পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
এস এম আলী আহসান পান্না, কুষ্টিয়া থেকে : বাংলাদেশে যখন বিশ্ব পানি দিবস পালিত হচ্ছে তখন এককালের অফুরান পানির আধার বাংলাদেশের ব্যাপক এলাকায় দেখা দিয়েছে পানি সঙ্কট। এবার শুষ্ক মওসুমের শুরুতেই জি কে সেচ প্রকল্পে পর্যাপ্ত সেচের পানি মিলছে না। ফলে দেশের পশ্চিম-দক্ষিণাঞ্চলে এ সেচ প্রকল্পের বিস্তৃত এলাকায় লক্ষাধিক একর জমিতে চাষাবাদে বিপর্যয় দেখা দিয়েছে, উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন চাষীরা।
এবার শুষ্ক মওসুমের শুরুতেই দেশের বৃহত্তম গঙ্গা-কপোতাক্ষ সেচ (জি কে সেচ প্রকল্প) প্রকল্পের আওতাধীন এলাকায় শুরু হয়েছে সেচের পানির সঙ্কট। উল্লেখ্য, সেচের পানির একমাত্র উৎস পদ্মা নদী। ফারাক্কা বাঁধের কারণে পদ্মা আজ মরণদশার সন্§ুখীন। পদ্মায় পানি প্রবাহ ক্রমাগত কমছেই। গত ২৫ মার্চ হার্ডিঞ্জ ব্রিজে পদ্মার পানির লেভেল ছিল ৪.৫৫ মিটার। ক’দিন আগে ৫ মার্চে পদ্মার পানির এ লেভেল ছিল ৪.৬৭ মিটার। এক সময় জি কে সেচ প্রকল্পের অধীনে প্রায় ২ লাখ হেক্টর জমিতে সেচ সুবিধা দেওয়া হতো। এ সেচের মাধ্যমে কুষ্টিয়াসহ ৫টি জেলার চাষীরা বিভিন্ন ধরনের ফসলের আবাদ করতো। কিন্তু পানি উন্নয়ন বোর্ডের অবহেলা ও উদাসীনতার কারণে জি কে সেচ প্রকল্পের অধীনে বিভিন্ন ছোট বড় খাল খনন না করায় ভরাট হয়ে গেছে সেগুলো। প্রতি বছর খননের নামে বরাদ্দ কোটি কোটি টাকা হরিলুট হচ্ছে। পানি চলাচল না করায় অনেক স্থানে শুকিয়ে গেছে শাখা খালগুলো। তারপর অবৈধ দখলদারদের দখলের কারণে সেগুলো বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে পানির অভাবে থমকে গেছে চাষীদের বোরো চাষসহ লক্ষাধিক একর জমির ফসলের আবাদ। সূত্রমতে, চলতি রবি (বোরো) মওসুমে জিকে প্রকল্পের অধীন ২২ হাজার ৬ শত ৫ হেক্টর জমিতে পানি দেয়ার লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করা হয়। কিন্তু সেখানে এবার আবাদ হয়েছে ১০ হাজার ৩ শত ৯৪ হেক্টর। পানি ঘাটতির ফলে ১১ হাজার ৬ শত ১১ হেক্টর জমি আবাদ হয়নি। একটি সূত্র জানায়, চলতি মওসুমে পদ্মার পানি যেভাবে হ্রাস পাচ্ছে তা যদি অব্যাহত থাকে, তাহলে পাম্প হাউসে পানি সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাবে বলে পা উ বো কর্মকর্তারা আশঙ্কা করছে না। জি কে সেচ প্রকল্পের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, পদ্মা নদীর প্রধান ইনটেক চ্যানেলে (ভেড়ামারাস্থ) প্রচুর পলি জমায় পানি সরবরাহ করতে অসুবিধার সৃষ্টি হয়। ওই পলি অপসারণের জন্য ড্রেজার চালু করা হলেও দু’দুবার ড্রেজার মেশিন নষ্ট হয়ে যায়। ফলে জানুয়ারীর ১০ তারিখ থেকে পানি সরবরাহের নিয়মিত কার্যক্রম ব্যাহত হয়। পরবর্তীতে ৬ ফেব্রæয়ারি পাম্প চালু করা হলেও ৩টি প্রধান পাম্পের মধ্যে একটি পাম্প দীর্ঘদিন অকেজো থাকায় সেচ সুবিধা ব্যাহত হচ্ছে। ২টি প্রধান চালু পাম্পের মধ্যে পর্যায়ক্রমে একটি বন্ধ করে আরেকটি চালু করা হচ্ছে। এছাড়াও সহযোগী ১২ টি পাম্প দীর্ঘদিন বন্ধ রয়েছে। প্রয়োজনীয় জনবল না থাকায় বিভিন্ন সময় পাম্প বন্ধ হয়ে যায়। তা ছাড়া প্রতি বছর যে আর্থিক বরাদ্দ পাওয়া যায় তা খাল খননসহ প্রয়োজনীয় ব্যয় সংকুলানের জন্য একেবারেই অপ্রতুল। সূত্র জানায়, পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) এর জি কে প্রকল্পে ২০১৭-১৮ সালে বরাদ্দ ছিল ৭ কোটি ৭৩ লাখ টাকা। এর মধ্যে কুষ্টিয়া ডিভিশনে নদীমূলে ইনটেক চ্যানেলের প্রধান খালে ড্রেজার খনন ও চ্যানেল রক্ষণাবেক্ষণে ৩ কোটি ৫ লাখ টাকা, চুয়াডাঙ্গা ডিভিশনে ১ কোটি ১০ লাখ টাকা, মাগুরা ডিভিশনে ৭৩ লাখ টাকা, ভেড়ামারা পাম্প হাউস ডিভিশনে ৮৫ লাখ টাকা (অব্যয়িত ৩৭ লাখ ৬০ হাজার টাকা), আমলা ডিভিশনে ৭০ লাখ টাকা ও ঝিনাইদহ ডিভিশনে ১ কোটি ৩০ লাখ টাকা বরাদ্দ ছিল। এদিকে এ মওসুমে সময়মত পানি সরবরাহ করতে না পারায় এবার সঠিক সময়ে বোরো আবাদ শুরু করতে পারেনি চাষীরা। অনেকেই শ্যালো মেশিনের পানিতে আবাদ শুরু করে। অনেক চাষী বীজতলা থেকে বয়স্ক চারা লাগানোর কারণে মাঠে বোরো আবাদ চাষ ব্যাহত হয়।
তথ্যসুত্রে জানা যায়, ১৯৬৯ সালে কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ, চুয়াডাঙ্গা, মাগুরা ও যশোর জেলার ১ লাখ ১৬ হাজার হেক্টর জমিতে সেচ সুবিধা দেয়ার জন্য সরকার ১৯৫৪ সালে পদ্মা নদীর হার্ডিঞ্জ ব্রিজ ও লালন শাহ সেতুর ১ কিলোমিটার ভাটিতে কুষ্টিয়ার ভেড়ামারায় জিকে সেচ প্রকল্পের কাজ শুরু করে। ৫ জেলার ১ হাজার ৬শ’ ৬৫ কিলোমিটার সেচ খাল দিয়ে বছরে দু’বার ১ লাখ ২০ হাজার কৃষককে সেচ সুবিধা দেয়া হতো। সে সময় জি কের ক্যানেলে প্রায় সব সময়ই পানি থাকতো। মানুষ গোসল করা থেকে শুরু করে সকল কাজে সে পানি ব্যবহার করতো। কিন্তু পানি আগ্রাসনের কারণে এখন পরিস্থিতি পাল্টে গেছে। একদিকে ভারতের কাছ থেকে গঙ্গা পানি চুক্তির ন্যায্য হিস্যা না পাওয়ায় পানি প্রবাহ হ্রাস, অন্যদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের উদাসীনতার কারণে ভরাট হয়ে গেছে জি কের খালগুলো । ঠিকমত পানি না থাকায় খালগুলো হারিয়েছে পানি প্রবাহ। দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প জি কে সেচ প্রকল্প হুমকির সম্মুখীন হয়েছে। এ সেচ প্রকল্পের অধীন ১ লাখ ৪২ হাজার হেক্টর জমিতে সেচ সুবিধা দিতে পারছে না। পর্যাপ্ত পানি না থাকায় সেচ প্রকল্পের ১৯৩ কিলোমিটার দীর্ঘ প্রধান সেচ খাল ও ১ হাজার ৪ শত ৬২ কিলোমিটার শাখা খাল পানিশূন্য হয়ে পড়েছে। পানির অভাবে থমকে গেছে চাষীদের মাঠের বোরো চাষসহ বিভিন্ন ফসলের আবাদ। ফলে সেচ প্রকল্পের অধীনে বহু হাজার একর জমি অনাবাদী রয়েছে। ফলে কুষ্টিয়াসহ ৫ জেলার লক্ষাধিক কৃষকের জীবন-জীবিকাসহ ৫ কোটি মানুষের ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তার দিকে ধাবিত হচ্ছে। অত্যন্ত উদ্বেগের বিষয় যে এলাকার অসৎ লোকজন জি কে প্রকল্পের জায়গা নিজেদের সম্পত্তি বলে অযৌক্তিক দাবি করে অনেকেই খাল ভরাট করে বাড়ি-ঘর, মার্কেট তৈরি করেছে। এতে পানি সরবরাহের পথ সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করে ফেললেও অজ্ঞাত কারণে জি কে কর্তৃপক্ষ রয়েছে নীরব। এ অবৈধ দখলদারদের কারণে বন্ধ হয়ে গেছে খালের পানি প্রবাহ, বন্ধ হয়ে গেছে ফসলের আবাদ। অনাবাদি থাকছে হাজার হাজার হেক্টর জমি।
জি কে সেচ প্রকল্পের খালগুলো পানিশূন্য হয়ে পড়ায় বিভিন্ন সমস্যার শিকার চাষীরাসহ খাল সংলগ্ন মানুষ। খাল ভরাট হয়ে যাওয়ায় কৃষি আবাদ তো বটেই, পরিবেশের উপরও বিরূপ প্রভাব পড়েছে। ইতোমধ্যে কুষ্টিয়া, যশোর, চুয়াডাঙ্গা, মাগুরা ও ঝিনাইদহের নদী-খাল-বিল প্রায় পানিশূন্য। পানির লেয়ার নিচে নেমে যাওয়ায় গভীর নলক‚প, শ্যালো, নলক‚প, বাড়িঘরের পাম্প মেশিনেও পানি উঠছে না। বর্তমান পরি¯ির প্রেক্ষিতে অবিলম্বে খাল খননের দাবি সকলের। জি কে কর্তৃপক্ষ প্রধান খালসহ শাখা খালগুলো খনন ও অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করে কৃষকদের পানি সেচের নিশ্চয়তা বিধান করবেন এটাই প্রত্যাশা অঞ্চলবাসীর।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।