পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
মহসিন রাজু / জয়নাল আবেদীন জয় : ডিটারজেন্ট পাউডার, সোডা, সয়াবিন, নি¤œ মানের ভোজ্য তেল, লবণ, চিনি, স্যালাইন, নি¤œমানের গুড়া দুধসহ মারাতœক সব কেমিকেল মিশিয়ে তৈরী হচ্ছে মণ কে মণ ভেজাল দুধ। দেখতে খাঁটি দুধের মত বিষাক্ত সেই নকল দুধের ক্রিম থেকে তৈরী হচ্ছে খাঁটি গাওয়া ঘি। দুধের ছানা থেকে তৈরী হচ্ছে রসনা বিলাস বাহারী সব মিষ্টান্ন। আবার এই ভেজাল দুধ কৌশলে বিভিন্ন নামী দামী ব্যান্ডের কোম্পানীর মাধ্যমে প্যাকেটজাত হয়ে ছড়িয়ে পড়ছে সারা দেশে। এই ভেজাল দুধের ছানা ও ঘি ক্রীম তৈরী করে সরবরাহ করা হচ্ছে উত্তরাঞ্চলসহ ঢাকার নামকরা মিষ্টি বিপনী বিতান, নামি দামি সব রেস্টুরেন্টে। দীর্ঘদিন ধরে কৌশলে ভয়ংকর এই অপকর্ম করে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট সাদা দুধের কালো ব্যবসা করে হাতিয়ে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকা। সাধারণ মানুষকে দুধের তৈরী ঘি, মিষ্টান্ন ও দুধ নামের বিষ খাইয়ে রাতা-রাতি জালিয়াত চক্রটি বনে গেছে আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ, কলাগাছ থেকে বটগাছে। এই দুধ ও তার তৈরী মিষ্টি, ঘিসহ মিষ্টান্ন খেয়ে মারাতœক সব রোগে আক্রান্ত হচ্ছে সাধারণ মানুষ। প্রকাশ্যে এই ভয়াবহ অবৈধ কর্মকাÐ চলে আসলেও অজ্ঞাত কারণে বিষয়টি নিয়ে প্রশাসন রয়েছে নির্বিকার। ভয়ংকরএমন কর্মকাÐ হচ্ছে বগুড়ার সারিয়াকান্দি, সোনাতলার নির্দিষ্ট কিছু এলাকাসহ দুগ্ধ ভান্ডার খ্যাত সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া, শাহজাদপুর, পাবনার ফরিদপুর,ভাংগুড়া, সাথিয়াসহ বিভিন্ন উপজেলায়। দৈনিক ইনকিলাবের পক্ষ থেকে গত ১ মাস ধরে এসব এলাকায় ভেজাল কারবারীদের সাথে কথা বলে এবং গোপনে অনুসন্ধান চালিয়ে এই ভয়াবহ কর্মকাÐের তথ্য প্রমাণ পাওয়া গেছে। এসব নিয়ে মিডিয়া প্রচারের পর কখনো কখনো প্রশাসনের অভিযানে ভেজাল কারবারীরা অর্থদÐ দিয়ে ছাড়া পেয়ে আবারও একই কর্মকাÐ অব্যাহত রাখছে। সরেজমিনে তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, দেশের গবাদিপশু সমৃদ্ধ সিরাজগঞ্জ জেলার উল্লাপাড়া, শাহজাদপুর, পাবনার ফরিদপুর, ভাংগুড়া, সাঁথিয়া উপজেলায় এখন ভয়ংকরনকল দুধের রমরমা ব্যবসা চলছে। এই ভেজাল দুধ প্রক্রিয়াজাতকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, কারখানা। এসব কারখানায় চলছে নকল দুধের নানা কারবার। এই ভেজাল দুধে নানা প্রক্রিয়ায় প্রক্রিয়াজাত করে তৈরী করা হচ্ছে ঘি, ছানা, প্যাকেটজাত দুধ। দেশের বাজারে দুগ্ধজাত পণ্যের ব্যাপক চাহিদা থাকায় এটি এখন শিল্পে পরিণত হয়েছে। এসব এলাকায় দুগ্ধ উৎপাদনে গড়ে উঠেছে প্রচুর পরিমাণ দুগ্ধ খামার। এসব খামারে উৎপাদিন হচ্ছে প্রচুর পরিমান দুধ। গবাদিপশু পালন ও তা থেকে দুগ্ধ উৎপাদন করে বিক্রি করে অনেক খামারী এবং বেকার যুবক-যুবতি স্বাবলম্বি হলেও হঠাৎ করে ভেজাল দুধ উৎপাদনকারী একটি সিন্ডিকেটের কারণে মুখ থুবড়ে পড়তে চলেছে এই শিল্প। মাথার ঘাম পায়ে ফেলে খাঁটি দুগ্ধ উৎপাদনকারী খামারীরা এই সিন্ডিকেটের কারণে এখন পথে বসার উপক্রম হয়েছে। দুগ্ধ শিল্পের এই করুণ পরিণতি চিত্র খুঁজতে গিয়ে দৈনিক ইনকিলাবে অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে গা শিউরে উঠার মত এক ভয়ংকর ভেজাল দুধের কারবারের চিত্র। দুধ ব্যবসার সাথে জড়িত একাধিক ফড়িয়া ব্যবসায়ী এবং খামারীদের সাথে কথা বলে এবং সরেজমিনে দেখা যায়, প্রকাশ্য দিবালোকে তৈরী হচ্ছে মণ কে মণ ভেজাল দুধ। ফড়িয়া দুধ ব্যবসায়ী এবং কতিপয় দুগ্ধ থেকে ঘি ক্রিম এবং ছানা উৎপাদনকারী কারখানা মালিক এসব অপকর্ম করছে। তথ্যর সূত্র ধরে সরেজমিন উল্লাপাড়া উপজেলা শহর থেকে প্রায় ২৫ কি.মি.দুরের গ্রাম কালিয়াকৈর। এই গ্রামটি গবাদিপশু সমৃদ্ধ। পশু পালন এবং তা থেকে দুগ্ধ উৎপাদন করে গ্রামের সিংহভাগ মানুষ জীবিকা নির্বাহ করে আসছে। এরা মিল্কভিটা, প্রাণ, ব্র্যাক, আকিজসহ দুধের ক্রিম এবং ছানা তৈরীর কারখানায় এবং পাবনার ফরিদপুর থানার ডেমরায় বিক্রি করে। এই ভেজাল ব্যবসায়ীরা বলেন, দুগ্ধ সংগ্রহ কেন্দ্রের কর্তা ব্যক্তিদের ম্যানেজ করে ভেজাল দুধের লাভের একটা অংশ ধরিয়ে দিলেই তারা অন্য খামারীদের ভাল দুধের সাথে এই দুধ মিশিয়ে দেয়। দুধের ঘনত্ব (ননির ফ্যাট) মেপে টাকা দেয়ায় অন্য খামারী এবং ব্যবসায়ীরা এই ভেজাল দুধের কারণে দুধের দাম কম পায়। কিন্তু ভেজালকারী এবং ক্রয় কেন্দ্রের কর্তা ব্যক্তিরা এই ভেজাল দুধ ভালো দুধের সাথে মিশিয়ে প্রতি মাসে হাতিয়ে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকা। কিছুদিন আগে কালিয়াকৈর গ্রামের মিল্ক ভিটার দুগ্ধ সংগ্রাহক হাচেন আলীর পুত্র বকুল হোসেন লাহিড়ীমোহনপুর মিল্ক ভিটায় এই ভেজাল দুধ দিয়ে ধরা পড়ে। এতে উচ্চ মূল্যে গো খাদ্য কিনে গবাদিপশুকে খাইয়ে দুধ উৎপান করে লাভবান হওয়ার পরির্বতে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে খামারীরা। দুধে ভেজাল দিয়ে তা নানা পন্থায় বিক্রি করে শুন্য থেকে রাতা-রাতি লাখ লাখ টাকার মালিক বনে গেছেন ফড়িয়া দুগ্ধ সংগ্রাহকরা। এই দুধ ক্রয় বিক্রয় কে কেন্দ্র করে একাধিক ফড়িয়া গ্রুপ গড়ে উঠেছে। এদের সাথে রয়েছে স্থানীয় পর্যায়ে ক্ষমতাসীন দলের কতিপয় নেতাকর্মী। ফলে সংঘবদ্ধ চক্রটি প্রচÐ শক্তিশালী। এদিকে এই ভেজাল দুধ যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন ঘি ক্রিম ও ছানা তৈরী কারখানায়। এসব কারখানায় দুধের ব্যপক চাহিদা রয়েছে। ব্যবসায়ীদের কথা সূত্র ধরে উল্লাপাড়ার লাহিড়ীমোহনপুর বাজারে ইসমাইল হোসেন নামের এক ব্যবসায়ীর কারখানায় গিয়ে দেখা যায়, ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ভেজাল দুধ কিনে অস্বাস্থ্যকর নোংরা পরিবেশে ছানা ও ঘি ক্রিম তৈরী করা হচ্ছে। কারখানার মালিক বেলকুচি উপজেলার মো.ইসমাইল হোসেনের সাথে কথা বললে তিনি জানান, প্রতিদিন ফড়িয়া ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ৪০ থেকে ৪৫ মন দুধ কিনে ছানা এবং ঘি ক্রিম উৎপাদন করে তিনি ঢাকার প্রসিদ্ধ বিভিন্ন বিতান / বিপনি মিষ্টান্ন ভাÐারে সরবরাহ করেন। তিনি ওই সব প্রতিষ্ঠানের স্থানীয় কালেক্টর হিসেবে কাজ করে থাকেন। তার মত লাহিড়ীমোহনপুর বাল্লপাড়া মহল্লায় ঘি ছানা তৈরী করছেন সমিরন ঘোষ, মোহনপুর বাজারের রঞ্জন ঘোষ। অভিযোগ রয়েছে রঞ্জন ঘোষ ভেজাল ক্রিম কিনে এনে ঘি তৈরী করে বগুড়া, ঢাকা, চট্রগ্রামসহ সারা দেশে বাজারজাত করছেন। এর আগে তার ঘি কারখানায় র্যাব ১২ ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান চালিয়ে ¯্প্যান্ডেল ওয়েলসহ ক্ষতিকারক পদার্থ দিয়ে ঘি তৈরীর অপরাধে তাকে জরিমানা ও ভেজাল ঘি ড্রেনে ফেলে দেয়। উল্লাপাড়া পৌর শহরের হাটখোলায়ও একই কায়দায় ঘি ক্রিম জাল করে ঘি তৈরী করা হচ্ছে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উল্লাপাড়া, শাহজাদপুরের পোরজোনা, কায়েকপুর, বাঘাবাড়ি চরা চিথুলিয়া, বেড়ার আমাইকোলা, সাথিয়ার সেলন্দা, ফরিদপুরের ডেমরা, পার গোপালপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় অসংখ্য কারখানা গড়ে তুলে সেখানে এই ভেজাল দুধ দিয়ে ঘি ক্রিম এবং ছানা তৈরী করা হচ্ছে। একই সাথে এই দুধ বিভিন্ন নামীদামী কোম্পানীর কাছে তাদের ম্যানেজ করে বিক্রি করা হচ্ছে। তারা এসব দুধ কিনে প্যাকেটজাত করে দেশের বাজারে বিক্রি করছে। উল্লাপাড়ার বিভিন্ন এলাকা থেকে এই ভেজাল দুধ তৈরী করে ফড়িয়া ব্যবসায়ীরা ট্রাকযোগে উল্লাপাড়ার হাটি কুমরুল ফুড ফিলেজ হোটেলসহ উত্তরাঞ্চলের একাধিক অভিযাত হোটেল রেঁস্তোরা এবং ঘোষবাড়ীতে বিক্রি করছে। উল্লাপাড়ার কয়ড়া, মোহনপুর এলাকার একাধিক ব্যবসায়ী এ ব্যবসা করে শুন্য থেকে কোটি কোটি কোটি টাকা এবং আলিশান বাড়ি গাড়ির মালিক বনে গেছেন। এসব অসাধু ব্যবসায়ীদের কারণে গবাদিপশুর মালিকরা পথে যাচ্ছে। আর সুমান হারাচ্ছে এ জনপদের প্রসিদ্ধ দুগ্ধ সম্পদ। একাধিক খামারী এবং পশু মালিক দ্রæত এসব ভেজাল ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবী জানান। চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা এমন দুধের বিষয়ে জানান, কেমিক্যাল মেশানো এই দুধ ও তার তৈরী মিষ্টান্ন খেয়ে সাধারণ মানুষ মারাতœক সব রোগে ভেুগছেন। তারা সাধারণ মানুষকে রক্ষা করতে দ্রæত এই ভেজাল দুধের কারবার বন্ধের কথা জানান। ভেজাল দুধ নেয়ার বিষয়ে গত শনিবার সকালে মিল্ক ভিটার লাহিড়ীমোহনপুর কেন্দ্রের ম্যানেজার মো .শরিফ উদ্দিন জানান, মিল্ক ভিটায় কোনো ভেজাল ও নি¤œমানের দুধ নেয়া হয় না। তাছাড়া এখানে কেউ সিন্ডিকেট করে নি¤œমানের দুধ দেয়ার সুযোগ নেই। বিভিন্ন পরীক্ষার মাধ্যমে এখানে দুধ নেয়া হয়।
এদিকে আকিজ ফুড এন্ড ভেভারেজ (এফবিএএল) লিঃ মোহনপুর শাখার ম্যানেজার মো.আব্দুল কাদের জানান, তারা প্রতিদিন এই শাখায় ৩২শ’লিটার দুধ নিয়ে থাকেন। তিনি বলেন, এখানে পরীক্ষার মাধ্যমে দুধ নেয়া হয় বলে কোনো ভেজাল দুধ নেয়ার সুযোগ নেই।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।