পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
পুলিশের হামলা, লাঠিচার্জ, টিয়ারশেল, রাবার বুলেট, গরম পানি নিক্ষেপ;
ছাত্রলীগের হামলা প্রতিবাদে নেতার পদত্যাগ :তিন শতাধিক আহত : আটক অর্ধ শতাধিক;
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির বাসভবনে হামলা-ভাঙচুর : ছাত্রলীগের ফাকা গুলি, ১জন গুলিবিদ্ধ;
আন্দোলনের কমিটি অবাঞ্ছিত ঘোষণা, নতুন মুখপাত্র নির্বাচন : ১৬ তারিখ চল চল ঢাকা চলো কর্মসূচী
স্টাফ রিপোর্টার : চাকরিতে কোটা পদ্ধতি সংস্কারের দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শুরু হওয়া আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে সারাদেশেই। বিশ্ববিদ্যালয়-কলেজের শিক্ষার্থীরা ব্যানার, প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে স্লোগানে স্লোগানে প্রকম্পিত করে তোলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও রাজপথ। গত রোববার রাজধানীর শাহবাগ মোড়ে শুরু হওয়া এই আন্দোলনে হাজার হাজার শিক্ষার্থী ও চাকরি প্রার্থীর ঢল নামার মাধ্যমে মুহুর্তের মধ্যেই তা ছড়িয়ে পড়ে গোটা দেশের শিক্ষার্থীদের মাঝে। শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে পুলিশ ও ছাত্রলীগের হামলার পর গতকাল (সোমবার) আরও উত্তাল হয়ে ওঠে সারাদেশ।
এই আন্দোলনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের উপর পুলিশের হামলায় আহত হয়েছে প্রায় তিন শতাধিক শিক্ষার্থী। আটক করা হয়েছে অর্ধশতাধিকেরও বেশি আন্দোলনকারীকে। এর মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পুলিশের হামলা, টিয়ারশেল নিক্ষেপ ও গুলিতে আহত হয়েছে দুই শতাধিক শিক্ষার্থী। পুলিশ আটক করেছে অর্ধশতাধিক আন্দোলনকারীকে। আন্দোলনের মাধ্যেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির বাসভাবনে হামলার ঘটনা ঘটেছে। ন্যাক্কারজনক হামলার নিন্দা জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা। হামলাকারীরা ছাত্র হতে পারে না বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. আখতারুজ্জামান। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কোটা ব্যবস্থার সংস্কারের দাবিতে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করে রাখে। আন্দোলনকারীদের সাথে পুলিশের সংঘর্ষে আহত হয়েছে শতাধিক শিক্ষার্থী। প্রতিবাদে তিন দিনের ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন তারা। একই দাবিতে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে ঢাকা-রাজশাহী সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা শাটল ট্রেন আটকে রেখে দিনভর অচল করে রাখে ওই বিশ্ববিদ্যালয়। রাজধানীর বেগম রোকেয়া স্বরণী অবরোধ করে রাখে শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। ময়মনসিংহে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় ও আনন্দ মোহন কলেজসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা ময়মনসিংহ-ঢাকা মহাসড়ক ও রেলপথ অবরোধ করলে পুলিশের সাথে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। বরিশালে বরিশাল-পটুয়াখালী মহাসড়ক অবরোধ করে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা, দিনাজপুরে হাজী দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ঢাকা-দিনাজপুর মহাসড়ক, গোপালগঞ্জে বঙ্গবন্ধু বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ঢাকা বরিশাল মহাসড়ক, সিলেটে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় ও টাঙ্গাইলে মওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে কোটা সংস্কারের দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আন্দোলন সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে অবস্থান, বিক্ষোভ কর্মসূচি ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে শিক্ষার্থীরা। এছাড়াও কোটা সংস্কার আন্দোলনে সমর্থন জানিয়ে রাজশাহী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, ময়মনসিংহের বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে আন্দোলনে অংশ নেয়।
তবে বিদ্যমান কোটার বিষয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হবে, সরকারে এমন আশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে চলমান আন্দোলন আগামী ৭ মে পর্যস্ত স্থগিত করেছেন আন্দোলনকারীরা। গতকাল বিকেলে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে সরকারের একটি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে সচিবালয়ে আন্দোলনকারীদের প্রায় পৌনে ২ ঘণ্টা বৈঠকের পর এই সিদ্ধান্ত জানান বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের আহ্বায়ক হাসান আল মামুন। তিনি বলেন, কোটা সংস্কারের ব্যাপারে সরকার অনড় অবস্থানে নেই। আমরা তাদের দাবির যৌক্তিকতা ইতিবাচক ভাবে দেখি। তবে আশ্বাসের প্রেক্ষিতে আন্দোলন স্থগিতের সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করে অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে আন্দোলনকারীদের একটি অংশ। তাঁরা সোমবার রাত থেকে শাহবাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোকেয়া হল ও বাংলা একাডেমি এলাকায় অবস্থান করে দিচ্ছিলেন। আন্দোলনকারীদের এই অংশটি বলছে, সব শিক্ষার্থী আন্দোলন স্থগিতের সিদ্ধান্তের সঙ্গে একমত নন। তাঁরা আন্দোলন চালিয়ে যাবেন।
বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার: কোটা সংস্কার আন্দোলনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, শাহবাগ রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে পুলিশ-ছাত্রলীগের বেপরোয়া হামলা ও গুলিতে দুই শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়েছে। ভাঙচুর করা হয়েছে ভিসির বাসভবন। পুলিশ হামলার পর আটক করেছে আর্ধশতাধিক আন্দোলনকারীকে। প্রতিবাদে পদত্যাগ করেছেন ছাত্রলীগের একাধিক নেতা। সরকারি চাকুরিতে ৫৬ শতাংশ কোটা সংস্কার করার দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সাথে গত রোববার রাত ৮টা থেকেই পুলিশের দফায় দফায় ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া চলে। পুলিশ শাহবাগ থেকে আন্দোলনকারীদের সরিয়ে দিতে দফায় দফায় টিয়ার শেল, রাবার বুলেট, ছররা গুলি ও জলকামান দিয়ে হামলা করে। এতে প্রায় শতাধিক ছাত্র আহত হয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের দাবি, তারা মুক্তিযুদ্ধা কোটার বিরোধী নয়। তারা শুধুমাত্র এই কোটাকে সহনীয় মাত্রায় রেখে সংস্কারের পক্ষে। তারা চায় সকল প্রকার কোটা ১০ শতাংশে সীমাবদ্ধ থাকুক।
সরিজমিনে দেখা যায় রোববার রাত ৮টা থেকে শুরু হওয়া পুলিশের হামলা ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা চলে রাত ভর। রাত ১২ টার পর ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসাইন, ঢাবি ছাত্রলীগ সভাপতি আবিদ আল হাসানসহ নেতারা আন্দোলনকারীদের শান্ত করতে চাইলে আন্দোলনকারীরা তাদের ভূয়া ভূয়া ধ্বনি দিতে থাকে। একপর্যায়ে তারা সেখান থেকে সরে এসে মধুর ক্যান্টিন থেকে ১০-১৫ টি মটর সাইকেলে করে আন্দোলনকারীদের দিকে এগুতে থাকলে সাধারণ ছাত্ররা তাদের ধাওয়া করে। সেসময় ছাত্ররা ছাত্রলীগের একটি মটর সাইকেলে অগ্নি সংযোগ করে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায় এসময় ছাত্রলীগের কর্মীরা দুই রাউন্ডের মতো ফাকা গুলি ছোড়ে। রাত ২ দিকে ক্যাম্পাসে পুলিশের হামলার জবাব চাইতে ছাত্ররা ভিসির বাসভবনের দিকে এগুতে থাকে এবং নানা শ্লোগান দিতে থাকে। এসময় ঢাকা কলেজসহ অনেক বহিরাগতরা হঠাৎ করে ভিসির বাসভবনে হামলা চালিয়ে বসে। হামলাকারীরা ভিসির বাসভবনে দুটি গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে এবং বাসভবনের প্রত্যেকটি কক্ষ ভাঙচুর করে। এঘটনার পর ভিসির সাথে সাক্ষাত করতে আসেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার আসাদুজ্জামান মিয়াসহ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। পরবর্তীতে সাংবাদিকদের কাছে ব্রিফিংকালে ভিসি ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, হয়তো বা হত্যার উদ্দেশ্যেই এ হামলা করা হয়েছে। এরা কোনভাবেই বিশ^বিদ্যালয়ের ছাত্র হতে পারেনা। এরা বহিরাগত সন্ত্রাসী। এ হামলা নিয়ে কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেতারাও বিবৃতি দিয়ে বলেছে তারা এ হামলার সাথে জড়িত নয় এবং তারা এ ঘটনার সুষ্ট তদন্ত ও বিচার চায়।
এদিকে পুলিশের এমন দফায় দফায় হামলা চলাকলীন সময়ে রাত ১টার দিকে ছাত্রীদের ৫টি হল থেকে প্রায় দুইশতাধিক ছাত্রী গেট ভেঙ্গে রাজু ভাষ্কর্যে এসে আন্দোলনে যোগ দেয়। এর আগে রোকেয়া হলের ছাত্রীরা দেয়ালের উপর দিয়ে পুলিশের ছোড়া টিয়ারশেল থেকে রক্ষা পেতে ছাত্রদের উদ্দেশ্যে আগুন জ¦ালানোর জন্য কাগজ ও শতাধিক পানির বোতল সরবরাহ করে। মধ্যরাতে ছাত্রলীগ কয়েক দফায় ছাত্রদের ধাওয়া দিতে আসলে পাল্টা ধাওয়ার শিকার হয়ে ফিরে যায়। এসময় পুলিশও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে ছাত্রদের দিকে। সর্বশেষ রাত চারটার দিকে ছাত্রলীগ বিপুল পরিমাণ পুলিশ নিয়ে আন্দোলনরত ছাত্রদের ধাওয়া দিলে ছাত্ররা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায় এবং দোয়েল চত্বর হয়ে কার্জন হলসহ শহীদুল্লাহ হলে আশ্রয় নেয়। ছাত্রীরা সেসময় টিএসসির অভ্যন্তরে আশ্রয় নিতে থাকে। টিএসসিতে আটকা পড়াদের নিরাপদে হলে ফিরেয়ে নিতে ঘটনাস্থলে আসেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক প্রফেসর ড. এ এস এম মাকসুদ কামালের নেতৃত্বে সিনিয়র শিক্ষক, প্রভোস্ট ও হাউজটিউটরা। রাত ৪টা থেকে বেশ কয়েক দফা চেষ্টা চালিয়েও ছাত্রীদের হলে ফিরে নিতে ব্যর্থ হন শিক্ষকরা। ভোর ছয়টার দিকে ছাত্রলীগ সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ, সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসাইন, বিশ^বিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ সভাপতি আবিদ আল হাসান, সাধারণ সম্পাদক মোতাহার হোসেন প্রিন্সসহ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতারা আন্দোলনকারীদের উপর হামলা ও ধাওয়া করে। এতে আন্দোলনরত ছাত্ররা তাদের পাল্টা ধাওয়া দিলে তারা পিছু হটে। তারপর পুলিশ এসে শহীদুল্লাহ হলে ভিতরে প্রায় অর্ধশতাধিক টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে। ছাত্রলীগ ও পুলিশের সাথে এমন ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া চলার পরও সোমবার দুপুরে সংবাদ সম্মেলন করে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। তারা সেখান থেকে আটকৃতদের দুপুরের মধ্যে মুক্তির দাবির পাশাপশি পুলিশের বিনা উস্কানীতে হামলার নিন্দা জানায়। তারপর ১২টা থেকেই আন্দোলনকারীরা আবার জড়ো হতে থাকেন টিএসসির রাজু ভাষ্কর্যের পাদদেশে। পুলিশ তাদের সরিয়ে দিতে চাইলে আন্দোলনকারীরা সেখান থেকে পুলিশকে দুই দফা ধাওয়া দিয়ে দোয়েল চত্বরের দিকে হটিয়ে দেয়। তারপর বিকেল সাড়ে পাচটার দিকে পুলিশের সাথে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের পুনরায় ব্যাপক ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।
অন্যদিকে কোটা সংস্কার আন্দোলনের আহŸায়ক হাসান আল মামুনে নেতৃত্বে ১৯ সদস্যের একটি দল পাঁচ দফা দাবি নিয়ে আলোচনা করার জন্য বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে সড়ক মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের সাথে বৈঠক করে। তাদের দাবিগুলো হলো-কোটা ব্যবস্থা সংস্কার করে ৫৬ শতাংশ থেকে ১০ শতাংশে নামিয়ে আনা, কোটায় কোনো ধরনের বিশেষ নিয়োগ না দেয়া, চাকরির নিয়োগ পরীক্ষায় কোটা সুবিধা একাধিকবার ব্যবহারের সুযোগ না দেয়া, সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে সবার জন্য অভিন্ন কাট মার্কস ও বয়সসীমা নির্ধারণ করা ও কোটায় যোগ্য প্রার্থী পাওয়া না গেলে শূন্য পদগুলোতে মেধায় নিয়োগ প্রদান করা।
বৈঠক থেকে মন্ত্রীর আশ্বাসে তারা মে মাসের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত আন্দোলন স্থগিত করার ঘোষণা দেয়। পরবর্তীতে সন্ধ্যায় তারা রাজু ভাষ্কর্যে এসে আন্দোলনকারীদের সামনে আন্দোলন স্থগিত করার ঘোষণা দিলে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা মানি না মানবোনা বলে চিৎকার করতে থাকে। এবং তারা রাজুতে ভাষ্কর্যে অবস্থান নিয়ে আন্দোলন চালিয়ে নেয়ার ঘোষণা দেয়।
পরবর্তীতে রাত সাড়ে নয়টার দিকে আন্দোলনকারীরা একমত হয়ে তাদের কেন্দ্রীয় কমিটিকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে এবং নতুন মুখপাত্র হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষার্থী উম্মে হাবিবা বেনজির ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী বিপাশা চৌধুরীকে।
নতুন মুখপাত্ররা সাংবাদিকদের জানান আজ মঙ্গলবার সকাল ১১টা থেকে তারা আবার রাজু ভাষ্কর্যে অবস্থান নিবেন। এবং সেই সাথে লাগাতার ধর্মঘট ঘোষণা করেছেন। দাবি মানা না হলে ১৬ তারিখ তারা চল চল ঢাকা চল কর্মসূচি বাস্তবায়ন করবেন।
ছাত্রদের এমন অবস্থানের বিপরীতে ছাত্রলীগও প্রায় হাজার খানেক নেতাকর্মী নিয়ে সতর্ক অবস্থান করে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি চত্বর ও মল চত্বর এলাকায়। এসময় প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায় ছাত্রলীগ ঢাকা কলেজ, ঢাকা মহানগরী উত্তর ও দক্ষিণের নেতাদের ডেকে এনে শোডাউন করায়। তারা আরো জানায় অবস্থানকালীন সময়ে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা হেলমেট পরিধান করে দেশীয় অস্ত্রে সজ্জিত ছিল। অনেকের হাতে রিভলবার ও পিস্তলও দেখা গেছে।
ছাত্রলীগ নেতার পদত্যাগ: কোটা সংস্কার আন্দোলনে ছাত্রলীগের হামলার প্রতিবাদে ছাত্রলীগ থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় ছাত্রলীগের অনেক নেতা। এরমাঝে অনেকে পদত্যাগ না করলেও কোটা সংস্কারের পক্ষে দাবি জানিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে স্ট্যাটাস দিচ্ছেন এবং লজ্জা প্রকাশ করছেন। পদত্যাগের ঘোষণা দেওয়া নেতারা হলেন- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজনেস অনুষদের ট্যুরিজম বিভাগ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাইফুল্লাহ সাইফ, শহীদ সার্জেন্ট জহরুল হক শাখা ছাত্রলীগের উপ-অ্যাপায়ন বিষয়ক সম্পাদক অছিবুর রহমান, ফলিত পরিসংখ্যান বিভাগ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শরীফ হাসান সুজন।
জাবি রিপোর্টার: কোটা সংস্কারের দাবিতে গতকাল ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) শিক্ষার্থীরা। সকাল সাড়ে ১০টা থেকে মহাসড়ক অবরোধ করে রাখলে রাস্তার দুই পাশেই যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এর আগে সকাল সাড়ে ৯টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করে শিক্ষার্থীরা।
রাবি সংবাদদাতা: কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের উপর হামলার প্রতিবাদে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়কে অবস্থান ধর্মঘট করে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে তালা ঝুলিয়ে আন্দোলনের কর্মসূচির অংশ হিসেবে গতকাল সকাল ৮ থেকে ছাত্র-ছাত্রীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে এসে জড় হতে থাকে। রাজশাহী প্রকৌশল প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয়েও (রুয়েটে) এই দাবিতে মানববন্ধন করেছে শিক্ষার্থীরা। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫৮টি বিভাগের মধ্যে কোন বিভাগেরই ক্লাস অনুষ্ঠিত হয়নি। বিভিন্ন ছাত্র-ছাত্রীদের হলের পাশাপাশি অন্যান্য শিক্ষার্থীদের নিজ নিজ বিভাগের সামনে থেকে মিছিল বের করে মহাসড়কের দিকে যেতে দেখা গেছে। বিভিন্ন মাধ্যমে জানা যায়, রোববার শাহবাগে হামলার প্রেক্ষিতে গতকাল সকাল থেকে ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়ক অবরোধ করে অবস্থান ধর্মঘট পালন করছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
চবি সংবাদদাতা: কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ-অবরোধে গতকাল দিনভর অচল ছিল চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। সকালে নগরীর ষোলশহরে বিশ্ববিদ্যালয়গামী শাটল ট্রেন আটকে দিয়ে রেললাইনে অবরোধ করে বিক্ষোভ সমাবেশ করে শিক্ষার্থীরা। একই সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে অবস্থান নিয়ে সমাবেশ করে শত শত শিক্ষার্থী। এরফলে বিশ্ববিদ্যালয় কার্যত অচল হয়ে পড়ে। বন্ধ থাকে সকল ক্লাশ ও বেশিরভাগ পরীক্ষা।
শেকৃবি সংবাদদাতা: কোটা সংস্কার আন্দোলনের সাথে একাত্মতা ঘোষণা করে রাজধানীর শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শেকৃবি) শিক্ষার্থীরা গতকাল বেগম রোকেয়া স্মরণী অবরোধ করে রাখে। সকাল সাড়ে ৮টা থেকে বিশ^বিদ্যালয়ের প্রসাসনিক ভবনের সামনে একত্রিত হয়ে বেলা ১১ টার সময় ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জন করে শিক্ষার্থীরা আগারগাঁওয়ে অবস্থিত পরিকল্পনা মন্ত্রনালয়ের সামনের রাস্তা অবরোধ করে রাখে ফলে সকল ধরনের যান চলাচল বন্ধ থাকে।
বরিশাল ব্যুরো: কোটা পদ্ধতির সংস্কারের দাবিতে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয, বিএম কলেজ, বরিশাল টেক্সটালি কলেজ এবং বাবুগঞ্জ ভেটেরিনারী ক্যাম্পাস উত্তাল হয়ে উঠে। বরিশাল বিশ^বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরা রোববার রাতে প্রথম দফায় এবং গতকাল সকাল ৯টা থেকে দ্বিতীয় দফায় বিশ^বিদ্যালয় সংলগ্ন বরিশালÑপটুয়াখালীÑবরগুনা/কুয়াকাটা এবং বরিশালÑভোলাÑল²ীপুরÑচট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করে। ফলে বরিশালসহ সারা দেশের সাথে ভোলা,পটুয়াখালী, বরগুনাসহ পর্যটন কেন্দ্র কুয়াকাটার সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। বেলা ২টা পর্যন্ত এ অবরোধ চলে। একই দাবীতে বরিশাল বিএম কলেজের শিক্ষার্থীরা সোমবার সকাল থেকে ক্যাম্পাস সংলগ্ন সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করলে যানবহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয়, বাবুগঞ্জের ভেটেরিনারী কলেজ, বরিশাল টেক্সটাইল কলেজের শিক্ষার্থীরাও সড়ক অবরোধ করে রাখে।
যশোর ব্যুরো : কোটা সংস্কারের দাবিতে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (যবিপ্রবি) বিক্ষোভ মিছিল ও সড়ক অবরোধ করে শিক্ষার্থীরা। গতকাল সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে এ কর্মসূচি পালন হয়। সকাল ১০টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুষদ ভবনের সামনে থেকে মিছিলটি বের হয়। এক পর্যায়ে স্বাধীনত সড়ক (যশোর- চৌগাছা) অবরোধ করে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে শিক্ষার্থীরা।
ময়মনসিংহ ব্যুরো: ময়মনসিংহে কোটা সংস্কারের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল, অবস্থান কর্মসূচি, রেলপথ ও মহাসড়ক অবরোধ করে শিক্ষার্থীরা। সকালে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ শেষে প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে। এ সময় হাজার হাজার শিক্ষার্থী সেখানে জড়ো হয়। এরপর শিক্ষার্থীরা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় রেলস্টেশনে রেলপথ অবরোধ করে। ত্রিশালে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে অবস্থান নেয় জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়েরশিক্ষার্থীরা।
দিনাজপুর অফিস : কোটা পদ্ধতি বাতিলের দাবীতে সারাদেশের ন্যায় দিনাজপুর হাজী দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে অবস্থান ধর্মঘট নিয়ে আন্দোলনে নামে। গতকাল সোমবার সকাল থেকে ছাত্র-ছাত্রীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে দিনাজপুর-পঞ্চগড়-রংপুর মহাসড়কে অবস্থান নেয়। ছাত্র-ছাত্রীদের অবরোধের মুখে এই সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। উভয় পার্শ্বে আটকে থাকে শত শত যানবাহন।
শাবি সংবাদদাতা: কোটা সংস্কারের দাবিতে উত্তাল হয়ে উঠে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয়। সোমবার সকাল থেকেই ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা প্রধান ফটকে অবস্থান নেয়। শাহবাগে হামলার প্রতিবাদে এ কর্মসূচি পালন করে তারা। সকাল সাতটা থেকে বেলা আড়াইটায় পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে অবস্থান নেয় শিক্ষার্থীরা। সকাল থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল বিভাগের ক্লাস পরীক্ষা বর্জন করে স্বর্তস্ফূর্ত ভাবে আন্দোলন করেছে শিক্ষার্থীরা। দুপুর সাড়ে বারটার দিকে শিক্ষার্থীদের একটি বিক্ষোভ মিছিল প্রধান ফটক থেকে শুরু হয়ে ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে একই স্থানে এসে সমাবেশে মিলিত হয়।
রংপুর জেলা সংবাদদাতাঃ রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় ও কারমাইকেল কলেজসহ বিভিন্ন কলেজের শিক্ষার্থীরা এই দাবিতে গতকাল ক্লাস বর্জন করে রংপুর-ঢাকা মহাসড়ক অবরোধ করে। সকাল ১১টা থেকে নগরীর মডার্ন মোড়ে সড়ক অবরোধ করে অবস্থান নেন শিক্ষার্থীরা। এতে ঢাকার সাথে উত্তরাঞ্চলের সাতটি জেলার যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়।
ইবি রিপোর্টার: একই দাবিতে ক্লাস বর্জন করেছে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। সোমবার সকাল সাড়ে ৯টা থেকে ক্লাস বর্জন করে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়কে বিক্ষোভ মিছিল করে সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
কুবি সংবাদদাতাঃ কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কুমিল্লা নগরীর কান্দিরপাড়ে পূবালী চত্ত¡রে বিক্ষোভ মিছিল ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করে। সোমবার দুপুর ১২ টার দিকে শিক্ষার্থীরা অবস্থান নিয়ে কোটা প্রথা বাতিলের দাবিতে বিভিন্ন শ্লোগান দিতে থাকে।
টাঙ্গাইল জেলা সংবাদদাতা : বঙ্গবন্ধুর বাংলায়, বৈষম্যের ঠাঁই নাই শ্লোগান দিয়ে কোটা পদ্ধতির সংস্কার এবং সারা বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল, সমাবেশ ও মুখে কালো কাপড় বেধে মৌন অবস্থান করে টাঙ্গাইলের মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।