পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধিতে আবহাওয়ার পরিবর্তনের ফলে প্রাকৃতিক পরিবেশের উপর মারাত্মক বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। বৃদ্ধি পাচ্ছে অতিবৃষ্টি, অনাবৃষ্টি, আকস্মিক বন্যা, খরা, জলোচ্ছ্বাস, ঘূর্ণিঝড়সহ নানা প্রকৃতিক দুর্যোগ। আবহাওয়ার বিরূপ প্রভাবে কৃষিনির্ভর অর্থনীতির এ দেশের কৃষি খাত ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। কারণ কৃষির উৎপাদনশীলতা পুরোপুরি তাপমাত্রা, বৃষ্টিপাত, এ সবের উপর নির্ভর করে।
শস্য উৎপাদনের উপর তাপমাত্রার প্রভাব গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা পালন করে। প্রতি ফসলের প্রজনন বৃদ্ধির জন্য তাপমাত্রার পরিসীমা থাকে। যখন তাপমাত্রার সীমা নিচে পড়ে বা ওপরের সীমাটি অতিক্রম করে, তখন ফসলের স্বাভাবিক উৎপাদন ব্যাহত হয়। যেমন অতিরিক্ত গরম বাতাসে গত ৪ এপ্রিল হাওরাঞ্চলসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় বোরো ধানের জমি পুড়ে গেছে। গবেষকরা হিটশক বলছেন।
গরম আবহাওয়া এবং অনাবৃষ্টি ফলে শুধু ধান নয়, অন্য সব ধরনের শস্য উৎপান মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়েছে। বৃষ্টিহীনতা আর প্রচন্ড গরম হাওয়ায় আমের জন্য খ্যাত রাজশাহী-চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নওগাঁ ও নাটোর জেলাজুড়ে টুপটাপ করে ঝরে পড়ছে আম ও লিচুর গুটি। চাষিরা গাছের গোড়ায় সেচ দিয়েও গুটি রক্ষা করতে পারছেন না। এ ছাড়া বৃষ্টি না হওয়াতে পোকার আক্রমণও বেড়ে গেছে। গুটি ঝরে পড়া এবং পোকার আক্রমণের ফলে কাক্সিক্ষত ফলন নিয়ে আমচাষিদের কপালে দুশ্চিন্তার ভাঁজ। চাষিরা যে পরিমাণ উৎপাদনের আশা করেছিল তার অর্ধেকও হবে কি না- সেটাই এখন ভাবছে।
বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালক ড. মো: তরিকুল ইসলাম ইনকিলাবকে বলেন, আবহাওয়ার পরিবর্তন অর্থাৎ তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে কৃষি খাতে নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ দেখা দিচ্ছে। এগুলো মোকাবিলায় আমাদের গবেষণা অব্যাহত আছে। বৃষ্টি কম হওয়ায় আম-লিচুর সম্ভাব্য ক্ষতি থেকে কৃষক যেন রক্ষা পান, সে জন্য মাঠ পর্যায়ের কৃষি অফিসাররা সার্বক্ষণিক পরামর্শ দিচ্ছেন।
আমাদের রাজশাহী ব্যুরো প্রধান রেজাউল করিম রাজু জানান, টুপটাপ করে ঝরে পড়ছে আম লিচুর গুটি। বাগানজুড়ে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে গুটি আর গুটি। এসব নেবার জন্য আম কুড়ানিরাও বাগানে আসছে না, লাভ নেই বলে। গুটি ঝরে পড়ায় ফলন নিয়ে আমচাষিরা চিন্তিত।
আমের জন্য খ্যাত রাজশাহী-চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নওগাঁ ও নাটোর জেলাজুড়ে রয়েছে- ৮১ হাজার হেক্টরে আম বাগান। লিচুও রয়েছে ২ হাজার হেক্টরে। আবহাওয়া অনুক‚ল থাকায় এবারো গাছ ভরে মুকুল আসে। কৃষি বিভাগের মতে ভাগের বেশি গাছ মুকলিত হয়েছে। সেই মুকুল ফুটে গাছে গাছে গুটি এসেছে নজরকাড়া। ভালো ফলনের স্বপ্নে বিভোর ছিল আমচাষিরা। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে চলা অনাবৃষ্টি আর খরতাপের বিরূপ প্রভাবে তাদের সে স্বপ্ন ফিকে হয়ে যাচ্ছে।
প্রতিবছরই আম-লিচুর গুটি ঝরে। কিন্তু এবারের বৃষ্টিহীনতা আর লু হাওয়ায় বেশি পরিমাণে ঝরছে। গুটি বাঁচাতে আম চাষিরা সেচ দিচ্ছেন বাগানে। পোকার আক্রমণ বাঁচাতে ছত্রাকনাশক ওষুধ স্প্রে করছেন। কিন্তু তাতে খুব একটা কাজ হচ্ছে না। বৃষ্টি না হওয়ায় গুটি ছিদ্রকারী পোকার উৎপাত বেড়েছে। বালাইনাশক দিয়ে কৃষকরা বাগানে বাগানে গুটি ধুয়ে দিচ্ছেন।
রাজশাহীর আমচাষি মঞ্জুর জানালেন এবার এখন পর্যন্ত বৃষ্টির দেখানেই। গুটি রস পাচ্ছে না। শুকিয়ে যাচ্ছে। তাই গাছের গোড়ায় সেচ দিয়ে রক্ষার চেষ্টা চলছে। অন্যবার এসময় গুটি পুষ্ট হয়ে যায়। কিন্তু বৈরী আবহাওয়ায় তা হতে পারছে না। গুটি এ সময় কড়ালী হয়ে যায়। আম কুড়ানীরা ব্যস্ত থাকে কড়ালী কুড়াতে। এসব কড়ালী দিয়ে ডাল রান্না, ছোট মাছের চচ্চড়ি আর টক রান্না করা হয়। স্বাদও হয় অসাধারণ। তাছাড়া নুন ঝাল দিয়ে কড়ালী খাওয়া চলে। এই কড়ালী দিয়ে বছরের আমের স্বাদ নেয়া শুরু হয়। বিক্রিও মন্দ হয় না। কিন্তু এবার এসব গুটি এখন পর্যন্ত পুষ্ট না হওয়ায় বাগানমুখি হচ্ছে না আম কুড়ানীর দল। কয়েকদিন আগেও যেসব গাছ গুটিতে ভরে ছিল, সেখানে এখন বেশ কিছুটা ফাঁকা ফাঁকা ভাব।
এ অঞ্চলে এবার লিচুর খবর ভালো না। আম গাছে প্রচুর মুকুল ও গুটি এলেও তুলনামূলকভাবে লিচুতে কম এসেছে। যা এসেছে তাও আবার পড়েছে বৈরী আবহাওয়ার মুখে। ছোট বনগ্রাম এলাকার লিচু চাষি হান্নান বলেন, গত বছর প্রতিটি গাছে গোড়া থেকে মাথা পর্যন্ত লিচু এসেছিল। আর এবার উল্টো চিত্র। যেকটি গাছে লিচুর গুটি আছে- সেগুলোও খরতাপ সহ্য করতে না পেরে ঝরে পড়ছে। গাছের গোড়ায় সেচ দিয়েও রক্ষা করা যাচ্ছে না।
এদিকে দিনভর খরতাপের পর বিকেলের দিকে আকাশজুড়ে ছাই রংয়ের মেঘের আনাগোনা দেখা গেলেও নামছে না কাক্সিক্ষত রহমতের বৃষ্টি। বিশিষ্ট আম বিজ্ঞানী ড. শরফ উদ্দিন বলেন, গত বছর ঘূর্ণিঝড় আম্পানে অনেক আম ঝরে পড়ায় কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এরপর ছিল করোনার বিরূপ প্রভাব। এবার খরতাপের সাথে রয়েছে করোনার প্রভাব। এ ছাড়া সামনে কালবৈশাখীর শঙ্কাও রয়েছে। সব মিলিয়ে আম লিচুর উৎপাদন এবারও বিপর্যয়ের মুখে।
নাটোর জেলা সংবাদদাতা জানান, গ্রীষ্মকালীন ফল হিসেবে নাটোরের আম ও লিচু বেশ প্রসিদ্ধ। প্রতিবছরেই নাটোরের নানা জাতের আম- ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনাসহ দেশের আনাচে-কানাচে সরবরাহ হয়। যার ফলে নাটোরে প্রতিবছর আম ও লিচুর বাগানের পরিমাণ বেড়েই চলেছে। কিন্তু এ বছরের নাটোরে এখনোও পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত না হওয়ায় সব বাগানেরই আম ও লিচুর আশানুরূপ উৎপাদন নিয়ে আশঙ্কা করছেন চাষিরা। আম ও লিচুর ক্ষেত্রে যে সময় থেকে মুকুল আসে, তখন থেকে পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত হলে আমের ফলন ভালো হয়। কিন্তু খরার কারণে আমের গুটি অবস্থাতেই ঝরে যাচ্ছে। তার মধ্যে কয়েক দফা শুকনো ঝড় ও শিলাবৃষ্টিতে প্রায় সব গাছের আম বেশিমাত্রায় ঝরে গেছে, লিচুর মুকুলও ঝরে পড়ছে।
নাটোর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের সূত্রমতে, চলতি বছরে ৫ হাজার ২২০ হেক্টর জমিতে আম ও ৯শ’ ৪৫ হেক্টর জমিতে লিচুর চাষ হয়েছে। ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে ৪ হাজার ৬৮৫ হেক্টর জমিতে আমের চাষ এবং ৮৮৪ হেক্টর জমিতে লিচু চাষ হয়েছিল।
এ ব্যাপারে জাতীয় পুরস্কার প্রাপ্ত নাটোরের ফল বাগানি মো: সেলিম রেজা জানান এবার দীর্ঘ খরার কারণে উপরে উত্তাপ যেমন বেশি তেমনি মাটিতে পানির পরিমাণও অনেক কমে গেছে। ফলে আম লিচুসহ এ মৌসুমের সব ফলের উৎপাদনেই এর একটা বিরূপ প্রভাব পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। ব্যাপক খরাজনিত পরিস্থিতি মাথায় রেখে প্রয়োজনীয় পরিচর্যা করে যাচ্ছি। সহসা বৃষ্টি না হলে আম লিচুর অনেক ক্ষতি হবে।
নাটোরের বাগাতিপাড়া উপজেলার বিশিষ্ট ফল চাষি আব্দুল বারী বাকী জানান, এবছর লিচুর গাছগুলোতে মুকুল তেমন আসেনি। ফলে এবার নাটোর অঞ্চলে লিচুর ফলন খুব ভালো হবে বলে মনে হচ্ছে না। এবার আমের গাছগুলোতে মুকুল ও করালি আম ব্যাপকভাবে দেখা গেলেও খরার সাথে সাথে পোকা-মাকড়ের উপদ্রবও শুরু হয়েছে। ফলে আমের রং এবং আকার কাক্সিক্ষত মানের না হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। তারপরও ভালো ফলনের আশায় পরিচর্যা করে যাচ্ছি।
দিনাজপুর অফিস জানায়, লিচুতে ভরপুর দিনাজপুর। প্রতিবছরই দিনাজপুরের লিচুর দিকে তাকিয়ে থাকে দেশের মানুষ। ফড়িয়া ও ব্যবসায়ীরা যেমন তাকিয়ে থাকে, তেমনি তাকিয়ে থাকে মৌসুমী ব্যবসায়ীরাও। তবে এবার প্রচন্ড খড়া ও বিরূপ আবহাওয়ার কারণে মন ভালো নেই লিচু চাষিদের। এবার বোম্বাই জাতের লিচুর ফলন নেই বললেই চলে। ভিআইপি খ্যাত বেদেনা ও চায়না থ্রি লিচু আছে, তবে খরার কারণে ফলন অনেক কম। লিচুর ফলন দেখে কৃষক ও বাগান চুক্তিতে নেয়া ফড়িয়াদের মাথায় হাত পড়েছে। কৃষকরাও যারা লিচু নিয়ে আশায় বুক বেঁধেছিল, তারা এবার হতাশায় ভুগছে।
এবার জেলায় ছোট-বড় সব মিলিয়ে প্রায় সাড়ে ৫ হাজার হেক্টর জমিতে লিচুর বাগান রয়েছে। প্রথমদিকে গাছে প্রচুর মুকুল এসেছিল। টানা খড়া তথা তাপদাহের কারণে মুকুল পুড়ে গেছে এবং ঝড়ে পড়েছে। এবার একটি বিষয় লিচু ব্যবসায়ী এবং কৃষি কর্মকর্তাদের মধ্যে শংকা সৃষ্টি করেছে। তাহলো বোম্বাই লিচুর কোনো ফলন নেই বললেই চলে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।