Inqilab Logo

শনিবার, ০৬ জুলাই ২০২৪, ২২ আষাঢ় ১৪৩১, ২৯ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

হাত বদলে দাম বাড়ে ঠকে শুধু চাষি

শসার বাম্পার ফলন

মো. শামসুল আলম খান/ফজলে এলাহী ঢালি, ময়মনসিংহ থেকে | প্রকাশের সময় : ৭ এপ্রিল, ২০১৮, ১২:০০ এএম

দিন-রাত পরিশ্রম আর মূলধন খাটিয়ে শসা উৎপাদন করেন চাষীরা। কিন্তু এক কেজি শসা বিকিয়ে একজন চাষী পাচ্ছেন মাত্র ৮ কী ১০ টাকা। পাইকাররা দ্বিগুণ দামে এ শসাই বিক্রি করছেন আড়তে। আড়ত থেকে খুচরা বিক্রেতা হয়ে ক্রেতা অবধি পৌঁছতেই দাম যেন লাফিয়ে বাড়ছে।
ভোক্তাদের ২৫ থেকে ৩০ টাকায় কিনতে হচ্ছে এ শসা। হাতবদলে এভাবে দাম বাড়লেও প্রকারান্তরে ঠকছে মাঠের আসল নায়ক চাষী। ময়মনসিংহের তারাকান্দা উপজেলার গোয়াতলা শসা বাজার ঘুরে এমন চিত্রেরই দেখা মিললো।
জানা গেছে, এ উপজেলায় শসা বাণিজ্য তুঙ্গে থাকলেও চাষীরা ন্যায্য দাম পাচ্ছে না। শসা বাণিজ্যের লাভ চাষীদের ঘর পর্যন্ত না গেলেও মাঝখান থেকে লাভের টাকা পকেটে ভরে ফায়দা লুটছে মধ্যস্বত্ত¡ভোগীরা। এ নিয়ে আক্ষেপের শেষ নেই চাষীকূলের।
তারাকান্দা উপজেলা সদর থেকে কয়েক কিলোমিটার পথ এগুতেই গোয়াতলা শসা বাজার। শসার ভরা মৌসুমে বাজারটি জমজমাট। প্রতিদিন সকাল থেকে দুপুর এখানকার চকনাপাড়া, গোয়াতলা, কাকনী, শিমুলিয়া, বারইপানাসহ বিভিন্ন গ্রামে চাষী ও কিষানীরা ক্ষেত থেকে পরিপক্ক শশা তুলে মাঠে স্তুপ করছেন।
অনেকেই আবার সরাসরি স্থানীয় বাজারে পাইকারদের কাছে নিয়ে আসছেন। তাদের সঙ্গে মাপামাপির কাজ শেষ হতেই পানিতে ধুয়ে শসা বস্তাবন্দি করা হচ্ছে। বিকেলে ট্রাক, পিকআপে করে এ শসা চলে যাচ্ছে ময়মনসিংহের বিভিন্ন বাজারে।
পাইকার ও আড়তদারদের আসা যাওয়ায় গোয়াতলা বাজারটি সরগরম। স্থানীয়দের দেয়া তথ্যমতে, প্রতিদিন বাজারটিতে গড়ে দেড় থেকে দুই হাজার মণ শসা বিকিকিনি হচ্ছে।
‘সালাদে শসার কদর যেমনি রয়েছে তেমনি পুষ্টিগুণেও এটি অনন্য। স্বল্প পুঁজি আর অল্প পরিশ্রম শসা চাষ চাষীদের সফলতার মন্ত্র। গত রোববার বিকেলে স্থানীয় তারাকান্দা উপজেলার এ বাজারটিতে ঢুঁ মারতেই এ প্রতিবেদকের কাছে এভাবেই শসার স্তুতি করছিলেন স্থানীয় পাইকার এনামুল হক (৪০)।
তিনি জানান, পাইকাররা চাষীদের কাছ থেকে ৮ থেকে ১০ টাকা কেজিতে শসা কিনছেন তারা। ময়মনসিংহের বিভিন্ন বাজারে সেই শসাই বিক্রি হচ্ছে ২৫ থেকে ৩০ টাকা কেজিতে। তাঁর দাবি, বস্তা কেনা থেকে শুরু করে পরিবহন ও শ্রমিক খরচের পর লাভের এ অঙ্কটা খুব বেশি নয়।
এ পাইকারের সঙ্গে আলাপের সময়েই খানিকটা এগিয়ে এসে নিজের চাষী পরিচয় তুলে ধরলেন স্থানীয় ঢাকুয়া ইউনিয়নের বারইপানা গ্রামের আবুল কালাম (৪২)। এবার ৫০ শতাংশ জমিতে তিনি শসা চাষ করেছেন।
এ চাষী জানান, জমি তৈরি, বীজ সার, কীটনাশক ও শ্রমিক মিলিয়ে উৎপাদন খরচ হয়েছে ৪৫ হাজার টাকা। কিন্তু প্রতি কেজি শসা তাকে বিক্রি করতে হয়েছে ১০ টাকা দরে।
একই রকম কথা জানান অনন্তপুর গ্রামের চাষী আব্দুল মালেক (৫০), গোয়াতলার মোহাম্মদ ইসমাইল (৩৫), হাসিম উদ্দিন (৩২) ও একই এলাকার আতিকুল ইসলাম।
এসব চাষীদের লাভের গুড় মধ্যস্বত্ত¡ভোগীদের পেটে যাওয়ায় হতাশার কথা জানিয়ে তারা বলেন, শসা চাষ এখন লাভজনক। কিন্তু চাষীদের রাত-দিন পরিশ্রম আর মূলধন খাটানো অর্থে উৎপাদিত এ সবজি’র লাভের টাকায় ফায়দা তুলছেন মধ্যস্বত্ত¡ভোগী চক্র। বাজারে শসার ব্যাপক চাহিদার পুরো সুবিধাই নিচ্ছেন তাঁরা।
স্থানীয় গোয়াতলা শসা বাজারের এ চালচিত্র দেখার পর সরেজমিনে ময়মনসিংহ নগরীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, চাষীদের কাছ থেকে মাত্র ৮ থেকে ১০ টাকা কেজিতে কেনা এ শসা হাত বদল হয়ে আড়ত আর পাইকারের হাত ঘুরে বাজারে বিক্রি হচ্ছে ২৫ থেকে ৩০ টাকা কেজি দরে।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: চাষি

১৯ ডিসেম্বর, ২০২১
১৭ ডিসেম্বর, ২০২১
১৮ অক্টোবর, ২০২০

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ