পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ঢাকঢোল পিটিয়ে এবং মিডিয়ায় ব্যাপক প্রচারণার মাধ্যমে মশা নিধনের খবর প্রচার করা হলেও মশার যন্ত্রণা থেকে নগরবাসী রক্ষা পাচ্ছে না। মশায় যন্ত্রণায় অতিষ্ট রাজধানীর বস্তি থেকে শুরু করে অভিজাত পাড়ার মানুষ। মশার প্রজননকেন্দ্র হিসেবে রাজধানী ঢাকার যে নর্দমা, খাল, মজাপুকুর চিহ্নিত করা হয়েছে মশার বিস্তার রোধে সেগুলো পরিস্কার পরিচ্ছন করা হয়নি। এমনকি মশা নিধনের লক্ষ্যে ঔধুষ ছিঁড়ানো হলেও তাতে মশার উপদ্রব কমছে না। বরং শুধু রাস্তায় এবং দৃশ্যমান যায়গায় মশার ঔষুধ ছিটানো হচ্ছে। মহল্লার ভিতরের গলি, ময়লা স্তুপ ও বাড়িঘরে ঔষুধ ছিটানো হচ্ছে না বলে অভিযোগ ভুক্তোভোগীদের। শহরের কয়েকটি এলাকা ঘুরে বিভিন্ন পেশার মানুষের সঙ্গে কথা বলে এই চিত্র পাওয়া গেছে। ভুক্তোভোগীদের অভিযোগ মশা মারতে দুই সিটি কর্পোরেশন কামান দাগানোর প্রচারণায় নামলেও ছোট্ট প্রাণী মশার হাত থেকে নাগরিকরা নিস্তার পাচ্ছেন না।
ঢাকার খাল, ঝিল, লেক, পুকুর ও নিচুজমিসহ বিভিন্ন নর্দমা-খালবিল দখল আর দুষণে ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। দিন দিন ময়লা আবর্জনা ফেলে আসাধু চক্র সরকারি এ নর্দমাগুলো প্রায় দখল করে নিয়েছে। দুই সিটি কর্পোরেশনের হিসাব তে প্রতি বছরই এই নর্দমার আয়াতন কমছে। এসব খাল, ঝিল, লেক, পুকুর ও নিচু জমিনসহ নর্দমায় কচুরিপানা ও নোংরা আবর্জনা আর পঁচা পানিতে জন্মাচ্ছে মশা। নানা দুর্ভোগ ভোগান্তিতে জর্জরিত রাজধানীবাসী। ঢাকা দক্ষিণ এবং ঢাকা উত্তর উভয় সিটিতে এ সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করেছে। সিটি কর্পোরেশন, জেলা প্রশাসন, ও ওয়াসাসহ সরকারি কোন সংস্থার পক্ষ থেকে এ খাল, লেক ও নর্দমাগুলোর উদ্ধারে নেই কার্যকরি কোন পদক্ষেপ। মশা নিধনে ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে প্রতিদিন সকালে লার্বি সাইডিং এবং বিকেলে এডালটি সাইডিংয়ের মত (ধোয়া দেয়া) লোক দেখানো কিছু কার্যক্রম পরিচালনা করতে দেখা গেলেও মশার প্রজনন উৎসগুলো ধ্বংসের ব্যাপারে নেই কোন কার্যকরি পদক্ষেপ। এ ব্যপারে ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনের মেয়র, কাউন্সিলর ও সংশ্লিষ্ট বিভাগের প্রশাসনিক কর্মকর্তার একেবারেই নির্বিকার। তাদের দাবি এটা তাদের কাজ নয়। এ কাজের দায়িত্ব সরকারিভাবেই ওয়াসার উপর ন্যাস্ত রয়েছে। এভাবেই ঢাকার নর্দমা ও মজাপুকুরগুলো দখল, দূষণ ও ময়লা-আবর্জনাসহ কচুরিপানা পরিষ্কার করে মশা উৎস ধ্বংস করার ব্যাপারে একে অন্যের উপর দায়ভার চাপিয়ে দায়িত্ব এড়িয়ে চলছেন।
ঢাকায় মশার উৎপত্তির স্থলগুলো নিয়ে গত পক্ষকালিনব্যাপী ১৪ পর্বের সিরিজ প্রতিবেদনের মাধ্যমে ধরে ধরে সিটি কর্পোরেশন ও সংশ্লিষ্ট সরকারি দফতরে দৃষ্টিতে আনার চেষ্টা করা হয়েছে। এর মধ্যে ‘মতিঝিলে ‘ঝিল’ এখন মশার কারখানা’ ‘ভারপ্রাপ্ত মেয়রের বাড়ির পাশেই মশা উৎপাদনের কারখানা’ ‘দেব ধোলাই খাল ১০ বছরেও পরিষ্কার করা হয়নি’ ‘গুলশান বনানী লেকর পচা পানি, ময়লা-আবর্জনা আর কচুরিপানাতে গড়ে উঠেছে মশার অভয়ারণ্য’ উল্লেখ যোগ্য।
গতকাল সরেজমিন গিয়ে উত্তর সিটি কর্পোরেশনের ভারপ্রাপ্ত মেয়র ওসমান গনীর বাড্ডার বাড়ির পাশের সেই মশা উৎপাদনের কারখানা (ময়ল-আবর্জনাভর্তি পুকুরটি) আগের অবস্থায়ই পড়ে আছে। এনিয়ে সিটি কর্পোরেশনের কোন তৎপরতা দেখা যায়নি। এ বিষয়ে কথা বলার জন্য ডিএনসিসি’র ভারপ্রাপ্ত মেয়র ওসমান গনীর সাথে বারবার চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যানি। সম্প্রতি এক সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা দক্ষিণ সিট কর্পোরেশনের মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন ঘোষণা করেছেন অসচেতনতার কারণে কারও বাসায় মশা জন্মালে ভ্রাম্যমান অদালতের মাধ্যমে তাকে শাস্তির আওতায় আনা হবে। এ প্রসঙ্গে গত বুধবার নগর ভবনে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে ডিএসসিসি’র মেয়র সাঈদ খোকনকে সেই ঘোষণার কথা মনে করে দিয়ে আপনার অসচেতনতা কিংবা ব্যার্থতার কারণে ঢাকার নর্দমাগুলো এখন মশা উৎপদনের উৎসমুলে পরিণত হয়ে গেছে। নগরবাসীর প্রশ্ন, তাহলে আপনিও কি সেই শাস্তির আওতায় আছেন। সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে মেয়র বলেন, আমার যদি কোন অপরগতা কিংবা সীমাবদ্ধতা থাকে সেটার জন্য নগরবাসী যা বলবেন তা আমি মেনে নিব। তার আগে আমি আপনাকে বলবো, আপনার বাড়িতেও যদি মশা জন্মনোর কোন জিবানু থাকে দয়া করে আপনি সেটা পরিষ্কার করে ফেলবেন।
গত মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় রাজধানীর হাজারীবাগ, বাইশটেকী, কুর্মিটোলা, মান্ডা ও বেগুনবাড়ী খাল পুনঃখননের একটি প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এর বাস্তবায়নে সরকারের খরচ হবে ৬০৭ কোটি টাকা। রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে এই টাকা জোগান দেওয়া হবে। সভায় প্রধানমন্ত্রী পাঁচটি সরকারি খাল দখল করে যারা অবৈধভাবে বাসাবাড়ি করেছে, তাদের বাসাবাড়ি ভেঙে ফেলার নির্দেশ দিয়েছেন।
সভা শেষে এক সংবাদ সম্মেলনে পরিকল্পনামন্ত্রী আহম মুস্তফা কামাল জানান, সভায় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন খালের জায়গা দখল করে কেউ যদি ২০ তলা ভবনও করে থাকে, সেটি ভেঙে ফেলতে হবে। পরিকল্পনামন্ত্রী জানান, সভায় ২০১৯ সালের মধ্যেই খাল খননের কাজ শেষ করার প্রতিশ্রæতি দিয়েছে স্থানীয় সরকার বিভাগ ও ঢাকা ওয়াসা। পরিকল্পনামন্ত্রী নিজেই এতবড় কর্মযোজ্ঞ সম্পাদন নিয়ে সন্দিহান। তিনি বলেন, এই কাজ করতে ৩০ একর জমি অধিগ্রহণ ও অবৈধদের উচ্ছেদ করা এতো সহজ ব্যপার হবে না।
ওয়াসা সূত্র বলছে, এই প্রকল্পের মাধ্যমে সোয়া এক কিলোমিটার বাইশটেকি খালটি ৪০ মিটার প্রশস্ত করা হবে। এ ছাড়া ১৮০ মিটারের সাংবাদিক কলোনির খালটি ৩০ মিটার প্রশস্ত করা হবে। তবে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করতে গিয়ে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ার আশঙ্কা করছে খোদ ওয়াসা। কারণ নগরীর ড্রেনেজ ব্যবস্থার কিছু খাল বর্তমানে নগরবাসীর ব্যক্তিগত জমির মাধ্যমে ব্যবহূত হচ্ছে। যেখানে ওয়াসার কোনো আইনগত কর্তৃত্ব নেই। এতে করে জমির মালিকরা যেকোনো সময় তাদের জমির শ্রেণি পরিবর্তন করে নিজেদের ইচ্ছামাফিক ব্যবহার করতে পারে। সে ক্ষেত্রে নগরীর সুষ্ঠু ড্রেনেজ ব্যবস্থাপনা বজায় রাখা কঠিন হবে বলে আশঙ্কা ঢাকা ওয়াসার। অবশ্য একাধিক কর্মকর্তা মনে করেন, এই পাঁচটি খাল খনন ও উদ্ধার করতে পারলে ঢাকার পানিবদ্ধতা অনেকাংশে কমে আসবে।
গত ২০ মার্চ থেকে একটানা ১৫ দিন সরেজমিন, ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের দক্ষিণে কেরানীগঞ্জের শুভাঢ্যা খাল, উত্তরে টঙ্গীর খিদিরখাল, পশ্চিমে বুড়িগঙ্গার আদি চ্যানেল, ময়লার পুকুর ও রায়ের বাজার খাল এবং পূর্বে মান্ডা থেকে ত্রিমুহনী খাল পর্যন্ত ঘুরে দেখা গেছে, রাজধানীর ভেতর ও বাইরের সবকটি খাল ও জলাশয়গুলোর দখল ও দূষণের বেহল দশা। বর্তমানে এগুলোর কোনটি এখন কচুরিপান, আগাছা ও বিভিন্ন লতাপাতার দখলে। বিভিন্ন কলকারখানা ও গৃহস্থালী ময়লা-আবর্জনা ফেলে কোনটির অবস্থা এখন বিলিন প্রায়। এ ময়লা-আবর্জনার ফাঁক দিয়ে চুইয়ে চুইয়ে কোনটি দিয়ে পঁচা ও দুগন্ধযুক্ত পানি প্রবাহিত হচ্ছে। এ থেকে একদিকে দুর্গন্ধ অন্যদিকে এতে জন্মানো মশায় এখন ঢাকার মানুষ অতিষ্ঠ।
এনিয়ে ভাবার যেন কেউ নেই। বিভিন্ন খাল, লেক, ঝিল, পুকুর ও জলাশয়গুলো সরেজমিন দেখতে গিয়ে সংশ্লিষ্ট এলাকার নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি, মেয়র, কাউন্সিলর, উপজেলা ও ইউনিয়ন চেয়াম্যান, মেম্বারসহ সরকারি বিভিন্ন দফতরের কর্মকর্তাদে সাথে কথা বলে জানা গেছে তাদের উদাসিনতার কথা। ঢাকা দুই সিটির মেয়র, কাউন্সির ও কর্তকর্তারা স্বীকার করতে চান না এটা তাদের কাজ।
দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন, ৮ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর সুলতান মিয়া, ৫০ নং কাউন্সিল দেলোয়ার হোসেন খান, ৬ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর সিরাজুর ইসলাম ভাট্টি ও প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শেখ সালাউদ্দিন। উত্তর সিটি কর্পোরেশনের ভারপ্রাপ্ত মেয়র ওসামান গণি, পেনেল মেয়র ও ৪ নং ওয়ার্ড কাউন্সিল জামাল মোস্তফা, পেনেল মেয়র ও ৩১, ৩৩, ৩৪ নং সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিল আলেয়া সারোয়ার ডেইজীসহ প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. মোহাম্মদ জাকির হাসান। এদের প্রত্যেকের সাথেই কাথা বলে প্রায় একই কথা জানা গেছে।
তারা বলছেন, রাউজক, গণপুর্ত অধিদপ্তর, সিভিল এভিয়েশন, রেলওয়েসহ বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠান ঢাকার খাল, লেক, ঝিল ও জলাশয়গুলোর মালিক। এছাড়া ব্যক্তি মালিকানয়ও রয়েছে কিছু জলাশয়। এসব জলাশয় পরিষ্কারের জন্য কর্পোরেশনের আলাদা বাজেট নেই, তাছাড়া এগুলো পরিষ্কারের দায়িত্বও সিটি কর্পোরেশনের নয়। তিনি বলেন, খাল ও জলাশয়গুলো পরিষ্কার করার ক্ষেত্রে আমাদেরকে নানা সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়। এ কাজে রয়েছে নানা আইনি জটিলতাও। যে কারণে খুব সহজেই আমরা রাজধানীল জলাশয়গুলো থেকে ময়লা আবর্জনা ও কচুরিপানা পরিষ্কারের কাজে হাত দিতে পারি না।
ঢাকার অন্যতম প্রধান খালের একটি দেব দোলাইখাল। এটি দখল দূষণে এখন মৃতপ্রায়। এ নিয়ে কথা বলতে গেলে দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ৫০ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন বলেন, লিখে দেন, কাউন্সিলর কোন কাজ করে না। খাল পরিষ্কার করা আমার কাজ না। এটা দেখভালের দায়িত্ব ওয়াসার। আমার কিছু করার না। অন্যান্য কাউন্সিলররা জানেনই না ঢাকার খাল, লেক, ঝিল ও জলাশয়গুলোর ময়লা-আবর্জনা, কচুরিপান পরিষ্কার ও এর দেখ-ভালের জন্য সিটি কর্পোরেশনের সুনির্দিষ্ট বাজেট রয়েছে। বেশিরভাগ কাউন্সিলরই এখন রাজনীতি, ঠিকাদারি, ব্যবসা বাণিজ্য ও বিভিন্ন জমি-জমান ও ফ্লাট বেচা বিক্রির দালালিতে ব্যস্ত আছে বলে অভিযোগ রয়েছে। খাল বিলের ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কার করে মশা তাড়ানোর মত লস প্রজেক্টে নষ্ট করার মত সময় এখন তাদের হাতে নেই।
ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের পেনেল মেয়র জামাল মোস্তফা বলেন, উত্তর সিটির মশা এখন অনেকটাই নিয়ন্ত্রণের এসে গেছে। মশা নিধনের আমরা বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছি। আগামী সাপ্তাহের মধ্যে উত্তর সিটি এলাকার মশা আরও নিয়ন্ত্রণে এসে যাবে বলে তিনি জানা। ডিএনসিসি’র আরেক পেনেল মেয়র আলেয়া সারোয়ার ডেইজি বলেন, দিন রাত মশা নিধনের জন্য কাজ করে যাচ্ছি। তিনি বলেন, দেখুন কাজ করলেও দোষ না করলেও দোষ। বিমান বন্দরে যে কেউ ঢুকার অনুমতি পায় না। আমি দায়িত্ব নিয় বিমান বন্দরে ঢুকেছি মশা নিধনের জন্য, আর এর ভিডিও ক্লিপসটা কিভাবে ফেসবুকে ভাইরাল হয়ে গেল। তাতে আমার কিছু যায় আসে না। আমি আমার কাজ করে যাবো।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।