Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ঝড় শিলাবৃষ্টি ও বজ্রপাতে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি : পাবনায় বজ্রপাতে নিহত ৩

দেশের সব নৌ-বন্দরকে ২ নম্বর নৌ-হুঁশিয়ারি সংকেত

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১ এপ্রিল, ২০১৮, ১২:০০ এএম

সারাদেশে কালবৈশাখী ঝড়, শিলাবৃষ্টি ও বজ্রপাতে বরিশাল, পাবনা, সুনামগঞ্জ, নওগাঁ, কুড়িগ্রাম, পাংশা (রাজবাড়ী), বালাগঞ্জ (সিলেট), মুন্সিগঞ্জ জেলার সিরাজদীখান উপজেলায় ঘরবাড়ি ও ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বিভিন্ন স্থানে বিচ্ছিন্ন রয়েছে বিদ্যুৎ সংযোগ। ফলে সাধারণ মানষের ব্যাপক ভোগান্তি দেখা দিয়েছে। এদিকে, পাবনায় বজ্রপাতে মারা গেছেন ৩ জন।
এদিকে, আবহাওয়া পরিস্থিতির অবনতির মুখে দেশের সব নৌ-বন্দরকে ২ নম্বর নৌ-হুঁশিয়ারি সংকেত দেখিয়ে যেতে বলেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। গতকালকের মতো আজও দেশের বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টি ও বজ্রসহ শীলা বৃষ্টি হতে পারে। পশ্চিমা লঘুচাপের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ ও তার আশেপাশের এলাকায় অবস্থান করছে। মৌসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে। এছাড়াও দেশের কোথাও কোথাও বিক্ষিপ্তভাবে বৃষ্টি ও বজ্রসহ শীলা বৃষ্টি হতে পারে।
বরিশাল ব্যুরো জানায়, গতকাল বরিশালের আকাশ কালো করে শুরু হয় ঝড়ো বাতাস। এরপর প্রায় আধা ঘণ্টা কালবৈশাখী ঝড় বয়ে যায়। উত্তর-পশ্চিম থেকে ভেসে আসা মেঘমালার প্রভাবে এ ধরণের বৃষ্টি ও ঝড় হয়েছে বলে জানিয়েছে বিভাগীয় আবহাওয়া অফিস। বাতাসে সর্বোচ্চ গতিবেগ ছিলো ৮ নটিকেলমাইল। বৃষ্টি রেকর্ড করা হয় দশমিক ৬ মিলিমিটার।
পাবনা জেলা সংবাদদাতা জানান, পাবনায় বজ্রপাতে সুজানগর উপজেলায় ৩জন কৃষিজীবী মারা গেছেন। গত শুক্রবার সন্ধ্যায় ঐ উপজেলার হাটখালি পেঁয়াজের জমি পাহার দেওয়ার সময় সময় শুরু হওয়া ঝড় ও শীলাবৃষ্টি ও বজ্রপাত শুরু হয়। বজ্রপাতে ৩ বজ্রপাতে তারা মারা যান। নিজতরা হলেন, উপজেলার মানিকহাট ইউনিয়নের বিক্রমাদিত্য গ্রামের মুক্তার শেখের পুত্র দুলাল হোসেন (৪০), আব্দুল আজিজ মোল্লার পুত্র আব্দুল আলিম (৩২) ও মোতাহার আলীর পুত্র লইম উদ্দিন (৫০)। রাতভর তাদের কোন খোঁজ পাওয়া যায়নি। গতকাল সকালে মাঠে লাশ পরে থাকতে দেখে স্থানীয় লোকজন পুলিশে খবর দেয়। পুলিশ সকাল ১১ টার দিকে তাদের লাশ উদ্ধার করে এবং সনাক্ত হওয়ার পর এবং মৃত্যুর কারণ বজ্রপাত হওয়ায় ময়না তদন্ত ছাড়াই তাদের লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়।গত শুক্রবার পাবনা সদর উপজেলাসহ ৯টি উপজেলার উপর দিয়ে প্রবল বেগে চৈত্রে কাল বৈশাখীর ন্যায় ঝড়-শালা বৃষ্টি ও বজ্রপাত হয়। বিকাল ৫টার দিকে পাবনা সদর উপজেলায়, সাড়ে ৫টার দিকে আটঘরিয়া, চাটমোহর, ভাঙ্গুড়া ফরিদপুর এবং সন্ধ্যার পর সুজানগরসহ অপর উপজেলায় ঝড়-বৃষ্টি শুরু হয়। ঝড়ের তান্ডবে বজ্রপাতে ৩ জন নিহত এবং শতাধিক ব্যক্তি আহত হন। প্রায় শত দূর্বল কাঁচা-ঘর বাড়ি বিধ্বস্ত হয়। গম, আমের কুড়ির ব্যাপক ক্ষতি সাধন হয়েছে। কোন স্থানে প্রায় আধা কেজি ওজনের ব্যাপক শীল পড়ে গমের ক্ষেত মাটির সাথে মিশিয়ে দিয়েছে। চাটমোহরে মহিলাসহ ২০জন আহত হয়েছেন। এদের মধ্যে গুরুতর আহত ৫জনকে স্থানীয় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
সুনামগঞ্জ জেলা সংবাদদাতা জানান, সকাল থেকে সুনামগঞ্জে শুরু হয় ঝড়ো বাতাস ও বৃষ্টিপাত। বিশ্বম্ভরপুরে ব্যাপক শিলাবৃষ্টির খবর পাওয়া গেছে। এতে এলাকার বেশকিছু ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে কোন হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।
নওগাঁ জেলা সংবাদদাতা জানান, ভোরে নওগাঁয় ঘন্টাব্যাপী কালবৈশাখী ঝড়ে পাকা গম, কাচা ধানের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ঝড়ে আমের মুকুলও ঝরে যায়। এতে উদ্বিগ্ন কৃষকরা।
কুড়িগ্রাম জেলা সংবাদদাতা জানান, কুড়িগ্রাম সদর, নাগেশ^রী ও ফুলবাড়ী উপজেলার কিছু এলাকায় আকস্মিক শিলাবৃষ্টির তান্ডবে উঠতি ফসলসহ ঘরবাড়ি ও গাছপালার ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতি হয়েছে অনেক ঘরবাড়ির টিনে চাল। কুড়িগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত উপ-পরিচালক আব্দুর রশীদ জানান, শিলা বৃষ্টির কারণে জেলার ৩টি উপজেলার ১১টি ইউনিয়নে ৫১০হেক্টর ফসলী জমি আক্রান্ত হয়েছে। এরমধ্যে কুড়িগ্রাম সদরে বোরো ৯০হেক্টর, ভুট্টা ও শাকসবজি ১০ হেক্টর করে, ফুলবাড়ি উপজেলাতে বোরো-১২৫হেক্টর, ভুট্টা ৫৫হেক্টর, শাক সবজি ৭৫হেক্টর এবং নাগেশ্বরীতে ৮৩হেক্টর, ভুট্টা ২৫হেক্টর, শাকসবজি ৩৫হেক্টর আক্রান্ত হয়েছে। তিনি জানান, কৃষি বিভাগের সকল কর্মকর্তা মাঠ পর্যায় রয়েছে। এছাড়াও কৃষকদের বিভিন্ন পরার্মশ প্রদান করা হচ্ছে।
মাগুরা জেলা সংবাদদাতা জানান, মাগুরায় আকস্মিক ঝড় এবং শিলাবৃষ্টির কারণে এলাকার আমসহ ক্ষেতের ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। স্থানীয়রা জানায়, ঝড়ে মাগুরা সদর উপজেলার মঘি, কালুখালী, লস্করপুর, জগদল,রূপটি গ্রামে অন্ততঃ ৭টি গ্রামের আমসহ জমির ফসলের ব্যাপক ক্ষতি ও ২০ ঘরের চালা উড়ে গেছে।
মুন্সিগঞ্জ জেলা সংবাদদাতা জানান, মুন্সিগঞ্জ জেলার রাজা নগর ইউনিয়নের মিরাপাড়া এলাকা ঝড়ে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। ফলে মোবাইল চার্জ সমস্যাসহ ব্যাপক ভোগান্তিতে পড়েছেন মানুষ। বাসাবাড়ির মানুষ বেশি সমস্যায় আছেন।
বালাগঞ্জ (সিলেট) উপজেরা সংবাদদাতা জানান, সিলেট আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে ৭৮কিলোমিটার বেগে বয়ে যাওয়া এই ঝড় পশ্চিম দিক থেকে ধেয়ে আসে। এতে বালাগঞ্জ ও ওসমানীনগর উপজেলায় ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন রয়েছে গোটা উপজেলা। ঝড়ে ওসমানীনগর উপজেলায় পল্লী বিদ্যুতের মেইন লাইনের ৪টি ও চার লাইনের ২৫টি ঘুটি ভেঙে দুই উপজেলা বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। লাইন মেরামত করতে অনেক দেরি হবে বলে বিদ্যুৎ অফিস জানিয়েছে। পানি সমস্যাসহ মোবাইল চার্জ সমস্যায় ভোগছেন মানুষ। বাসাবাড়ির মানুষ বেশি সমস্যায় আছেন। কাশিকাপন পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের ডিজিএম জানান ঝড় তুফানে প্রায় ৫০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।
দৌলতপুর (কুষ্টিয়া) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে শিলাবৃষ্টিতে উঠতি ফসল ও ঘরের টিনের চালাসহ ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। গোয়ালগ্রামের এমদাদ হোসেন জানান, শিলাবৃষ্টিতে উঠতি ফসল গম, তামাক ক্ষেতসহ বিভিন্ন ফসলের ক্ষতির পাশাপাশি ছোট-বড় শিলা পড়ে ঘরের টিন ছিদ্র ও ভেঙে টুকরো টুকরো হয়।
পাংশা (রাজবাড়ী) সংবাদদাতা জানান, রাজবাড়ীর পাংশায় হঠাৎ ঝড়ো বাতাশ আর শিলা বৃষ্টিতে উপজেলার ৩টি ইউনিয়নের কৃষকের ফসলের ব্যাপক ক্ষতি সাধান হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকরা জানিয়েছেন মাঠে তাদের পিয়াজ-গম ও পিয়াজের বীজ ছিল এ সকল ফসলের বিভিন্ন স্থানে শতভাগ কোথায় অর্ধেক কিছু স্থানে আংশিক ফসলের ক্ষতি হয়েছে। এ ব্যাপারে বাহাদুরপুর ইউপি চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবির শাকিল বলেন আমার এলাকার মানুষ কৃষিকাজের উপর নির্ভরশীল এ ইউনিয়নের কৃষকদের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে শীলা বৃষ্ঠিতে। এদিকে এ বৃষ্টিতে বেশী ক্ষতি হয়েছে আমের মুকুল ও পিয়াজের বীজের। উপজেলা কৃষি অফিসার মোছাঃ জেসমিন আক্তার বলেন উপজেলা হাবাসপুর,বাহাদুরপুর ও যশাই ইউপিতে শীলা বৃষ্টি ও ঝড়ো হ্ওায়ার প্রভাবে ৩৪০ হেক্টর জমির ফসল সম্পূর্ণ নষ্ঠ হয়েছে এবং ৮৭৫ হেক্টর জমির ফসল আংশিক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।

 

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ