পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
দেশের বিভিন্ন স্থানে গতকাল কালবৈশাখী ঝড় ও শিলা বৃষ্টি হয়েছে। এতে ঘরবাড়ি লন্ডভন্ডসহ ফল ও ফসলের ব্যাপক ক্ষতি সাধন হয়েছে। বজ্রপাতে নিহত হয়েছে ৩ জন। বিভিন্ন স্থানে রন্ধ রয়েছে বিদ্যুৎ সংযোগ । আমাদের সংবাদদাতাদের তথ্য নিয়ে ডেস্ক রিপোর্ট
রাজশাহী ব্যুরো জানায়, রাজশাহীর ওপর দিয়ে চলতি মৌসুমের প্রথম ঝড় বয়ে গেছে। গতকাল বিকেলে হঠাৎ ঝড় শুরু হয়ে চলে প্রায় ঘন্টাব্যাপি। ধূলিঝড়ে নাস্তানাবুদ হয় নগরবাসী। আরগ্রামাঞ্চলে ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বিশেষ করে ঝড়ের কারণে অনেক এলাকায় গাছ থেকে আমের গুটি ঝরে পড়েছে। সকাল থেকে তাপদাহ বয়ে গেলেও জুমার নামাজের পর আকাশে মেঘ জমতে থাকে। হঠাৎই শুরু হয় ধূলিঝড়। এতে অনেক এলাকার সাইনবোর্ড, কেবল সংযোগের তার বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এসময় কয়েক দফা বজ্রপাতের ঘটনাও ঘটে। ঝড়ের কারণে দুর্ঘটনার আশঙ্কায় মহানগরীতে বিদ্যুৎ সরবরাহ সাময়িক বন্ধ করে দেয় কর্তৃপক্ষ। বিকালে ধীরে ধীরে আবারও বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক হয়। রাজশাহী আবহাওয়া অফিস জানায়, ঝড়ের গতিবেগ ছিলা মাত্র ৮ নটিকেল মাইল। অর্থাৎ এটি কালবৈশাখী নয়। ঝড়ের শেষে মহানগরীসহ আশপাশের এলাকায় সামান্য বৃষ্টি হয়েছে। তবে তা রেকর্ড করা মতো নয়। এটি মৌসুমি ঝড়বৃষ্টি। চৈত্র-বৈশাখ মাসে এটা স্বাভাবিক। এজন্য এই মৌসুমকে ঝড়বৃষ্টির মৌসুমও বলা হয়। তবে রাজশাহীর ওপর দিয়ে মৃদু তাপ প্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। তাপমাত্রা ৩৪ থেকে ৩৭ ডিগ্রির মধ্যে ওঠানামা করছে। গতকাল শুক্রবার রাজশাহীতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৩৫ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ২৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সকাল ৬টায় বাতাসের আর্দ্রতা ছিলো ৯৪ শতাংশ এবং বিকেলে ৭২ শতাংশ।
দিনাজপুর অফিস জানায়, দিনাজপুর নবাবগঞ্জে শীলাবৃষ্টিতে আমও লিচুর ব্যপক ক্ষতি সাধন হয়েছে। শুক্রবার ৩০ মার্চ বেলা দেড়টার দিকে উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে ধেয়ে আসা ১০ মিনিট ধরে শীলাবৃষ্টি বর্ষণে নবাবগঞ্জে গুটি-গুটি আম ও লিচুর ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়েছে।
বৈশাখের আগেই গতকাল বৈশাখীর আঘাতসহ ভারী শীলাবৃষ্টি হয়েছে। এতে বিভিন্ন জায়গায় শীলার স্তুপ দেখা গেছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকে ৪০ বছরের ইতিহাসে এটি শ্রেষ্ঠ শীলা বৃষ্টি বলে উল্লেখ করেছেন।
রংপুর জেলা সংবাদদাতা জানান, বৈশাখের আগেই কালবৈশাখী ঝড়ের ছোবলে লন্ডভন্ড হয়েছে রংপুরের বিভিন্ন এলাকা। সে সাথে ব্যাপক শিলাবৃষ্টিতে বিভিন্ন রবিশস্যসহ আমের গুটির ক্ষতি হয়েছে ব্যাপক। বজ্রপাতে প্রাণ হারিয়েছেন দু’জন কৃষক। আহত হয়েছেন শতাধিক মানুষ। আম ও লিচুর মুকুল ও গুটিসহ বিভিন্ন ধরনের ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছে কৃষক এবং কৃষি বিভাগ। গতকাল সকাল থেকে আকাশ মেঘলা থাকলেও সকাল সাড়ে ১১টার দিকে হঠাৎ শিলাবৃষ্টি সেই সঙ্গে প্রচন্ড বেগে ঝড় শুরু হয়। এ সময় বজ্রপাতে রংপুরের বদরগঞ্জের শামিম মিয়া (৩৫) ও তারাগঞ্জ উপজেলার নয়া মিয়া (৪০) দুজন কৃষক নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। বিভিন্ন স্থানে আহত হয়েছে বেশ কয়জন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এই ঝড়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে বদরগঞ্জ, পীরগঞ্জ ও মিঠাপুকুর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায়। হঠাৎ ঝড় আর শিলা বৃষ্টিতে বদরগঞ্জ ও মিঠাপুকুর উপজেলার হাঁড়িভাঙ্গা আমের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ঝড়ের ছোবলে গাছ ভেঙ্গে আমের বাগান ফাঁকা হয়ে গেছে। মুকুল শেষে গুঁটি হওয়া আম ও লিচু পড়ে গেছে। জেলার পীরগঞ্জ উপজেলার কাবিলপুর ইউনিয়নেও ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বাড়ি ঘর উড়ে গেছে, নষ্ট হয়েছে গাছপালা। জমির ফসলও নষ্ট হয়েছে। এই ইউনিয়নে কমপক্ষে ৩০ জনের বেশি আহত হয়েছে বলে জানা গেছে।একই উপজেলার টুকুরিয়ার চেয়ারম্যান আতোয়ার রহমান বলেন, বৃষ্টির চেয়ে ক্ষতি করেছে ঝড় আর শিলাবৃষ্টি। এতে ক্ষেত নষ্ট হয়ে গেছে। আম ও লিচুর ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। শিলার আঘাতে ঘরের টিন ফুটো হয়ে গেছে। কোন কোন স্থানে একেকটি শিলের ওজন প্রায় ২৫০ গ্রামেরও বেশি হয়েছে।
পীরগঞ্জের চতরা ইউপি চেয়ারম্যান এনামুল হক শামীম জানান, ঝড়ের চেয়ে শিলাবৃষ্টিতে তাদের এলাকায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে। কমপক্ষে ২০ জন আহত হয়েছে। এদের মধ্যে আটজনকে পীরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।
রংপুর আবহাওয়া অফিসের সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ আলী জানান, রংপুর নগরীসহ জেলার গঙ্গাচড়া, পীরগঞ্জ, মিঠাপুকুর, তারাগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় এই ঝড় আঘাত হানে। ঝড়ের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ৬০ থেকে ৬৫ কিলোমিটার।
গাইবান্ধা জেলা সংবাদদাতা জানান, শিলা বৃষ্টিতে আমের মুকুল ও উঠতি ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। শুক্রবার দুপুরে গাইবান্ধা সদর, সাঘাটা, সাদুল্যাপুর, পলাশবাড়ী, ফুলছড়ি ও গোবিন্দগঞ্জসহ পাশ্ববর্তী এলাকায় প্রায় ঘন্টা ব্যাপী প্রচন্ড শিলা বৃষ্টি হয়। এসময় শিলা পাথরের আঘাতে গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার ধর্মপুরগ্রামের আজাহার আলী, তালুককানুপুর ইউনিয়নের বাহাদুরপুরগ্রামের গাজী মিয়া, দামোদরপুর চেয়ার গ্রামের সুফিয়া বেগম, পলাশবাড়ী উপজেলার রাকিব মিয়াসহ প্রায় ২০ জন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। আহতরা স্থানীয় পল্লী চিকিৎসক ও ঔষধ ফার্মেসী থেকে প্রাথমিক চিকিৎসা গ্রহণ করে। এদের মধ্যে আজাহার আলীকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করানো হয়েছে। প্রায় ৩০০ থেকে ৫০০ গ্রাম ওজনের শিলার কোপে সাঘাটায় প্রায় অর্ধশত পুরাতন কাঁচা, আধা-পাকা ঘরবাড়ির টিনের চালা ফুঁটো হয়েছে। দুমড়ে মুচড়ে গেছে নতুন টিনের চালাও। এত বড় পরিমানের শিলাবৃষ্টি গত একযুগেও এর আগে পড়তে দেখা যায়নি বলে জানিয়েছেন এলাকার প্রবীন ব্যক্তিরা।
এ দিকে জেলা কৃষি সমপ্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক একেএম রুহুল আমিন জানান, প্রায় আধা ঘন্টা ব্যাপী প্রচন্ড শীলা বৃষ্টিতে আমের মুকুল ও উঠতি ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। আকাশে প্রচন্ড কালো মেঘ ও হটাৎ করে শুরু হওয়া ঝড়ো বাতাস ও শীলা বৃষ্টিতে কৃষকের ক্ষেতের পাকা টমেটো, মিষ্টি কুমড়াসহ বিভিন্ন ফসলের ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতির পরিমান নিরুপন করতে সংশ্লিষ্ট উপজেলা কৃষি বিভাগকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
সুনামগঞ্জ জেলা সংবাদদাতা জানান, সুনামগঞ্জে কাল বৈশাখীর ঝড় ও শীলা বৃষ্টিতে বড়ি ঘর, দোকানপাট ও গাছপালার ব্যাপক ক্ষতি করেছে। গতকাল বিকেল সাড়ে ৩ টার দিকে সুনামগঞ্জ জেলার বিভিন্ন উপজেলার উপর দিয়ে কাল বৈশাখীর ঝড় বয়ে যায় । সে সাথে প্রচন্ড শীলাবৃষ্টিও হয়। ঝড় ও শীলা বৃষ্টিতে মানুষের বাড়িঘরসহ গাছপালার ব্যাপক ক্ষতির খবর পাওয়া গেছে। জেলার জামালগঞ্জ, বিশ্বম্বরপুর, দোয়ারাবাজার, সদর, জগন্নাথপুর, দিরাই উপজেলায় ঝড় ও শীলাবৃষ্টিতে বেশী আঘাত হানে।বিশ্বম্বরপুর উপজেলার ফতেপুর ইউনিয়নের মেম্বার আব্দুল হেকিম জানান বিকেল সাড়ে ৩ টার দিকে প্রচন্ড বেগে ঝড় ও শীলাবৃষ্টি শুরু হয় । প্রায় ২০ মিনিট স্থায়ীত্বের এই ঝড় ও শীলা বৃষ্টিতে উপজেলা সদরসহ বিভিন্ন গ্রামের ব্যাপক ক্ষতি সাধন করেছে।উপজেলার অধিকাংশ গ্রামের বাড়িঘর, গাছপালার ক্ষতি হয়েছে। মেম্বার অব্দুল হেকিম আরো জানান উপজেলার দক্ষিন বাদাঘাট ইউনিয়ন ও পলাশ ইউনিয়ন হয়ে পুর্বদিকে বয়ে যাওয়া ঝড় ও শীলাবৃষ্টিতে অনেকের কাচাঘর বাড়ি সহ টিনের ঘর ভেঙ্গে ফেলেছে। অনেকের ঘর বাড়ির ছালের টিন ঝড়ে উড়িয়ে নিয়ে গেছে।বাদাঘাট দাক্ষিন ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান এডভোকেট ছবাব মিয়া জানান ঝড় ও শীলাবৃষ্টিতে মানুষের ঘরবাড়ির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। শীলাবৃষ্টিতে অনেকের বাড়িঘরের টিন ছিন্নভিন্ন করে ফেলেছে।সদর উপজেলার মোহনপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো: নুরুল হক জানান মোহনপুর ইউনিয়নের অধিকাংশ গ্রামের বাড়িঘর ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।জযনগর বাজারে মোহনপুর ইউনিয়নের অস্থায়ী অফিসটির টিনের ছাল উড়িয়ে নিয়েছে।পার্শ্ববর্তী রড সিমেন্টের দোকান ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। জগন্নাথপুর উপজেলায় ঝড়ে ঘর বাড়ির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। জগন্নাথপুর উপজেলা সদরের কেষ্ট দাস জানান তার পাক ঘরের টিন ঝড়ে উড়িয়ে নিয়েছে।ধর্মপাশা উপজেলার বেশ কয়েকটি গ্রামে ঘর বাড়ি ক্ষতি হওয়ার খবর পাওয়াগেছে। জেলা ত্রান ও পুনর্বাসন কমর্কর্তা জানান ঝড় ও শীলাবৃষ্টিতে ক্ষয়ক্ষতির সঠিক পরিমান এখনও জানা যায়নি।
নীলফামারী সংবাদদাতা জানান, নীলফামারীর ডোমার, ডিমলা ও জলঢাকা উপজেলায় শিলাবৃষ্টিতে ঘরবাড়ি ও ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। গতকাল সকাল সাড়ে ১০ টার দিকে ডোমার উপজেলার জোড়াবাড়ি, গোমনাতি, বামুনিয়া, ভোগডাবুড়ি, কেতকিবাড়ি ও জলঢাকা উপজেলার মীরগঞ্জ, শিমুলবাড়ী ও গোলনা ইউনিয়নে এবং ডিমলা উপজেলার খালিশাচাপানী ও নাউতারা ইউনিয়নের কয়েকটি এলাকায় ব্যাপক শিলাবৃষ্টি হয়। এতে এসব এলাকার সহস্রাধিক বাড়িঘরের টিনের চাল ফুটো হয়ে যায় বলে জানান ক্ষতিগ্রস্তরা। ১০ মিনিটের স্থায়ী এ শিলাবৃষ্টিতে এসব এলাকার মাঠে থাকা মরিচ, টমেটো, তামাক ও ভুট্টা ক্ষেতের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এছাড়া ঝড়ে পড়েছে আম ও লিচুর মুকুল। এদিকে মাঠ থেকে বাড়ি ফেরার পথে শিলার আঘাতে ডিমলার মিনা বেগম, রমজান আলী ও চিত্ররঞ্জন নামে ৩ জন আহত হয়েছে। আহতদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। শিলাবৃষ্টি ও মাঝারি ঝড়ের কারণে বেলা ১১টা থেকে নীলফামারী জেলায় বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় এবং বিকেল পনে পাঁচটার দিকে বিদ্যুৎ সংযোগ পুনরায় চালু হয়। নর্থ ওয়েস্ট পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি(নেসকো) লিমিটেডের নির্বাহী প্রকৌশলী আবু সাইদ জানান, শিলাবৃষ্টি ও ঝড়ের কারণে সৈয়দপুর- নীলফামারী সড়কে গাছের ডাল ভেঙ্গে বিদ্যুৎ লাইনের উপর পড়ায় বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
কুড়িগ্রাম জেলা সংব্দাদাতা জানান, কুড়িগ্রামে বৈশাখের আগেই কাল বৈশাখীর আঘাতসহ ভারী শীলাবৃষ্টি হয়েছে। এতে বিভিন্ন জায়গায় শীলার স্তুপ দেখা গেছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকে ৪০ বছরের ইতিহাসে এটি শ্রেষ্ঠ শীলা বৃষ্টি বলে উল্লেখ করেছেন। গতকাল সকাল ১০টার দিকে প্রায় ১০ মিনিটব্যাপী এ শীলাবৃষ্টি হয়। স্থানীয়রা জানান, সকালে হঠাৎ বাতাসের সঙ্গে বৃষ্টি শুরু হয়। সেই সঙ্গে পড়তে থাকে বড় বড় শীলা। এতে জেলার অনেক স্থানে শীলার স্তুপ লক্ষ্য করা গেছে। ছোট-বড় গাছপালাগুলো ভেঙে মাটিতে হেলে পড়েছে। নষ্ট হয়েছে সবজি ক্ষেত। বোরো ধানের চারা গাছ মাটির সঙ্গে মিশে গেছে। শীলাবৃষ্টিতে সব থেকে বেশি ক্ষতি হয়েছে নাগেশ্বরী, ভূরুঙ্গামারী ও ফুলবাড়ী উপজেলা। এছাড়া কুড়িগ্রাম সদর, রৌমারী ও রাজিবপুর উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের ওপরেও শীলাবৃষ্টি আঘাত হানে। নেওয়াশী এলাকার বাসিন্দা আজিজুল হক অজ্জু জানান, এ এলাকায় শীলা বৃষ্টির সামান্য স্তুপ দেখা গেলেও প্বার্শবর্তী এলাকা খরিবাড়িতে এর ভয়াবহতা লক্ষ্য করা গেছে। সেখানে ব্যপক শীলা বৃষ্টি হয়েছে। তিনি আরো জানান অনেকের টিনের ঘড়ের চাল শীলা বৃষ্টিতে ফুটো হয়ে গেছে। এ রিপোর্ট লিখা পর্যন্ত জেলার বিভিন্ন স্থানে থেমে থেমে দমকা হাওয়াসহ বৃষ্টি হচ্ছিল।
লালমনিরহাট জেলা সংবাদদাতা জানান, লালমনিরহাটে গতকাল সকাল সাড়ে ৯টা থেকে প্রায় ১২ মিনিট ধরে ভারী শিলাবৃষ্টি হয়েছে। এতে ফুটো হয়ে গেছে জেলার হাতীবান্ধা ও পাটগ্রাম উপজেলার অসংখ্য ঘরবাড়ির টিনের চালা।
স্থানীয়রা জানান, সকালে হঠাৎ বাতাসের সঙ্গে বৃষ্টি শুরু হয়। সেই সঙ্গে পড়তে থাকে বড় বড় শিলা। শিলার আঘাতে অনেকের ঘরবাড়ির টিনের চালা ফুটো হয়ে বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। ভুট্টাগাছগুলো ভেঙ্গে মাটিতে হেলে পড়েছে। নষ্ট হয়েছে সবজি ক্ষেত। বোরো ধানের চারা গাছ মাটির সঙ্গে মিশে গেছে।
শিলাবৃষ্টিতে সব থেকে বেশি ক্ষতি হয়েছে পাটগ্রাম ও হাতীবান্ধা উপজেলায়। এছাড়া কালীগঞ্জ উপজেলার চন্দ্রপুর, চলবলা, আদিতমারী উপজেলার দুর্গাপুর ও সদর উপজেলার মোগলহাট ইউনিয়নের ওপরেও শিলাবৃষ্টি আঘাত হানে। হাতীবান্ধা উপজেলার স্থানীয় সংবাদকর্মী আসাদুজ্জামান সাজু ও রবিউল ইসলাম রবি বাংলানিউজকে জানান, তাদের জীবনে দেখা এটিই ভয়াবহ শিলাবৃষ্টি। এর আগে কখনই এতো বড় শিলা পড়তে দেখেননি তারা। শিলার আঘাতে অসংখ্য দোকান ও ঘরবাড়ির টিনের চালা ফুটো হয়ে গেছে। হাতীবান্ধা উপজেলার বড়খাতা এলাকার কৃষক আফাজ উদ্দিন বলেন, ৭০ বছরের জীবনে এতো বড় শিলা দেখিনি। লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক শফিউল আরিফ জানান, এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এবং জন প্রতিনিধিদের মাধ্যমে খোঁজ খবর নেওয়া হচ্ছে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকেও অবগত করা হচ্ছে।
পাবনা জেলা সংবাদদাতা জানান, পাবনা এবং এর আশপাশের উপজেলার উপর দিয়ে কাল বৈশাখীর আগমনী বার্তা নিয়ে চৈত্রের দ্বিতীয় সপ্তাহে প্রচন্ড বেগে ঝড় বয়ে যায় সেইসাথে প্রবল শীলা-বৃষ্টি ও থেমে বজ্রপাত হয়। বিকাল সাড়ে ৪ টার দিকে পাবনা শহরে এর পর উপজেলা সমূহে ঝড়-বৃষ্টি শুরু হয়। তবে কোন জীবনহানীর খবর পাওয়া যায়নি। প্রায় শতাধিক কাঁচা-ঘর বাড়ির সামান্য ক্ষতি হয়েছে। শীল পড়ে আমের মুকুল ও কুড়ির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
ঈশ্বরগঞ্জ (ময়মনসিংহ) উপজেলা সংবাদদাতা জানায়, ময়মনসিংহের ঈশ^রগঞ্জে ঝড়ে ব্যপক ক্ষয় ক্ষতি হয়েছে। মসজিদ, মাদ্রাসা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ কয়েকশ বাড়ি ঘর তছনছ হয়ে গেছে। সড়কের গাছপালারও ব্যপক ক্ষতি হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার রাত ও গতকাল শুক্রবার বিকেলে ঘটে ওই ঘটনাটি। জানা যায়, উপজেলার সোহাগী, সরিষা ও আঠারবাড়ি ইউনিয়নে বৃহস্পতিবার রাত ও গতকাল বিকেলে ঝড় আঘাত হানে। ওই ঝড়ে ঈশ^রগঞ্জের সোহাগী ইউনিয়নের বগাপুতা, বৃ-কাঁঠালিয়া, চরপাড়া ও ভালুকবেড়, সরিষা ইউনিয়নের নিজ সরিষা, সরিষা, গুইলাকান্দা, মারুয়াখালী খানপুরসহ অন্তত ১০ টি গ্রাম এবং আঠারবাড়ি ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামে অন্তত ৫ শতাধীক শতাধীক ঘরবাড়ি তছনছ হয়ে গেছে। এতে আহত হয়েছেন কয়েকজন নারী ও শিশু। তিন জনকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও আঠারবাড়ি-ঈশ^রগঞ্জ সড়কে অর্ধশতাধীক গাছ উপড়ে পড়ায় সড়কটিতে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। বেশ কয়েকটি স্থানে বিদ্যুতের খুঁটি উপড়ে পড়ায় এলাকায় বৃহস্পতিবার রাত থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে । সরিষা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. শাহজাহান ভুঁইয়া বলেন, বেশ কয়েকটি গ্রামের ঝড়ের তান্ডবে মসজিদ মাদ্রাসা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তছনছ হয়ে গেছে। ঈশ^রগঞ্জ উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্থদের তালিকা করা হচ্ছে। দ্রুত ক্ষতিগ্রস্থদের মাঝে সরকারি সহায়তা ও টিন বিতরণ করা হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।