পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
কেউ বলেন কংশ নদী। কেউ বলেন বগার মার খাল। আবার ওয়াসার কাগজেপত্রে দেখা গেছে ক-খাল, খ-খাল কিংবা চ-খাল নামে। এই খালটি রাজধানীর মিরপুরের মনিপুর থেকে ওলি মিয়ার বাজার, শেওয়াপাড়া, দক্ষিণ পীরেরবাগ মুক্তি হাউজিং, মোল্লাপাড়া, ভাঙ্গাব্রীজ, আগারগাও, শ্যামলী, কল্যাণপুরের রামচন্দ্রপুর খাল হয়ে বুড়িগঙ্গায় গিয়ে মিশেছে। ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের ১৩, ১৪ ও ২৮ নাম্বার ওয়ার্ডে পাশ দিয়ে এ খালটি এখনও নিভু নিভু প্রবাহিত হচ্ছে। দুই পাশদিয়ে দখল হয়ে এক সময়ের ১০০ ফুটের এই খালটি এখন ১০-১৫ ফুটের সরু ড্রেনে পরিণত হয়ে গেছে। কোথাও ময়লা-আবর্জনা কোথাও কচুরিপানসহ বিভিন্ন লতাপাতা ও আগাছা জন্মে খালটি প্রায় ভরাট হয়ে গেছে। এর ভেতর দিয়ে কোনমতে চুইয়ে চুইয়ে ময়লা-আবর্জনা পঁচা পানি প্রবাহিত হচ্ছে। পাঁচ পানির দুগেন্ধে খালের আশেপাশের এলাকায় টেকাই দায়। খালের এই ময়লা-আবর্জনা, কচুরিপানা ও পচা পানিতে জন্মাচ্ছে মশা। মশার যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ শেওয়াপাড়া, আগারগাঁওসহ সারা মিরপুরবাসী। গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ের ভাঙ্গাব্রীজ থেকে মোল্লাপাড়া, মুক্তি হাউজিং ও ওলি মিয়ার বাজার পর্যন্ত ঘুরে এমন দুর্দশার চিত্রই দেখা গেছে।
ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের ১৩ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোহাম্মদ হারুন অর রশিদ গতকাল মঙ্গলবার ইনকিলাবকে বলেন, এটি ওয়াসার খাল। এর ভালমন্দের দায়ভারও ওয়াসার। তাই এই খালটির ব্যপারে সিটি কর্পোরেশনের কোন মথাব্যাথা নেই। এই খালের ময়লা-আবর্জনা, কচুরিপানা ও পঁচা পানিতে জন্ম নেয়া মশার যন্ত্রণায় এলাকাবাসী অতিষ্ঠ। আপনি তাদের নির্বাচিত স্থানীয় জনপ্রতিনিধি। এ বিষয়ে আপনার কি কোন দায়িত্ব নেই। জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার কি করার আছে, ময়লা-আবর্জনা কচুরিপানা পরিষ্কার করার জন্য যে অর্থনৈতিক সার্পোট দরকার তাতো আমরা পাই না। এ কাজের জন্য সিটি কর্পোরেশনের সুনির্দিষ্ট বাজেট রয়েছে তা আপনার জানা আছে কি, জানতে চাইলে তিনি এই বিষয়ে কিছুই জানেনা বলে জানান।
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, খালের পানি দূর্গন্ধ ও মশার উৎপাতে এলাকাবাসী অতিষ্ঠ। একসময়ের বহমান এ খালটি অবৈধভাবে দখল হয়ে এখন সরু ড্রেন হয়ে গেছে। প্রভাবশালীদের ভয়ে স্থানীয় লোকজন এ দখলের প্রতিবাদ করতেও সাহস পাচ্ছে না। খালের ওপর দিয়ে তৈরি করা হয়েছে ছোট ছোট কয়েকটি ব্রিজ। প্রতিনিয়ত ময়লা-আবর্জনা ফেলে খালটি ভরাট করে ফেললেও নির্বিকার ঢাকা ওয়াসা। খালের ময়লা আবর্জনাতে একদিকে যেমন মশার প্রজনন হচ্ছে অন্যদিকে এর দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ছে চারদিকে। ঠিকমত স্যুয়ারেজের পানিও নিষ্কাশন হচ্ছে না। এতে বর্ষা মৌসুমে অল্প বৃষ্টিতে তলিয়ে যায় মিরপুর, মনিপুর, ওলিমিয়ার বাজার, শেওড়াপাড়া, মোল্লাপাড়া ও পীরেরবাগ এলাকা।
কল্যাণপুর খালের একটি শাখা ক-খাল। রাজধানীর আগারগাঁওয়ের মাহবুব মোর্শেদ সরণির (আগারগাঁও-শ্যামলী লিংক রোড) বাংলাদেশ বেতারের পাশ দিয়ে যাওয়া কামাল সরণি ঘেঁষেই খালটির অবস্থান। এলাকাবাসী এ রাস্তাটিকে ৬০ ফুট সড়ক হিসেবে চেনেন। বাংলাদেশ বেতার থেকে এ সড়ক ধরে একটু এগোলেই দেখা যায় তিতাস গ্যাসের প্রধান কার্যালয়। এর আগেই রাস্তার পশ্চিম পাশ দিয়ে চলে গেছে খালটি। কিছু দূর এগিয়ে বাঁয়ে বাঁক নিয়ে খালটির অস্তিত্ব আর খুঁজে পাওয়া যায়নি। সেখানে এক পাশে তৈরি হচ্ছে ১৭ তলাবিশিষ্ট মমতা বহুমুখী সমবায় সমিতি শপিং কমপেক্স। অবশ্য আদালতের স্থগিতাদেশের কারণে বর্তমানে শপিং কমপেক্সের কাজ বন্ধ রয়েছে। এভাবে ওই এলাকার বাংলা বর্ণমাল সিরিয়ালের ক, খ, গ, ঘ ও চ খালগুলোর অস্তিত্ব তেমন একটা আর খুঁজে পাওয়া যায় না। এছাড়াও এই খালগুলোর যে যৎসামান্য অংশ এখনও নিভুনিভু জলছে। সেগুলোও ময়লা-আবর্জনা, কচুরিপানা ও বিভিন্ন লাতাপাতার জঙ্গল হয়ে মশা উৎপাদনের কারখানা হয়ে আছে। এ মশার যন্ত্রণায় অতিষ্ঠি আগারগাঁও তথা ডিএনসিাস’র ২৮ নং ওয়ার্ডবাসী।
ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের ২৮ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোহাম্মদ ফোরকান হোসেন গতকাল মঙ্গলবার ইনকিলাবকে বলেন, আমার ওয়ার্ডে কোন খাল নেই। তাই পরিষ্কারের প্রশ্ন আসে না। বগার মার খাল বা চ-খালটি তার ওয়ার্ডের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে। এ খালটির এখন বড় সমস্য দখল আর দুষণ। এর ময়লা-আবর্জনা ও পঁচা পানিতে জন্মানো মশার যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ ২৮ নং ওয়ার্ডবাসী। স্থানীয় নির্বচিত জনপ্রতিনিধি হিসেবে এ ব্যাপরে তার করনীয় কিছু নেই জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার ওয়ার্ডের পাশদিয়ে সামান্য একটু পড়েছে। আর এটি তো ওয়াসার কাজ আমাদের তো এখানে করনীয় কিছু নাই।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, দীর্ঘ ১২-১৫ কিলোমিটার দৈর্ঘের একসময়ের খর¯্রােতা বগার মার খালটি বর্তমানে মৃতখালে পরিণত হয়েছে। পানির বোতল, পলিথিন, প্ল্যাস্টিক, মাটির তৈজষপ্রত্রের ভাঙা অংশ, বিভিন্ন ময়লা-আবর্জনা ভর্তি বস্তা, সাবানের খোসা, ছেঁড়া জুতা, বিভিন্ন তরকারির বর্জ্য, উচ্ছিষ্ট, রান্না ঘরের উচ্ছিষ্ট, কাপড়, ছেঁড়া কাঁথা, টুথপেস্টে প্যাক, বোতলসহ বিভিন্ন আবর্জনা প্রতিনিয়ত ফেলা হচ্ছে। এছাড়া কচুরিপানা, আগাছা ও লতাপাতার জঙ্গল হয়ে আছে কাথাও কোথাও। আবর্জনা ফেলে খালটির এমন অবস্থা হয়ে গেছে যে কেউ এপার-ওপার হেঁটেই যাওয়া আসা করতে পারে। এ যেন দেখার কেউ নেই।
মুক্তি হাউজিং এলাকার বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম বলেন, বগার মার ঘাট যা বর্তমানে ভাঙ্গাব্রীজ নামে পরিচিত। এই বগার মার ঘাটকে কেন্দ্র করে খালটির নাম দেওয়া হয়েছে ‘বগার মার খাল’। এ খালের পশ্চিমে শেরে বাংলা নগর থানা ও পূর্বে মিরপুর থানা অবস্থিত। গত ৩০ বছর আগেও খাল ৮০ ফিট চওড়ায় ছিল যা বর্তমানে ১০-১৫ ফিটে দাঁড়িয়েছে। জহির মিয়া নামের ওই এলাকার আরেক বাসিন্দা বলেন, এটা এতোই নির্জন ও বিশাল খাল ছিলো যে আগে ভয়ে এ খালে আসতান না। কিন্তু কালের পরিক্রমায় এ খাল দখলের কবলে পড়ে একন মৃতপ্রায়। ১৩ নং ওয়ার্ড তাঁতী লীগের সভাপতি শফিক খান সুমন বলেন, খালটি ঘিরে গড়ে উঠেছে দারগা পট্টি। দারগা পট্টির বহুতল ভবন থেকে প্রতিনিয়ত ময়লা-আবর্জনা খালে ফেলা হচ্ছে। নিষেধ করলেও কেউ শোনে না।
শফিক খানের সাথে কথা বলার সময়েই দেখা যায়, মিরপুর দক্ষিণ পীরেরবাগ ১৮০/১৭/এ ফারুক আহমেদ রেজুয়ানের ভাড়া বাসা থেকে ময়লা ফেলা হচ্ছে। খালে কেন ময়লা ফেলছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, সিটি কর্পোরেশনের ময়লার গাড়ি নিয়মিত আসে না। এজন্য বাধ্য হয়ে খালে ময়লা ফেলতে হয়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।