে নেওয়া হয়েছিল কোরআন-সুন্নাহ্র আলোকে একটানা দিন-রাত ব্যাপী ইবাদত-বন্দেগী, খতমে কুরআন, খতমে বুখারী, জিকির-এলাহীসহ নানান কর্মসূচি।
এদিন ভোর থেকে প্রথমে জিয়ারত করে কুরআন তিলাওয়াত ও তাহলিল আদায় করতে থাকেন হাফেজ ও সাধারণ মুসলমানরা আর আলেমগণ আদায় করতে থাকেন খতমে বুখারী। ছোট শিশুরাও দলবেঁধে আল্লাহু আল্লাহু জিকির করতে থাকে। কোথাও নেই ওরছের নামে সেই চিরাচরিত গরু-মহিষের দৌড়াদোড়ি, রশিদমূলে টাকা উত্তোলন, ঢাক-ঢোল কিংবা বাদ্য-বাজনা। অত্যন্ত ভাবগাম্ভীর্যপূর্ণ পরিবেশে সবার মুখে মুখে শুধু উচ্চারিত হয় সুমধুর সুরে কুরআন তিলাওয়াত, তাহলিল ও নিম্নস্বরে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্ জিকির এবং নবী (দঃ)’র শানে দরুদ পাঠ। এ যেন এক অভূতপূর্ব দৃশ্য, প্রশান্তিময় পরিবেশ। শুধু দেশের নয়, সপ্তাহজুড়ে বাংলাদেশে আসা বহির্বিশ্বের বিভিন্ন দেশ মধ্যপ্রাচ্য, সউদী আরব, অষ্ট্রেলিয়া, কানাডা, যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী কাগতিয়া দরবারের শতশত অনুসারী এতে অংশ নেয়।
মেরাজুন্নবী (সা.) বিষয়ে আলোচনায় অংশ নেন বাংলাদেশ বিশ^বিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন সহ-সভাপতি প্রফেসর ড. মুহাম্মদ আবুল মনছুর, মুনিরীয়া যুব তবলীগ কমিটি বাংলাদেশ ওলামা পরিষদের সভাপতি আল্লামা মুফতি মুহাম্মদ ইব্রাহিম হানফী, সচিব আল্লামা মুফতি কাজী মুহাম্মদ আনোয়ারুল আলম ছিদ্দিকী, সহ-এশায়াত সম্পাদক আল্লামা মুহাম্মদ এমদাদুল হক মুনিরী, কাগতিয়া এশাতুল উলুম কামিল এম. এ. মাদরাসার মুহাদ্দিস আল্লামা মুহাম্মদ আশেকুর রহমান, আল্লামা মুহাম্মদ সেকান্দর আলী, মাওলানা মুহাম্মদ আব্দুল হক প্রমুখ। বাদ আসর পর্যন্ত চলতে থাকে হামদ ও নাতে মোস্তফা।
বাদে এশা বক্তব্য রাখেন আল্লামা অধ্যক্ষ শায়খ ছৈয়্যদ মুহাম্মদ মুনির উল্লাহ্ আহমদী মাদ্দাজিল্লুহুল আলী। এসময় মসজিদের বিশাল মাঠসহ পুরো দরবার জনসমুদ্রে পরিণত হয়। বক্তব্যে তিনি বলেন, প্রিয়নবী (দঃ)’র সর্বশ্রেষ্ঠ মুজেযা মিরাজের অত্যাশ্চর্য ঘটনা সমগ্র মানবজাতির জন্য অতি বরকতময় ও তাৎপর্যপূর্ণ। চৌদ্দশত বছর পরে এসে ১৪৩৭ হিজরির ২৬ রজব মিরাজুন্নবী (দঃ)’র এমন বরকতময় সময়ে সবাইকে শোকসাগরে ভাসিয়ে প্রিয়নবীর সাথে আল্লাহর ডাকে সাড়া দিয়ে চলে যান কাগতিয়ার প্রতিষ্ঠাতা। দূরদর্শী আধ্যাত্মিক এ দার্শনিক এক বিরাট পরিবর্তন এনেছিলেন অগণিত যুব সমাজের মননে ও হৃদয়ে। তাদেরকে নূরে মুহাম্মদীর আলোয় শান্তি ও কল্যাণের পথ দেখিয়েছেন। এ মনীষী চিরদিনের জন্য চলে গেলেও রেখে গেছেন তাঁর অনুপম আদর্শ, কাগতিয়া দরবার, মাদরাসা ও হিলফুল ফুযুলের আদলে গড়া সংগঠন মুনিরীয়া যুব তবলীগ কমিটি বাংলাদেশ। এটা কিয়ামত পর্যন্ত মুসলিম মিল্লাতকে হিদায়াতের পথ দেখাবে, কুরআন-সুন্নাহ্র আমলে জীবন গড়তে প্রেরণা যোগাবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
গতকাল ফজরের নামাজ শেষে খতম শরীফ, মোরাকাবা, ঈছালে ছাওয়াব ও আখেরি মুনাজাতের মাধ্যমে শেষ হয় সালানা ওরছ। মুনাজাতে দেশ, জাতি ও মুসলিম উম্মাহ্র সমৃদ্ধি কামনা করা হয়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।