Inqilab Logo

শুক্রবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

দুধে ভেজালবিরোধী অভিযানে একজনের কারাদন্ড : সিন্ডিকেটে আতঙ্ক

ইনকিলাবের অনুসন্ধানী সংবাদে সচল প্রশাসন

| প্রকাশের সময় : ১৩ এপ্রিল, ২০১৮, ১২:০০ এএম

মহসিন রাজু / জয়নাল আবেদীন জয় : দৈনিক ইনকিলাবে গত ১০ এপ্রিল “সাদা দুধের কালো ব্যবসা, বিষাক্ত নকল দুধের ক্রিম থেকে তৈরি হচ্ছে দই মিষ্টি খাঁটি গাওয়া ঘি !” শিরোনামে সচিত্র অনুসন্ধানী সংবাদ প্রকাশের পর তোলপাড় শুরু হয়েছে। নডে চড়ে বসেছে স্থানীয় প্রশাসন। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে এই ভেজাল সিন্ডিকেটের নিরাপদ আস্তানা বলে পরিচিত সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলার মোহনপুর বাজারে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান পরিচালনা করেন উপজেলা প্রশাসন। উল্লাপাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো.আরিফুজ্জামানের নেতৃত্বে ভ্রাম্যমাণ আদালত কেমিক্যাল মিশিয়ে নকল দুধ তৈরীর সময় মোহনপুর বাজার থেকে ১৬০ লিটার নকল দুধসহ সামছুল আলম (৫৫) নামে এক দুধ কারখানার শ্রমিককে আটক করা হয়। সে উপজেলার পার এলংজানি গ্রামের গোলাম প্রামানিকের ছেলে। পরে ভেজাল দুধ তৈরীর অপরাধে তাকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে ২ মাসের বিনাশ্রম কারাদÐ দেয়া হয়। ওই দুধ কারখানার মালিক উপজেলার কয়ড়া বাঘলপুর গ্রামের খোকা প্রামানিকের ছেলে আলম মিয়ার নামে উল্লাপাড়া মডেল থানায় একটি নিয়মিত মামলা দায়ের হয়েছে। এই কারখানা থেকে কেমিক্যাল দিয়ে তৈরী দুধ ঢাকা, টাঙ্গাইলসহ সারা দেশে বাজারজাত করে আসছিল। পরে আটককৃত নকল দুধ উল্লাপাড়া পৌর মেয়র, বিভিন্ন ইউপি চেয়ারম্যানদের সামনে উপজেলা পরিষদের পুকুরে ফেলে দেয়া হয়। ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানের সময় উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সাথে উল্লাপাড়া সহকারী কমিশনার (ভুমি) ফারুক সুফিয়ান, থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (তদন্ত) গোলাম মোস্তফা, উপজেলা স্যানিটারী ইন্সপেক্টর শহিদুল হক রন্টু উপস্থিত ছিলেন। ভ্রাম্যমাণ আদালত এসময় মোহনপুর বাজারের দুগ্ধ শীতলীকরণ কেন্দ্র মিল্ক ভিটা, প্রাণ, আড়ং, আকিজ কোম্পানীর শাখা পরিদর্শন করেন। তাদের সবাইকে নকল দুধ সংগ্রহের বিষয়ে কঠোর হুশিয়ারি এবং দুধ প্রক্রিয়াজাতে মান নিয়ন্ত্রণের উপর গুরুত্বারোপের নির্দেশ দেন। অভিযানের খবর পেয়ে দুধ সংগ্রহের এই বিশাল বাজারে ভেজাল সিন্ডিকেটে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। দুধ কারখানাগুলোতে ভেজাল দুধ ধরা পড়ার ভয়ে দুধ সরবরাহ বন্ধ রাখে ভেজালকারীরা। অভিযানের খবরে রাস্তা থেকেই দুধ নিয়ে তারা পালিয়ে যায়। এই বাজারের দুধ থেকে মিষ্টির ছানা, ঘি, দই তৈরীর কারখানাগুলো দ্রæত বন্ধ করে গা ঢাকা দেয় এর মালিকরা। অভিযানে দুধসহ আটক এবং কারাদÐের খবরে চরম আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে ভেজাল সিন্ডিকেটে। এসব কারখানায় কাপড় কাচা ডিটারজেন্ট পাউডার, সোডা, সয়াবিন তেল, লবণ, চিনি, স্যালাইন, নি¤œমানের গুড়া দুধসহ মারাতœক সব কেমিক্যাল মিশিয়ে একটি চক্রের মণ কে মণ ভেজাল দুধ তৈরী করছে। কিছুতেই তাদের কর্মকাÐ কিছুতেই রুখতে পারছেনা প্রশাসন। জানা যায়, সরকার দেশের ভেজাল খাদ্য প্রতিরোধে নিরাপদ খাদ্য আইন প্রণয়ন করলেও জনস্বাস্থ্য ভালো রাখার জন্য এই ভেজাল পরীক্ষার নাকি কোন যন্ত্রই নেই মাঠ পর্যায়ের স্বাস্থ্য বিভাগসহ সংশ্লিষ্টদের কাছে!
দৈনিক ইনকিলাবে এই সিন্ডিকেটের কারসাজি নিয়ে অনুসনন্ধানী সংবাদ প্রকাশের পর স্থানীয় প্রশাসন এগুলো প্রতিরোধে মাঠে নেমেছে। গত মঙ্গলবারও উল্লাপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্্েরর স্যানেটারী ইন্সপেক্টরের নেতৃত্বে একটি টিম ভেজাল দুধ তৈরীকারীদের ধরতে উল্লাপাড়া উপজেলার কালিয়াকৈড়, সুজা, মোহনপুর বাল্লপাড়ায় অভিযান চালিয়ে কারো বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারেনি। উল্লাপাড়ায় মোহনপুরে এই ভেজাল দুধ প্রক্রিয়াজাত কারখানাগুলো সর্তক হয়ে গেছে। সংবাদ প্রকাশের পর গত দুই দিনে তারা দ্রæত দুধ সংগ্রহ করে প্রতিষ্টানগুলোর প্রধান ফটকে তালা ঝুলিয়ে ভিতরে কাজ করছে। মঙ্গলবার সকালে এখানকার দুগ্ধ সংগ্রহকারী প্রতিষ্ঠান মিল্ক ভিটা, প্রাণ, আড়ং, আকিজ কোম্পানীতে গিয়ে ভেজাল দুধের বক্তব্য জানার চেষ্টা করা হলে তারা এড়িয়ে যান। প্রধান ফটকে তালা লাগিয়ে ভিতরে কাজ করলেও জানানো হয়েছে সেখানে দায়িত্বরত কেউ নেই।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ভেজালবিরোধী

১১ ফেব্রুয়ারি, ২০২১

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ