পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
রাশেদা আক্তার একজন ব্যাংক কর্মকর্তা। বাসা রাজধানীর মানিকনগর। অফিস পুরানো পল্টন। প্রতিদিন পাবলিক বাসেই যাতায়াত করেন। তিনি বলেন, ‘নিয়মিত যাতায়াতের ভোগান্তি মাথায় নিয়ে চাকরি করছি। পাবলিক বাসে যাত্রীর ভিড়ে উঠানামা খুবই মুশকিল। উঠতে গেলে অনেক সময় নারী যাত্রী নিতে চায় না হেলপাররা। উঠার সময় হেলপার গায়ে হাত দেয়ার চেষ্টা করে। আবার অনেক ক্ষেত্রে গণপরিবহণে উঠলেও সিট না পেয়ে দাঁড়িয়ে যেতে হয়। পাবলিক বাসে পুরুষ যাত্রীদের সাথে ঠেলাঠেলি করে উঠা ও ঠাসাঠাসি করে যাওয়াটা বিব্রতকর ও অপমানজনকও বটে।’
একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন নাজনীন পায়েল। অফিস মতিঝিল আর বাসা কল্যাণপুরে। প্রতিদিন সকালে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে পাবলিক বাসে উঠতে হয় তাকে। পায়েল বলেন, দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকেও ভিড়ের জন্য বাসে উঠতে পারি না। ধাক্কাধাক্কি করে ভিড় ঠেলে বাসের কাছে যেতেই বলা হয় সিট খালি নেই, হেলপার বাসে উঠতে বাধা দেয়। আবার বাসে উঠে দেখা যায় নারীদের জন্য নির্ধারিত আসনে পুরুষ যাত্রী বসে আছে। এভাবে নিয়মিত বিড়ম্বনা ও ভোগান্তি ঠেলে দেরিতে অফিসে গিয়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের তিরস্কার শুনতে হয়।
এই সমস্যা কর্মজীবী নারীদের নিত্যদিনের ঘটনা। বর্তমানে শিক্ষাসহ কর্মক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ বৃদ্ধি পাওয়ায় গণপরিবহনে নারীযাত্রীর সংখ্যাও বৃদ্ধি পেয়েছে। সে অনুযায়ী কর্মজীবী নারীদের জন্য মহিলা বাসের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়নি। কর্মজীবী নারীদের কথা বিবেচনায় নিয়ে দ্রæত মহিলা বাসের সংখ্যা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। সরকারি চাকরিজীবীদের অনেকেই অফিসের গাড়িতে যাওয়া-আসার সুযোগ পেলেও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরতদের অফিসের গাড়িতে যাওয়া-আসার সুযোগ খুব কম। ফলে অফিসে যাওয়ার সময় বাসে উঠতে না পারায় নারীদের পক্ষে ঠিক সময়ে অফিসে পৌঁছানো যেমন কঠিন হয়ে পড়ে, তেমনি অফিস ছুটির পর ক্লান্ত শরীরে দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থাকতে হয় গণপরিবহনে ওঠার অপেক্ষায়।
দেশে নারী শিক্ষার হার বৃদ্ধির ফলে তারা অধিক হারে কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ করছে। রাজধানীতে তাদের উপস্থিতিও চোখে পড়ার মতো। কিন্তু অফিস-আদালতে যাতায়াতের ক্ষেত্রে তারা বিড়ম্বনা ও ভোগান্তিতে পড়েন সবচেয়ে বেশি। চাকরি ছাড়াও নানা প্রয়োজনে নারীর ঘরের বাইরে যেতে হয়। বাইরে বেরিয়ে তারা বাস্তবতা ও প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হচ্ছেন। সাচ্ছন্দ্যে চলাচল করতে তাদের অনেক ক্ষেত্রে বাধার সম্মুখীন হতে হয়। পরিবহন সঙ্কটও এরমধ্যে অন্যতম। এই সঙ্কটেরও আছে নানা মাত্রা। প্রথমত, মহিলা বাসের সংখ্যা কর্মজীবী নারীর তুলনায় কম। আবার তা সব সময় পাওয়াও যায় না। দ্বিতীয়ত, নারীদের সাধারণ বাসে সংরক্ষিত আসনের সংখ্যাও চাহিদার তুলনায় কম। অনেক সময় মহিলা সিটে পুরুষ যাত্রী বসে থাকে। তাছাড়া অফিস টাইমে অনেক সাধারণ বাসেও নারীদের ঠাঁই হয় না। নারীদের বাসে তুলতে হেলপার-ড্রাইভাররা অনীহা প্রকাশ করে। তাদের যুক্তি নারীরা পুুরুষের পাশাপাশি দাঁড়িয়ে যেতে পারেন না। উঠতে-নামতে সময় নেন বেশি ইত্যাদি। তৃতীয়ত, পৃথক মহিলা বাস সার্ভিস বাণিজ্যিকভাবে অলাভজনক দাবি করা হচ্ছে। তার মানে এই নয় যে, চাহিদা নেই। এ ক্ষেত্রে নারীদের অসচেতনতাকেও দায়ী করছেন কেউ কেউ।
২০১০ সালে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো দেশে লেবারফোর্স সার্ভে করে। তাতে দেখা যায়, ২০০২-০৩ সালে শ্রমবাজারে নারীর উপস্থিতি যেখানে ছিল ১০ দশমিক ৩ শতাংশ, ২০১০ সালে এসে দাঁড়ায় ১৭ দশমিক ২ শতাংশ। বর্তমানে এ সংখ্যা আরো অনেক বেড়েছে। বিশেষত শহরে-নগরে এই কর্মজীবী নারীদের বহুমাত্রিক বিড়ম্বনা ও সমস্যার কথা এখন অনেকেরই অজানা নয়। এরমধ্যে আবাসন ও গণপরিবহন সঙ্কটই তাদের পথচলায় বড় ধরনের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে।
ঢাকা মহানগর পরিবহণ কমিটির শর্তানুযায়ী, ঢাকার বড় বাসে নয়টি এবং মিনিবাসে ছয়টি আসন শিশু, নারী ও প্রতিবন্ধীদের জন্য সংরক্ষিত। তবে ‘নারীদের জন্য সংরক্ষিত আসনের’ এ শর্ত অনেক বাসেই মানা হয় না। আবার মানলেও সেসব আসন বেশির ভাগ সময় পুরুষ যাত্রীরা দখল করে রাখে। আসন ছেড়ে দেয়ার কথা বললে নানারকম কটূক্তি করতে থাকে। পাশাপাশি নির্ধারিত আসনের বাইরে বসতে গেলেও নারীদের শুনতে হয় নানা আপত্তির কথা।
ঢাকার সড়কগুলোর বিভিন্ন রুটে ১৯টি বিআরটিসি মহিলা বাস সার্ভিস চালু রয়েছে। এর মধ্যে রাজধানীর তালতলা থেকে মতিঝিল, মতিঝিল থেকে তালতলা, নতুনবাজার থেকে মতিঝিল, মতিঝিল থেকে নতুন বাজার, আবদুল্লাহপুর থেকে মতিঝিল, মতিঝিল থেকে আবদুল্লাহপুর, মিরপুর-১২ থেকে মতিঝিল, মতিঝিল দ্বিতল বাস ডিপো থেকে মিরপুর-১২, মিরপুর-১০ থেকে মতিঝিল, মতিঝিল থেকে মিরপুর-১০, মোহাম্মদপুর থেকে মতিঝিল, মতিঝিল থেকে মোহাম্মদপুর, মতিঝিল থেকে নারায়ণগঞ্জ এবং নারায়ণগঞ্জ থেকে মতিঝিল পর্যন্ত বিআরটিসি মহিলা বাস সার্ভিস চালু রয়েছে। এছাড়া রাজধানীর মিরপুর-১২ থেকে আসাদগেট হয়ে আজিমপুর পর্যন্ত মহিলা স্কুল বাস সার্ভিস পরিচালিত হচ্ছে। কর্মজীবী নারীযাত্রীর সংখ্যা যে হারে বাড়ছে তা বিবেচনায় নিয়ে বিআরটিসি মহিলা বাস সার্ভিস আরো বাড়ানো জরুরি। যদিও বর্তমান সরকারের তৎপরতায় বিআরটিসি মহিলা বাসের সংখ্যা আগের তুলনায় বাড়ানো হয়েছে।
দেশকে এগিয়ে নিতে চাইলে পুরুষের পাশাপশি নারীদের সুযোগ-সুবিধা বাড়াতে হবে। কর্মজীবী নারীদের চলাচলে ও যাতায়াতে নারীবান্ধব আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থা প্রচলন করতে হবে। দিন দিন যেভাবে নারীদের কর্মসংস্থান বাড়ছে, সে অনুসারে পাবলিক বাসে নারীদের আসনসংখ্যা বাড়ানো দরকার। রাজধানীর সব রুটে প্রয়োজনীয় সংখ্যক মহিলা বাস খুবই জরুরি। পাশাপাশি বিআরটিসির মহিলা বাস সার্ভিসের রুট ও শিফট বাড়ানোসহ সার্ভিসের মানোন্নয়নও জরুরি। এছাড়া বেসরকারি খাতে মহিলা বাস সার্ভিস চালু উৎসাহিত করা দরকার। কর্মজীবী নারীদেরও উচিত নিজেরা সংগঠিত হয়ে তাদের প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরা। চাহিদা ও সরবরাহে ভারসাম্যতা প্রতিষ্ঠিত না হলে কোনো সার্ভিস যথার্থভাবে টিকে থাকতে পারে না।
নানা ধরনের সীমাবদ্ধতা থাকার পরও বর্তমান সরকার কর্মজীবী নারীদের যোগাযোগ ও পরিবহণ সমস্যা সামাধানে যথেষ্ট আন্তরিক। বর্তমানে বিআরটিসি মহিলা বাসের সংখ্যা বাড়ছে। সামনে আরো বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়া পরিবহন খাতে বিদ্যমান অরাজকতা রোধে যোগাযোগমন্ত্রীর তৎপরতা প্রশংসনীয়। প্রায়ই তিনি নিজেই বিআরটিসি এবং বিআরটিএ-এর অফিস পরিদর্শন করেন। অনিয়ম দেখামাত্র ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়ে থাকেন। নারীর পরিবহন সমস্যা নিরসনে বিআরটিসির মহিলা বাসের সংখ্যা বাড়ানো সময়ের দাবি। জনস্বার্থে বিষয়টি গুরুত্ব পাওয়া উচিত।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।