পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
নাছিম উল আলম : প্রবাহ সঙ্কটের পাশাপাশি নিয়মিত সংস্কারসহ রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে এককালের ‘প্রাচ্যের ভেনিস বরিশাল’ মহানগরীর ৪৮টি খালের অনেকগুলোই আংশিক ও সম্পূর্ণ বিলুপ্ত হবার পাশাপাশি অবশিষ্ট সবগুলোই মরা নালায় পরিণত হয়েছে। অথচ বরিশাল মহানগরীর জেল খালসহ আরো কয়েকটি খাল পুনরুদ্ধার এবং খননের নামে গত কয়েক বছর ধরে জেলা প্রশাসনের তরফ থেকে ঢাক ঢোল পিটিয়ে বেশ কয়েকবার ঘটা করে অনুষ্ঠান করা হয়। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে এলক্ষ্যে ‘নানা ধরনের সহযোগিতা’ গ্রহণেরও অভিযোগ ছিল। কিন্তু এখন পর্যন্ত ঐসব খাল মরা নালা হিসেবেই দৃশ্যমান রয়েছে। এমনকি বছর খানেক আগে নগরীর খালগুলো সংস্কারে জেলা প্রশাসনের তরফ থেকে সরকারের কাছে ২৩ কোটি টাকার প্রাক্কলন দাখিলের কথাও প্রচার করা হয়। কিন্তু এখন পর্যন্ত বাস্তবতা সম্পূর্ণ ভিন্ন। বরিশাল সিটি করপোরেশনের তরফ থেকে নগরীর ৪৮টি খালের ১০৫ কিলোমিটার এলাকা সংস্কারসহ উন্নয়নে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে একটি উন্নয়ন প্রকল্প-সারপত্র, ডিপিপি দাখিল করা হয়েছে। তবে এ বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড বা কোন পানি সম্পদ গবেষণা প্রতিষ্ঠানের পরামর্শ সহ মতামত গ্রহণ করনি সিটি করপোরেশন।
কীর্তনখোলা ও সন্ধ্যা নদীর সাথে যুক্ত এ নগরীর খালগুলোর সবই প্রবাহ সংকটে দিন দিন অস্তিত্বহীন হয়ে পড়ছে। উজানে প্রবাহ নিয়ন্ত্রণের ফলে নদীগুলোর পানির স্তর নিচে নেমে যাবার পাশাপাশি নগরীর মধ্যে দিয়ে বহমান খালগুলো কতিপয় বিবেকহীন নগরবাসীর অসৎ কর্মকান্ডে ভরাট হয়ে তলা উচু হয়ে যাওয়ায় তাতে আর জোয়ার ভাটার পানি প্রবাহিত হচ্ছে না। ফলে নিকট অতীতের প্রবাহমান এসব খাল মরা নালায় পরিনত হয়ে তা মশার প্রজনন ক্ষেত্রসহ উৎকট দুর্গন্ধের আধারে পরিনত হয়েছে। খালগুলোতে প্রবাহ না থাকায় নগরীর পানির স্তর ক্রমশ নিচে নামার পাশাপাশি পরিবেশের ওপরও নানামুখী বিরূপ প্রভাব পড়ছে। অথচ দু’দশক অগেও এ নগরীর অভ্যন্তরে বটতলা বাজার, নতুন বাজার ও বড় বাজার পর্যন্ত নৌকা চলাচল করত। নগরীর অভ্যন্তরে খালগুলোতে নিয়মিত জোয়ার-ভাটার প্রবাহ অব্যাহত থাকায় ব্রিটিশ যুগে ইংরেজ শাসক বর্গ বরিশালকে ‘প্রাচ্যের ভেনিস’ নাম দিয়েছিলেন।
কিন্তু কালের বিবর্তনে সেসব এখন অতীত। একমাত্র সাগরদী খালটি কোনভাবে প্রবাহ কিছুটা ধরে রাখলেও দুপাড়ের বাসিন্দাদের নানামুখি অপকর্মে তা ক্রমশ সংকুচিত হচ্ছে। জেলখাল ও নবগ্রাম খালসহ নগরীর ছোট-বড় সবগুলো খালই এখন আর অস্তিত্ব ধরে রাখতে পারছে না। ২০০০ সাল থেকে নগরীর নবগ্রাম খালটির বটতলা এলাকা ভরাট করে জেলা পরিষদ স্টল নির্মাণ করে। ২০০৪ সালে নবগ্রাম রোড-চৌমহনী থেকে বটতলা পর্যন্ত ভরাট করে রাস্তা স¤প্রসারণসহ ৪০ ফুট প্রশস্ত খাল-এর স্থলে ৭ ফুট পাকা ড্রেন নির্মাণ করতে গিয়ে প্রকৃতির এ আধারের গলা টিপে ধরে জেলা পরিষদ ও সিটি করপোরেশন। ফলে যা হবার তাই হয়েছে। নগরীর কেন্দ্রস্থল থেকে কড়াপুর পর্যন্ত প্রায় ১০ কিলোমিটার দীর্ঘ খালটি এখন প্রায় অস্তিত্বহীন।
বরিশাল মহানগরীর একের পর এক খাল ভরাট হয়ে যাওয়ার নির্মম মূল্য দিতে হচ্ছে এ নগরবাসীকেই। মাত্র এক ঘন্টার টানা বৃষ্টিতেই বরিশাল মহানগরীর অন্তত অর্ধেক এলাকা পানির তলায় চলে যাচ্ছে। খাল ভরাট হয়ে নগরীর পয়ঃনিস্কাশন ব্যবস্থা রুদ্ধ। নগরীর প্রধান সড়ক সদর রোডেরও এখন বেহাল দশা। নবগ্রাম রোডের বটতলা থেকে চৌমুহনী পর্যন্ত এখন আর কোন বৃষ্টির প্রয়োজন নেই। শুষ্ক মৌসুমেই খাল ভরাট করা পাকা ড্রেন আর রাস্তা পানি ছুই ছুই করছে। ৭ ফুট প্রশস্ত আর ১০ ফুট গভীর পুরো ড্রেনটি ময়লা আবর্জনায় টইটম্বুর। সেখানে পানি প্রবাহের স্থান নেই। ফলে বাসা-বাড়ীর ময়লা পানি রাস্তায় গড়ায়। ভারী বর্ষণে নবগ্রাম রোডে এলাকাবাসী জাল ফেলে মাছ ধরারও চেষ্টা করেন।
একই চিত্র নগরীর প্রায় সবগুলো খালেরই। আর এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে সিটি করপোরেশন প্রায় আড়াইশ কোটি টাকার একটি প্রকল্প-সারপত্র মন্ত্রণালয়ে দাখিল করেছে। প্রস্তাবনা অনুযায়ী প্রকল্পটি যদি পরিকল্পনা কমিশন হয়ে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি-একনেক অনুমোদন করে, তবে এর ৮০ ভাগ অর্থ সরকার প্রদান করলেও সিটি করপোরেশনকে ২০ ভাগ অর্থ অর্থাৎ প্রায় ৫০ কোটি টাকার যোগান দিতে হবে নিজস্ব তহবিল থেকে। কিন্তু যে সিটি করপোরেশন সংস্থাপন ব্যয় মেটাতে পারছেনা, তারা এত বিপুল অর্থের যোগান কোথা থেকে দেবে তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। ইতোপূর্বে সরকারি তরফ থেকে দেয়া অর্থের বেশীরভাগ প্রকল্পেই বরিশাল সিটি করপোরেশন তার অংশের তহবিল যোগান দিতে না পারায় অনেকগুলোর কাজই অসমাপ্ত।
উপরন্তু এতবড় একটি স্পর্শকাতর প্রকল্প বাস্তবায়নে সিটি করপোরেশন এখন পর্যন্ত পানি উন্নয়ন বোর্ড, নদী গবেষনা কেন্দ্র, আইডবিøউএম বা সিইজিআইএস’-এর মত সরকারি বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে কোন ধরনের কারিগরি পরামর্শও গ্রহণ করেনি। সিটি করপোরেশনের প্রস্তাবিত প্রকল্পটির প্রস্তাবনায় নগরীর মধ্যে দিয়ে বহমান ৪৮টি খালের ১০৫ কিলোমিটার এলাকা খননসহ অনেকগুলো কালভার্ট ও প্রায় ২০টি ঘাট নির্মাণ করা হবে। সংস্কারকৃত খালগুলোর দু ধারে ওয়াকওয়েসহ ফুটপাত নির্মাণও এর অন্তর্ভূক্ত রয়েছে বলে নগর ভবন সূত্রে জানা গেছে। আগামী অর্থ বছর থেকে পরবর্তী দু বছরে প্রকল্পটির বাস্তবায়নকাল ধরা হয়ছে। তবে প্রকল্পটি এখনো স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন লাভ না করলেও কয়েকটি স্তর অতিক্রম করেছে বলে জানা গেছে।
যাচাই বাছাই শেষে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন লাভ করলে প্রকল্পটি পরিকল্পনা কমিশনে যাবে। সেখানে প্রকল্প বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষন ও মূল্যায়ন কমিটি-আইএমইডি’র অনুমোদন মিললে প্রি-একেনেক হয়ে একনেক-এর চুড়ান্ত অনুমোদনের জন্য উপস্থাপিত হবার কথা। চলতি বছরে এসব এসব স্তর পার হয়ে প্রকল্প প্রস্তাবনাটি পরবর্তী বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচীর অন্তর্ভূক্ত হবে কিনা তা বলতে পারছেন না কেউ।
তবে এ ধরনের একটি প্রকল্প বাস্তবায়নের আগে এবং বাস্তবায়নকালে পেশাদার পানি সম্পদ গবেষনা প্রতিষ্ঠানের নিবিড় নজরদারীসহ পরামর্শ গ্রহণের তাগিদ দিয়েছেন একাধিক দায়িত্বশীল মহল। এ ব্যাপারে গতকাল বরিশাল সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলীর সাথে আলাপ করা হলে তিনি জানান, প্রকল্পটি অনুমোদন লাভ করলে তার সুষ্ঠু বাস্তবায়নের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় সব দিক বিবেচনা করা হবে। তবে সিটি করপোরেশনের অংশের প্রায় ৫০ কোটি টাকা কোথা থেকে আসবে সে সম্পর্কে তিনি কিছু বলতে পারেন নি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।