পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
সরকারের সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা ও জাতীয় বাজেটে চলতি ২০১৭-১৮ অর্থবছর মোট দেশজ আয়ে (জিডিপি) ৭ দশমিক ৪০ শতাংশ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। তবে বছর শেষে প্রকৃত অর্জন প্রবৃদ্ধির এ লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে বলে মনে করছে সরকারি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)। অর্থবছরের ৯ মাসের গতি প্রকৃতি পর্যালোচনা করে সংস্থার পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এবার জিডিপিতে ৭ দশমিক ৬৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হবে। গত অর্থবছর জিডিপির প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ৭ দশমিক ২৮ শতাংশ। এ হিসাবে এক বছরে প্রবৃদ্ধি বাড়ছে দশমিক ৩৭ শতাংশীয় পয়েন্ট। একই সঙ্গে মাথাপিছু জাতীয় আয় (জিএনআই) বেড়েছে ১৪২ মার্কিন ডলার। গতকাল মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভা শেষে আয়োজিত সংবাদ ব্রিফিংয়ে প্রতিবেদনটি তুলে ধরেন পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। তবে চ‚ড়ান্ত হিসাবে প্রবৃদ্ধির এ হার বজায় থাকবে কিনা তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করছেন অর্থনীতিবদরা। তারা বলেছেন, নির্বাচনী বছরে রাজনৈতক অস্থিরতা হতে পারে। তা ছাড়া প্রকৃতিক দুর্যোগসহ বিভিন্ন কারণে এটি বজায় রাখাটা শেষ পর্যন্ত চ্যালেঞ্জ হতে পারে। শিল্প খাতের প্রবৃদ্ধির তথ্য নিয়েও দ্বিমত রয়েছে অর্থনীতিবিদদের। তারা বলছেন, উৎপাদন উপখাতে ১৩ দশমিক ২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি দেখানো হয়েছে। বেসরকারি বিনিয়োগ, রফতানি ও বিদ্যুৎ উৎপাদন ও মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানির সঙ্গে এ তথ্যের সঙ্গতি নেই বলে তারা মনে করছেন। এর আগে অনুষ্ঠিত একনেক সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে প্রতিবেদনটি হস্তান্তর করা হয়। বৈঠকে লক্ষ্যের বেশি প্রবৃদ্ধি অর্জনের কৃতিত্ব দিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা জানানো হয়। এ সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের সব শ্রেণীর মানুষের সামষ্ঠিক প্রচেষ্ঠায় প্রবৃদ্ধির হার বেড়েছে।
ব্রিফিংয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, দেশে বিনিয়োগ বেড়েছে। পাশাপাশি রেমিট্যান্স ও রাজস্ব আয় বেড়েছে। তা ছাড়া পরিকল্পিত অর্থনীতির কারণে দেশের আর্থিক খাতে অগ্রগতি অর্জিত হয়েছে। মন্ত্রী আরো বলেন, অর্থবছর শেষে আশা করছি, জিডিপি প্রবৃদ্ধি আরো বাড়বে। কেন না, সারা বিশ্বের কোথাও অর্থনৈতিক মন্দা নেই, অচলাবস্থা নেই। এখন অর্থনীতি একক কোনো দেশ নিয়ন্ত্রণ করে না। চীন, আমেরিকাসহ সব বড় দেশের অবস্থাই ভালো। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কোনো সমস্যা না হলে বছর শেষে প্রবৃদ্ধি বাড়বে।
গত কয়েক বছরের প্রবৃদ্ধির চিত্র তুলে ধরে তিনি বলেন, ২০১৩-১৪ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ৬ দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে সেটি বেড়ে দাঁড়ায় ৬ দশমিক ৬৫ শতাংশে। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে আরে বেড়ে ৭ দশমিক ১১ শতাংশ হয়। গত ২০১৬-১৭ অর্থবছরে হয়েছিল ৭ দশমিক ২৮ শতাংশ। এরকম ধারাবাহিকভাবে দেশের প্রবৃদ্ধি বাড়ছে। ফলে আমরা অর্থনৈতিক সূচকে অনেক দেশকে পেছনে ফেলে এগিয়ে যাচ্ছি।
প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, জিডিপির প্রবৃদ্ধির পাশাপাশি এবার মাথাপিছু আয়ও বাড়ছে। অর্থবছর শেষে মাথাপিছু জাতীয় আয় (জিএনআই) দাঁড়াবে এক হাজার ৭৫২ ডলারে। গত অর্থবছর মাথাপিছু জিএনআই ছিল এক হাজার ৬১০ ডলার। এ হিসাবে এক বছরে মাথাপিছু আয় বাড়ছে ১৪২ ডলার। আর দেশীয় মুদ্রায় বছরে মাথাপিছু আয় বাড়ছে ১৫ হাজার ৪৬১ টাকা।
প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, অর্থবছর শেষে বাজার মূল্যে দেশের জিডিপির আকার দাঁড়াবে ২২ লাখ ৩৮ হাজার ৪৯৮ কোটি টাকায়। আর স্থিরমূল্যে জিডিপির আকার হবে ১০ লাখ ২০ হাজার ৪৩০ কোটি টাকায়। গত অর্থবছর স্থিরমূল্যে জিডিপি ছিল ৯ লাখ ৪৭ হাজার ৮৯৭ কোটি পাঁচ লাখ টাকা। এ হিসাবে এক বছরে জিডিপির আকার বেড়েছে ৭২ হাজার ৫৩২ কোটি ৫০ লাখ টাকা।
মূলত শিল্প খাতের হাত ধরে এবার জিডিপির আকার বাড়ছে বলে দাবি করেছে বিবিএস। কৃষি খাতে প্রবৃদ্ধি সামান্য বাড়লেও কমেছে সেবা খাতে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি অর্থবছর শিল্প খাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১১ দশমিক ৯৯ শতাংশ। এর মধ্যে উৎপাদন উপখাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৩ দশমিক ১৮ শতাংশ। গত অর্থবছর উৎপাদন উপখাতে প্রবৃদ্ধি ছিল ১০ দশমিক ৯৭ শতাংশ। আর শিল্প খাতের প্রবৃদ্ধি চিল ১০ দশমিক ২২ শতাংশ। এর ফলে জিডিপিতে শিল্পের অবদান ৩২ দশমিক ৪২ শতাংশ থেকে বেড়ে ৩৩ দশমিক ৭১ শতাংশে উন্নীত হচ্ছে।
এবার কৃষি খাতে ৩ দশমিক ০৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হবে বলে জানিয়েছে বিবিএস। গত অর্থবছর এ খাতে প্রবৃদ্ধি ছিল ২ দশমিক ৯৭ শতাংশ। এর মধ্যে ফসল ও উদ্যান খাতে প্রবৃদ্ধি ১ দশমিক ৯৬ শতাংশ থেকে বেড়ে দাঁড়াচ্ছে ২ দশমিক ০১ শতাংশে। প্রবৃদ্ধি বাড়লেও গত কয়েক বছরের ধারাবাহিকতায় জিডিপিতে এবারো কমছে কৃষির অবদান। স্থিরমূল্যে জিডিপিতে কৃষির অবদান নেমে এসেছে ১৪ দশমিক ১০ শতাংশে। আগের অর্থবছরে জিডিপিতে কৃষির অবদান ছিল ১৪ দশমিক ৭৪ ভাগ।
সেবা খাতে এবার ৬ দশমিক ৩৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি প্রাক্কলন করেছে বিবিএস। আগের অর্থবছর এ খাতে প্রবৃদ্ধি ছিল ৬ দশমিক ৬৯ শতাংশ। গত চার অর্থবছরের মধ্যে এবারই প্রথম সেবা খাতে প্রবৃদ্ধি কমেছে। ফলে জিডিপিতে সেবার অবদান নেমে এসেছে ৫২ দশমিক ১৮ শতাংশে। আগের অর্থবছরের জিডিপিতে সেবা খাতের অবদান ছিল ৫২ দশমিক ৮৫ শতাংশ।
আয় বৃদ্ধির পাশাপাশি এবার ভোগ ব্যয়ের পরিমাণও বাড়ছে। চলতি অর্থবছর ভোগব্যয় জিডিপির ৭৬ দশমিক ৩৯ শতাংশে উন্নীত হবে। আগের অর্থবছর এর হার ছিল জিডিপির ৭৪ দশমিক ৬৭ শতাংশ। ব্যক্তি খাতে ভোগব্যয় জিডিপির ৬৮ দশমিক ৬৭ শতাংশ থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬৯ দশমিক ৯৩ শতাংশে। আর সরকারি খাতে ভোগ জিডিপির ৬ শতাংশ থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬ দশমিক ৪৬ শতাংশে।
ভোগ বেড়ে যাওয়ার কারণে এবার সঞ্চয়ের হার কমেছে। মোট অভ্যন্তরীণ সঞ্চয়ের হার জিডিপির ২৩ দশমিক ৬১ শতাংশে নেমে এসেছে। আগের অর্থবছর এর হার ছিল ২৫ দশমিক ৩৩ শতাংশ। আর জাতীয় সঞ্চয়ের হার ২৯ দশমিক ৬৪ শতাংশ থেকে নেমে দাঁড়িয়েছে ২৮ দশমিক ০৭ শতাংশে।
সঞ্চয়ের হার কমলেও মোট বিনিয়োগের হার এবার বাড়ছে। প্রথমবারের মতো জাতীয় পর্যায়ে বিনিয়োগের হার জিডিপির ৩১ দশমিক ৪৭ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। গত অর্থবছর বিনিয়োগ হয়েছিল জিডিপির ৩০ দশমিক ৫১ শতাংশ। তবে বিনিয়োগ বৃদ্ধিতে বড় অবদান সরকারি খাতের। চলতি অর্থবছর সরকারি পর্যায়ে বিনিয়োগ হবে জিডিপির ৮ দশমিক ২২ শতাংশ অর্থ। গত অর্থবছর এর হার ছিল ৭ দশমিক ৪১ শতাংশ।
সরকারি বিনিয়োগের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেসরকারি বিনিয়োগ বাড়ছে না। এবার ব্যক্তি খাতে বিনিয়োগ জিডিপির ২৩ দশমিক ২৫ শতাংশে উন্নীত হবে বলে ধারণা করছে বিবিএস। আগের অর্থবছর এর হার ছিল জিডিপির ২৩ দশমিক ১০ শতাংশ। ব্যক্তি বিনিয়োগের হার এক বছরে মাত্র শূন্য দশমিক ১৫ শতাংশীয় পয়েন্ট বাড়ছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।