Inqilab Logo

সোমবার, ১০ জুন ২০২৪, ২৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ০৩ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

কর্মচারীদের অপারেশনে মারা গেল রোগী হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের

শ্যামলীর ক্রিসেন্ট হাসপাতা

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৩০ মার্চ, ২০১৮, ১২:০০ এএম

স্টাফ রিপোর্টার : সড়ক দুর্ঘটনায় আহত চুন্নু ব্যাপারীকে বাঁচাতে রাজধানীর পঙ্গু হাসপাতাল নিয়ে গিয়েছিলেন স্বজনরা। পরে দালালদের খপ্পরে পড়ে আনা হয় রাজধানীর শ্যামলীর ক্রিসেন্ট হাসপাতালে। কিন্তু সেখানে তাকে মেরে ফেলা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে নিহতের স্বজনেরা এবং র‌্যাব।
নিহতের স্বজনদের অভিযোগ, ওই হাসপাতালে চুন্নুর অস্ত্রোপচার যারা করেছিলেন, তাদের কেউ চিকিৎসক নন। হাসপাতালের কর্মচারী তারা। আর এই ঘটনায় হত্যা মামলা করতে যাচ্ছে র‌্যাব।
বুধবার রাতে এই হাসপাতালটিতে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে সেখানে এক ভয়াবহ পরিবেশ দেখতে র‌্যাব। সেখানে ছোটখাটো কোনো সমস্যা নিয়ে রোগীরা গেলে তাদেরকে আটক করে জিম্মি করতেন হাসপাতালের কর্মীরা। পরে আদায় করা হতো টাকা।
র‌্যাবের ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার আলম বলেন,ক্রিসেন্ট হাসপাতালের চিকিৎসার অবহেলায়ই ভিকটিম মারা গিয়েছে। ওই হাসপাতালে হাতেনাতে আটকদের মধ্যে দুইজনকে দুই বছরের জেল দিয়েছি।
ক্রিসেন্ট হাসপাতালের মালিকের নাম নূর নবী। তিনি ঘটনার পর থেকেই পালাতক। আর তার স্ত্রী মাসুমা পারভীন শিক্ষাগত যোগ্যতায় ডাক্তার হলেও কখনো কোথাও প্রাকটিস করেননি। তবে ক্রিসেন্ট হাসপাতাল দেখাশোনার দায়িত্ব তিনিই পালন করে আসছিলেন।
চুন্নুর মৃত্যুর ঘটনায় হত্যা মামলা করার প্রক্রিয়া চলছে বলে জানান র‌্যাবের এই কর্মকর্তা। বলেন, ‘মাসুমা পারভীনকে আমরা ১০ লাখ টাকা জরিমানা করেছি। ভিকটিমদের প্রযোজনীয় সহায়তা আমরা দেব। আর এই ঘটনায় ভিকটিমদের বাদী করে হত্যা মামলা দায়ের করব।
চুন্নু ব্যাপারী দুর্ঘটনায় আহত হওয়ার পর তাকে ভর্তি করা হয়েছিল জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতালে (পঙ্গু হাসপাতাল) ভর্তি করা হয়। সেখান থেকে দালালরা প্রলোভন দেখিয়ে চুন্নুকে নিয়ে আসে ক্রিসেন্ট হাসপতাতালে। র‌্যাবের অভিযানের সময় তাকে উদ্ধার করে বুধবার নিয়ে আসা হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।
চুন্নু ব্যাপারীর বাড়ি ভোলা জেলায়। ছয় ভাইয়ের মধ্যে তিনি ছিলেন চতুর্থ। তার এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে।
নিহতের বড় ভাই ওমর ফারুক জানান, চুন্নু চট্টগ্রামের রিয়াজ উদ্দিন বাজারের চৈতন্য মিয়ার গলিতে থাকতেন। ২৭ মার্চ ভোর সাড়ে পাঁচটায় রিয়াজউদ্দিন বাজারে বাসের ধাক্কায় আহত হন তিনি। স্থানীয় হাসপাতাল থেকে রেফার করা হলে ওই দিন রাত সাড়ে বারোটার দিকে তাকে ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়।
কিন্তু পঙ্গু হাসপাতালের চিকিৎসা ভালো না’- স্বজনদের এমনটা বুঝিয়ে ক্রিসেন্ট হাসপাতালে নিয়ে যায় দালালরা। সেখানে ২৭ মার্চ চুন্নু ব্যাপারীর অপারেশন করার কথা ছিল। কিন্তু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সে ব্যবস্থা করেনি। অবস্থার অবনতি দেখে ২৮ মার্চ দুপুরে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যাওয়া হয়।
সেদিন হাসপাতালে কোন ডাক্তার না থাকায়, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নিজেরাই চুন্নু ব্যাপরীর অপারেশন করে।
এই অপারেশন চলার সময় হাসপাতালে হানা দেয় র‌্যাবের ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার আলমের নেতৃত্বে ভ্রাম্যমাণ আদালত। অপারেশন থিয়েটারে সংকটাপন্ন অবস্থায় থাকা চুন্নুসহ আরও ২৫-২৬ জনকে উদ্ধার করে পঙ্গু হাসপাতালে নিয়ে আসে র‌্যাব।
সেখানে চুন্নু ব্যাপারীর অবস্থার অবনতি হলে তাকে ঢাকা মেডিক্যাল হাসপাতালে পাঠানো হয়। পরে রাত ১০ টা ৪৫ মিনিটে মারা যান তিনি।

 

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: হাসপাতালে


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ