পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
নিজেদের মধ্যকার বিভক্তি দূর করে ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলনের ঘোষণা দিয়েছেন চাকরিতে কোটা পদ্ধতি সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ও কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরীর বক্তব্যের প্রতিবাদে আবারও মাঠে নামার ঘোষণা দিয়েছেন তারা।
গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যা পৌনে ৬টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক মো. রাশেদ খান এক সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেন। এসময় ‘কত শতাংশ কোটা রাখা হবে তা নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে সুনির্দিষ্ট ঘোষণা দাবি করা হয়। জাতীয় সংসদে কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী কোটা সংস্কারের আন্দোলনকারীদেরসহ ৮০ শতাংশ শিক্ষার্থীকে রাজাকারের বাচ্চা বলে গালি দেয়ার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানো হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু কোটা সংস্কার আন্দোলনের কর্মীদের দাবিগুলো যৌক্তিক বলে মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) শিক্ষক সমিতির নেতারা।
এদিকে কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরীর বক্তব্যের প্রতিবাদে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে বিক্ষোভ করেছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। কোটা ব্যবস্থাকে জাতির জন্য ‘লজ্জাজনক’ আখ্যায়িত করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. ফারজানা ইসলাম এবং শিক্ষার্থীদের এ আন্দোলনকে সমর্থন করে গত রোববার বিবৃতি দিয়েছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির নেতারা। একই দাবিতে বিক্ষোভ করেছে বুয়েট, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা। তবে গতকাল সকাল থেকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভক্ত হয়ে আলাদা আলাদা সংবাদ সম্মেলন করলেও সন্ধ্যায় আবার ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলনের ঘোষণা দেন তারা। ওদিকে চলমান কোটা সংস্কারের আন্দোলনে একাত্মতা ঘোষণা করে সকল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের শিক্ষার্থীরা। গতকাল এ দাবিতে কুড়িল বিশ্বরোড বসুন্ধরা গেট, নর্দা-প্রগতি সরণির রাস্তা অবরোধ করে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এ সময় তারা কোটা সংস্কারের সুনির্দিষ্ট ঘোষণার আগ পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। গতকাল সকাল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়-কলেজের শিক্ষার্থীরা ব্যানার, প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে সেøাগানে সেøাগানে প্রকম্পিত করে তোলেন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও রাজপথ।
কোটা সংস্কারের এই আন্দোলনকারীদের দাবিগুলো যৌক্তিক বলে মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) শিক্ষক সমিতির নেতারা।
এদিকে সকল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজের চলমাল কোটা সংস্কারের আন্দোলনে একাত্মতা ঘোষণা করে কুড়িল-বিশ্বরোড বসুন্ধরা গেট, নর্দা-প্রগতি সরণির রাস্তা অবরোধ করেছে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও। এ সময় তারা কোটা সংস্কারের আগ পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। গতকাল সকাল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়-কলেজের শিক্ষার্থীরা ব্যানার, প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে ¯েøাগানে ¯েøাগানে প্রকম্পিত করে তোলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও রাজপথ।
ঢাবি রিপোর্টার : প্রধানমন্ত্রীর সুনির্দিষ্ট ঘোষণা না আসা পর্যন্ত সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের আন্দোলন অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছেন আন্দোলনকারীরা। গতকাল মঙ্গলবার বিকলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে সংবাদ সম্মেলনে করে এ কথা জানান তারা। বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদে সমন্বয়ক মো. রাশেদ খান সাংবাদিকদের গতকাল আরও তিনটি দাবির কথা তুলে ধরেন। দাবির মধ্যে রয়েছে আটক ব্যক্তিদের মুক্তি, আহতদের চিকিৎসার ব্যবস্থা ও কোটা সংস্কারের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর সুনির্দিষ্ট ঘোষণা। এর আগে সকালে এক সংবাদ সম্মেলন করে আন্দোলনকারীরা বিকলে পাঁচটার মধ্যে কোটা সংস্কার নিয়ে জাতীয় সংসদে কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরীকে তার বক্তব্য প্রত্যাহার করে নিতে বলেন। কিন্তু আন্দোলনকারীদের কথায় সাড়া দেননি কৃষিমন্ত্রী। এর পরিপ্রেক্ষিতে বিকেলে এই সংবাদ সম্মেলন করেন তারা। আন্দোলনকারীরা বলেন, সচিবালয়ে সরকারের সঙ্গে বৈঠকের এক দিন পরই অর্থমন্ত্রী জানিয়েছেন, বাজেটের পরে কোটা সংস্কারে হাত দেওয়া হবে। আমরা এমন দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়া মেনে নেব না। সারা দেশে অবরোধ চালিয়ে যাওয়ার কথা উল্লেখ করে দেশের সব কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জন করার আহŸান জানান আন্দোলনকারীরা।
কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী তারা বক্তব্য প্রত্যাহার না করায় সন্ধ্যায় শিক্ষার্থীরা সবাই রাজু ভাষ্কর্যে জড়ো হতে থাকেন এবং মতিয়া চৌধুরীর বিরুদ্ধে নানা সেøাগান দিতে থাকেন। এসময় তারা ম তে মতিয়া তুই রাজাকার তুই রাজাকার ইত্যাদি সেøাগান দিতে থাকে এবং রাত ৮ টার দিকে তার কুশপুত্তলিকা দাহ করে।
অন্যদিকে, গতকাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আকাশে দেখা গেছে রহস্যময় একটি ড্রোন। ড্রোনটিপ্রায় ১০ মিনিট অবস্থান করে ঢাবির আকাশে। এসময় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা ‘শেইম, শেইম (লজ্জা)’ বলে ¯েøাগান দিতে থাকে। আনুমানিক সন্ধ্যা ৬টার সময় প্রথমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির উপরে দেখা যায় ড্রোনটি। এর সামান্য কিছুক্ষণ পর ড্রোনটি ঠিক রাজু ভাস্কর্যের উপরে আসে। এরপর আবার ড্রোনটি লাইব্রেরির উপরে যায়। কিছুক্ষণ নিরুদ্দেশ হয়ে যায় ড্রোনটি। এসময় ড্রোনটিতে কয়েকবার নীল বাতি জ্বলতে দেখা গেছে। ড্রোনটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আকাশে দেখার পর আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের মাঝে বেশ উদ্বেগ লক্ষ্য করা যায়।
এর আগে সাধারণ শিক্ষার্থীদের চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলনকে সম্পূর্ণ যৌক্তিক বলে দাবি করেছেন ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল। গতকাল সকালে ৮ তারিখের ঘটনায় ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের ভিসির বাসভবনে হামলার প্রতিবাদে ঢাবি শিক্ষক সমিতি আয়োজিত এক মানববন্ধনে তিনি এ কথা বলেন। তিনি বলেন, ছাত্রদের এই কোটা সংস্কার আন্দোলনে আমাদের পূর্ণ সমর্থন আছে। আমরা চাই সরকার ৭ মে এর মধ্যে এ বিষয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা করে একটি সুষ্ঠ সমাধান দিক। তিনি কোটা আন্দোলনে পুলিশের ভূমিকাকে বাড়াবাড়ি উল্লেখ করে এর নিন্দা জানান। সেই সাথে তিনি ভিসির বাসভবনে হামলাকারীদের চিহ্নিত করে সুষ্ঠ বিচার দাবি করেন। এই মানববন্ধনে আরো বক্তব্য রাখেন স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের সভাপতি ও ঢাবির সিনেট সদস্য ডা. ইকবাল আর্সালান, ঢাবি সাদা দলের আহŸায়ক অধ্যাপক ড. আখতার হোসেন, রোকেয়া হলের প্রভোষ্ট জিনাত হুদা। সাদা দলের আহŸায়ক আখতার হোসেন খান বলেন, শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে সবার সর্মথন থাকে কিন্তু যখন সেটা সহিংস হয় তখন সেখানে কারো সমর্থন থাকে না।
বক্তারা ভিসির বাসভবনে হামলাকে একটি ন্যক্কারজনক হামলা ও এর সাথে ১৯৭১ সালের হামলার তুলনা দিয়ে বলেন সন্ত্রাসীরা সবসময় ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়কে টার্র্গেট করে। সেই ধারাবাহিকতায় সেদিন তারা ভিসির বাসভবনে এমন হামলা চালিয়েছে। এই মানবন্ধনে আরো উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের শিক্ষকবৃন্দ ও মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলের শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী বৃন্দ।
এছাড়াও ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় অফিসার্স এসোসিয়েশন, ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় চতুর্থ শ্রেণী কর্মচারী সমিতি, ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় কারিগরী কর্মচারী সমিতি, ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় কর্মচারী সমিতি এরা বিশ^বিদ্যালয়ের স্মৃতি চিরন্তন চত্বরে পৃথকভাবে মানববন্ধন ও মৌণ মিছিল করে। পরবর্তীতে তারা শিক্ষক সমিতির মানবন্ধনে অংশ নেয়।
অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে শিক্ষক সমিতির মানববন্ধন চলাকালে তিন জন শিক্ষার্থী ‘ছাত্ররা আহত কেন?’ ‘ক্যাম্পাসে হামলা কেন?’, ‘শিক্ষক (অভিভাবক) জবাব দাও’ এরকম লেখা সম্বলিত প্ল্যাকার্ড নিয়ে মানববন্ধনের সামনে দাড়ায়।
জাবি সংবাদদাতা : সরকারী চাকরীতে কোটা সংস্কারের দাবি ও শিক্ষার্থীদের উপর পুলিশী হামলার প্রতিবাদে ২য় দিনের মত ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে শিক্ষার্থীরা। গতকাল মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরীর সামনে এক বিক্ষোভ সমাবেশ করে তারা। সমাবেশে ‘সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ’ জাবি শাখার আহŸায়ক খান মুনতাসির আরমান বলেন, “সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের নিয়ে জাতীয় সংসদে কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী যে বক্তব্য দিয়েছেন তা আগামী তিন দিনের মধ্যে প্রত্যাহার করে জাতির কাছে ক্ষমা চাইতে হবে। আর যদি না হয় তাহলে তাকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হবে।” এই সময় শিক্ষার্থীরা হাতে তালি দিয়ে এই ঘোষণাকে স্বাগত জানান।
এসময় তিনি আরো বলেন, “আমরা বর্তমান প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধারণ করে বেড়ে উঠেছি। আমাদের আন্দোলন ‘বঙ্গবন্ধুর বাংলায়, কোটা বৈষম্যের ঠাঁই নাই’। কিন্তু মতিয়া চৌধুরী আমাদের সম্পর্কে যে বক্তব্য দিয়েছে তা আমাদের জন্য অত্যন্ত অপমানজনক। তাই বক্তব্য প্রত্যাহর করে জাতির কাছে ক্ষমা চাইতে হবে।”
সমাবেশ শেষে শিক্ষার্থীর একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করে। মিছিলটি ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে আবার কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে এসে শেষ হয়।
এদিকে পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে সকল ক্লাস পরীক্ষা বর্জন করেছে জাবি শিক্ষার্থীরা। বিভাগ ও অনুষদগুলোতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে কোন ক্লাস-পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়নি।
অন্যদিকে জাবি শিক্ষক সমিতি এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ‘ শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কারের দাবি যৌক্তিক। তাই সরকারের উচিৎ এ বিষয়ে বিবেচনা করা।’ এছাড়া বিবৃতিতে জাবি শিক্ষার্থীদের উপর পুলিশী হামলার প্রতিবাদ ও নিন্দা জানানো হয়। পাশাপাশি জাবি ছাত্রদলও এক বিবৃতিতে পুলিশী হামলার প্রতিবাদ ও নিন্দা জানিয়েছে।
রাবি সংবাদদাতা : সরকারের উচ্চ পর্যায়ের দুই মন্ত্রীর দ্বিমূখী বক্তব্য এবং কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী ও তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুর কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদেরকে নিয়ে অপৃতিকর বক্তব্যর প্রতিবাদ এবং প্রত্যাহারের দাবিতে পুনরায় আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কোটা সংস্কার কমিটি। গতকাল মঙ্গলবার বিকাল সাড়ে ৬ টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় কোট সংস্কার আন্দোলনের আহবায়ক মাসুদ মোন্নাফ এ ঘোষণা দিলে বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে জড়ো হতে থাকেন এবং সন্ধা ৭ টা পর্যন্ত অবস্থান করেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
বিশ্ববিদ্যালয় আহবায়ক কমিটির নেতারা বলেন, দেশের ৯৮% সাধারণ ছাত্র ছাত্রীদের রাজাকারের বাচ্চা বলা, অর্থমন্ত্রীর সাংঘর্ষিক বক্তব্য, আটককৃতদের ছেড়ে না দেয়া, অসুস্থদের চিকিৎসারর দায়িত্ব না নেয়ায় অনির্দিষ্টকালের জন্য সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ক্লাস পরীক্ষা বর্জন ও প্রতিদিন সকাল ১০ টা থেকে সন্ধ্যা ৭ টা পর্যন্ত মহাসড়ক অবরোধের কর্মসূচীর ষোষণা দিয়েছে ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ আন্দোলন রাবি কমিটি।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কোটা সংস্কার কমিটির আহবায়ক মাসুদ মোন্নাফ বলেন, সরকারের সাথে আলোচনার পর কেন্দ্রীয় কমিটির সিদ্ধান্তের আলোকে ৭মে পর্যন্ত আমরা আন্দোলন স্থগিত করা হয়েছিল। কিন্তু মন্ত্রীদের একের পর এক অপৃতিকর এবং সাংঘর্ষিক বক্তব্যে আমরা পুনরায় আন্দোলন শুরু করতে বাধ্য হয়েছি। যতদিন পর্যন্ত সরকারের পক্ষ থেকে স্পষ্ট বক্তব্য না পাওয়া যাবে ততদিন আন্দোলন চালিয়ে যাওয়া হবে বলে জানান তিনি।
অন্যদিকে, কোটা সংস্কারের আন্দোলনে নেমেছেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। রাজধানীর সোবহানবাগে ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা, যমুনা ফিউচার পার্কের সামনে নর্থ-সাউথ (এনএসইউ) ও আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের (এআইইউবি) শিক্ষার্থীরা এবং রামপুরা ব্রিজের পূর্বপাশে ইস্টওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করছেন।
গতকাল বেলা সাড়ে ১১টা থেকে ১২টার মধ্যে শিক্ষার্থীরা মিছিল করে কোটা সংস্কারের দাবি সম্বলিত পোস্টার হাতে নিয়ে সড়ক অবরোধ করেন। এতে সংশ্লিষ্ট এলাকাগুলোতে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। রাস্তায় তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়েছে। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসের সামনে মানববন্ধনে দাঁড়ায় প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে। এরপর রামপুরা ব্রিজের কাছে রাস্তার দু’পাশ অবরোধ করে তারা ¯েøাগান দিয়ে কোটা সংস্কারের দাবি জানায়। এ সময় রাস্তায় যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
ইউআইটিএস বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আমেরিকান দূতাবাসের সামনের রাস্তায় দাঁড়িয়ে আন্দোলন শুরু করেন। এতে কুড়িল থেকে রামপুরা পর্যন্ত পুরো রাস্তায় গাড়ি চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। রামপুরা ও কুড়িল বিশ্বরোডের বিভিন্ন জায়গায় অবরোধ করে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন কয়েকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
বনানী বাসস্ট্যান্ড এলাকায় দেখা গেছে, অনেকেই অপেক্ষা করেছেন বাসসহ অন্যান্য যানবাহনের জন্য। সাইদুল ইসলাম নামের একজন বলেন, ‘অনেকক্ষণ ধরে অপেক্ষা করছি বাসের জন্য। কিন্তু পাইনি। এখন সিএনজি খুঁজেও পাচ্ছি না। অন্যদিকে যানজটের কারণে গাড়িও নড়ছে না। ’
একই অভিযোগ জানালেন মাসউদুর রহমান। তিনি বলেন, ‘এত বেশি ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে, বলার মতো নয়। প্রধান সড়ক বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে বনানী ও গুলশানের ভেতরের সব রাস্তাও বন্ধ হয়ে যায়। গুলশান-১ নম্বর থেকে বাড্ডা লিঙ্ক রোড পর্যন্ত জ্যামের কারণে রাস্তা পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে। গুলশান-১ থেকে গুলশান-২ পর্যন্ত প্রধান সড়কে আস্তে আস্তে গাড়ি চললেও গুলশান-২ এর মাথায় বন্ধ হয়ে যায়। এই মুহূর্তে কোনও গাড়ি বের হতে পারছে না। গুলশান বনানীর ভেতরের সব রাস্তা আস্তে আস্তে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।
ধানমন্ডির ২৭ নম্বর সড়ক অবরোধ করেন স্টেট ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা। এই ইউনিভার্সিটির আইন বিভাগের শিক্ষার্থী রাকিব জানান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ঘোষণা না আসা পর্যন্ত আমরা আছি এখানেই। কোটা সংস্কার, অর্থমন্ত্রীর ভ্যাট আরোপের বক্তব্য প্রত্যাহার এবং কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরীর বক্তব্য প্রত্যাহার করে ক্ষমা চাইতে হবে।
সাড়ে পাঁচ ঘণ্টা পর সচল মিরপুর রোড
কোটা সংস্কারের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করে বেলা ১১টা থেকে মিরপুর রোডে অবস্থান নিয়েছিল ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এতে থমকে গিয়েছিল মিরপুর রোডের যান চলাচল। আসাদগেট থেকে নিউ মার্কেটের দিকে চলাচলকারী যানবাহনকে ঘুরিয়ে দেওয়া হয়েছিল ধানমন্ডি ২৭ নম্বর সড়ক দিয়ে সাত মসজিদ রোডের দিকে। এতে সড়কে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়েছিল। তবে বিকাল সাড়ে চারটার দিকে সড়কে অবস্থান থেকে সরে এসে ক্যাম্পাসে অবস্থান নেন শিক্ষার্থীরা।
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী ফারদিন জানান, আজকের মতো অবস্থান শেষ। প্রয়োজন হলে আগামীকাল সকাল ১০ টা থেকে আবারও অবস্থান নেবো। ডিএমপির তেজগাঁও জোনের এসি আবু তৈয়ব মো. আরিফ হোসেন বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা হয়েছে। তারা রাস্তা ছেড়ে দিচ্ছে। কিছুক্ষণের মধ্যে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়ে যাবে আশা করি।’
সাড়ে পাঁচ ঘণ্টার অবস্থানে থমকে গিয়েছিল মিরপুর রোড। যান চলাচলে বিঘœ ঘটায় দুর্ভোগে পড়তে হয়েছে অনেককে। সোবহানবাগের বাসিন্দা নজরুল ইসলাম জানান, মেয়েকে নিয়ে যাওয়ার দরকার ছিল ডাক্তারের কাছে। কিন্তু রাস্তা বন্ধ, পুলিশও আছে। কখন কী হয় বলে যায় না। তাই অপেক্ষা করছি।
এছাড়া, বিকাল ৫টা ৩৭ মিনিটের দিকে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার মূল গেট সংলগ্ন কুড়িল বিশ্বরোড থেকে অবরোধ তুলে নেন ওই এলাকার বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষার্থীরা।
এক সপ্তাহ সময় দিয়ে ইস্ট ওয়েস্টের আন্দোলন স্থগিত
কোটাব্যবস্থা সংস্কারের দাবিতে রাস্তায় নামা ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা তাদের আন্দোলন স্থগিত করেছেন। গতকাল বিকেল ৫টার দিকে তারা আন্দোলন স্থগিতের ঘোষণা দেন। তবে এক সপ্তাহের মধ্যে কোটাব্যবস্থা সংস্কারে কোনো সমাধান না হলে আবারও আন্দোলনে যাবেন বলে হুমকি দিয়েছেন তারা। সরেজমিনে দেখা গেছে, আন্দোলন স্থগিতের এই ঘোষণা দেয়ার পর রাস্তা থেকে শিক্ষার্থীরো সরে যাচ্ছেন। অপরদিকে রামপুরা-বাড্ডা রুটে আটকে থাকা যানবাহনও চলতে শুরু করেছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।