পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
অবশেষে সরকারি চাকরিতে বিদ্যমান সকল ধরণের কোটা বাতিলের ঘোষণা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কোটা পদ্ধতি বাতিল ঘোষণা করার পর তিনি কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ক্লাসে ফিরে যাওয়ার আহŸান জানান। তিনি বলেছেন, কোটা পদ্ধতি যেহেতু অযৌক্তিক, সেহেতু কোটা পদ্ধতি থাকারই প্রয়োজন নেই। আমি কোটা পদ্ধতি তুলে দিলাম। আন্দোলন যথেষ্ট হয়েছে। এবার তারা ক্লাসে ফিরে যাক। তিনি বলেন, সকলে প্রতিযোগিতার মাধ্যমে চাকরিতে আসবে। আর ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠি ও প্রতিবন্ধিদের চাকুরির জন্য আমরা অন্য ব্যবস্থা করবো। তাদের বিশেষ ব্যবস্থায় চাকরি হবে।
গতকাল (বুধবার) বিকেলে জাতীয় সংসদ অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রীর জন্য নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর পর্বে সরকার দলীয় এমপি জাহাঙ্গীর কবির নানকের সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন। কোটা পদ্ধতি সংস্কারের দাবির প্রেক্ষাপটে বিষয়টি পরীক্ষা-নিরীক্ষার আশ্বাস দেওয়ার পরও শিক্ষার্থীদের আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন প্রধানমন্ত্রী। তীব্র ক্ষোভ ও অভিমানের সুরে তিনি বলেন, কোটা নিয়ে যখন এতকিছু, তখন কোটাই থাকবে না। কোন কোটারই দরকার নেই। তিনি বলেন, কোটা থাকলেই সংস্কারের প্রশ্ন আসবে। এখন সংস্কার করলে আগামীতে আরেক দল আবার সংস্কারের কথা বলবে। তখন আবারো মানুষকে দূর্ভোগ পোহাতে হবে। কোটা থাকলেই ঝামেলা। সুতরাং কোটারই দরকার নেই। কোটা ব্যবস্থা বাদ, এটাই আমার পরিষ্কার কথা। তিনি আরো বলেন, দেখে দুঃখ লাগে, ছেলে-মেয়েরা লেখাপড়া বন্ধ করে কোটার সংস্কার চেয়ে আন্দোলনে নেমেছে। রোদের তাপে পুড়ে ওরা তো অসুস্থ হয়ে পড়তে পারে। তাদের অবরোধের কারণে মানুষ হাসপাতালে যেতে পারছে না। অফিস-আদালতে ঠিকভাবে যেতে পারছে না। সবাইকেই দূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
শেখ হাসিনা বলেন, ছাত্ররা দাবি করেছে, আমিও বসে থাকিনি। আমাদের সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরকে পাঠিয়েছি। তিনি ছাত্রদের সঙ্গে বসেছেন। আমি ক্যাবিনেট সেক্রেটারিকে নির্দেশ দিয়েছি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে। মন্ত্রী তাদের সঙ্গে বসল, একটা সমঝোতা হলো। অনেকে মেনে নিল কিন্তু অনেকে মানল না। টিএসসিতে অনেকে থেকে গেল, কেন? আর মেয়েরাও হল থেকে বেরিয়ে আসল। আমি সারা রাত ঘুমাতে পারিনি। নানককে পাঠালাম, আলোচনা করল, তাদের ফিরে যাওয়ার কথা বলা হলো কিন্তু তারা মানল না, আন্দোলন চালিয়ে গেল। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা একটা নীতি নিয়ে রাষ্ট্র পরিচালনা করি। যারা আন্দোলনে নেমেছে তারা আমার নাতীর বয়সী, তাদের ভালো কিসের, আমরা তা ভালো জানি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীরা চাকরি পেত না, আগে নারীদের জজ হওয়ার সুযোগ ছিল না। পাকিস্তান আমলে নারীরা জজ হিসেবে তো আদালতে ঢুকতেই পারত না। আমরা এসে নারীদের চাকরিতে ১০ ভাগ কোটার ব্যবস্থা করি, কিন্তু এখন মেয়েরাও রাস্তায়। তার মানে তারাও কোটা চায় না। আমি তো খুশি, আমি নারীর ক্ষমতায়নে সবচেয়ে বেশি কাজ করেছি, মেয়েরা যখন চায় না তাহলে কোটার দরকার নেই। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে শুরু হওয়া অধিবেশনে কোটা সংস্কার আন্দোলন চলাকালে গভীর রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির বাসায় হামলা, ভাংচুর ও লুটপাটের ঘটনায় তিনি তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, যারা ভাংচুর ও লুটপাটে জড়িত, তাদের বিচার হবে। গোয়েন্দা সংস্থার তদন্ত চলছে। লুটের মাল কোথায় আছে, তা ছাত্রদেরই বের করে দিতে হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভিসির বাড়িতে আক্রমণ হলো, আমরাও তো আন্দোলন করেছি। আমরা তো কখনও এমনটি করিনি। ভিসির বাড়িতে এমন ভাঙচুর, ভিসির বাড়ির ছবি দেখে মনে হয়েছে পাকিস্তানী বাহিনী আমাদের ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের বাড়িতে যেভাবে ভাঙচুর চালিয়েছিল, লুটপাট করেছিল ভিসির ছেলে-মেয়ে ভয় পেয়ে লুকিয়ে ছিল, একতলা-দোতলা ভবন তছনছ করা হলো, পরে সিসি ক্যামেরা নিয়ে চলে গেল আমি এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই। যারা ঘটিয়েছে তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র বলে আমি মনে করি না। এখনও আমার যেসব শিক্ষক বেঁচে আছেন তাদের আমরা সম্মান করি, শালীনতা বজায় রাখি। সবারই তো আইন মেনে চলতে হবে।
তিনি বলেন, এখন কোটা সংস্কারের নামে ছাত্ররা রাস্তা বন্ধ করে আন্দোলনে নেমেছে। তারা রাস্তায় বসে আছে, যান চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে, রোগীরা হাসপাতালে যেতে পারছে না। ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ আমিই তৈরি করে দিয়েছি, এখন সবাই ফেইসবুক, ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ পাচ্ছে। আধুনিক প্রযুক্তির শিক্ষা ব্যবস্থা আমিই চালু করেছি। এখন সেগুলো ব্যবহার করে গুজব ছড়ানো হলো, এক ছেলে মারা গেছে। রাত ১টার সময় হলের গেইট ভেঙে রাস্তায় নেমে এলো ছেলে-মেয়েরা। পরে ওই ছেলে যখন মারা যায়নি, ওই ছেলে যখন নিজেই ফেইসবুকে জানিয়ে দিল তখন তাদের মুখটা কোথায় গেল? এরপর শুরু হয় যত অঘটন, ভাঙচুর, লুটপাট; এর দায় কে নেবে’?
তিনি বলেন, ‘১৯৭২ সাল থেকে কোটা ব্যবস্থা চলছে। ৩৩তম বিসিএসে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ হয়েছে ৭৭ দশমিক ৪০ ভাগ শিক্ষার্থীর আর ৩৫তম বিসিএসে মেধার ভিত্তিতে ৬৭ দশমিক ৪৯ ভাগ শিক্ষার্থীকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। মেধাবীরা কিন্তু বাদ যায়নি যেখানে কোটা পাওয়া যাবে না, মেধা তালিকা থেকে নেয়া হবে। এটা কিন্তু চলছে, জানি না ছাত্ররা এটা জানে কিনা’। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি জানি, ছাত্ররা মেধাবী, তাদের লিখিত পরীক্ষায় পাস করে এ পর্যায়ে আসতে হয়। তাদের দাবিতে তো বলা আছে, কোটায় পাওয়া না গেলে মেধা তালিকা থেকে নিয়োগ হবে। আমরা মেধা তালিকা থেকে তো নিয়োগ দিচ্ছি। আর এ নিয়ে ঢাবির কিছু প্রফেসর, শাবির তারাও তাল মিলিয়েছে।’
এর আগে সকাল ১০টায় গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে কোটা সংস্কার আন্দোলনের বিষয়ে কথা বলতে যান কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ ও সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসাইন। পরে দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে তারা বলেন, আমরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছি। সাক্ষাতের সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সরকারি চাকরিতে কোনো কোটা থাকবে না।
গত কয়েকদিন ধরেই সরকারি চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে কোটা ব্যবস্থার সংস্কার নিয়ে আন্দোলন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন স্থানে চলছে। প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে সুনির্দিষ্ট ঘোষণা না আসা পর্যন্ত বিক্ষোভ চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন আন্দোলনকারীরা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আন্দোলন দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজেও ছড়িয়ে পড়েছে। সংসদে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের পর আন্দোলনকারীদের প্ল্যাটফর্ম ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুল হক নূর বলেন, তারা রাতে বসে এই বক্তব্য বিশ্লেষণ করে বৃহস্পতিবার সিদ্ধান্ত জানাবেন। বর্তমানে সরকারি চাকরিতে নিয়োগে ৫৬ শতাংশ পদ বিভিন্ন কোটার জন্য সংরক্ষিত রয়েছে। এর মধ্যে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের জন্য ৩০ শতাংশ, নারী ১০ শতাংশ, জেলা ১০ শতাংশ, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ৫ শতাংশ, প্রতিবন্ধী ১ শতাংশ। ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ কোটার পরিমাণ ১০ শতাংশে কমিয়ে আনার দাবি তুলে আন্দোলন করছে। কোটায় প্রার্থী পাওয়া না গেল মেধা তালিকা থেকে তা পূরণের দাবিও জানায়। আন্দোলনের সমন্বয়ক রাশেদ খান বলেন তারা রাতে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের বিভিন্ন দিক বিশ্লেষণ করে বৃহস্পতিবার সকাল ১০ টায় সংবাদ সম্মেলনে তাদের সিদ্ধান্ত জানাবেন। তিনি আরো বলেন, আমরা কোটা ব্যবস্থার বিলুপ্তি চাইনি। সংস্কার চেয়েছি। আন্দোলনকারী অনেক শিক্ষার্থী বলেন, কোটা সম্পূর্ণ বাতিল করলে তা সংবিধানের ২৮(৪), ২৯(৩)(ক) অনুচ্ছেদের সাথে সাংঘর্ষিক হবে। ফলে সুপ্রিমকোর্টের রিটে বর্তমান কোটা ব্যবস্থা ফিরে আসবে। পরের দিনই হাইকোর্টে রিট হবে। হাইকোর্ট স্থগিতাদেশ দেবেন। এরপর আর আন্দোলন করার কিছু থাকবে না। আদালতের ওপর তো কথা বলা যায় না। সুতরাং আমরা কোটা সংস্কার চাই, কোটা বাতিল নয়। বিলোপ্ত নয়, সংস্কার চাই! পাশাপাশি গেজেট ও চাই। এদিকে ছাত্রলীগ মনে করছে প্রধানমন্ত্রী সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতা জানান, আমরা এই সিদ্ধান্তে আস্থা রাখছি। প্রধানমন্ত্রী কখনো ভূল সিদ্ধান্ত নিতে পারেননা। অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রীর এ বক্তব্যের পর বিভিন্ন হল থেকে আনন্দ মিছিল বের করে ছাত্রলীগ।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।