পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
একদিকে যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন ও ফ্রান্স অন্যদিকে রাশিয়ার মধ্যে উত্তেজনার বিস্তৃতি কাউকে বিস্মিত করবে না। গত কয়েক বছর ধরে মার্কিন নেতৃত্ব ও মূলধারার ব্রিটিশ সংবাদ মাধ্যম রাশিয়াকে বিশ্বশান্তি ও আন্তর্জাতিক ব্যবস্থার জন্য এক বড় রকমের হুমকি বলে উপস্থাপন করে আসছে। নির্দিষ্টভাবে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে একজন যুদ্ধ-পিপাসু, একজন আগ্রাসনকারী, একজন অসৎ রাজনীতিক এবং যে কোনো মূল্যে রাশিয়ার অতীত গৌরব পুনরুদ্ধারে উন্মত্ত বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে।
রাশিয়াকে বিশ^শান্তির জন্য হুমকি হিসেবে প্রদর্শন সাম্প্রতিক সময়ে জোরদার হয়েছে। এর আংশিক কারণ, গত ১ মার্চ পুতিনের রাশিয়ার উৎকর্ষমন্ডিত সামরিক প্রযুক্তির কথা প্রকাশ। তার মধ্যে রয়েছে সর্বাধুনিক প্রজন্মের ক্ষেপণাস্ত্র যা সীমাহীন দূরত্বে আঘাত হানতে এবং মার্কিন বা ন্যাটোর ক্ষেপণাস্ত্র-নিরোধ প্রতিরক্ষা ভেদ করতে সক্ষম। নতুন সারমাট ক্ষেপণাস্ত্র ছাড়াও রুশ প্রতিরক্ষা শিল্প নিচু দিয়ে উড়তে পারা পারমাণবিক অস্ত্র বহনকারী স্টিলথ ক্ষেপণাস্ত্র নির্মাণ করেছে যা প্রতিরোধ সীমা পেরিয়ে সক্ষম। এটি সকল বিদ্যমান ও ভবিষ্যত ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ও বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার বিরুদ্ধে অজেয়।
পুতিন আরো প্রকাশ করেছেন যে তার দেশ মনুষ্যবিহীন ডুবো যান আবিষ্কার করেছে যা সাবমেরিন, টর্পেডো ও পানির উপরের সকল প্রকার জাহাজের গতিবেগের চাইতে বহুগুণ বেশি গতিবেগে গভীর পানির নিচ দিয়ে আন্তঃমহাদেশে চলাচল করতে পারে। তিনি কিনঝাল বা ড্যাগার ব্যবস্থার কথা বলেন যা হচ্ছে উচ্চমাত্রার সঠিকতা সম্পন্ন হাইপারসনিক বিমান ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা। বিশে^র আর কারো কাছে এটা নেই। এ ক্ষেপণাস্ত্র শব্দের চেয়ে ১০ গুণ গতি সম্পন্নই শুধু নয়, এটি ২ হাজার কি মি-এরও বেশি দূরত্বে পারমাণবিক ও প্রচলিত যুদ্ধাস্ত্র বহন করতে পারে। রুশ প্রেসিডেন্ট আভানগার্ড ক্ষেপণাস্ত্রের প্রতিও দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। এটি হচ্ছে হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র যার গ্লাইডিং ক্রুজ ব্লক ব্যাপক পাশর্^ীয় ও উল্লম্ফন কৌশল সম্বলিত। এ কারণে তা যে কোনো বিমান বা ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার কাছে সম্পূর্ণ অজেয়।
এ সব সামরিক প্রযুক্তির ফলে রাশিয়া কার্যকর ভাবে বিশে^র একমাত্র পরাশক্তি হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের প্রাধান্যের অবসান করেছে। পুতিন যদি এটাকে তার লক্ষ্য করে থাকেন তার কারণ সামরিক প্রাধান্য লাভের মোহ নয়। তিনি বলেছেন, ২০০২ সালে প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশ জুনিয়র ও ভাইস প্রেসিডেন্ট ডিক চেনির উদ্যোগে ১৯৭২ সালে স্বাক্ষরিত অ্যান্টি ব্যালিস্টিক মিসাইল (এবিএম) চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে একতরফা ভাবে প্রত্যাহারের পাল্টা জবাব হচ্ছে রাশিয়ার সামরিক শক্তি বৃদ্ধি। বিখ্যাত বিশ্লেষক উইলিয়াম এঙ্গডাল বলেন, এ প্রত্যাহারের পরিণতিতে যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটো রাশিয়াকে ঘিরে ফেলার জন্য ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন শুরু করে। যে সব দেশ বিলুপ্ত সোভিয়েত ইউনিয়নের অংশ ছিল বা ভেঙ্গে যাওয়া ওয়ারশ জোটের সদস্য ছিল তাদেরকে আনুষ্ঠানিক বা অনানুষ্ঠানিক ভাবে মার্কিন-ন্যাটো বলয়ে টেনে আনা হয়। রোমানিয়া ও পোলান্ডে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র-বিধ্বংসী ঘাঁটি তৈরি করা হয়। মার্কিন বৈশি^ক ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থার মধ্যে বতর্মানে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে রাশিয়ার সীমান্তের কাছে ডেস্ট্রয়ার ও ক্রুজার মোতায়েন।
রাশিয়া ও পশ্চিমের মধ্যে বর্তমান উত্তেজনার ক্ষেত্রে আর কিছুকে দায়ী করার অবকাশ নেই। এটা সত্য যে ২০১৪ সালে প্রথমে ক্রিমিয়া, তারপর ইউক্রেনের অংশকে রাশিয়ার অন্তর্ভুক্তকরণের ফলে মার্কিন ও ইউরোপীয় ্এলিটদের মধ্যে প্রচন্ড ক্রোধের সৃষ্টি হয় এবং তা রাশিয়ার বিরুদ্ধে পঙ্গুত্বকর অবরোধ আরোপের রূপ নেয়। আইনের কঠোর ভাষায় এ অন্তর্ভুক্তিকরণ আন্তর্জাতিক আইনের লংঘন। অন্যদিকে এ বিষয়ের সত্যানুসারী বিশ্লেষণে দেখা যায় যে রাশিয়া যে ভাবে যা করেছে তা নিয়ে রয়েছে বৃহত্তর ভূরাজনৈতিক উদ্বেগ। ২০১৪ সালের ফেব্রæয়ারিতে ইউক্রেনের গণতান্ত্রিক ভাবে নির্বাচিত সরকারের বিরুদ্ধে অভ্যুত্থান সংঘটিত করে যুক্তরাষ্ট্র ও তার স্থানীয় অনুচররা সুস্পষ্ট ভাবে প্রদর্শন করে যে তারা সে ভূখন্ডের উপর তাদের নিয়ন্ত্রণ দৃঢ় করতে চায় যা শুধু সোভিয়েত ইউনিয়নেরই অংশ ছিল না, তা ছিল রাশিয়ার ইতিহাস ও সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ। ক্রিমিয়া তার কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ বন্দরসহ যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটোর কাছে ছিল কাক্সিক্ষত। সবকিছু মিলে এ সব বিষয় মার্কিন-ন্যাটোর পূর্বাভিমুখী কর্মসূচির সম্প্রসারণ করেছে ও রাশিয়াকে দুর্বল করতে চেয়েছে। এ কারণেই ক্রিমিয়ার জনসাধারণের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ ২০১৪ সালের ১৬ মার্চের গণভোটে রাশিয়ার সাথে অন্তর্ভুক্তির পক্ষে মত দেয় যাকে তারা তাদের রুশ পিতৃভূমি পুনরুদ্ধার হিসেবে দেখে। এটাই ছিল সেখানকার লোকদের আসল মনোভাব যে মনোভাব পরিচয় ও ন্যায়বিচারের সাথে সংযুক্ত।
সাম্প্রতিক আরেকটি ঘটনা দু’পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা আরো বাড়িয়েছে। এটা এখন সত্য যে সিরিয়ার বাশার সরকারের বিরুদ্ধে লড়াইরত সরকার বিরোধী ও সন্ত্রাসীরা পাশ্চাত্য ও তাদের আঞ্চলিক মিত্রদের সাহায্যপুষ্ট হয়েও পরাজিত হয়েছে। পশ্চিম এশিয়ায় ইসরাইলি দখল ও মার্কিন আধিপত্যবাদের বিরোধী হেজবুল্লাহ-সিরিয়া-ইরান ত্রয়ী জোট নির্মূলের সমন্বিত উদ্যোগ ব্যর্থ হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র, ইসরাইল ও তাদের অংশীদারদের পরাজয়ের ক্ষেত্রে রাশিয়া এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে বলে ওয়াশিংটন ও তেলআাবিবের এলিটদের মধ্যে পুতিনের প্রতি বিদ্বেষ বেড়েছে। সিরিয়ায় তাদের সর্বশেষ কয়েকটি আস্তানার মধ্যে একটি পূর্ব ঘুটায় আটকে পড়া কিছু বিদ্রোহী ও সন্ত্রাসীদের বৈষয়িক সাহায্য দেয়ার যুক্তরাষ্ট্রের বেপরোয়া চেষ্টা প্রমাণ করে যে ওয়াশিংটন সিরিয়ার যুদ্ধোত্তর রাজনৈতিক দৃশ্যপটের সাথে সম্পৃক্ত। সিরিয়ার সেনাবাহিনী কর্তৃক রাসায়নিক গ্যাস ব্যবহার ও সরকারী জঙ্গি বিমানের বোমাবর্ষণে শিশুদের মৃত্যুর কথা তাদের প্রচারণার উপাদান। অতীতে পশ্চিমা সাংবাদিকদের রণাঙ্গন থেকে পাঠানো রিপোর্টে এ সব প্রচারণার কিছু কিছু অর্ধ সত্য বলে প্রমাণিত হয়েছে। পশ্চিমা এলিট ও তাদের মিডিয়ার কাছে শিশুদের মৃত্যু আসল উদ্বেগ নয়। তাই যদি হত তাহলে ইয়েমেনের শিশুদের মৃত্যু নিয়ে তারা নিশ্চুপ থাকত না। আসল কথা হল, রশিয়া কিভাবে সিরিয়ায় পা রাখল ও নিজেদের অবস্থান সুদৃঢ় করল এবং মার্কিন-ইসরাইলি আধিপত্যকে কিভাবে চ্যালেঞ্জ করে তাদের জন্য বিরাট বিপর্যয়ের সৃষ্টি করল।
রাশিয়া বিরোধী অবিশ্রান্ত প্রচারণায় সর্বশেষ যুক্ত হয়েছে নোভিচক নামে একটি নার্ভ গ্যাস ব্যবহারের ঘটনাটি। ব্রিটেনের স্যালিসবারিতে বসবাসরত রুশ ডবল এজেন্ট সের্গেই স্ক্রিপাল ও তার মেয়েকে এ গ্যাস প্রয়োগ করে হত্যার চেষ্টা করা হয়। ব্রিটিশ সরকার এ কাজ যে রাশিয়ার তার এখনো শক্ত প্রমাণ দিতে পারেনি। অন্যদিকে রাশিয়া এর দায়িত্ব অস্বীকার করেছে।
যে কেউই প্রশ্ন করতে পারে যে রুশ প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের এক সপ্তাহ আগে এবং মার্কিন অবরোধের মধ্যে স্ক্রিপালকে হত্যা করে পুতিনের কি লাভ হত? এ প্রশ্নই করেছেন সুপরিচিত মার্কিন কলামিস্ট এরিক মার্গোলিস। সাবেক ব্রিটিশ কূটনীতিক ক্রেইগ মারেরও সন্দেহ যে রাশিয়া সরকার কয়েক বছর আগে বন্দী গুপ্তচর বিনিময়ে মুক্ত হওয়া স্ক্রিপালকে হত্যার চেষ্টা করেছে। তিনি বলেন, বরং এ হত্যা চেষ্টার জন্য অরবিস ইন্টেলিজেন্স নামে একটি সংস্থা বা ইসরাইলি মোসাদকে সন্দেহ করেন। মারের কথা ঃ রাশিয়ার সুনাম ক্ষুন্ন করার সুস্পষ্ট উদ্যোগ ইসরাইলের রয়েছে। সিরিয়ায় রাশিয়ার পদক্ষেপ সিরিয়া ও লেবাননে ইসরাইলের অবস্থানকে মৌলিক পন্থায় দুর্বল করেছে। ইসরাইলের লক্ষ্য হামলা চালিয়ে রাশিয়ার আর্ন্ত্জাতিক অবস্থানকে ক্ষতিগ্রস্ত করার প্রতিটি সুযোগকে ব্যবহার করা এবং তার দায় রাশিয়ার উপর চাপানো।
স্ক্রিপালের উপর হামলার পিছনে যদি ইসরাইলের হাত থেকে থাকে তাহলে সত্য কখনোই জানা যাবে না। ব্রিটেন বা কোনো পশ্চিমা শক্তি, এমনকি জাতিসংঘও একটি সত্য, নিরপেক্ষ তদন্ত পরিচালনা করতে চাইবে না। বরং স্ক্রিপাল ঘটনাকে ব্যবহার করে ওয়াশিংটন ও তার মিত্ররা রাশিয়ার বিরুদ্ধে অবরোধ আরো বৃদ্ধি ও সম্প্রসারিত করতে চাইবে।
উদ্দেশ্য পরিষ্কার। ওয়াশিংটনি এলিটদের আধিপত্যবাদী শক্তির কাছে আত্মসমর্পণে মস্কোকে বাধ্য করা। রাশিয়ার ইতিহাস সম্পর্কে যারই প্রাথমিক ধারণা আছে তিনি জানেন যে এটা ঘটবে না। রাশিয়া প্রতিরোধ অব্যাহত রাখবে। আর এ রুশ প্রতিরোধ হয়ত মানব সমাজের পৃথক ভবিষ্যত রচনায় গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে।
*এ নিবন্ধের লেখক ড. চন্দ্র মুজাফ্ফর ইন্টারন্যাশনাল মুভমেন্ট ফর এ জাস্ট ওয়ার্ল্ড (জাস্ট) এর সভাপতি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।