Inqilab Logo

শুক্রবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১, ১২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মৌসুমের শুরুতে বজ্রসহ ঝড় শিলাবৃষ্টি : ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি

প্রকাশের সময় : ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ১২:০০ এএম

চট্টগ্রাম ব্যুরো : দেশের অধিকাংশ জায়গায় মঙ্গলবার গভীর রাতে ও গতকাল (বুধবার) ভোর থেকেই দমকা হাওয়া ও বজ্রসহ বৃষ্টিপাত হয়েছে। মধ্য ফাল্গুনের আগে পূবালী লঘুচাপের বর্ধিতাংশ (ট্রাফ) ও ঊর্ধ্বমুখী বায়ুচাপের প্রভাবে হঠাৎ করেই স্বাভাবিক আবহাওয়া পাল্টে যায়। এ সময় ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের অনেক জায়গায় মৌসুমের প্রথম দমকা থেকে প্রবল ঝড়ো হাওয়া ও বজ্রপাতের সাথে মুষলধারে বর্ষণ হয়। শিলাবৃষ্টি হয়েছে ঢাকাসহ অনেক এলাকায়। রাজধানী ঢাকায় আচমকা শিলাবৃষ্টিতে অন্তত ২০ জন পথচারী আহত হয়েছেন। নরসিংদীতে ঝড়ের সময় দেয়াল চাপা পড়ে দুই বোনের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টায় ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, খুলনা ও বরিশাল বিভাগে হালকা থেকে মাঝারি, কোথাও কোথাও ভারী বর্ষণ হয়েছে। এ সময় দেশের সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয় সাতক্ষীরায় ৮১ মিলিমিটার। এ সময় ঢাকায় ৯, চট্টগ্রামে ২, সীতাকু-ে ৪৯, রাঙ্গামাটিতে ৭২, কুমিল্লায় ২৫, ফেনীতে ৩৩, শ্রীমঙ্গলে ২৪, খুলনায় ৬০, বরিশালে ১৭, পটুয়াখালীতে ৩২ মি.মি. বৃষ্টিপাত হয়েছে। বজ্রসহ ঝড় ও শিলাবৃষ্টিতে আমের মুকুল, শীতকালীন শাক-সবজি, গাছপালা, কাঁচা ঘরবাড়ির ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি সাধিত হয়েছে। ঝড়ে অসংখ্য গাছপালা উপড়ে গেছে। গতকাল পর্যন্ত বন্দরনগরী ও জেলার অনেক এলাকায় বিদ্যুৎ ব্যবস্থা বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। সর্বত্র বেড়ে গেছে বিদ্যুৎ বিভ্রাট। দমকা ও ঝড়ো হাওয়ায় চট্টগ্রাম বন্দরে আমদানি-রফতানিমুখী পণ্যসামগ্রী শিপমেন্ট, খালাস, ডেলিভারী পরিবহন ব্যাহত হয়। গতকাল সকালে আকাশে ঘনঘোর মেঘের সাথে বজ্রের মুহুর্মুহু গর্জন ও দমকা থেকে ঝড়ো হাওয়ার সাথে মাঝারি থেকে ভারী বর্ষণ শুরু হয়। প্রায় এক ঘণ্টার বর্ষণে স্কুল-কলেজ ও মাদরাসাগামী শিক্ষার্থী, অফিসগামী লোকজনকে বৃষ্টির মধ্যে চরম দুর্ভোগে পড়তে হয়। অসময়ের বৃষ্টিতে অনেকে এ সময় আধাভেজা অবস্থায় গন্তব্যে পৌঁছান। দুপুরের পর ঢাকা ও চট্টগ্রামে আরেক দফায় মাঝারি বৃষ্টিপাত হয়। বর্ষণে নিচু এলাকার রাস্তা-ঘাটে কাদাপানি জমে যায়। মঙ্গলবার রাতে সংঘটিত হঠাৎ প্রবল ঝড়ো হাওয়ায় ফটিকছড়ি, হাটহাজারী, মিরসরাই, সীতাকু-, রাউজানসহ বৃহত্তর চট্টগ্রামের বিভিন্ন স্থানে গাছপালা ও বসতঘরের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। তবে মৌসুমের প্রথম বজ্রবৃষ্টিতে পরিবেশ-প্রকৃতি শীতল হয়ে আসে। দিন ও রাতের তাপমাত্রা কমে গেছে স্থানভেদে ১ থেকে ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গতকাল দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল দিনাজপুর ও রাজারহাটে ১৩ ডিগ্রি সে. এবং সর্বোচ্চ রাজশাহীতে ৩০.৫ ডিগ্রি সে.। এ সময় ঢাকায় তাপমাত্রা সর্বোচ্চ ২৬.৪ ও সর্বনিম্ন ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমে আসে। চট্টগ্রামে সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ২৮ ও ২৩.৭ ডিগ্রি সে.।
এদিকে আজ (বৃহস্পতিবার) সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার আবহাওয়া পূর্বাভাসে জানা গেছে, পূবালী লঘুচাপের বর্ধিতাংশ গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গ ও তৎসংলগ্ন উত্তর বঙ্গোপসাগর হয়ে বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চল পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। এই মৌসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত। এর পরিপ্রেক্ষিতে খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম, ঢাকা ও সিলেট বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় এবং রাজশাহী বিভাগের দুয়েক জায়গায় অস্থায়ী দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টিপাত হতে পারে। সেই সাথে কোথাও কোথাও বিক্ষিপ্তভাবে শিলাবৃষ্টি হতে পারে। এছাড়া দেশের অন্যত্র আকাশ অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলাসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে। সারাদেশে রাতের তাপমাত্রা সামান্য কমতে পারে এবং দিনের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টায় আবহাওয়ার উন্নতির সম্ভাবনা রয়েছে। এরপর বর্ধিত ৫ দিনের আবহাওয়ার অবস্থার সামান্য পরিবর্তন হতে পারে।
নরসিংদীতে দেয়াল চাপায় দুই সহোদরার মৃত্যু
স্টাফ রিপোর্টার, নরসিংদী থেকে ঃ পর পর কয়েকদিন ঘন কুয়াশাপাতের পর গতকাল নরসিংদীতে দু’দফা দমকা হাওয়া ও শীলাপাতসহ বৃষ্টিপাত হয়েছে। দুপুরে দমকা হাওয়া ও বৃষ্টিপাতের সময় মাধবদীর নওপাড়ায় দেয়াল চাপা বীথি (৬) ও চুমকী (৪) নামে এক রিক্সা চালকের দুই কন্যা মারা গেছে। আহত হয়েছে ১৬ জন। আহতদের মধ্যে কাশেম, আবুল হোসেন ও বৃদ্ধ মহিলাসহ ৩ জনের পরিচয় পাওয়া গেছে। ঝড়ে মাধবদী এলাকায় মোতাহার উইভিং ফ্যাক্টরীর একটি শেড উড়ে গেছে। এ কারখানাসহ অন্যান্য ছোটখাটো কাঁচা ঘর-বাড়ীর ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়েছে।
জানা গেছে, গরীব রিক্সা চালক আব্দুল হালিম অল্প করে কিছু ইট কিনে তার ঘরের এক দিকে একটি দেয়াল নির্মাণ করে। দেয়ালের প্লাস্টারকাজও শেষ করতে পারেনি। গতকাল দুপুরে হঠাৎ দমকা হাওয়া শুরু হলে চুমকী ও বীথি দৌড়ে গিয়ে ঘরের ভিতর আশ্রয় নেয়। এসময় দমকা হাওয়ায় ঘরটি নড়তে থাকলে তাদের মা তাদেরকে ঘরে বেরিয়ে যেতে বলে নিজেও ঘর থেকে বেরিয়ে যায়। কিন্তু হঠাৎ পাশের নবনির্মিত দেয়ালটি চুমকী ও বীথির উপর ধসে পড়লে তারা ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারায়।
মাদারীপুরে রবিশস্যের ক্ষতি
মাদারীপুর জেলা সংবাদদাতা ঃ মাদারীপুরের বিভিন্ন স্থানে মঙ্গলবার রাতে ও সকালে প্রচুর বৃষ্টিপাত ও হালকা দমকা বাতাস প্রবাহিত হওয়ায় রবি শষ্যের ক্ষতি হয়েছে। মাদারীপুর আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা যায়, মঙ্গলবার রাত ১২টা থেকে একটানা মুষলধারে বৃষ্টি শুরু হয়। বৃষ্টিপাত রাত ২টা ৫২ মিনিট পর্যন্ত চলে। আবার বুধবার সকাল ৮টা থেকে থেমে থেমে বৃষ্টি নামতে শুরু করে। রাতের বৃষ্টিপাতের সময় হালকা দমকা বাতাস প্রবাহিত হয়।
রাজধানীতে শিলাবৃষ্টিতে আহত ২০
স্টাফ রিপোর্টার : এদিকে শিলাবৃষ্টিতে রাজধানীতে অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন। এর মধ্যে ১৪ জনই কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আমরণ অনশনে থাকা কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডা’র নেতা-কর্মী। গতকাল বুধবার সকাল ১১টা থেকে ১২টার মধ্যে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ঝড় ও শিলাবৃষ্টি হয়। এসময় এ হতাহতের ঘটনা ঘটে। আহতদের কয়েকজনের নাম জানা গেছে। এরা হলেন, রেজাউল করিম, সাইফুল হক জুয়েল, প্রদীপ, সুমন মন্ডল, সানজিদা, আকলিমা ও শিমুল খান।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল সুত্র জানায়, শহীদ মিনারে আহত ১৪ জন ছাড়াও রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে আরও ছয়-সাতজন ঢামেকে চিকিৎসা নিতে এসেছেন। সবাইকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। প্রোভাইডা’র আহত কয়েকজন কর্মী জানান, বিভিন্ন দাবিতে তারা গতকাল বুধবার সকালে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে জমায়েত হয়ে আমরণ অনশন শুরু করেন। দুপুর ১২টার দিকে হঠাৎ ঝড় ও শিলাবৃষ্টিতে তাদের বেশ কয়েকজন আহত হন।
বরিশালে বিদ্যুৎ ব্যবস্থা ল-ভ-
বরিশাল ব্যুরো : মৌসুমের প্রথম কালবৈশাখীতে গতকাল দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জনজীবনে আগাম গ্রীষ্মেও দাবদহ থেকে স্বস্তি মিললেও বিদ্যুৎ সরবারহ ব্যবস্থা ল-ভ- হয়ে যায়। বরিশাল মহানগরীর অর্ধেকেরও বেশী এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা বিকল্প ব্যবস্থায় পুনর্বাসন করা হয় গতকাল বিকেলে। গতকাল প্রত্যুষের এ কালবৈশাখীর তা-বের সময় বরিশালে বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ ছিল ঘন্টায় প্রায় ৬৫ কিলোমিটার। এসময় ব্যপক বজ্রপাতে জনজীবনে মারাত্মক ভীতিরও সঞ্চার হয়। বৃষ্টিপাতে মাঠ কর্দমাক্ত হয়ে পড়ায় চরমোনাই দরবার শরিফের বার্ষিক মাহফিলে আগত মুসুল্লীদের চরম মানবিক বির্যয়েল কবলে পড়তে হয়েছে। গতকাল বাদ ফজর থেকে শুরু হওয়া এ মাহফিলে যোগদানের জন্য দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে কয়েক লাখ মুসুল্লী সমবেত হয়েছিলেন। কিন্তু প্রত্যুষের কালবৈশাখীর তা-বে হাজার হাজার মুসুল্লী চরম দুর্ভোগে পড়েন। মাহফিলের মাঠ, পন্ডেল, শৌচাগার ও খাবারের ব্যবস্থা সহ সমুদয় আয়োজনই বিপন্ন হয়ে পড়ায় অনেক মুসল্লী সকাল ৯টার পরেই মাহফিলস্থল ত্যাগ করতে শুরু করেন। দিন ভরই সড়ক ও নৌপথে ফিরতে থাকেন হাজার-হাজার মুসল্লী। তবে ফিরতি যানবাহনের অভাবে এখনো বিপুল সংখ্যক মুসল্লী বরিশাল মহানগরীর দুটি বাস টার্মিনাল ও নৌ টার্মিনালে অপেক্ষা করছেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মৌসুমের শুরুতে বজ্রসহ ঝড় শিলাবৃষ্টি : ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ