পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
দেশে এখন হত্যা আর রক্তের রাজনীতি চলছে এবং সরকার আগামী নির্বাচন সুস্থ-নিরপেক্ষ করতে বাধ্য হবে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। তিনি বলেন, জনগণ সুষ্ঠু নির্বাচন চায়। আমরা চাই দেশবাসী তার ভোট দিক। দেশে এখন কোনো নির্বাচন নিরপেক্ষ হচ্ছে না; তবে এবার সরকারকে সুষ্ঠু নির্বাচন করতে বাধ্য করতে হবে। আমরা ইসিকে নির্বাচনকালীন সরকারের রূপরেখা দিয়েছি। সংসদে যে সব দল রয়েছে তাদের নিয়ে নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করতে হবে। তারা রুটিন কাজ করবে তবে নির্বাচনে হস্তক্ষেপ করবে না। নির্বাচন কমিশন স্বাধীন ভাবে নির্বাচন পরিচালনা করবে। গতকাল শনিবার রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জাতীয় পার্টি আয়োজিত এক মহাসমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন। তিনি আরো উন্নয়নের নামে বাইরে চাকচিক্য দেখা গেলেও ভিতরে আবর্জনা। গ্রামের মানুষ কী ভয়ঙ্কর দুর্দশায় জীবন যাপন করছে তা চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা যায় না।
মহাসমাবেশে অংশ নেওয়ার জন্য শনিবার ভোর থেকেই দেশের বিভিন্ন জেলা উপজেলা থেকে জাতীয় পার্টি ও জোটের শরীক বিভিন্ন দল এবং অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা মিছিল নিয়ে সমবেত হতে থাকে রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়াদী উদ্যানে। সকাল ১০টার আগেই সারাদেশের পাশাপাশি রাজধানীসহ ঢাকার পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন জেলা উপজেলার নেতাকর্মীরা উপস্থিত হন। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের পশ্চিম দিকে টিন দিয়ে বন্ধ এবং পূর্বদিন সাদা কাপড় দিয়ে বন্ধ করে সমাবেশে মঞ্চের সামনের স্থল সংকুচিত করা হয়। উদ্যানের বাইরে মৎস ভবন থেকে ঢাকা ক্লাব পর্যন্ত রাস্তার এক পাশ বন্ধ করে দেয়া হয়। মূলত সমাবেশে জাতীয় পার্টির বর্তমান এমপি ও আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সম্ভাব্য প্রার্থীরা ব্যাপক শোডাউন করেন। শুধু তাই নয়; পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে শুরু করে শাহবাগ পর্যন্ত রাস্তার দুই ধারে বাস সারিবদ্ধভাবে রাখায় সাধারণ মানুষ পড়তে হয় চরম দুর্ভোগে।
সকাল ১১ টার দিকে সবুজ রংয়ের গেঞ্জি ও টুপি পড়ে লাঙ্গল কাঁেধ নিয়ে বাবলার হাজার খানেক অনুসারী সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে নান্দনিক সাজে সজ্জিত হয়ে মিছিল সহকারে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে প্রবেশ করে। মূলত এদের জিরো পয়েন্ট থেকে পায়ে হেটে দীর্ঘসময় মৎস ভবনের সামনের রাস্তা বন্ধ করে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। এর আগে সকাল নয়টা থেকেই বিভিন্ন জেলা থেকে আগত নেতাকর্মীরা খন্ড খন্ড মিছিল নিয়ে সমবেশ স্থলে হাজির হন হয়। কারো কাঁেধ লাঙ্গল, কারো হাতে রং বেরংয়ের ফেস্টুন, ব্যান্ড পার্টি, বিশাল আকৃতির জাতীয় ও দলীয় পতাকা হাতে নিয়ে আসেন। এছাড়া সকাল দশটার দিকে সোনরাগাওয়ের এমপি লিয়াকত হোসেন খোকার নেতৃত্বে এবং সালমা ইসলাম এমপির নের্তৃত্বে নেতাকর্মীর মিছিল সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে প্রবেশ করেন।
সমাবেশে সাবেক প্রেসিডেন্ট এরশাদ আরো বলেন, মানুষ আমার কাছে বার্তা চায়। প্রথম বার্তা হচ্ছে, আমার ইতিহাস সৃষ্টি করব। আগামী নির্বাচনে জয়ী হয়ে সরকার গঠন করব। এ আমার বার্তা। আমরা প্রস্তুত। দেশ প্রস্তুত। ২৫-৩০ বছর আমরা ক্ষমতায় ছিলাম না। দুই দল ক্ষমতায় ছিল। তারা জনগণকে কী দিয়েছে? অন্যায়-অবিচার। নারীদের লাঞ্ছনা, বেকারত্ব। জনগণকে তারা কিছু দিতে পারে নাই। শুধু লম্বা লম্বা কথা। সারাদেশে চলছে সন্ত্রাস-চাদাবাজি ও লুটপাটের মহোৎসব। শিক্ষাঙ্গনে পচন ধরেছে, গোল্লায় গেছে। ভেঙ্গে চুরমার হয়ে গেছে শিক্ষার ভবিষৎ। আগে পাস করতে শিক্ষার্থীদের কষ্ট করে পড়াশোনা করতে হতো। এখন কষ্ট করেও ফেল করা যায় না। ব্যাংকে টাকা নেই, শেয়ার বাজার ধ্বংস। আগামী প্রজন্ম ধ্বংসের পথে। সমাজে সর্বত্র অবক্ষয়। যুবকরা চাকরি অভাবে মাদকে ডুবে গেছে। কারো জীবনের নিরাপত্তা নেই, নেই শান্তি। এত অবিচারের মধ্যে দেশবাসীকে শান্তি ও নিরাপত্তা ফিরিয়ে দিতে প্রস্তুত জাতীয় পার্টি। তিনি বলেন, দেশ নাকি উন্নয়নশীল রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে! আতোশবাজি ফুটিয়ে উৎসব করা হলো। আদৌ কি দেশ উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হয়েছে? উন্নয়ন শুধু ঢাকায়। ঢাকার বাইরে কোনো উন্নয়ন নেই। গ্রামের মানুষ ভালো নেই। ঢাকার বাইরের অবস্থা একবার স্বচক্ষে দেখে আসুন। বিপুল সংখ্যক জনসংখ্যা দেশে উচ্ছাস প্রকাশ করে সাবেক প্রেসিডেন্টে বলেন, আমার কণ্ঠ রুদ্ধ। এতো বড় সমাবেশ আমি আগে কখনো দেখিনি।
সমাবেশে বক্তব্য রাখেন জাতীয় পার্টির সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান বেগম রওশন এরশাদ এমপি, কো-চেয়ারম্যান জিএম কাদের, মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলদার এমপি, ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ এমপি, কাজী ফিরোজ রশীদ এমপি, জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু এমপি, সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা এমপি, প্রফেসর দেলোয়ার হোসেন খান, মশিউর রহমান রাঙ্গা, সাহিদুর রহমান টেপা, এডভোকেট সালমা ইসলাম এমপি, মেজর অব. খালেদ আখতার, লিয়াকত হোসেন খোকা এমপি, জহিরুল আলম রুবেল, জোটের শরীক দলের নেতা এমএ মান্নান, এমএ মতিন, ইসলামী, আবু নাসের ওয়াহেদ ফারুক প্রমুখ। সভা পরিচালনা করেন যৌথভাবে ভাইস চেয়ারম্যান ইকবাল হোসেন রাজু, জহিরুল ইসলাম জহির।
সমাবেশে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারীর নির্বাচনে প্রসঙ্গ উল্লেখ না করলেও জাতীয় পার্টির সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান বেগম রওশন এরশাদ বলেন, জাতীয় পার্টির আর কারো ক্ষমতায় যাওয়ার সিঁড়ি হবে না। বঙ্গবন্ধু জাতিকে স্বাধীনতা এনে দিয়েছেন; আর এরশাদ মানুষকে স্বাধীনতার স্বাধ দিয়েছেন। জাতীয় পার্টির শাসনামলে দেশে দলীয়করণ, চাঁদাবাজি ছিল না। মানুষ আবার এরশাদের শাসনামলে ফিরতে চায়। সমাবেশে জনসমাগম দেখে প্রথমে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের কবিতা ‘চল চল চল’; কবিতা আবৃতি করেন; অতপর ‘নতুন বাংলাদেশ গড়বো মোরা/ নতুন করে আজ শপথ নিলাম’ গান গেয়ে উপস্থতি জনতাকে বিমোহিত করেন।
পার্টির কো-চেয়ারম্যান জিএম কাদের বলেন, দেশের রাজনৈতিক গন্তব্য অনিশ্চয়তার দিকে যাচ্ছে। দেশে দৃশ্যমান রাজনৈতিক সহিংসতা দেখা না গেলেও সাধারণ মানুষের ভিতরে অস্থিরতা বিরাজ করছে। আইন শৃংখলা বাহিনী যখন আন্দোলন নিয়ন্ত্রণের নামে রাজনীতি নিয়ন্ত্রন করেন তখন দেশে আর সুস্থ ধারার রাজনীতি থাকে না। অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দিচ্ছে। বেকারত্ব বাড়ছে। শিক্ষিত বেকাররা মাদকে আসক্ত হচ্ছে। এ অবস্থায় মানুষ পরিবর্তন চায়। জনগণের সরকার দেখতে চায়। অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন মানে মানুষের ভোট দিতে পারা। সেটাই করতে হবে।
মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার বলেন, সারাবিশ্ব থেকে মানুষ এই সমাবেশে হাজির হয়েছেন। অনেক ষড়যন্ত্র আর আঘাত করেও জাতীয় পার্টিকে ধ্বংস করতে পারেনি। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, ক্ষমতায় আসলে অনেকের মামলা প্রত্যাহার করা হয়, কিন্তু পল্লীবন্ধু এরশাদসহ আমাদের অনেক কেন্দ্রীয় নেতার বিরুদ্ধে রাজনৈতিক মামলা ঝুলছে। এরশাদের নেতৃত্বে গোটা জাতীয় পার্টি আজ ঐক্যবদ্ধ।
ব্যরিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেন, জাপাকে অনেকে ধ্বংস করার চেষ্টা করলেও ধ্বংস করতে পারেনি। মানুষ আজ পরিবর্তন চাচ্ছে। জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু বলেন, দেশের ব্যাংকিং সেক্টর, শিক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংসের পথে। সন্ত্রাস চাঁদাবাজি চলছে। আগামীতে এরশাদের শাসনামল ছাড়া পরিবর্তন সম্ভব নয়। সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা বলেন, যারা এতদিন এরশাদ ও জাতীয় পার্টিকে নিয়ে নেতিবাচক কথা বলতেন সেসব কথাকথিত বুদ্ধিজীবীরা আজ সমাবেশ দেখে লজ্জায় মুখ ঢাকবে।
নেতাদের শোডাউন ঃ মহাসমাবেশে জাপার মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার, ঢাকা-৪ আসনের এমপি সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা ,রতœা আমিন হাওলাদার, ও লিয়াকত হোসেন খোকার ছাড়াও শোডাউন করেন ঢাকা-১ আসনের এমপি এডভোকেট সালমা ইসলাম এমপি, চট্টগ্রাম থেকে জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু, কুমিল্লার এমপি আমির হোসেন, সিলেটের এমপি ইয়াহিয়া চৌধুরী, তাজ রহমান, ঢাকা মহানগরের জহিরুল আলম রুবেল, ঢাকা-৫ থেকে মীর আব্দুস সবুর আসুদ, রংপুর থেকে মশিউর রহমান রাঙ্গা, কিশোরগঞ্জ থেকে মুজিবুল হক চুন্নুর অনুসারীরা। এছাড়া জাতীয় যুব সংহতি, জাতীয় ছাত্র সমাজ, জাতীয় স্বেচ্ছাসেবক পার্টি, জাতীয় শ্রমিক পার্টি, জাতীয় কৃষক পার্টি ও বিশাল মিছিল সহকারে সমাবেশে যোগদেন। জোটের শরীক ইসলামী ফ্রন্টের নেতাকর্মীদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো।
বর্নিল সাজে সজ্জিত সোহরাওয়াদী উদ্যান ঃ মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে পুরো সোহরাওয়ার্দী উদ্যানকে সাজানো হয় বর্নিল সাজে। এইচ এম এরশাদ ও রওশনের এরশাদের বিশাল আকৃতির ছবি শোভা পায় পুরো উদ্যান জুড়ে। লাঙ্গলের আদলে নির্মিত হয় বিশাল আকৃতির মঞ্চ। এছাড়া রাজধানীর কাকরাইল থেকে শাহবাগ ও ও পুরানা পল্টনা থেকে প্রেসক্লাব হয়ে মৎস ভবন পযর্ন্ত পুরো সড়ক রংবেংয়ের পতাকা ও জাতীয় পার্টির দলীয় পতাকা নিয়ে সাজানো হয়। ##
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।