পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
জনদুর্ভোগের পেছনে অপরিকল্পিত উন্নয়ন ও পাহাড় কাটা ষ শহররক্ষা বাঁধ অনিশ্চিত
শফিউল আলম : পানিবদ্ধতা সমস্যা থেকে মুক্তির আশা নেই। সামনের বর্ষা মৌসুমে পরিস্থিতি আরও জটিল হতে পারে। পানিবদ্ধতার ভয়-শঙ্কা ফের শুরু হয়ে গেছে চট্টগ্রাম নগরবাসীর মাঝে। শুধুই ভরা বর্ষা মৌসুমে নয়, প্রাক-বর্ষা ও বর্ষাকাল পরবর্তী ভারী বর্ষণ আর জোয়ার একত্রিত হলেই বন্দরনগরী তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। প্রাক-বর্ষা শুরু হতে আর বেশিদিন বাকি নেই। বর্ষার আগেভাগে মহানগরীর খাল-ছরাগুলো পুনরুদ্ধার করে পরিকল্পিতভাবে খনন ও সংস্কার কাজ এ মুহূর্তে জরুরি। এ বিষয়টির গুরুত্ব স্বীকার করছেন নাগরিক ‘সেবা ও উন্নয়ন দাতা’ সরকারি সংস্থা, বিভাগগুলোর কর্তাব্যক্তিরা। অথচ কে করবে কার দায় আগে এ নিয়েই চলছে বিতর্ক ও রশি টানাটানি। সাগর পাহাড় নদী বন-জঙ্গল হ্রদ মিলে অপরূপ প্রাকৃতিক শোভাময় চট্টগ্রামের রয়েছে স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য ও নিসর্গ। কিন্তু প্রধানত চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) ব্যক্তিবিশেষের খেয়াল-খুশীমফিক এবং যথাযথ কারিগরি সমীক্ষার তোয়াক্কা ছাড়াই অপরিকল্পিত উন্নয়ন কর্মকাÐের খেসারত দিতে গিয়ে নগরবাসী ত্যক্ত-বিরক্ত। বাড়ছে জনদুর্ভোগ। হরেক দুর্ভোগের অন্যতম দিক হচ্ছে পানিবদ্ধতা। গতবছর বন্দরনগরীর প্রধান বাণিজ্যিক এলাকা আগ্রবাদের সড়কের ওপর দিয়ে নৌকায় লোকজনকে যাতায়াত করতে হয়েছে। বর্ষার আগে ও বর্ষায় ১২ দফায় ডুবেছে দেশের দ্বিতীয় বৃহৎ মহানগরী। বিশেষজ্ঞ ও নগর পরিকল্পনাবিদদের অভিমত, সিডিএ, সিটি কর্পোরেশন, ওয়াসা, পরিবেশ অধিদপ্তর, জেলা প্রশাসন ও অন্যান্য সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা বা বিভাগের কাজেকর্মে আদৌ কোনো সমন্বয় নেই। নির্বিচারে পাহাড়-টিলা কেটে ধ্বংস হচ্ছে সিডিএর নাকের ডগায়। পাহাড়-কাটা বালুমাটি সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ছে। নগরীর খাল-ছরা, নালা-নর্দমাগুলো ভরাটসহ স্বাভাবিক পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থাই অচল হয়ে পড়েছে। এসব কর্মকাÐের কারণেই চট্টগ্রাম মহানগরীর বিশাল এলাকাজুড়ে পানিবদ্ধতা সমস্যা ক্রনিক সমস্যায় রূপ নিয়েছে। যা এখন চাটগাঁবাসীর কাছে দুঃখের বারমাইস্যা। ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিভিন্ন খাতে শত শত কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে। বিনিয়োগে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন উদ্যোক্তারা। বছর বছর পানিবদ্ধতা সঙ্কট তীব্র থেকে তীব্রতর হয়ে উঠেছে। জনস্বাস্থ্য, শিক্ষা, যোগাযোগ ব্যবস্থাসহ জনজীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে পড়ছে এর বিরূপ প্রভাব। চাটগাঁ শহরের পানিবদ্ধতা সমস্যা অতীতে বার বার ভোটের রাজনীতির ইস্যু হয়েছে। কিন্তু এ সঙ্কট থেকে বেরিয়ে আসতে পারছেন না চাটগাঁবাসী।
চট্টগ্রামের শিরা-উপশিরার মতো ৩৬টি খাল দখলবাজরা কব্জা করে নিয়েছে। এসব খালের দৈর্ঘ্য ১৪৬ কিলোমিটার। তবে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন প্রকৌশল বিভাগের হিসাবে নগরীর ৪১টি ওয়ার্ডে ৫৭টি বড়-ছোট-মাঝারি ৫৭টি খাল-ছরা রয়েছে। যার বড় অংশই ভূমিদস্যু ও রাজনৈতিক মদদপুষ্ট প্রভাবশালীদের দখলে চলে গেছে। আরএস, পিএস, বিএস জরিপ-খতিয়ানমূলে কঠোর অভিযানের মাধ্যমে খালগুলো একযোগে পুনরুদ্ধার করা এবং সেই সঙ্গে পরিকল্পিত ও মজবুত শহররক্ষা বাঁধ নির্মাণের জন্য বিশেষজ্ঞ ও নাগরিক মহলের দাবি দীর্ঘদিনের। অথচ এ নিয়ে বিভিন্ন সংস্থা ও বিভাগের দ্ব›েদ্ব তা অনিশ্চিত। শহররক্ষা বাঁধের চিন্তা-ভাবনা ঠাঁই নিয়েছে হিমাগারে। এ অবস্থায় আগামী বর্ষায় এমনকি বর্ষার আগেই চট্টগ্রাম নগরী বৃষ্টি ও সামুদ্রিক জোয়ারের পানিতে তলিয়ে যাবে এমনটি ভয়-শঙ্কা বিরাজ করছে সর্বত্রই। কেননা সরেজমিন দেখা গেছে, পানি নিষ্কাশনের পুরো অবকাঠামো বলতে গেলে ভেঙে পড়েছে। খাল-ছরা, নালা-নর্দমাগুলো প্রায় অকেজো। খালের মুখে কর্ণফুলী নদীর মোহনায় পলিবালি জমে গেছে। অথচ রুটিন মাফিক ড্রেজিং নেই।
চট্টগ্রামকে পানিবদ্ধতামুক্ত করবে কোন সংস্থা? কবে, কীভাবে তা সম্ভব হবে? এই প্রশ্নের স্পষ্ট সুরাহা না হওয়ার কারণেই বেরিয়ে আসছে না সমাধানের পথরেখা। ‘চট্টগ্রাম শহরের পানিবদ্ধতা নিরসনকল্পে খাল পুনঃখনন, সম্প্রসারণ, সংস্কার ও উন্নয়ন’ শীর্ষক একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। সিডিএকে সমন্বয়ের দায়িত্ব দিয়ে প্রকল্পের মনিটরিং কমিটির প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হয় গত ১১ মার্চ। সভা থেকে চট্টগ্রাম নগরবাসীর জন্য সুনির্দিষ্ট কোনো আশার বাণী বেরিয়ে আসেনি। আগামী বর্ষা মৌসুমে নগরীর পানিবদ্ধতা সমস্যা ‘সহনীয় পর্যায়ে’ থাকার আশ্বাস মিলেছে। তবে নিরসন কবে নাগাদ তা অনিশ্চিতই রয়ে গেছে। ‘সহনীয়’ রাখার পদক্ষেপ সম্পর্কে উক্ত সভায় গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশারফ হোসেন জানান, মহানগরীর ৩৬টি খালের মধ্যে প্রাথমিকভাবে ১৬টি খাল-ছরা পুনঃখনন, সম্প্রসারণ ও সংস্কারের কাজ দ্রæত শুরু হবে। এরজন্য প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ জানিয়ে প্রাথমিকভাবে ৫শ’ কোটি টাকা বরাদ্দ পাওয়া গেছে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর তত্ত¡াবধানে সিডিএর গৃহীত প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হবে। নির্বাচনের বছরে সংশ্লিষ্ট কর্তাব্যক্তিদের সক্রিয় হওয়ার পরামর্শ দিয়ে পূর্তমন্ত্রী বলেন, আসন্ন বর্ষায় মানুষকে আর যাতে রাস্তায় নৌকা দিয়ে চলতে না হয়। অন্যদিকে এখন পর্যন্ত উক্ত প্রকল্প বাস্তবায়নে মাঠের আসল কাজ শুরুই হয়নি। তাছাড়া খালগুলো অবৈধ দখলমুক্ত হবে কবে তাও অনিশ্চিত। কর্মকর্তারা বলছেন, এই প্রক্রিয়াও জটিল এবং সময়সাপেক্ষ।
সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, নাগরিক সেবা ও উন্নয়নে দায়বদ্ধ সরকারি সংস্থা ও বিভাগগুলোর সমন্বয়হীন বেহাল অবস্থার কারণেই মূলত পানিবদ্ধতার সঙ্কট জগদ্দল পাথরের মতো চেপে আছে। চট্টগ্রাম মহানগরীর পানিবদ্ধতা সমস্যা নিরসনের লক্ষ্যে সিডিএ, সিটি কর্পোরেশন ও পানি উন্নয়ন বোর্ড পৃথকভাবে তিনটি প্রকল্প পরিকল্পনা সরকারের কাছে বিভিন্ন সময়ে দাখিল করে। এরমধ্যে ‘চট্টগ্রাম শহরের পানিবদ্ধতা নিয়ন্ত্রণকল্পে খাল পুনঃখনন, স¤প্রসারণ, সংস্কার ও উন্নয়ন’ শীর্ষক এ মেগাপ্রকল্পটি বিগত ৯ আগস্ট’১৭ইং একনেক কর্তৃক অনুমোদিত হয়। এতে সরকারি অর্থায়নে ৫ হাজার ৬১৬ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। এ মেগাপ্রকল্প বাস্তবায়নে গোড়াতে দায়িত্ব দেয়া হয় চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে (সিডিএ)। তবে কোনো ধরনের প্রাক-সম্ভাব্যতা যাচাই, কারিগরি সমীক্ষা ছাড়াই সংস্থাটিকে (সিডিএ) এককভাবে দায়িত্ব ছেড়ে দেয়ার বিষয়ে তাৎক্ষণিকভাবে চট্টগ্রামের সচেতন নাগরিকমহল, পরিকল্পনাবিদগণ সংশয় ব্যক্ত করেন। এরপর প্রকল্পটি বাস্তবায়নে সেনাবাহিনীকে সম্পৃক্ত করে সকল সেবাদানকারী সংস্থা ও বিভাগের সাথে সিডিএকে সমন্বয় করার নির্দেশ দেয়া হয়। ইতোপূর্বে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন পানিবদ্ধতা নিরসনের লক্ষ্যে আগামী একশ’ বছর বিবেচনায় রেখে ৪৭ কোটি টাকা ব্যয়ে ১০ মাস যাবত সমীক্ষা চালিয়ে অপর একটি মেগাপ্রকল্প পরিকল্পনা কমিশনে পেশ করে। ‘পাওয়ার চায়না’র অর্থায়ন ও কারিগরি সহায়তায় প্রকল্পটি বাস্তবায়নের প্রস্তাব দেয়া হয়। তবে ৫ হাজার কোটি টাকা ব্যয়সাপেক্ষ ‘বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও পানিবদ্ধতা ব্যবস্থাপনা’ শীর্ষক প্রকল্পটি আটকে যায়। তৃতীয় প্রকল্পটি পেশ করেছিল পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। এতে ব্যয় ধরা হয় ২ হাজার ৭শ’ কোটি টাকা।
এদিকে গত ২০ মার্চ সিটি কর্পোরেশনে অনুষ্ঠিত নগর উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির (সিডিসিসি) ১১তম সভায় চসিকের সিদ্ধান্ত সাফ জানিয়ে দেয়া হয়, পানিবদ্ধতা নিরসনে আসন্ন বর্ষা মৌসুমের আগে চসিক নগরীর কোনো খালের খনন ও মাটি উত্তোলন করবে না। পানিবদ্ধতা নিরসনে ৫ হাজার ৬১৬ কোটি টাকার মূল প্রকল্প যেহেতু সিডিএ করবে, তাই একই কাজ চসিকের করার কোনো সুযোগ নাই। সেক্ষেত্রে দ্বৈততার এবং আর্থিক অপচয়ের কারণে অডিট আপত্তি আসতে পারে। জানা গেছে, নগরীর ৪১টি ওয়ার্ডে ৫৭টি খাল খনন ও সংস্কারের জন্য ৬টি এলাকা বিভক্ত করে ৫ জন তত্ত¡াবধায়ক প্রকৌশলী ও ৬ জন নির্বাহী প্রকৌশলীকে খাল পুনঃখনন কাজ সমন্বয়ের দায়িত্ব দেয়া হয়। এতে এবছর ১০ লাখ ২৫ হাজার ৮৯৬ ঘনমিটার বালু ও মাটি উত্তোলনের পরিকল্পনা ছিল। সিডিএর মেগাপ্রকল্পের কারণে চসিক কাজ বন্ধ রেখেছে।
বন্দরনগরী চট্টগ্রামের পানিবদ্ধতা নিরসন প্রসঙ্গে নগর পরিকল্পনা বিশেষজ্ঞ স্থপতি আশিক ইমরান গতকাল দৈনিক ইনকিলাবকে জানান, সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে সিডিএর মাধ্যমে যে মেগাপ্রকল্পটি সরকার অনুমোদন দিয়েছে তা অবিলম্বে বাস্তবায়নে পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন। তাহলেই আমরা পানিবদ্ধতা সমস্যা নিরসনে একটা আশার আলো দেখতে পাচ্ছি। এরজন্য সিডিএ এবং সিটি কর্পোরেশনের মধ্যে যে ভুল বোঝাবুঝি চলছে জনস্বার্থে তার দ্রæত নিরসন হতে হবে। নাগরিক সেবা প্রদানকারী সকল সংস্থা ও বিভাগের সমন্বয় থাকাটা জরুরি। তিনি বলেন, বর্ষার বেশি দেরি নেই। তার আগেই পরিকল্পনা অনুযায়ী ১৬টি খাল পুনঃখনন, সংস্কার ও দখলমুক্ত করা দরকার। নগরীর সবক’টি ভরাট খাল, নালা-নর্দমা পরিস্কার ও সংস্কার করতে হবে। কেননা এখন পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা অকেজো হয়ে পড়েছে। এসব পদক্ষেপ দ্রæত শুরু করা না হলে আসন্ন বর্ষা এমনকি প্রাক-বর্ষায় গতবছরের মতো এমনকি তার চেয়েও মারাত্মক পানিবদ্ধতা সৃষ্টি হতে পারে। এ কারণে জনদুর্ভোগ ও সামগ্রিকভাবে অর্থনৈতিক ক্ষতিও বেড়ে যাবে। স্থপতি আশিক ইমরানের অভিমত, চট্টগ্রাম নগরীকে স্থায়ী ও টেকসই পানিবদ্ধতামুক্ত করার জন্য মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করে নতুন নতুন খাল খনন, নালা-নর্দমা আমূল সংস্কার, খালে ¯øুইচ গেইট তৈরি, মজবুত শহররক্ষা বাঁধ নির্মাণ, পরিকল্পিত নগরায়ন নিশ্চিত করাসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ নিতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।