পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
‘ফাইল ঠেকিয়ে ঘুষ খাওয়া আর পিস্তল ঠেকিয়ে টাকা আদায় একই কাজ’। কয়েক বছর আগে রাজধানী ঢাকার দেয়ালে দেয়ালে এই ‘চিকা’ শোভা পেত। দেশে ঘুষ-দুর্নীতি-লুটপাট আগের চেয়ে কয়েকগুন বেড়ে গেলেও এখন এ ধরণের লেখা ঢাকার দেয়ালগুলোতে দেখা যায় না। ‘ঘুষ খাওয়া এবং ঘুষ দেয়া’ সমান অপরাধ; কিন্তু ‘ফাইল সচলে’ বিপদগ্রস্থ মানুষ যে ঘুষ দিতে বাধ্য হয় তা কারো অজানা নয়। আবার যিনি পিস্তল ধরেন তার কথা ভিন্ন; কিন্তু রাস্তায় যিনি পিস্তলের ভয়ে অর্থকড়ি তুলে দিতে বাধ্য হন তাকে কি অপরাধী বলা যায়? বরং মানুষ বিপদগ্রস্থ বুঝতে পেরে উল্টো ভয়ভীতি দেখিয়ে কিছু আদায় করার চেস্টা অনৈতিকতার নামান্তর।
দেশের রাজনীতিতে জোট মহাজোটের সংস্কৃতি চালু হয় সেই ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনের সময়। এরশাদ বিরোধী আন্দোলনের সেটা শাখা প্রশাখা গজায়। ’৯০ পরবর্তী সময়ে জোটের রাজনীতির সংস্কৃতি চর্চার ডালপালা ছড়িয়ে যায়। দেশের মানুষও জোটের রাজনীতিকে ভালভাবে গ্রহণ করেছে। রাজনীতির যে গতি প্রকৃতি কোনো একটি দলের একক ভাবে নির্বাচন করে ক্ষমতায় যাওয়া এখন সুদূর পরাহত। ১৯৯৬ সালের নির্বাচন থেকে এটা দেখা যাচ্ছে। বর্তমানে দেশে মেরুকরণ ও জোটের রাজনীতির জয়জয়কার চলছে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ১৪ দলীয় জোট, মাঠের বিরোধী দল বিএনপি ২০ দলীয় জোট, জাতীয় সংসদের গৃহপালিত বিরোধী দল জাতীয় পার্টির অর্ধশতাধিক দলের সমন্বয়ে জোট, ৫ দলীয় যুক্তফ্রন্ট ছাড়াও আরো কয়েকটি জোট রয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলো জোটবন্ধ হয়ে কর্মসুচি পালন করছে। জোটের রাজনীতিতে ভোটের হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ হলেও কোন দল কত সুসংগঠিত তা অপ্রাসঙ্গিক। কারণ কোন দলের কত ভোটার রয়েছে তার হিসেবের চেয়ে মানুষ দেখেন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সঙ্গে কতগুলো রাজনৈতিক দল রয়েছে। নির্বাচন কমিশনের কোন দলের নিবন্ধন আছে আর কোন দলের নিবন্ধন নাই ভোটাররা সেটারও গুরুত্বপূর্ণ মনে করে না। তবে রাজনীতিতে আশার কথা হলো ক্ষমতায় যাওয়ার জন্যই হোক আর ক্ষমতা দীর্ঘস্থায়ীর জন্যই হোক বড় দলগুলো দেশের ছোট ছোট দলগুলোকে গুরুত্ব দিচ্ছে। আবার দেশে এমন কিছু ছোট দল রয়েছে যে ওই সব দলে বড় বড় নেতা নেতৃত্ব দিচ্ছেন। বি চৌধুরী, ড. কামাল হোসেন, আ স ম রব, কাদের সিদ্দিকী, মাহমুদুর রহমান মান্না, মুজাহিদুল ইসলাম সেলিমের দল ছোট হলেও নেতা হিসেবে তাদের পরিচিতি কী কম?
৬ মাস পর জাতীয় নির্বাচন অথচ রাজনীতির মাঠে মিটিং মিছিল নেই। উত্তেজনা আছে কিন্তু তার প্রকাশ নেই। এক পক্ষ্য নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছে অন্যপক্ষকে মাঠে নামতেই দেয়া হচ্ছে না। এটা স্বাভাবিক ঘটনা নয়। সব দলের অংশগ্রহণে একাদশ জাতীয় নির্বাচন দেখার জন্য জাতিসংঘসহ গোটা বিশ্বের প্রভাবশালী দেশগুলোর দৃষ্টি যখন বাংলাদেশের দিকে; তখন বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া কারাগারে। বিএনপি অভিযোগ করছে তাঁর সুচিকিৎসা হচ্ছে না। বেগম জিয়া কারগারে থাকায় বিএনপি ও ২০ দলীয় জোটের নেতাকর্মীদের হৃদয়ের ভিতর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে ঝড়। এ অবস্থায় মিশন-ভিশন যাই বলেন বিএনপির মূল এজেন্ডা বেগম জিয়াকে কারামুক্ত করা। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর স্পষ্ট বার্তা দিয়েছেন ‘এখন বিএনপির মূল এজেন্ডা বেগম জিয়াকে মুক্ত করা।’ কিছু প্রচার মাধ্যম সরকারের অনুকম্পা পেতে বিএনপির এই মূল এজেন্ডার সঙ্গে নির্বাচনে যাওয়া না যাওয়া গুলিয়ে ফেলে প্রচারণা চালাচ্ছে। বিএনপি খন্ডবিখন্ড হওয়া সময়ের ব্যাপার এ প্রচারণা চালছে। কিন্তু বিএনপির বিপদগ্রস্থ নেতারা নেত্রীর মুক্তিকে সর্বাগ্রে প্রাধান্য দিচ্ছেন। বিএনপির নেতৃত্বে যে ২০ দলীয় জোট রয়েছে; তাদের বৈঠকে শরীক দলগুলোর নেতারাও বিএনপির এ এজেন্ডার সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেছে। পেশাগত কারণেই ২০ দলীয় জোটের শরীক অধিকাংশ দলের নেতার সঙ্গে চলাফেরা এবং অনেকের সঙ্গে পারিবারিক সম্পর্ক। চলার পথে, আড্ডায় ও আলোচনায় গত দুই মাসে যাদের সঙ্গে কথা হয়েছে তারাই বলেছেন এই মুহুর্তে বেগম জিয়ার কারামুক্তি সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। জেল থেকে বেগম জিয়া বের হয়ে আসার পর নির্বাচন এবং শরীকদের মধ্যে আসন ভাগাভাগি ইত্যাদি নিয়ে আলোচনা হতে পারে। ২০ দলীয় জোটের ১০টি শরীক দলের নেতার সঙ্গে কথা বললে তারা সকলেই অভিন্ন বার্তা দেন। তারা বলেন, ২০ দলীয় জোট নেত্রী বেগম জিয়ার মুক্তিই আমাদের মূল এজেন্ডা। এখনই নির্বাচন এবং আসন ভাগাভাগির সময় নয়। বেগম জিয়া কারাবন্দী এ সুযোগ নিয়ে ক্ষমতাসীনরা মাঠের বিরোধী দল বিএনপির অভ্যন্তরে নেতায় নেতায় এবং ২০ দলীয় জোটে বিরোধ বাধানোর এজেন্ডা বাস্তবায়নে কিছু মিডিয়াকে ব্যবহার করছে। এ অবস্থায় চোখ-কান খোলা রেখে সকল শরীক দলকে সতর্ক থাকা অপরিহার্য। এখন সংসদীয় আসনের জন্য বিএনপির প্রতি চাপ দেয়া বা আসন ভাগাভাগি নিয়ে আলোচনার প্রস্তাব দেয়া রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ্যের হাতে অস্ত্র তুলে দেয়ার নামান্তর। এমনকি কয়েকজন নেতা বলেছেন আসন ভাগাভাগির চেয়ে বড় কথা বেগম জিয়া কি চান সেটা। তিনি ২০ দলের অভিভাবক। তাঁর প্রতি পুর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস রেখেই ২০ দলীয় জোট হয়েছে। নেত্রী যে সিদ্ধান্ত দেবেন সেটাই মেনে নেব। ২০ দলীয় জোটের শরীক প্রায় সব দলের নেতাই যখন বেগম জিয়ার ওপর সব সিদ্ধান্তের দায়িত্ব তুলে দিয়েছেন; তখন হঠাৎ করে একটি দল আসন্ন নির্বাচন উপলক্ষ্যে আসন ভাগাভাগি নিয়ে উঠেপড়ে লেগেছেন। যা ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের কাছে ‘মেঘ না চাইতেই বৃষ্টি’র মতো। টিভি টকশোগুলোতে নিত্যদিন যখন আলোচনা হচ্ছে বিএনপিকে ভেঙ্গে ফেলার চেস্টা হচ্ছে; বিএনপির কিছু নেতাকে দিয়ে নতুন বিএনপি গঠন করে তারাই ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করবেন; ২০ দলীয় জোটে ভাঙ্গন ধরাতে হবে। নিত্য এ নিয়ে চলছে মিডিয়ায় প্রচার-অপপ্রচার-প্রপাগান্ডা। তখন শরীক দলের এক সমাবেশে এখনই আগামী নির্বাচনের প্রস্তুতির লক্ষ্যে ২০ দলীয় জোটের আসন বণ্ঠনের দাবি তোলা হয়। শুধু তাই নয় জোট হয়েছে ২০ দলের অথচ শুধু নিবন্ধিত শরিক ৮টি দলের সঙ্গে আলোচনা করে সংসদীয় আসন বণ্টনে বিএনপির প্রতি আহবান জানানো হয়। শরীক দলের কয়েকজন নেতার নাম উল্লেখ করে ওই দলটির মহাসচিব বলেন, এই নেতাদের সঙ্গে বসে যার যেখানে নির্বাচন করার মতো প্রার্থী আছে সেটা ক্লিয়ার করে দেন। তাহলে আর কোনো দ্ব›দ্ব থাকবে না। মাঠে আমাদের দলের নেতাদের দ্ব›দ্ব আওয়ামী লীগের সঙ্গে হচ্ছে না, হচ্ছে বিএনপির সঙ্গে। আসন বণ্টন হলে আমাদের চলার পথ সুগম হবে’। শরীকদের প্রতি বিএনপির মহাসচিবের ‘আসুন এই বিপদের সময় সিট বন্টন নিয়ে কথা না বলি; এখন দেশনেত্রীকে মুক্ত করাই হবে আমাদের প্রথম দায়িত্ব এবং কর্তব্য। পরে জোটে যারা যোগ্য আছেন তারা অবশ্যই নির্ববাচনে অংশগ্রহণ করবেন’ বক্তব্য তুলে ধরে দলটির নেতা বলেন, ‘বিএনপি যদি সারাদেশে নির্দেশ দিয়ে প্রত্যেক আসনে তিনজন করে প্রার্থী বাছাই করতে পারে তাহলে আমরা অন্তত প্রতিটি আসনে ১ জন করে প্রার্থী বাছাই করতে পারি’। প্রশ্ন হলো এ ধরণের দাবির বাস্তবতা কতটুকু?
প্রথমেই মন্ত্রিপরিষদের সাবেক সচিব ড. সাদাত হুসাইনের বাংলা ভিশনের টকশোর বক্তব্য তুলে ধরা যাক। ‘জোটের রাজনীতি এবং ৩০টি ইসলামী দল পৃথক জোট গঠন করছে’ সঞ্চালকের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, জোট-মহাজোট হচ্ছে, হবে। কিন্তু ভোট আওয়ামী লীগ আর বিএনপিই পাবে। যে ছোট দলগুলো নিয়ে জোট হয়েছে ওই দলগুলো এককভাবে নির্বাচনে করলে ১০/২০ ভোটের বেশি পাবে না; মানুষ বিবেচনা করছে কোন দল কতগুলো দল নিয়ে জোট করছে। ইসলামী দলগুলো নিয়ে যতই জোট হোক আলেম ওলামা ও ইসলামী মূল্যবোধে বিশ্বাসীদের ভোট বিএনপি পায়। যেসব ইসলামী দল ও হেফাজত আওয়ামী লীগের সঙ্গে রয়েছে তাদের ভোট কি কখনো আওয়ামী লীগ পেয়েছে? দেশের ভোটাররা দুই ধারায় বিভক্ত এটা পরিস্কার’। তবে নির্বাচনে জিতে ছোট দলগুলোকে মূল্যায়ন করার রেওয়াজ চালু হয়ে গেছে। নির্বাচনে ছোট দলের নেতাদের যেমন পার্থী করা হয়েছে; তেমনি অতি ক্ষুদ্র দলের নেতাকেও মন্ত্রীত্ব দেয়ার উদাহরণ আছে।
২০ দলীয় জোটের অভ্যন্তরের অবস্থা জানতে চাইতেই বিএনপির এক নেতা বললেন, জোটের আসন ভাগাভাগি নিয়ে যদি আলোচনা করতে হয় তাহলে ২০ দলীয় জোটের সবার সঙ্গে বসা দরকার। শুধু মাত্র নিবন্ধিত ৮ দলের সঙ্গে বসতে হবে কেন? বিএনপির নেতাকর্মীদের ওপর দিয়ে সুনামী বয়ে যাচ্ছে। তারপরও বলবো বেগম জিয়ার মুক্তির পর শরীকদের মধ্যে আসন ভাগাভাগি নিয়ে হয়তো আলোচনা হবে। এটা ২০ দলীয় জোটের এজেন্ডা। কিন্তু বেগম জিয়াকে কারাগারে রেখে হঠাৎ করে আসন ভাগাভাগির প্রস্তাবের রহস্য কী? ২০০৬ সালের ২৬ অক্টোবর বিএনপির বিরুদ্ধে যে কার্ড খেলা হয়েছিল সেই একই কার্ড কী ২০ দলীয় জোটের আসন ভাগাভাগির দাবির মাধ্যমে খেলা হচ্ছে? অবশ্য ঢাকার দেয়ালে ‘ফাইল ঠেকিয়ে ঘুষ ----’ চিকার কথা মনে করে দিয়ে ২০ দলীয় জোটের শরীক দলের কয়েকজন নেতা বললেন, বেগম জিয়া কারাগারে; বিএনপি বিপদে রয়েছে। বিপদগ্রস্থ দলকে ঠ্যাক দিয়ে আসন আদায় করে নেয়ার চেষ্টা সফল হবে না। কেউ যদি প্রতিপক্ষ্যের এজেন্ডা ২০ দলীয় জোটের ভিতরে বাস্তবায়ন করতে চায় তা হবে বোকার স্বর্গে বসবাসের নামান্তর। কারো পাতা ফাঁদে ২০ দলের কোনো শরীক দল পা দেবে না। চলমান পরিস্থিতিতে আসন ভাগাভাগির প্রস্তাব দেয়া দলটির ঝানু নেতাদের অবশ্যই বোধদয় হবে। ২০ দল মানে বেগম জিয়া; এবং বেগম জিয়া মানেই ২০ দল। আগে নেত্রীর কারামুক্তি অতপর নির্বাচন নিয়ে ভাবনা। ‘প্রিয় ফুল খেলবার দিন নয়/ অদ্য ধ্বংসের মুখোমুখি আমরা’ সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের এই কবিতার মতোই বিএনপি এবং ২০ দলীয় জোটের নেতাদের অঙ্গিকার হোক ‘প্রিয় আসন ভাগাভাগির দিন নয়/অদ্য দেশনেত্রীর মুক্তি আন্দোলনের মুখোমুখি আমরা’।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।