পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
সিলেট নগরীর পূর্ব বন্দরবাজারের সন্ধ্যাবাজার মার্কেটে ‘নিষিদ্ধ পল্লী হোটেল ব্যাচেলর’ গুড়িয়ে দিয়ে নগরবাসীর প্রশংসায় ভাসছেন সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী।
এর আগে বছরের পর বছরের প্রশাসনের নাকের ডগায় এখানে চলে আসছিল অসামাজিক কার্যকলাপ। এর সাথে সমানতালে চলছিল মাদক ব্যবসা আর জুয়ার আসর। মার্কেটের দ্বিতীয় তলা থেকে সুরঙ্গের মাধ্যমে নিচে গড়ে তোলা হয়েছিল পৃথক আরেকটি ‘সেইফ হোম’। পুলিশের অভিযান হলেই উপর থেকে সুরঙ্গ দিয়ে নেমে আসতো অপরাধীরা আর অসামাজিক কাজে নিয়োজিত কিশোরী-নারীরা।
গত সোমবার সেই নিষিদ্ধ পল্লীতে হানা দেন মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। তাক্ষণিক অভিযানে ভেঙে ফেলা হয় সিটি কর্পোরেশনের মালিকানাধীন মার্কেটটিতে অবৈধভাবে নির্মিত হোটেল ব্যাচেলর’র কক্ষগুলো। পুলিশ ও র্যাব এর সহযোগিতায় এবং সিটি কর্পোরেশনের কারিগরী সহযোগিতায় তাৎক্ষণিক মেয়র আরিফ ভেঙে দেন অসামাজিকতার সেই পল্লী। তাৎক্ষণিক অভিযানে আটক করা হয় ৬ কিশোরীসহ আরোও ২ হোটেল কর্মচারীকে। গতকাল মঙ্গলবারও মেয়রের নেতৃত্বে দ্বিতীয়দফা সেখানে অভিযান চালায় সিটি কর্পোরেশন। গত সোমবার দ্বিতীয়তলায় অসামাজিক কার্যকলাপের ‘নিষিদ্ধ পল্লী হোটেল ব্যাচেলরে’ অভিযান চালিয়ে পাওয়া গেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। অভিযানকালে দেখা গেছে আইনশৃঙ্খলাবাহিনীকে আড়াল করতে সেখানে নেয়া হয়েছিল অভিনব ব্যবস্থা। অভিনব ব্যবস্থাতেই দিনের পর দিন, বছরের পর পর এখানে চলে এসেছে অনৈতিক কর্মকান্ড, জুয়ার আসর, মাদকের আসর। গত সোমবার দুপুরে সিটি করপোরেশনের মালিকানাধীন সন্ধ্যাবাজার মার্কেট দ্বিতীয়তলা পরিদর্শনে গিয়ে এই ‘নিষিদ্ধ পল্লী হোটেল ব্যাচেলরের’ সন্ধান পান মেয়র। তাৎক্ষণিক তিনি পুলিশ ডেকে অভিযান চালিয়ে ওই ‘ব্যাচেলর হোটেল’ নামের ওই ‘পাপরাজ্জি’ থেকে ৬ কিশোরী ও হোটেলের দুই কর্মচারীকে আটক করা হয়। আটককৃতদের মধ্যে আবদুস শহীদ নামের এক কর্মচারী অভিযানকালে উপস্থিত সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও গণমাধ্যম কর্মীদের কাছে জানিয়েছে ওই ‘নিষিদ্ধ পল্লীর’ মালিক নগরীর মেন্দিবাগের আলাউদ্দিন আলো। মেয়রসহ সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উপস্থিতি টের পেয়ে ওই হোটেলে থাকা ৬ নারী সুড়ঙ্গ পথ দিয়ে নিচের একটি রুমে আত্মগোপন করেন। পরে সিটি করপোরেশনের কর্মচারীরা ওই রুম থেকে তাদেরকে বের করে আনেন। এছাড়া হোটেলের দুই কর্মচারীকেও আটকে রাখেন তারা। আর অন্যরা কাষ্টঘর এলাকার দিকে মুখ করে থাকা পৃথক আরেকটি সিড়ি দিয়ে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। সুড়ঙ্গটি মার্কেটে দ্বিতীয়তলার ১৬ টি কক্ষের একটি কক্ষের এক কোণে। লেপ-তোষক দিয়ে সবসময় ঢেকে রাখা হতো এটির মুখ। ছাদ কেটে মই দিয়ে তৈরি করা হয়েছিল নিচে নামার রাস্তা। আইনশৃঙ্খলাবাহিনী আসলেই সুড়ঙ্গের মুখে লেপ-তোষক সরিয়ে সেখানে অনৈতিক কাজে নিয়োজিত কিশোরী-নারীরা খুব সহজেই নিচের কক্ষগুলোতে লুকিয়ে যেতেন। পুলিশ এসে হোটেলের কক্ষগুলোতে কাউকে না পেয়ে নিস্ফল হয়েই ফিরে যেতো। পুলিশ চলে গেলে তারা আবার অনৈতিক কাজে নিয়োজিত হতেন। গত সোমবারের অভিযানে খোলাসা হলো সুড়ঙ্গ রহস্য। পুলিশ সদস্যরা হোটেলের দুই কর্মচারী ও ৬ কিশোরীকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। এ সময় হোটেলের ১৬টি কক্ষ থেকে জুয়া ও মাদক সামগ্রীও উদ্ধার করা হয়। সুড়ঙ্গের নিচে নেমে দেখা গেছে সেখানে আরোও ৩/৪টি কক্ষ রয়েছে। সেগুলোতে তীর শিলং নামক জুয়া খেলার বিভিন্ন উপকরণ পাওয়া গেছে। পুলিশ এগুলো উদ্ধার করে থানায় নিয়ে এসেছে। পাওয়া গেছে বিভিন্ন রকম বিদেশী মদের খালি বোতল, ফেনসিডিলের বোতল, হিরোইন সেবনের আলামতও সুড়ঙ্গের নিচের কক্ষগুলোতে পাওয়া গেছে। অভিযানকালে সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে হোটেলের কর্মচারী আবদুস শহীদ জানায়, মেন্দিবাগের আলাউদ্দিন আলো ওই হোটেলের মালিক। হোটেলটির তত্ত¡াবধান করেন মালেক নামের এক ব্যক্তি। অভিযান টের পেয়ে মালেক হোটেল থেকে পালিয়ে গেছে।
এ ব্যাপারে আলাউদ্দিন আলো জানান, ‘ব্যাচেলর হোটেল’র সাথে তার কোন সম্পৃক্ততা নেই। সন্ধ্যাবাজার ব্যবসায়ী সমিতি সিটি করপোরেশনের কাছ থেকে লিজ নিয়ে ওই হোটেল পরিচালনা করে বলে দাবি করেন তিনি।
সিলেট মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার ফয়সল মাহমুদ জানান, আটককৃতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। হোটেলের ভেতরে সুড়ঙ্গ তৈরী করে এরকম অসামজিক কার্যকলাপের পেছনের মদদ দাতাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি। সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী জানান, পৌরবিপণী মার্কেট এমনিতেই ঝুঁকিপূর্ণ। এরমধ্যে দ্বিতীয়তলায় নির্মিত ঘরগুলোও অবৈধ। দীর্ঘদিন ধরে এসব অবৈধ ঘরের ভেতর অসামাজিক কার্যকলাপ চলে আসছে বলে স্থানীয় লোকজন ও ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করে আসছেন। তাই অবৈধ এই স্থাপনা সিটি করপোরেশন গুড়িয়ে দেয়ার কাজ শুরু করেছে। তাৎক্ষনিক অবৈধ স্থাপনাগুলো ভাঙা শুরু করা হয়।
সিটি কর্পোরেশনের এমন উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন নগরবাসী। উপস্থিত লোকজন বলেছেন, দীর্ঘদিন ধরে আমরা এরকম একটি অভিযানের আশা করেছিলাম। সেটি পূরণ হলো। আমরা চাই এখন সেখানে সিটি কর্পোরেশন একটি আধুনিক বিপনীবিতান নির্মাণ করুক। যার মাধ্যমে এখানকার ব্যবসায়ীরা উপকৃত হবেন। ঘটনাস্থলে উপস্থিত নগরীর কাজীটুলা এলাকার সেলিম আহমদ নামের এক ব্যবসায়ী মেয়র আরিফকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন- অভিযানের পর থেমে থাকলে চলবে না। যাতে অপরাধীরা আবার এখানে এসে আস্তানা না গাড়তে পারে সেটি নজর দিতে হবে। এই সন্ধ্যাবাজারটি পূণ্যনগরীর কলঙ্ক হয়ে দাঁড়িয়েছিল। অবশেষে সেই কলঙ্ক মোচন হল।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।