Inqilab Logo

সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

দক্ষিণাঞ্চলে সরকারি স্বাস্থ্যসেবা চরম বিপর্যয়ের কবলে

মঞ্জুরিকৃত চিকিৎসকের ৬৫ ভাগই শূন্য

নাছিম উল আলম | প্রকাশের সময় : ৩১ মার্চ, ২০১৮, ১২:০০ এএম

চাহিদানুযায়ী চিকিৎসকের পদ সৃষ্টি না করার পাশাপাশি ২৫ বছর আগে মঞ্জুরীকৃত পদগুলোতেও জনবল সঙ্কটে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের ৬টি জেলা সদরসহ ৪২টি উপজেলায় চিকিৎসা সেবা চরম বিপর্যয়ের কবলে। বরিশাল বিভাগের ৬টি জেলার মঞ্জুরীকৃত ১ হাজার ১৩৫ চিকিৎসক পদের অনুকূলে বর্তমানে কর্মরত মাত্র ৪১৬ জনের মত। ৭১৯টি পদে কোন চিকিৎসক নেই। এমনকি অনেক ঢাকঢোল পিটিয়ে জেলা হাসপাতালগুলোতে শয্যা সংখ্যা ৫০ থেকে ১শ’ এবং ১শ’ থেকে আড়াইশ শয্যায় উন্নীত করা হলেও তা রাজস্ব খাতে স্থানান্তর হয়নি। ফলে এসব হাসপাতালে বর্ধিত জনবল মঞ্জুরী দূরের কথা, পুরনো মঞ্জুরীকৃত পদগুলোরও প্রায় অর্ধেক শূন্য পড়ে আছে বছরের পর বছর। এমনকি প্রতিটি বিসিএস-এর পরে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে হিস্যার তুলনায় অনেক কম চিকিৎসক বরিশাল বিভাগে নিয়োগ দেয়ার কিছু দিনের মধ্যেই তার সিংহভাগই তদবিরের জোরে প্রেষণে অন্যত্র চলে যাচ্ছে। ফলে এ অঞ্চলে চিকিৎসক সঙ্কটের কোন সুরাহা হচ্ছেনা। সাগরদ্বীপ উপজেলা মনপুরার কয়েক লাখ মানুষের জন্য এখন মাত্র দুজন চিকিৎসক নিয়োগ থাকলেও পর্যায়ক্রমে একজনই কর্মরত থাকছেন। এমনকি অনেক প্রত্যন্ত এলাকার সরকারি হাসপাতালগুলো এখনো রাজস্ব খাতে স্থানান্তর না হওয়ায় সেগুলো চলছে না চলার মত করেই।
ঝালকাঠীর কীর্তিপাশা ১০ শয্যার হাসপাতালে রোগী ভর্তি বন্ধ হয়ে গেছে জনবল সঙ্কটসহ তহবিলের অভাবে। বরিশালের চাখারের ১০শয্যার হাসপাতালটিরও বেহাল দশা। সউদি সাহায্যে নির্মিত ভোলার চর আইচা ১০ শয্যার হাসপাতালটিও রাজস্ব খাতে অন্তর্ভূক্ত হয়নি গত প্রায় তিন দশকেও। বরগুনার তালতলী উপজেলায় মাত্র ২০শয্যার একটি পুরনো হাসপাতাল থাকলেও হেলথ কমপ্লেক্স বা হাসপাতাল কিছুই হয়নি অদ্যাবধি। পটুয়াখালীর পর্যটন কেন্দ্র কুয়াকাটার কাছে ২০ শয্যার একটি হাসপাতাল নির্মিত হলেও সেখানেও জনবল সঙ্কট মারাত্মক। অনেক কষ্টে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর অতি জনগুরুত্বপূর্ণ এ হাসপাতালটিকে রাজস্বখাতে অন্তর্ভূক্ত করে দুজন চিকিৎসক নিয়োগ দিতে সক্ষম হয়েছেন। মঞ্জুরীকৃত পদের সংখ্যা ছয়।
সর্বশেষ এক হিসেবে দেখা গেছে বরিশাল বিভাগের ৬টি জেলায় চিকিৎসকের মঞ্জুরীকৃত পদের প্রায় ৬৫ ভাগই শূন্য। বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল বাদে জেলাটিতে ২৫৮টি চিকিৎসকের মঞ্জুরীকৃত পদের বিপরীতে কর্মরত আছেন মাত্র ১১৩ জন। ১৪৫টি চিকিৎসকের পদ শূন্য এ জেলায়। বরিশাল জেনারেল হাসপাতালের ৩৩টি পদের বিপরীতে কর্মরত আছেন ২১ জন চিকিৎসক।
পটুয়াখালী জেলায় ২২৯ চিকিৎসকের স্থলে আছেন মাত্র ৮৭ জন। জেলা সদরে ১শ’ শয্যার হাসপাতালটি আড়াইশ শয্যায় উন্নীত করা হলেও রাজস্ব খাতে আর্থিক ও জনবল মঞ্জুরী এখনো ১শ’ শয্যার জন্যই। ফলে গোটা হাসপতালটিতে ওষুধ ও পথ্যসহ চিকিৎসক সঙ্কট প্রকট। এমনকি আড়াইশ শয্যার এ হাসপাতালে ১শ’ শয্যার জন্য যে ৫৮ চিকিৎসকের পদ রয়েছে সেখানেও কর্মরত মাত্র ২৮ জন।
একই পরিস্থিতি ভোলা, পিরোজপুর, বরগুনা ও ঝালকাঠী জেলারও। ভোলা জেলায় চিকিৎসকের মঞ্জুরীকৃত পদের সংখ্যা ২০৯ হলেও কর্মরত আছেন মাত্র ৭৬ জন। এমনকি জেলা সদরের হাসপাতালটি ১শ’ শয্যায় উন্নীত করা হলেও রাজস্ব খাতে বরাদ্দ সাবেক ৫০ শয্যার জন্যই রয়েছে। এ হাসপাতালে ৫০ শয্যার জন্য মঞ্জুরীকৃত ২২ চিকিৎসকের স্থলে আছেন মাত্র ১৪ জন। বরগুনা জেলায় মোট মঞ্জুরীকৃত চিকিৎসকের পদের সংখ্যা ১৬৬ কিন্তু মাত্র ৪৯ জন চিকিৎসক দিয়ে গোটা জেলায় সরকারি চিকিৎসা সেবার নামে অনেকটা প্রহসন চলছে বলে দাবি আমজনতার। এমনকি বরগুনা জেলা সদরের হাসপাতালটিকেও ১শ’ শয্যায় উন্নীত করা হলেও তার জন্য চিকিৎসকসহ জনবল মঞ্জুরী এখনো সাবেক ৫০ শয্যার। আর মঞ্জুরীকৃত ৪২ চিকিৎসকের স্থলে কর্মরত মাত্র ১১ জন।
ঝালকাঠী জেলা সদরসহ ৪টি উপজেলায় চিকিৎসকের মঞ্জুরীকৃত পদের সংখ্যা ১০৪ হলেও বর্তমানে কর্মরত মাত্র ৩৪ জন। আর যথারীতি জেলা সদরের ৫০ শয্যার হাসপাতালটি ১শ’ শয্যায় উন্নীত করা হলেও তা রাজস্ব খাতে স্থানান্তর হয়নি। ৫০ শয্যার জনবল দিয়েই চলছে না চলার মত করে। এমনকি ৫০ শয্যা হাসপাতারের জন্য মঞ্জুরীকৃত ২৩ চিকিৎসকের স্থলে আছেন মাত্র ১২ জন।
দক্ষিণাঞ্চলের অনেক উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সকে ৫০ শয্যার হাসপাতালে উন্নীত করা হলেও বছরের পর বছর তা রাজস্ব খাতে স্থানান্তর হচ্ছে না। ফলে ৩১ শয্যার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মঞ্জুরীকৃত জনবলই এখনো বিদ্যমান। তবে সেসব মঞ্জুরীকৃত পদের চিকিৎসকের অন্তত ৬০-৭০ ভাগ পদ শূন্য পড়ে আছে। এমনকি এ অঞ্চলের প্রতিটি জেলা উপজেলা হাসপাতাল ও স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে ল্যাবরেটরি টেকনিশিয়ান, মেডিকেল টেকনোলজিস্ট, এন্টো টিকনিশিয়ান, কোল্ড চেইন টেকনিশিয়ান, সহকারী নার্স ও নার্সিং এটেনডেন্ট, কার্ডিওগ্রাফার এবং কম্পাউন্ডারসহ বিভিন্ন চিকিৎসা সহায়ক পদেও জনবল ঘাটতি ব্যাপক।
এসব বিষয়ে বরিশালের বিভাগীয় পরিচালক-স্বাস্থ্য এর সাথে আলাপ করা হল তিনি জানান, জনবল ঘাটতি সারা দেশেই। এসব বিষয়ে নিয়মিতভাবে স্থাস্থ্য অধিদপ্তর সহ মন্ত্রণালয়কে অবহিত করা হচ্ছে বলে জানিয়ে অদূর ভবিষ্যতে কিছু শূন্যপদ পূরনের চেষ্টা চলছে বলেও জানান তিনি। পাশাপাশি যেসব জেলা হাসপাতালগুলোতে শয্যা সংখ্যা বৃদ্ধি করা হয়েছে, কিন্তু তা রাজস্ব খাতে অন্তর্ভূক্ত হয়নি সেসব বিষয়ে অধিদপ্তর ও মন্ত্রণালয় কাজ করছে বলেও তিনি জানান। তবে দক্ষিণাঞ্চলে চিকিৎসকের শূন্যপদগুলো কবে নাগাদ পূরণ হতে পারে, সে ব্যপারে তিনি কিছু বলতে পারেন নি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: চিকিৎসক

১৩ আগস্ট, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ