Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় প্রতিরক্ষা নীতিমালা অনুমোদন মন্ত্রিসভায়

বিমান দুর্ঘটনায় শোক প্রকাশ

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২০ মার্চ, ২০১৮, ১২:০০ এএম

যুদ্ধকালীন বা সংকটে সব আধাসামরিক বাহিনী ও সহায়ক বাহিনী সশস্ত্র বাহিনীর কর্তৃত্বে অপারেশনাল কমান্ডে থাকবে এমন বিধান যুক্ত করে জাতীয় প্রতিরক্ষা নীতিমালা-২০১৮এর খসড়া অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।এছাড়া নেপালে ইউএস-বাংলার উড়োজাহাজ দুর্ঘটনায় ২৬ বাংলাদেশিসহ ৫১ জন আরোহী নিহত হওয়ায় শোক প্রকাশ করেছে মন্ত্রিসভা।
গতকাল সোমবার তেজগাঁওয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কার্যালয়ে তাঁর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভায় এই নীতিমালার অনুমোদন দেওয়া হয়। বৈঠক শেষে পরে সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এতথ্য জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, সংকটকাল বা ক্রান্তিকাল ঠিক করবেন সরকার প্রধান। এই নীতিমালায় জাতীয় স্বার্থ, প্রতিরক্ষা মূলনীতি, প্রতিরক্ষা সক্ষমতা, সামরিক ও বেসামরিক সম্পর্ক কী, গণমাধ্যমের সঙ্গে সম্পর্ক কী এ ধরনের বিভিন্ন বিষয় নীতিমালায় উল্লেখ রয়েছে। প্রতিরক্ষা সক্ষমতা অর্থাৎ সশস্ত্র বাহিনীর মূল সক্ষমতা কী হবে, সশস্ত্র বাহিনীর যুদ্ধকালীন মোতায়েন কীভাবে হবে, সামরিক ও অসামরিক সম্পর্ক কী হবে, সশস্ত্র বাহিনী ও নাগরিকদের সাথে কী সম্পর্ক বজায় থাকবে এ বিষয়গুলোও বিস্তারিত বলা হয়েছে। মোহাম্মদ শফিউল আলম বলেন, নীতিমালায় বলা হয়েছে, যুদ্ধকালীন আধা সামরিক ও সহায়ক বাহিনীর অপারেশনাল কমান্ডে থাকবেন সামরিক বাহিনীর আওতায়।
অর্থাৎ বিজিবি, কোস্টগার্ড, বিএনসিসি, পুলিশসহ অন্যান্য প্রতিরক্ষা বাহিনী সেনাবাহিনীর অপারেশন কমান্ডে থাকবে। নিরাপত্তাবিষয়ক জাতীয় কমিটি, মন্ত্রিসভা কমিটি কীভাবে হবে তাও নীতিমালায় পরিষ্কার করা হয়েছে। বর্তমানে নিরাপত্তাবিষয়ক জাতীয় কমিটির প্রধান প্রধানমন্ত্রী। নতুন নীতিমালাতেও সেই বিধানই রাখা হচ্ছে। প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর নেতৃত্বেই প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি পরিচালিত হবে। প্রতিরক্ষাবিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটি বরাবরই সংসদ কর্তৃক গঠন করা হয় সেভাবেই এখনও থাকবে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, নীতিমালায় গণমাধ্যমের সাথে সামরিক বাহিনীর সম্পর্ক বিষয়ে এ নীতিমালায় বেশকিছু বিষয় তুলে ধরা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, সচেতন নাগরিক সশস্ত্র বাহিনীর ভাল বন্ধু। জাতীয় নিরাপত্তা সম্পর্কিত অনুমোদিত তথ্য দায়িত্বশীল প্রচারণা মাধ্যমে গণমাধ্যম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। সুতরাং একটি বন্ধুপ্রতীম গণমাধ্যম-সামরিক সম্পর্ক অপরিহার্য। সচিব বলেন, গণমাধ্যম ও সামরিক সম্পর্ক অত্যন্ত সংবেদনশীল। কারণ এ দুটি প্রতিষ্ঠান জাতীয় সক্ষমতার উপাদান এবং উভয়ই নিজ নিজ অবস্থান থেকে জাতীয় নিরাপত্তা রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। নীতিমালায় মুখ্য জাতীয় মূল্যবোধ এর বিষয়ে বলা হয়েছে, সক্রিয় বৈশিষ্ঠ্যমন্ডিত ভাষা, সংস্কৃতি ও নৃতাত্তি¡ক বিন্যাস এবং সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে ধারণ করে গড়ে উঠেছে বাংলাদেশের গণতন্ত্র, জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা সংবলিত একটি অনবদ্য জাতীয়। সচিব বলেন, বাংলাদেশের সংবিধানে উদ্ধৃত এই মূল্যবোধ সংবলিত রাষ্ট্রের মৌলিক উদ্দেশ্য ও আদর্শিক রূপরেখা গঠন করে যা বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও বৈদেশিক নীতি এবং সার্বিক জাতীয় স্বার্থ সমুন্নত রাখার ক্ষেত্রে মূল ভিত্তি প্রদান করে। নীতিমালার কয়েকটি অধ্যায়ের মধ্যে রয়েছে- মুখ্য জাতীয় মূল্যবোধসমূহ, জাতীয় লক্ষ্য বা প্রতিরক্ষার উদ্দেশ্য, জাতীয় স্বার্থ, বাংলাদেশের প্রতিরক্ষার মূলনীতিসমূহ বা মৌলিক বিষয়সমূহ। নীতিমালার উপসংহারে বলা হয়েছে, রক্তক্ষয়ী স্বাধীনতা যুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশ একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে।
ভেজাল সার বিক্রির সাজা বাড়ছে
ভেজাল সার বিক্রিতে সাজার মেয়াদ বাড়িয়ে নতুন আইনের খসড়ায় নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে। মন্ত্রিসভার বৈঠকে সার (ব্যবস্থাপনা) (সংশোধন) আইন ২০১৮’এর খসড়া অনুমোদন দেয়া হয়। মোহাম্মদ শফিউল আলম বলেন, আইনের ৮ (১) ধারা লঙ্ঘনে বা ভেজাল সার বিক্রিতে ৬ মাসের সশ্রম কারাদন্ড বা অনধিক ৩০ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দন্ড ছিল। সেখানে ২ বছরের সশ্রম কারাদন্ড বা অনধিক ৫ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দন্ড প্রস্তাব করা হয়েছে। ২০০৬ সালের এই আইনের সংজ্ঞায় একটি শব্দ যুক্ত করা হয়েছে তা হল আবশ্যকীয় উদ্ভিদ উপাদান, সংযোজনে পুষ্টির বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। সংজ্ঞার ২ এর ২০ অনুচ্ছেদে ‘মিক্সড ফার্টিলাইজার’ পরিবর্তন করে ‘সুষম সার’ করা হয়েছে বা ‘মিক্সড ব্যালেন্স ফার্টিলাইজার’ করা হয়েছে। এছাড়া আইনে জাতীয় সার প্রমিতকরণ কমিটিকে ১৫ সদস্য থেকে ১৭ সদস্য করা হয়েছে ।
বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ আইনে চূড়ান্ত অনুমোদন
এছাড়া মন্ত্রিসভায় বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ আইন, ২০১৮’এর খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ১৯৯২ সাল থেকে এই প্রতিষ্ঠানটি একটি রেজুলেশনের মাধ্যমে চলছে। এটার কোনো আইন ছিল না, এটিকে আইনে পরিণত করা হয়েছে। সরকার যেটুকু ঘোষণা করবে সেটুকু বরেন্দ্র এলাকা হবে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, বরেন্দ্র এলাকা বলতে রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের সব জেলাকে বোঝাবে। অর্থাৎ বৃহত্তর রাজশাহী বিভাগ নিয়ে এই বরেন্দ্র এলাকা গঠিত হবে। আইনের উদ্দেশ্য পূরণকল্পে সরকার গেজেট প্রজ্ঞাপন করে যে কোনো এলাকাকে বরেন্দ্র এলাকা হিসেবে ঘোষণা করতে পারবে। বৈঠকে বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউট আইন, ২০১৮’ এর খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, সাভারের বিএলআরআই, এটি লাইভস্টক রিসার্চ ইনন্সটিউট ১৯৮৪ সালের একটি অর্ডিনেন্সের মাধ্যমে চলছে, সামরিক আমলের অর্ডিনেন্সগুলো আইনে রূপান্তর করতে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনায় এ আইন করা হয়েছে।
বিমান দুর্ঘটনায় মন্ত্রিসভার শোক
নেপালে ইউএস-বাংলার উড়োজাহাজ দুর্ঘটনায় ২৬ বাংলাদেশিসহ ৫১ জন আরোহী নিহত হওয়ায় শোক প্রকাশ করেছে মন্ত্রিসভা।প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠকে এ শোক প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এতে সভাপতিত্ব করেন। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, গত ১২ মার্চ নেপালের কাঠমান্ডুর ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে মর্মান্তিক উড়োজাহাজ দুর্ঘটনায় ২৬ জন বাংলাদেশিসহ ৫১ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ২০ জন। এ বিষয়ে বৈঠকের শুরুতে মন্ত্রিসভা গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছে। এজন্য একটি শোক প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়েছে। ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণীর মৃত্যুতে মন্ত্রিসভার শোক। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, স্বনামধন্য ভাস্কর ও মুক্তিযোদ্ধা ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণীর মৃত্যুতে মন্ত্রিসভা গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করে শোক প্রস্তাব গ্রহণ করেছে। মন্ত্রিসভা তার রুহের মাগফেরাত কামনা করেছে এবং তার শোকসস্তপ্ত পরিবারের প্রতি আন্তরিক সমবেদনা জানিয়েছে। গত ৬ মার্চ রাজধানীর ল্যাব এইড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেন ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণী। তার বয়স হয়েছিল ৭১ বছর। শফিউল আলম বলেন, তিনি ( ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণী) বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম চলাকালে হানাদার বাহিনীর হাতে বন্দি ও নির্যাতিন হন এবং স্বাধীনতা উত্তরকালে সমাজের চোখ রাঙ্গানি উপেক্ষা করে জনসম্মুখে যুদ্ধকালীন নির্যাতনের অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরার বিষয়ে তিনিই প্রথম অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, তিনি ২০১০ সালে দেশের সর্বোচ্চ পুরস্কার ‘স্বাধীনতা পুরস্কার’ পেয়েছিলেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বিমান দুর্ঘটনা


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ