Inqilab Logo

মঙ্গলবার ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

রাজধানীজুড়ে গাড়ি পার্কিং

রাস্তার উপর রাখা হচ্ছে বাস ট্রাক কাভার্ডভ্যান লেগুনা : যান চলাচলে প্রতিবন্ধকতায় সৃষ্টি হচ্ছে যানজট

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ২৩ মার্চ, ২০১৮, ১২:০০ এএম

রাজধানীর কমলাপুর থেকে ধরপুর খেলার মাঠ পর্যন্ত বিশ্বরোডের এক পার্শ্বে সারিবদ্ধভাবে রাখা থাকে শতাধিক বাস। দুরপাল্লার বাসগুলো যাত্রী নিয়ে মানিকনগর এলাকা থেকে ছেড়ে যায়। একইভাবে মালিবাগ থেকে খিলগাঁও পর্যন্ত বিশ্বরোডের দুই পাশেই সারি বেঁধে পার্কিং করা থাকে শত শত বাস। রাস্তার দুই পাশে রাখা এসব বাসের কারনে সরু হয়ে গেছে প্রশস্ত রাস্তাটি। চলতে গিয়ে বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে নগর পরিবহনের বাসসহ বিভিন্ন যানবাহনের। অথচ সেদিকে কারও কোনো নজর নেই। একই অবস্থা কমলাপুর, মিরপুর, বঙ্গবাজার-ফুলবাড়িয়া, বসিলা বেড়িবাঁধসহ বিভিন্ন এলাকার গুরুত্বপূর্ণ সড়কেরও। শুধু বাস নয়, লেগুনা, টেম্পু, কাভার্ডভ্যান এমনকি ট্রাকও রাখা থাকে রাস্তার উপরই। গোটা রাজধানীর রাস্তাই এখন পার্কিং প্লেস হয়ে গেছে। অন্যদিকে, ফ্লাইওভারের নিচের অংশগুলোতেও বাস, মিনিবাস, টেম্পু, লেগুনাসহ সব ধরনের যানবাহনের স্ট্যান্ড বানানো হয়েছে। এ নিয়ে পুলিশ বা সিটি কর্পোরেশনের কারো কোনো নজরদারি নেই। ব্যস্ত রাস্তাগুলোতে বাস, টেম্পু, লেগুনা, কাভার্ডভ্যানসহ বিভিন্ন যানবাহন রাখার কারনে নগরীতে বিশৃঙ্খলাসহ যানজটের সৃষ্টি হয়ে নগরবাসীর ভোগান্তি বাড়ছে। বিআরটিএ-এর তথ্যানুযায়ী, ঢাকার বিভিন্ন অভ্যন্তরীণ রুটে চলাচল করে প্রায় সাড়ে ছয় হাজার বাস ও মিনিবাস। এসব বাসের সিংহভাগই রাতে বিভিন্ন সড়কে পার্ক করে রাখা হয়। ঢাকায় আন্তঃজেলা রুটের বাসের জন্য চারটি টার্মিনাল থাকলেও এখনো গড়ে ওঠেনি কোনো সিটি বাস টার্মিনাল। মালিক-শ্রমিকরা ট্রিপ শেষে বিভিন্ন রাস্তার ওপর পার্ক করে রাখেন। শ্রমিকদের দাবি, এজন্য ট্রাফিক পুলিশকে টাকা দিতে হয় তাদের। বিশ্বব্যাংকের সর্বশেষ তথ্যানুসারে, শুধু যানজটের কারণেই রাজধানীতে দিনে গড়ে নষ্ট হচ্ছে ৩২ লাখ কর্মঘণ্টা। তবে সংশ্লিষ্টদের হিসাবে নষ্ট হওয়া কর্মঘণ্টা আরো বেশি। যানজটের কারণে বাস চলাচলের গতিও কমেছে। লন্ডন শহরে বাসের গতি ঘণ্টায় ১৮ কিলোমিটার আর ঢাকায় ৯ কিলোমিটার। এখনই এ অচলাবস্থা হলে, ২০ বছর পর মানুষের যাতায়াত ৭১ শতাংশ বাড়লে ঢাকার যানজটের দৃশ্য কল্পনা করতে গিয়ে বিশেষজ্ঞরা বিস্ময় প্রকাশ করেছেন।
সরেজমিনে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেকা গেছে, ব্যস্ত এলাকাসহ রাজধানীর প্রায় সব এলাকাতেই রাস্তার উপর বাস বা যাত্রীবাহী যান পার্কিং করে রাখা হয়। কমলাপুরের আউটার সার্কুলার রোড, মিরপুর ১০, মিরপুর ১৪, খিলগাঁও, সায়েদাবাদ, যাত্রাবাড়ী, কুড়িল বিশ্বরোড, বিমানবন্দর, মোহাম্মদপুর, মতিঝিল, পীর জঙ্গি মাজার, উত্তরা আজমপুর, উত্তরা ১১, বনশ্রী, আফতাবনগরসহ বিভিন্ন এলাকায় মাঝরাত থেকে ভোর পর্যন্ত রাস্তার উপর রাখা থাকে শত শত বাস। এর সাথে যাত্রাবাড়ী-গুলিস্তান মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারের নিচে রাতদিন শত শত বাস, ট্রেম্পু, মিনিট্রাক, লেগুনা রাখা থাকে। দেখলে মনে হয়, এটি একটি টার্মিনাল। অথচ রাস্তার উপর রাখা এসব যানবাহনের বিরুদ্ধে অনায়াসে আইনী ব্যবস্থা নিতে পারে ট্রাফিক পুলিশ।
সড়কপথে ঢাকার উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত দূরত্ব প্রায় ২১ কিলোমিটার। বাসে এ পথ পাড়ি দিতে আধা ঘণ্টা লাগার কথা। অথচ ভুক্তভোগিদের মতে, স্বাভাবিকভাবে এ যাত্রায় দুই থেকে আড়াই ঘণ্টা সময় লাগে। আর বিমান বন্দর সড়কে ভিআইপি মুভমেন্ট থাকলে কখনও কখণও ৫/৬ ঘণ্টাও লেগে যায়।
রাজধানীতে এভাবে দুই শতাধিক রুটে প্রতিদিন ঘণ্টার পর ঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে। কর্মস্থলে যোগদান,রোগীর জরুরী চিকিৎসা , চাকরিতে নিয়োগের জন্য পরীক্ষা, অনুষ্ঠানে সময়মতো যোগদানের জন্য নির্ধারিত সময়ের কমপক্ষে তিন ঘণ্টা আগে রওনা করেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অনিশ্চয়তায় পড়তে হচ্ছে। এ অনিশ্চয়তার একমাত্র কারণ যানজট। আবার যানজটের বড় কারণ গাড়ি দিয়ে রাস্তা দখল করে রাখা। ঢাকার বেশির ভাগ রাস্তাজুড়েই দেখা মেলে অবৈধ গাড়িস্ট্যান্ডের। এ যেন রাজধানী শহরের পুরোটাই গাড়ির স্ট্যান্ড। দিনের আলো ফোটার পরে ব্যস্ত সময়ে ব্যস্ত এলাকাগুলোতে যাত্রীদের আটকে থাকতে হচ্ছে এসব গাড়িস্ট্যান্ডের ফাঁদে।
পরিবহন মালিকদের সাথে এ বিষয়ে কথা বললে তারা জানান, রাজধানীতে পর্যাপ্ত বাস ও ট্রাক টার্মিনাল না থাকার কারনেই এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। রাজধানীতে চারটি বাস টার্মিনাল আছে। ১৯৮৪ সালে গুলিস্তান সংলগ্ন ফুলবাড়িয়া থেকে টার্মিনাল স্থানান্তর করা হয় সায়েদাবাদ, গাবতলী ও মহাখালীতে। তখন সেগুলো মূল শহরের কিছুটা বাইরে হলেও এখন শহর বেড়েছে। এসব টার্মিনালের কারণে ঢাকায় প্রবেশের পথও প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। এ কারনে সাত বছর আগে মহানগরী থেকে চারটি বাস টার্মিনাল শহরের বাহিরে সরানোর প্রস্তাব করা হয়েছিল। সেই প্রস্তাবে সাড়া মেলেনি। এর নেপথ্যে কোটি কোটি টাকার চাঁদাবাজি।
রাজধানীর দুরপাল্লার বাসগুলো এখন আর টার্মিনালকেন্দ্রিক নেই। নগরীর স্থানে স্থানে বাস কম্পানীগুলো কাউন্টার বসিয়ে যাত্রী পরিবহন করছে প্রতিযোগিতা করে। সায়েদাবাদ টার্মিনাল থেকে এখন যতোগুলো বাস ছাড়ে তার চেয়ে বেশি ছাড়ে টার্মিনালের বাইরে থেকে। সায়েদাবাদ টার্মিনালের দুদিকের রাস্তায় রয়েছে চার শতাধিক বাস কাউন্টার। টার্মিনাল হয়ে কাউন্টারগুলো যাত্রাবাড়ী, গোলাপবাগ, মানিকনগর থেকে কমলাপুর পর্যন্ত বিস্তৃত। গাবতলী বাস টার্মিনাল থেকে বাস কাউন্টার বিস্তৃত হয়েছে টেকনিক্যাল মোড়, কল্যাণপুর, শ্যামলী, কলেজগেট পর্যন্ত। কলাবাগান, আসাদগেট, মালিবাগ, আরামবাগ, বাড্ডা, উত্তরা, মিরপুর, মতিঝিল, ধানমন্ডির মতো ব্যস্ত এলাকায় গড়ে উঠেছে বাস কাউন্টারগুলো। এসব কাউন্টারে বাসে করে যাত্রীদের নিয়ে যাওয়া হয় টার্মিনালে। এতেও যানজট প্রকট হয়ে ওঠে স্থানে স্থানে। আবার ঢাকা থেকে দূরপাল্লার কমপক্ষে ২০০ কেম্পানি মহানগরীতে বিভিন্ন স্থানে মিনিবাস দিয়ে যাত্রী পরিবহন করে টার্মিনালে নিয়ে যাচ্ছে বা মূল বাসেই কাউন্টারের সামনে থেকে যাত্রী তুলছে। এতে করে পরোক্ষভাবে যানজট বাড়ছে।
যাত্রীবাহী বাস মিনিবাস ছাড়াও নিত্য ও জরুরি পণ্য এবং নির্মাণসামগ্রী পরিবহনের জন্য ঢাকা মহানগরীর ভেতর দিয়ে যাতায়াত করে ট্রাক, পিক-আপ, লরিসহ বিভিন্ন ধরনের ভারী যানবাহন। রাজপথ থেকে শুরু করে অলিগলিতে এসব ভারী যানবাহন চলাচল করছে। ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান মালিক সমিতির হিসাব মতে, রাজধানী ও আশপাশে দিনে গড়ে প্রায় ২০ হাজার ট্রাক ও অন্যান্য ভারী পরিবহন পণ্য তোলা ও নামানোর জন্য এবং ট্রিপের জন্য অবস্থান করে। এর মধ্যে বেশির ভাগই রাখতে হচ্ছে রাস্তার ওপর।
জানা গেছে, ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ও আশপাশের এলাকার মধ্যে ট্রাক টার্মিনাল আছে আমিনবাজার, তেজগাঁও, দয়াগঞ্জ ও মোহাম্মদপুরে। এ ছাড়া ট্রাকস্ট্যান্ড আছে শ্যামপুর, শিমরাইল, কাঁচপুর, গাবতলীসহ বিভিন্ন স্থানে। এসব স্থানে টার্মিনাল ও স্ট্যান্ডের নির্দিষ্ট এলাকা থেকে ট্রাকসহ অন্যান্য ভারি যানের সারি রাস্তার ওপর বহুদূর বিস্তৃত। কমলাপুর রেলস্টেশনের পাশে কমলাপুর আইসিডি শুল্ক বন্দর। সেখানে প্রতিদিন গড়ে ৪০০ কাভার্ড ভ্যান, ৩০০ ট্রাক, শতাধিক লরি পণ্য আমদানি-রপ্তানিকাজে যুক্ত থাকে। আইসিডি চত্বরের বাইরে বিশ্বরোডের উপর মানিকনগরসহ আশপাশে এসব ভারী যান পার্ক করে রাখা হয়। এতে যাত্রাবাড়ী, সায়েদাবাদ থেকে গাজীপুর, উত্তরাসহ বিভিন্ন দিকে চলাচলকারী যানবাহনে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হচ্ছে। অন্যদিকে, কারওয়ান বাজারে রয়েছে রাজধানীর অন্যতম বড় কাঁচাবাজার। উত্তরবঙ্গ, দক্ষিণবঙ্গসহ বিভিন্ন দিক থেকে পণ্যবাহী ট্রাক ও পিকআপ প্রতিদিন আসে। কাঁচাবাজারের আশপাশ ছাড়িয়ে মূল রাস্তায় এই ট্রাকের জট থাকে। দিনেরবেলা এ অংশে যানজটের বড় কারণ এসব ট্রাকের জট ও চলাচল। এসব বিষেয় সায়েদাবাদ টার্মিনাল বাস মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কালাম আজাদ বলেন, সায়েদাবাদ টার্মিনালের সক্ষমতা থাকা সত্তে¡ও বাসগুলো টার্মিনালের বাহির থেকে যাত্রী ওঠানামা করাচ্ছে। এতে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হচ্ছে। রাস্তার উপর যানজট হচ্ছে। তিনি বলেন, আমরা সিটি কর্পোরেশন ও ট্রাফিক পুলিশকে এ বিষয়ে অনেকবার বলেছি। তারা ব্যবস্তা না নিলে আমাদের কি করার আছে।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: যানজট

১৯ জানুয়ারি, ২০২৩
৯ জানুয়ারি, ২০২৩
১৯ ডিসেম্বর, ২০২২
২৭ নভেম্বর, ২০২২
২৯ অক্টোবর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ