দেশে দেশে রোজার উৎসব
মাহে রমজান আরবী নবম মাসের নাম। চাঁদের আবর্তন দ্বারা যে এক বৎসর গণনা করা হয়,
মি’রাজ শব্দটি আরবি। অর্থ উর্ধ্বে উঠার সিঁড়ি বা বাহন। ইসলামি পরিভাষায়, দো’জাহানের মহাসম্মানিত সম্রাট, মহান আরশে আজিমের সম্মানিত মেহমান, নবীকুলের সর্দার, নিখিল বিশ্বের রহমাত, সৃষ্টিকুলের মুক্তিদূত, আমাদের প্রিয় আকা, মাক্কি-মাদানি, বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ মুস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া-সাল্লাম এর পবিত্র হায়াতে তাইয়্যেবার ৫১ বছর ৯ মাস বয়সে, ৬২১ ইসায়ী সনের রজব মাসের ২৬ তারিখ দিবাগত রাতে, পবিত্র মক্কা নগরী থেকে বাইতুল মুকাদ্দাসে ১ লক্ষ ২৩ হাজার ৯ শত ৯৯ জন নবীর ইমাম হয়ে, ইমামুল মুরছালিন হয়ে, প্রথম আকাশ, দ্বিতীয় আকাশ, তৃতীয় আকাশ, চতুর্থ আকাশ, পঞ্চম আকাশ, ষষ্ট আকাশ, সপ্তম আকাশ, সিদরাতুল মুনতাহা, লা-মাকান, লা-জামান এরপর ৭০ হাজার নূরের পর্দা অতিক্রম করে আরশে আজীমে মহান আল্লাহ তা’আলার স্বাক্ষাতে হাজির হওয়ার ঐতিহাসিক অসাধারণ ঘটনাকে মি’রাজ বলা হয়। এ বিস্ময়কর ঘটনা সস্পর্কে বিশ্ববাসী ওয়াকেফহাল। এ মি’রাজের রজনীটিকে লাইলাতুল মি’রাজ বা শব-ই-মি’রাজ বলা হয়।
এ সম্পর্কে পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফে ইরশাদ হয়েছে, “অতঃপর তিনি নিকটবর্তী হলেন ও ঝুঁকে গেলেন, ধনুকের দু’মাথা যেভাবে মিলিত হয় তদ্রুপ বরং তার চেয়েও অধিক নিকটবর্তী হলেন। মহান আল্লাহ পাক ও তার হাবিব প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া-সাল্লাম কে যা দেয়ার তা দেন।” (সূরা নজম : ৮-১০)
হযরত আবু হুরায়রা রাদি আল্লাহু তা’আলা আনহু থেকে এক সূদীর্ঘ হাদিস বর্ণিত হয়েছে। তিনি বলেন, মহান আল্লাহ তা’আলা ও তার প্রিয় হাবিব সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া-সাল্লাম এর সাথে তার কথোপকথনকালে বলেন, “আমি আপনাকে আমার হাবীব ও খলীল হিসেবে গ্রহণ করেছি। সমগ্র মানব জাতীর জন্য জান্নাতের সুসংবাদ দানকারী আর জাহান্নামের ব্যাপারে ভয়প্রদর্শনকারী হিসেবে প্রেরণ করেছি। আপনার বক্ষ্য মুবারক সম্প্রসারিত করেছি। আপনার দায়িত্বের বোঝা সহজ করে দিয়েছি। আপনার আলোচনাকে সমুন্নত করেছি। আমার অদ্বিতীয়তা ও তাওহিদের বাণীর সাথে আপনার রসুল হওয়া ও বান্দা হওয়ার বাণীকে সংযোজন করেছি। আপনার উম্মতকে শ্রেষ্ঠ উম্মত এবং মধ্যপন্থা অবলম্বী উম্মত বানিয়েছি। মানুষের কল্যাণের জন্য তাদের অভ্যুদয়। মর্যাদা ও সম্মানের দিক দিয়ে তাদের প্রথম কাতারের উম্মত আর আর্বিভাবের দিক দিয়ে সর্বশেষ উম্মত বানিয়েছি। আপনার উম্মতের মধ্যে এমন কতক লোক জন্মগ্রহণ করবেন যাদের অন্তরে আমার কালাম লিপিবদ্ধ থাকবে। অস্তিত্বের দিক দিয়ে আপনি সর্বপ্রথম নবী আর যমীনে আগমনের দিক দিয়ে সর্বশেষ নবী। আপনাকে সূরা ফাতিহা হাদিয়া করেছি। আপনার পূর্বে অন্য কেউ এ সূরা লাভ করেনি। আপনাকে আরশের নিচে রক্ষিত খনি থেকে সূরা বাকারার শেষাংশের আয়াত শরীফসমূহ হাদিয়া করেছি। আপনার পূর্বে কোনো নবী (আলাইহিস সালাম) দেরকে তা হাদিয়া করিনি। আপনাকে হাউজে কাওছার হাদিয়া করেছি। বিশেষ করে আটটি বিষয় আপনার উম্মতকে দান করা হয়েছে। মুসলমান হওয়ার উপাধি, হিজরত, জিহাদ, নামাজ, ছদকা, রমজান মাসের রোজা, সৎকাজের আদেশ ও অসৎকাজের নিষেধ। (খাছায়িছুল কুবরা)
অর্থাৎ বিশ্বের মহা গৌরব, চির আকাঙ্খিত মহামানব-নবী, দো’জাহানের মহাসম্মানিত সম্রাট, নবীকুল শিরোমনী, রাহমাতুল্লিল আলামিন, খাতামুন্নাবিয়ীন প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া-সাল্লাম নীত হলেন, অনাদি, অনন্ত, অবিনশ্বর, অসীম শক্তি সামার্থ ও হিকমতের মালিক আল্লাহু সুবহানাহু তা’আলার একান্ত সান্নিধ্যে। একপাশে বিশ্ব জাহানের চির আরাধ্য, চির উপাস্য, অদ্বিতীয় স্রষ্টা প্রতিপালক প্রভূ, অন্যপাশে তার একান্ত অনুগ্রহভাজন, সর্বশ্রেষ্ট সৃষ্টি, সমস্ত শ্রীমান ব্যক্তিদের মহাসম্রাট, প্রিয়তম নবী মুহাম্মদ মুস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া-সাল্লাম। মধ্যখানে রয়েছে দুই ধনুকের জ্যার সমপরিমান ব্যবধান কিংবা তার চাইতেও কম। অনুষ্টিত হলো স্রষ্টার সৃষ্টির অভূতপূর্ব সাক্ষাতকার, অশ্রুতপূর্ব মহামিলন। অনন্ত প্রতাপান্বিত স্রষ্টা এবং মনোনীত প্রিয়তম সৃষ্টির মধ্যে হলো অমীয় বানী বিনিময়। তোহফা স্বরুপ উম্মাতে মুহাম্মদীর জন্য বরাদ্দ করা হলো পঞ্চাশ ওয়াক্ত ফরয নামাজ।
এরপর শুরু হলো, প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া-সাল্লাম এর মর্তলোকে ফিরে আসার পালা। এক পর্যায়ে সাক্ষাত হলো হযরত মুসা আলাইহি-সসালাওয়াতু ওয়া-সাল্লাম এর সাথে। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, কি কি নির্দেশ দেয়া হয়েছে ? উত্তরে প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া-সাল্লাম বললেন, দৈনিক পঞ্চাশ ওয়াক্ত ফরয নামাজ।
মুসা আলাইহি-সসালাওয়াতু ওয়া-সাল্লাম বললেন, আপনার উম্মতের পক্ষে সম্ভব হবে না! দৈনিক পঞ্চাশ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা। আপনি ফিরে গিয়ে আপনার উম্মতের উপর আরোপিত এ গুরু দায়িত্ব হালকা করে দেয়ার জন্য আল্লাহ’র দরবারে আবেদন পেশ করুণ। এ কথা শোনার পর হযরত জিব্রাইল আলাইহি-সসালাওয়াতু ওয়া-সাল্লাম এর পরামর্শ গ্রহনের জন্য প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া-সাল্লাম তাঁর দিকে তাকালেন।
জিব্রাইল আলাইহি-সসালাওয়াতু ওয়া-সাল্লাম ইঙ্গিতে বুঝালেন, তিনি যদি ইচ্ছা করেন তাহলে তা করতে পারেন। এরপর ওয়া-সাল্লাম মহাপরাক্রর্মশালী আল্লাহ তা’আলার দরবারে ফিরে গেলেন। তিনি নিজ স্থানেই ছিলেন। কোন কোন বর্ণনায় সহীহ বুখারীতে বর্ণিত আছে, পরম করুনাময় আল্লাহ তা’আলা দশ ওয়াক্ত নামাজ কমিয়ে দিলেন, প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া-সাল্লাম চলে এলেন। আবার মুসা আলাইহি-সসালাওয়াতু ওয়া-সাল্লাম এর সাথে সাক্ষাত হলো। দশ ওয়াক্ত কমিয়ে দেওয়ার কথা বললেন। মুসা আলাইহি-সসালাওয়াতু ওয়া-সাল্লাম তখন পুনরায় পরামর্শ দিলেন, আল্লাহ’র দরবারে ফিরে গিয়ে এই গুরুভার আরও লাঘব করার জন্য আবেদন পেশ করতে। এভাবে কয়েক বার যাতায়াতের পর অবশেষে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ নির্ধারন না হওয়া পর্যন্ত মুসা আলাইহি-সসালাওয়াতু ওয়া-সাল্লাম ও আল্লাহ’র দরবার এই দুই মঞ্জিলের মধ্যে প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া-সাল্লাম এর যাতায়াত অব্যাহত ছিলো। শেষ দফায় যখন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ করে দেয়া হলো, তখন মুসা আলাইহি-সসালাওয়াতু ওয়া-সাল্লাম প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া-সাল্লাম কে আল্লাহ’র দরবারে ফিরে গিয়ে আরও কিছুটা হালকা করার জন্য আবেদন পেশ করতে বললেন।
প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া-সাল্লাম বললেন, এ ব্যাপারটি নিয়ে আল্লাহ’র দরবারে পুনরায় যেতে আমি খুবই লজ্জাবোধ করছি। অত্যন্ত সন্তুষ্টির সাথে দিন ও রাতের মধ্যে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ এর সিদ্ধান্ত আমি মেনে নিলাম বলে প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া-সাল্লাম এগিয়ে চললেন। বেশ কিছুটা দুরত্ব অতিক্রম করলেন। তখন শুনতে পেলেন, ‘‘আমি আমার বান্দাদের জন্য পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ জারি করে দিলাম এবং বান্দাদের দায়িত্ব ভার কিছুটা হালকা করে দিলাম।’’
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।