Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

চট্টগ্রামে প্রধানমন্ত্রীর জনসভায় বিশাল শোডাউন

নেতাকর্মীরা উচ্ছ¡সিত হতাশ সাধারণ মানুষ

| প্রকাশের সময় : ২৩ মার্চ, ২০১৮, ১২:০০ এএম


রফিকুল ইসলাম ও এস কে এম নূর হোসেন : চট্টগ্রামের পটিয়া আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জনসভায় বড়সড় শোডাউনে উচ্ছ¡সিত সরকারি দলের নেতাকর্মীরা। তবে পটিয়া তথা দক্ষিণ চট্টগ্রামের কয়েকটি উন্নয়ন দাবির বিষয়ে স্পষ্ট ঘোষণা না আসায় সাধারণ মানুষের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। জনসভার শুরুতে প্রধানমন্ত্রী প্রায় ১৪ হাজার কোটি টাকার ৪১টি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন ও ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন। প্রধানমন্ত্রীর জনসভাকে ঘিরে উন্নয়নের আরও বেশকিছু দাবি উঠেছিল সরকারি দল এবং দলীয় সংসদ সদস্যদের কাছ থেকে। গণমানুষের প্রত্যাশা ছিল নির্বাচনী বছর হওয়ায় এসব দাবির ব্যাপারেও স্পষ্ট ঘোষণা দেবেন প্রধানমন্ত্রী। ৩৫ মিনিটের ভাষণে প্রধানমন্ত্রী উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখার অঙ্গীকার করলেও স্থানীয় এসব দাবি নিয়ে কিছুই বলেননি।
ফলে প্রত্যাশার চেয়ে প্রাপ্তি কম হওয়ায় জনসভা শেষে শুরু হয় নানামুখী আলোচনা। চাওয়া-পাওয়ার হিসাব মেলাতে গিয়ে হতাশা প্রকাশ করছেন দক্ষিণ চট্টগ্রামের সাধারণ মানুষ। বুধবারের ওই বিশাল জনসভা শেষ হতেই চাওয়া-পাওয়ার হিসাব মেলাতে শুরু করেন চাঁটগাবাসী। গতকাল বৃহস্পতিবারও সাধারণ মানুষের আলোচনায় ছিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওই জনসভা। টানা নয় বছর ক্ষমতায় আওয়ামী লীগ। নির্বাচনের বছরে চট্টগ্রামের ওই জনসভাকে ঘিরে সরকারি দলের নেতাকর্মী থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষের মধ্যেও ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা সৃষ্টি হয়। জনসভায় প্রধানমন্ত্রী কি ঘোষণা দেন তা নিয়েও অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় ছিলেন এ অঞ্চলের সাধারণ মানুষ। আওয়ামী লীগের নেতারাও বলে আসছিলেন জনসভায় চট্টগ্রামের মানুষের জন্য সুসংবাদ দেবেন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা
চট্টগ্রাম আওয়াম লীগ আয়োজিত জনসভায় নির্বাচনী শোডাউন করে নিয়েছেন এ অঞ্চলের মন্ত্রী, এমপি ও মনোনয়ন প্রত্যাশীরা। নৌকার পোস্টার, ব্যানার, ফেস্টুনে জনসভা স্থল এবং কয়েক বর্গ কিলোমিটার এলাকায় ছিল বর্ণিল আবহ। শোডাউনে দলীয় নেতাকর্মী ও সমর্থকদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষও অংশ নেয়। জনসভায় মানুষের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। চৈত্রের খরতাপ উপেক্ষা করে সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত জনসভা স্থল মাতিয়ে রাখেন নেতাকর্মীরা। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ প্রায় সব বক্তা তাদের বক্তব্যে নৌকায় ভোট চান। আগামী দিনে আবারও নৌকায় ভোট দিয়ে শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় আনার আহŸান ছিল তাদের। জনসভায় আগতরা এ আহŸানে সাড়া দিয়েছেন করতালি আর ¯েøাগানের মাধ্যমে। জনসভার সভাপতি দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি মোছলেম উদ্দিন আহমদ তার বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রীর কাছে চারটি দাবি পেশ করেন।
এগুলো হল- কর্ণফুলী নদীতে কালুরঘাট রেল ও সড়ক সেতু নির্মাণ, কর্ণফুলীর দক্ষিণ পাড়ে বিভাগীয় মানের স্টেডিয়াম নির্মাণ, দক্ষিণ চট্টগ্রামের সাথে কক্সবাজার আরাকান সড়ক চার লেন করা এবং কর্ণফুলীর দক্ষিণ পাড়ে বন্দর সম্প্রসারণ করা। জনসভার দুইদিন আগে সংবাদ সম্মেলন করে চট্টগ্রাম মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ নেতারা এ চারটি উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলেন। জনসভায় প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়ে কোন ঘোষণা দেননি। প্রধানমন্ত্রীর আগমনকে ঘিরে কনজ্যুমার এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-ক্যাবসহ বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে সোনাদিয়ায় গভীর সমুদ্র বন্দর, কর্ণফুলীর তলদেশে টানেল, কক্সবাজারমুখী রেললাইন প্রকল্পসহ প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রæত মেগা প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নের ব্যাপারে সুস্পষ্ট ঘোষণা দাবি করা হয়েছিল। পুরো চট্টগ্রামকে উন্নয়নের আওতায় এনেছেন এমন মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী এ ধারা অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিলেও উল্লেখিত প্রকল্পসমূহের ব্যাপারে স্পষ্ট করে কিছু বলেননি।
প্রধানমন্ত্রী দেশের বিভাগীয় শহরগুলোতে ধারাবাহিকভাবে জনসভা করে আসছেন। এর অংশ হিসাবে চট্টগ্রামের এ জনসভার আয়োজন করে আওয়ামী লীগ। চট্টগ্রাম মহানগরীতে জনসভা করার মতো মাঠ সঙ্কটের কারণে জনসভাটি মহানগরীর ২৬ কিলোমিটার দূরবর্তী পটিয়া আর্দশ উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে সম্পন্ন হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর জনসভাটি পটিয়ায় অনুষ্ঠিত হওয়ায় তার কাছে পটিয়াবাসীর প্রত্যাশা ছিল আকাশচুম্বী। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- পটিয়াবাসীর প্রাণের দাবী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঘোষিত পটিয়া জেলা বাস্তবায়ন। কিন্তু জনগণের সে প্রত্যাশা পূরণ হয়নি। পটিয়ার সংসদ সদস্য সামশুল হক চৌধুরী জনসভাকে ঘিরে প্রায় প্রতিদিনই পটিয়াকে জেলা ঘোষণার দাবি তুলেছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে জনসভায় দেয়া বক্তব্যে তিনি বঙ্গবন্ধু কর্তৃক পটিয়াকে মহকুমা ঘোষণার ইতিহাস তুলে ধরেন। তবে অজানা কারণে সরাসরি পটিয়াকে জেলা ঘোষণার কোন দাবি করেননি তিনি। এ নিয়েও জনসভায় তাৎক্ষণিক নানা গুঞ্জন উঠে।
স্থানীয়রা জানান, ১৯৯৬ সালের নির্বাচনের আগে বিরোধী দলীয় নেতা থাকাকালে শেখ হাসিনা পটিয়া আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে জনসভায় বলেছিলেন তিনি ক্ষমতায় গেলে পটিয়াকে জেলা করবেন। ওই নির্বাচনে ক্ষমতায় আসলেও পটিয়া জেলার ব্যাপারে কোন সুরাহা হয়নি। পটিয়াবাসী আশা করছিলেন প্রধানমন্ত্রী এ জনসভায় বঙ্গবন্ধু ঘোষিত পটিয়াকে জেলা ঘোষণা দেবেন। প্রধানমন্ত্রী তার আসন গ্রহণ করার পর প্রথমে জনসভায় বক্তব্য রাখেন পটিয়ার সংসদ সদস্য সামশুল হক চৌধুরী। তিনি তার বক্তব্যে পটিয়ার আদালত ভবন নির্মাণ, পটিয়া আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় ও রাহাত আলী উচ্চ বিদ্যালয় সরকারিকরণ, পটিয়া-রাঙ্গুনীয়া বিওসি সড়ক নির্মাণ, পটিয়া হাসপাতালকে ২৫০ শয্যায় উন্নীত করণ, পটিয়া কলেজের শিক্ষার্থীদের জন্য পরিবহন ব্যবস্থা ও একটি পূর্ণাঙ্গ স্টেডিয়াম করার দাবি তুলে ধরেন।
তবে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে এসব দাবির ব্যাপারে ঘোষণা না আসায় পটিয়াবাসীর মধ্যে নেমে আসে হতাশা। প্রধানমন্ত্রী জনসভা শেষ করে চলে গেলে পটিয়া পৌরসদরসহ উপজেলা জুড়ে আলোচনা ও সমালোচনার ঝড় ওঠে। মানুষের অভিযোগ, প্রধানমন্ত্রী পটিয়াবাসীকে কিছুই দেয়নি। পটিয়াবাসীর অনেকে আশা করছিলেন প্রধানমন্ত্রী অন্তত একটি কলেজ ও দু’টি স্কুল সরকারিকরণ এবং পটিয়া হাসপাতালটি ২৫০ শয্যায় উন্নীত করবেন। কিন্তু কিছুই পায়নি পটিয়াবাসী। না পাওয়ার হতাশা থেকে অনেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে এই ক্ষোভ প্রকাশ করেন। গতকাল দিনভর চায়ের দোকানে আড্ডায়, হাটে-বাজারে সর্বত্র হতাশা ও ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা যায় সাধারণ মানুষকে। পটিয়া ছাড়াও তিনটি স্পেশাল ট্রেনের মাধ্যমে দোহাজারী রেলপথে চট্টগ্রাম মহানগরী থেকে, বাঁশখালী, বোয়ালখালী, আনোয়ারাসহ দক্ষিণ চট্টগ্রামের বিপুল সংখ্যক মানুষ জনসভায় যোগ দেয়। মাঠে স্থান সংকুলান না হওয়ায় আশপাশের সড়কে বিশেষ করে চট্টগ্রাম-মহাসড়ক সড়কে অবস্থান নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ শুনতে যান অনেকে। কিন্তু নিরাপত্তার নামে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অতিরিক্ত বাড়াবাড়ির কারণে তারা জনসভাস্থলের আশপাশেও যেতে পারেননি। এ নিয়েও সাধারণ মানুষের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া চলছে।
এদিকে জনসভা প্রসঙ্গে দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি মোছলেম উদ্দিন আহমদ ইনকিলাবকে বলেন, শেখ হাসিনার এ জনসভাটি ছিল ঐতিহাসিক। জনসভায় লাখো মানুষের উপস্থিতিতে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা দারুণ উচ্ছ¡সিত। শান্তিপূর্ণ জনসভা সফল করে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা প্রমাণ করেছে তারা ঐক্যবদ্ধ এবং সুশৃঙ্খল। আগামী জাতীয় নির্বাচন এবং রাজনীতিতে এ জনসভা টার্নিং পয়েন্ট বলেও মন্তব্য করেন তিনি। স্থানীয় কিছু উন্নয়ন দাবি নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে হতাশার প্রসঙ্গটি উড়িয়ে দিয়ে তিনি বলেন, সাধারণ মানুষ প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে খুশি। কারণ প্রধানমন্ত্রী চট্টগ্রামের উন্নয়নের দায়িত্ব নিজহাতে তুলে নিয়েছেন এবং একের পর এক সে প্রতিশ্রæতি পূরণ করে চলেছেন। তিনি যে চারটি উন্নয়ন প্রকল্পের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন তারমধ্যে বেশিরভাগ প্রকল্প ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রী অনুমোদন দিয়েছেন জানিয়ে মোছলেম উদ্দিন বলেন, খুব শিগগির এসব প্রকল্পের কাজ শুরু হবে।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: চট্টগ্রামে


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ