Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে আন্দোলনের বিকল্প নেই -মির্জা ফখরুল

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১ এপ্রিল, ২০১৮, ১২:০০ এএম

বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে আন্দোলনের কোন বিকল্প নেই বলে মন্তব্য করেছেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, কোনো বিকল্প নেই, কোনো বিকল্প নেই আন্দোলন, আন্দোলন, আন্দোলন। আন্দোলনের মধ্য দিয়ে আমরা দেশনেত্রীকে কারামুক্ত করবো। তার আগে অন্য কোনো কিছু আমরা চিন্তা করছি না, করব না। মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে গতকাল (শনিবার) বিকেলে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, এই দেশে গণতন্ত্রের যতটুকু অর্জন হয়েছিলো, যিনি স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে লড়াই-সংগ্রাম করেছিলেন, তাদের বিদায় করেছিলেন, সেই গৃহবধু থেকে দেশের পথে প্রান্তরে গণতন্ত্রের গান গেয়ে বেড়িয়েছেন আজকে সেই গণতন্ত্রের মা দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে সরকার অন্যায়ভাবে বন্দি করে রেখেছে এই সরকার। নেতা-কর্মীদের প্রতি আহবান রেখে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমাদের সংগঠন শক্তিশালী করতে হবে। প্রতি ঘরে ঘরে গিয়ে এই বাণী পৌঁছিয়ে দিতে হবে যে, এখন ঘরে বসে থাকার সময় নেই। নিজের অধিকার আদায়ের জন্যে, আমার ভোট আমি দেবো- এই অধিকার আদায়ের জন্যে, বেঁচে থাকার অধিকারের নিশ্চয়তা পাবার জন্যে সকলকে এই ভয়াবহ যে দানব আমাদের বুকের ওপর চেপে বসে আছে, সেই দানবকে সরাতে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে সকলকে রাজপথে নেমে আসতে হবে। সবাই জাগ্রত হোন, ওঠে দাঁড়ান, ফেটে পড়–ন। সকল গণতান্ত্রিক দল ও সংগঠনকে সরকার হটাতে জাতীয় ঐক্য সৃষ্টির আহবানও জানিয়ে তিনি বলেন, প্রতিটি জায়গায় প্রত্যেক মানুষ এখন শুধু অপেক্ষা করে আছে কখন একটা সুযোগ পাবে, সেই সুযোগের সৎব্যবহার করে এই সরকারকে একেবারে চিরতরে উৎখাত করে দেবে।
বিএনপির আন্দোলনের বিষয়ে মির্জা আলমগীর বলেন, আমরা এখন একেবারেই শান্তিপূর্ণ নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন করছি। এই শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের মধ্য দিয়েই আমরা সরকারের পতন ঘটাবো। বাধ্য করবো দেশনেত্রীসহ আমাদের সকল রাজবন্দিদের মুক্ত করবার জন্য। এসময় তিনি দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, কেন্দ্রীয় নেতা সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল, আজিজুল বারী হেলাল, শফিউল বারী বাবু, ইয়াসিন আলী, রাজিব আহসান, আকরামুল হাসান, কাজী আবুল বাশারসহ সকল নেতৃবৃন্দের মুক্তির দাবি করেন।
খালেদা জিয়াকে কারাগারে রেখে এবার স্বাধীনতা দিবসে আলোচনা অনুষ্ঠান করার বেদনার কথা বলতে গিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, অত্যন্ত ভারাক্রান্ত হৃদয় নিয়ে আমাদেরকে আজ আলোচনা সভায় আয়োজন করতে হয়েছে। চিরাচরিত প্রথা অনুযায়ী আজকের এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতেন আমাদের দলের নেত্রী গণতন্ত্রের মা দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া। কিন্তু আমাদের নেত্রীকে আজকে কারাগারে আটকিয়ে রাখা হয়েছে। মানুষের সকল অধিকার কেড়ে নেয়া হয়েছে। এমনকি আমাদেরকে জনসভা পর্যন্ত করতে দেয়া হয় না।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে সরকার ষড়যন্ত্র করছে। দেশনেত্রীকে নির্বাচন থেকে বাইরে রেখে, বিএনপিকে নির্বাচন থেকে বাইরে রেখে আবার ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির মতো প্রহসনের ভোটছাড়া নির্বাচন করতে চায়। আমরা বলতে চাই, একাদশ নির্বাচন ২০১৪ সালের মতো নির্বাচনের পূনরাবৃত্তি দেশে হবে না, হতে দেয়া হবে না। দেশনেত্রীকে ছাড়া এদেশে নির্বাচন হতে দেবে না জনগণ।
শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের মাধ্যমেই খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং সরকারের পতন হবে মন্তব্য করে বিএনপির এই সিনিয়র নেতা বলেন, আমরা নিয়মতান্ত্রিক শান্তিপূর্ণ আন্দোলন ও আইনের লড়াইয়ের মাধ্যমে প্রথমে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করে আনবো। এরপর তার নেতৃত্বেই আগামীদিনে একটি নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার প্রতিষ্ঠা করে সংসদ ভেঙে দেওয়ার দাবি আদায় করে ইনশাল্লাহ আমরা আগামী নির্বাচনে যাবো। সেই নির্বাচনে দেশনেত্রীর নেতৃত্বে আমরা জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করব, গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা করব।
স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, দেশনেত্রীকে মুক্ত করতে শুধু আইনি লড়াই যথেষ্ট নয়। জনমত সৃষ্টি করতে হবে, বেগম জিয়ার মুক্তির জন্য আন্দোলন করতে হবে। তাহলে ইনশাল্লাহ তিনি আমাদের মাঝে খুব শিগগিরিই ফিরে আসবেন বলে আমি বিশ্বাস করি। নির্বাচনের প্রস্তুতির প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, আমরা একটি নির্দলীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন চাই। বিএনপি গণতান্ত্রিক দল, গণতান্ত্রিক পন্থায় আমরা দেশের মানুষের প্রতিনিধিত্ব করতে চাই। সেটা করতে গেলে আমাদেরকে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে হবে এবং প্রত্যেকটি জায়গায় আপনাদেরকে নিয়োজিত থাকতে হবে। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ অনেক দূর এগিয়ে গেছে। বসে থাকলে চলবে না। এদিকে আমাদের পিছিয়ে থাকলে চলবে না। আমাদেরকে সব সময়ের জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। রাজনীতির ব্যাপার যেকোনো সময় নির্বাচন হতে পারে।
স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, দেশে একদলীয় বাকশালের শাসন চলছে, কোনো স্বাধীনতা নাই, কেউ কথা বলতে পারবেন না, মুখও খুলতে পারবেন না। অবস্থা এখন এমন যে সরকার ভয় দেখায়, বেশি কথা বলবেন সব জেলে ঢুকাইয়া দিবো, আপনাদের নেত্রীকে জেলে ঢুকাইয়া দিছি। তবে এই অবস্থা চলতে দেয়া যাবে না। তিনি বলেন, আমরা চাই পরিপূর্ণ গণতন্ত্র, কথা বলার অধিকার। যদি না আসে ইনশাল্লাহ আমরা আদায় করে নেবো। মনে রাখবেন দেশনেত্রীর মুক্তি আন্দোলন একটি সরকার পতনের আন্দোলনে পরিণত হবে ইনশাল্লাহ।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সভাপতিত্বে ও প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি‘র পরিচালনায় আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার, ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান শাহজাহান ওমর, ইনাম আহমেদ চৌধুরী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আবদুস সালাম, ফজলুর রহমান প্রমুখ। অঙ্গসংগঠনের নেতাদের মধ্যে মহানগর উত্তরের আহসানউল্লাহ হাসান, দক্ষিণের হাবিবুর রশীদ হাবিব, মুক্তিযোদ্ধা দলের সাদেক আহমেদ খান, শ্রমিক দলের আনোয়ার হোসেইন, যুব দলের মোরতাজুল করীম বাদরু, স্বেচ্ছাসেবক দলের মোস্তাফিজুর রহমান, ছাত্র দলের আসাদুজ্জামান আসাদ প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
আলোচনা সভায় উপস্থিত ছিলেন দলের ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু, আহমেদ আজম খান, এজেডেএম জাহিদ হোসেন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য জয়নুল আবদিন ফারুক, হাবিবুর রহমান হাবিব, আতাউর রহমান ঢালী, সিরাজউদ্দিন আহমেদসহ কেন্দ্রীয় নেতারা।



 

Show all comments
  • Sheikh.lokman.hossain ১ এপ্রিল, ২০১৮, ৭:০২ এএম says : 0
    জনাব আপনারা আন্দোলন করেন।কিন্তু দেশের জনগনকে কষ্ট দিয়ে,আগুন দিয়ে পুড়িয়ে আন্দোলন করবেন না। ইতিপুর্বে যাহা করছেন তাহার কথা এবং জ্বালা যন্ত্রণা এখনও মানুষের অন্তরে আছে।বিএনপির সেই আন্দোলনের কথা বাংলার জনগন ভুলে নাই।সামনে নির্বাচন ভোটের মাধ্যমে তার জবাব জনগন আপনাদেরকে দিবেন।ইনশা-আল্লাহ।
    Total Reply(0) Reply
  • saad ১ এপ্রিল, ২০১৮, ৭:১১ এএম says : 0
    Mr Fokrul Islam please stop your worth less lecture follow jonab kadir siddique,s suggestion no men in your party including you and your party members are never listen you 2ndly anyone of you have no face value 3rdly jamate islami is main reason to collapse your party, only Beum kheleda Zia is the right person for BNP ..................................
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মির্জা ফখরুল

২১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
২০ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ