পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ঢাকা শহরের ভিতর দিয়ে এঁকেবেঁকে বয়ে যাওয়া কোন এক সময়ের খর¯্রােতা অন্যতম প্রধান চারটি খালের একটি মান্ডাখাল। সেগুনবাগিচা থেকে খালটি বিজয়নগর, ফকিরাপুল, আরামবাগ, কমলাপুর, মতিঝিল, মুগদাপাড়া, মানিকনগর, মান্ডা, নন্দীপাড়া, ত্রিমুহনী গুদারাঘাট হয়ে শীতলক্ষায় মিলেছে। একসময় দেড়শ ফুটের এই খালে বড় বড় নৌকা চলতো। ময়লা-আবর্জনা ফেলে দুই পাশ দিয়ে দখল করতে করতে এটি এখন ২০-২৫ ফুটের সরু ড্রেনে হয়ে গেছে। দীর্ঘ দিন পরিষ্কার না করায় এটি ময়লা-আবর্জনা, কচুরিপানাসহ আগাছার জঙ্গল হয়ে মশার নিরাপদ বিচরণ ক্ষেত্র হয়ে গেছে। মশার যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ আশেপাশের এলাকাবাসী।
মুগদাপাড়া, মানিকনগর দিয়ে দখল করে খালের জায়গায় গড়ে উঠেছে বড় বড় বিল্ডিং। পূর্ব ঢাকার বিশাল অংশের বৃষ্টি ও স্যুয়ারেজের পানি নিষ্কাশনের একমাত্র অবলম্বন এ খালটির ওয়াসা রোড়ের দেড়শ ফুট ব্রীজের নীচ দিয়ে পানি চলাচলের জায়গা আছে মাত্র ১০ ফুট। ঠিক ব্রীজের উপরেই দাড়িয়ে আছে ৬তলা বিল্ডি। ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ৪, ৫, ৬ ও ৭ নং ওয়ার্ডের পাশ দিয়ে খালটি বয়েগেছে। সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ড কাউন্সিলরগণ ও ঢাকা ওয়াসাসহ সরকারি কোন সংস্থারই এ খালটির রক্ষণা বেক্ষণে নেই কার্যকর কোন উদ্যোগ।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন বলেন, ঢাকার পানিবদ্ধতার অন্যতম কারণ রাজধানীর খাল বেদখল। এ খালগুলো উদ্ধার করা হলে পানিবদ্ধতা কমবে। আমরা এরই মধ্যে ঢাকা ওয়াসা, জেলা প্রশাসন এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডের সঙ্গে বৈঠক করেছি। কেউ খাল দখল করলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সরজমিনে গতকাল সোমবার কমলাপুর স্টেডিয়ামের পূর্ব পাশ থেকে মানিকনগর, মুগদাপাড়া মান্ডা ও বাসাবো পর্যন্ত মান্ড খালটির বিভিন্ন স্থান ঘুরে দেখা গেছে, খালটি গত ১০ বছরেও পরিষ্কার করা হয়নি। কোথয়ও ময়লা আবর্জনা কোথায়ও কচুরিপানা আবার কোথাও আগাছা জন্মে পুরা খালটিই এখন পরিত্যাক্ত খালে পরিণত হয়েছে। এ ময়লা-আবর্জনা ও কচুরিপানাতে জন্মাচ্ছে মশা। মশার যন্ত্রণায় খালের আশেপাশের এলাকার মানুষ অতিষ্ঠ। দিনের বেলাতেও মশার উৎপাতে কোথও একটু স্থির হয়ে বসা যায় না। দিনে রাতে ২৪ ঘণ্টাই মশার যন্ত্রণায় রয়েছে এলাকাবাসী।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ৬ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম ভাট্টি গতকাল ইনকিলাবকে বলেন, বহুদিনধরে ঢাকা ওয়াসা খালটির উন্নয়নের কাজ করছে। তাদের এ কাজ কবে শেষ হবে তা কেউ জানেনা। যে কারণে এর ময়লা-আবর্জনা আর কচুরিপানা পরিষ্কারের কাজে আমরা উদ্যোগ নিতে পারছি না। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, খালটি যেহেতু ওয়াসার এবং তারা খালের উন্নয়ন কাজ করছে, সেহেতু এর ময়লা-আবর্জনা আর কচুরিপানা পরিষ্কারের দায়িত্বও তাদের। এই ময়লা-আবর্জনা আর পচা পানিতে জন্ম নেয়া মশায় অতিষ্ঠ ঢাকা শহরের পূর্বাংশের লাখ লাখ মানুষ। মশার অসহনীয় ভোগান্তি থেকে এলাকাবাসী পরিত্রাণ চায়।
এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে জানা গেছে, রাজধানীর প্রাণ কেন্দ্র মতিঝিলের মাত্র হাফ কিলোমিটার দুরত্বের এই খালে কখনও মশার ওষুধ ছিটানো হয়েছে কলে কেউ বলতে পারেনি। এটি পরিষ্কারও করা হয় না বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর। দীর্ঘ দিন ধরে ময়লা-আবর্জনা আর কচুরিপানা পরিষ্কান না করার কারণে এটি এখন মশা উৎপাদনের খামার হয়েগেছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, খালের দুই অংশজুড়ে দখল করে গড়ে উঠেছে ৬/৭ তলা বিল্ডিং, দোকান ও রিকশা গ্যারেজ। খালের মাঝখানেই বিভিন্ন ব্যক্তি নিজস্ব সম্পত্তি দাবি করে সাইনবোর্ড টাঙিয়ে রাখা হয়েছে। কেউ কেউ নতুন করে মাটি ফেলে ভরাট করছে। এছাড়া সরকারদলীয় বিভিন্ন নামে বেনামের ও খ্যাত অখ্যাত সংগঠনের অফিসসহ ধর্মী প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে খালে জায়গা দখল করে।
মানিকনগরের প্রবীন বাসিন্দা সরফরাজ বাওয়া বলেন, এক সময় এ খাল থেকে মাছ ধরেই চলতো তার সংসার। কিন্তু চোখের সামনেই দিন দিন খালটি হারিয়ে যাচ্ছে। দখলমুক্ত রাখতে তত্ত¡াবধানের দায়িত্বে থাকা ঢাকা ওয়াসা কয়েক স্থানে কিছু উপদেশমূলক সাইনবোর্ড লাগিয়েই যেন দায় সারছে।
রাজধানীর মানিকনগর, সেগুনবাগিচা, বিজয়নগর, ফকিরাপুল, আরামবাগ, কমলাপুর, মতিঝিল, টিটিপাড়া, মুগদাপাড়া, ঝিলপাড়, বালুরমাঠ ও মান্ডা এলাকার একমাত্র পানি নিষ্কাশনের মাধ্যম মান্ডা খাল। এসব এলাকায় গৃহস্থালির ময়লা-আবর্জনাসহ নানা ধরনের বর্জ্য ফেলে খাল ভরাট করা হচ্ছে। ময়লা-আবর্জনাতে জন্ম নেয়া মশার যন্ত্রণায় ও পচা পনির দুগন্ধে মানিকনগর, মুগদাপাড়া, মান্ড ও বাসাবোর লাখ লাখ মানুষ অতিষ্ঠ।
সরেজমিনে দেখা গেছে, মান্ড খালের দুই পাশ দখল করেই গড়ে উঠেছে শত শত দোকানপাট। এর মধ্যে চা, পান, মুদি, মোরগ, খাবার হোটেল, সবজি, রিকশা গ্যারেজ, ফল, মোবাইল, গোশত, ফার্নিচার, টেইলারসহ বিভিন্ন ধরনের দোকান রয়েছে। এসব দোকান থেকে আবর্জনা সরাসরি খালে ফেলা হয়। এছাড়া খালের আশপাশের বাসা-বাড়ির স্যুয়ারেজ লাইনও রয়েছে এই খালের মধ্যে। আশপাশের বাসা-বাড়িতে যাওয়ার জন্য খালের ওপর গড়ে উঠেছে শত শত বাঁশের সাঁকো ও পোল কালভার্ট।
খালটির বিভিন্ন অংশে ঘুরে ঢাকা ওয়াসার পক্ষ থেকে বিভিন্ন স্থানে শুধু মাত্র উপদেশমূলক কিছু সাইনবোর্ড ছাড়া আর কোনো কার্যক্রম চোখে পড়েনি। ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী তাকসিম এ খান বলেন, খালটির কিছু কিছু অংশ ব্যক্তিমালিকানায় রেকর্ড হয়ে গেছে। আমরা সেসব অধিগ্রহণের জন্য প্রস্তাব করেছি। তাছাড়া খাল উদ্ধারে একটি প্রকল্প হাতে নেয়া হচ্ছে। অনুমোদন হলেই কাজ শুরু হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।